ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৫, ২৩শে ডিসেম্বর

শ্রীমুখ-কথিত চরিতামৃত – শ্রীরামকৃষ্ণ কে? মুক্তকণ্ঠ
আহুস্ত্বাম্‌ ঋষয়ঃ সর্বে দেবর্ষির্নারদাস্তথা।
অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ঞ্চৈব ব্রবীষি মে ৷৷
শ্রীরামকৃষ্ণ (মণির প্রতি) – তিনি ভক্তের জন্যে দেহধারণ করে যখন আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরাও আসে। কেউ অন্তরঙ্গ, কেউ বহিরঙ্গ। কেউ রসদ্দার।

“দশ-এগারো বছরের সময় দেশে বিশালাক্ষী দেখতে গিয়ে মাঠে অবস্থা হয়। কি দেখলাম! – একেবারে বাহ্যশূন্য!

“যখন বাইশ-তেইশ বছর বয়স১ কালীঘরে (দক্ষিণেশ্বরে) বললে, তুই কি অক্ষর হতে চাস?’ – অক্ষর মানে জানি না! জিজ্ঞাসা করলাম – হলধারী বললে, ‘ক্ষর মানে জীব, অক্ষর মানে পরমাত্মা’।

“যখন আরতি হত, কুঠির উপর থেকে চিৎকার করতাম, ‘ওরে কে কোথায় ভক্ত আছিস আয়! ঐহিক লোকদের সঙ্গে আমার প্রাণ যায়!’ ইংলিশম্যানকে (ইংরাজী পড়া লোককে) বললাম। তারা বলে, ‘ও-সব মনের ভুল!’ তখন ‘তাই হবে’ বলে শান্ত হলাম। কিন্তু এখন তো সেই সব মিলছে! – সব ভক্ত এসে জুটছে!

“আবার দেখালে পাঁচজন সেবায়েত। প্রথম, সোজোবাবু (মথুরবাবু) তারপর শম্ভু মল্লিক, – তাকে আগে কখন দেখি নাই। ভাবে দেখলাম, – গৌরবর্ণ পুরুষ, মাথায় তাজ। যখন অনেকদিন পরে শম্ভুকে দেখলাম, তখন মনে পড়ল, – একেই আগে ভাবাবস্থায় দেখেছি! আর তিনজন সেবায়েত এখনও ঠিক হয় নাই। কিন্তু সব গৌরবর্ণ। সুরেন্দ্র অনেকটা রসদ্দার বলে বোধ হয়।

“এই অবস্থা যখন হল ঠিক আমার মতো একজন এসে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না নাড়ী সব ঝেড়ে দিয়ে গেল। ষড়চক্রের এক-একটি পদ্মে জিহ্বা দিয়ে রমণ করে, আর অধোমুখ পদ্ম ঊর্ধ্বমুখ হয়ে উঠে। শেষে সহস্রার পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়ে গেল।

“যখন যেরূপ লোক আসবে, আগে দেখিয়ে দিত! এই চক্ষে – ভাবে নয় – দেখলাম, চৈতন্যদেবের সংকীর্তন বটতলা থেকে বকুলতলার দিকে যাচ্ছে। তাতে বলরামকে দেখলাম, আর যেন তোমায় দেখলাম। চুনিকে আর তোমাকে আনাগোনায় উদ্দীপন হয়েছে। শশী আর শরৎকে দেখেছিলাম, ঋষি কৃষ্ণের (ক্রাইস্ট্‌) দলে ছিল।

“বটতলায় একটি ছেলে দেখেছিলাম। হৃদে বললে, তবে তোমার একটি ছেলে হবে। আমি বললাম, ‘আমার যে মাতৃযোনী! আমার ছেলে কেমন করে হবে?’ সেই ছেলে রাখাল।

“বললাম, মা, এরকম অবস্থা যদি করলে, তাহলে একজন বড়মানুষ জুটিয়ে দাও। তাই সেজোবাবু চৌদ্দ বছর২ ধরে সেবা কল্লে। সে কত কি! – আলাদা ভাঁড়ার করে দিলে – সাধুসেবার জন্য – গাড়ি, পালকি – যাকে যা দিতে বলেছি, তাকে তা দেওয়া। বামনী খতাতো – প্রতাপ রুদ্র।

“বিজয় এই রূপ (অর্থাৎ ঠাকুরের মূর্তি) দর্শন করেছে। একি বলো দেখি? বলে, তোমায় যেমন ছোঁয়া, ওইরূপ ছুঁয়েছি।

“নোটো (লাটু) খতালে একত্রিশজন ভক্ত। কই তেমন বেশি কই! – তবে কেদার আর বিজয় কতকগুলো কচ্ছে!

“ভাবে দেখালে, শেষে পায়েস খেয়ে থাকতে হবে!

“এ অসুখে পরিবার (ভক্তদের শ্রীশ্রীমা) পায়েস খাইয়ে দিচ্ছিল, তখন কাঁদলাম এই বলে, – এই কি পায়েস খাওয়া! এই কষ্টে!”

……………………………………………
১ যখন ২২/২৩ বয়স অর্থাৎ ১৮৫৮/৫৯ খ্রী:, তখন প্রথম এই অবস্থা
২ মথুরের চৌদ্দ বৎসর সেবা। ১৮৫৮ হইতে ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দ। মথুরের মৃত্যু – ১লা শ্রাবণ, ১২৭৮; ১৮ই জুলাই, ১৮৭১।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!