ভবঘুরেকথা
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব

পূর্বকথা – শ্রীরামকৃষ্ণের প্রেমোন্মাদ ও রূপদর্শন

শ্রীরামকৃষ্ণ – উঃ, কি অবস্থাই গেছে! প্রথম যখন এই অবস্থা হল দিনরাত কোথা দিয়ে যেত, বলতে পারিনা। সকলে বললে, পাগল হল। তাই তো এরা বিবাহ দিলে। উন্মাদ অবস্থা; – প্রথম চিন্তা হল, পরিবারও এইরূপ থাকবে, খাবে-দাবে। শ্বশুরবাড়ি গেলুম, সেখানে খুব সংকীর্তন। নফর, দিগম্বর বাঁড়ুজ্যের বাপ এরা এল! খুব সংকীর্তন। এক-একবার ভাবতুম, কি হবে। আবার বলতুম, মা, দেশের জমিদার যদি আদর করে, তাহলে বুঝব সত্য। তারাও সেধে এসে কথা কইত।

[পূর্বকথা – সুন্দরীপূজা ও কুমারীপূজা –
রামলীলা-দর্শন – গড়ের মাঠে বেলুনদর্শন –
সিওড়ে রাখাল-ভোজন – জানবাজারে মথুরের সঙ্গে বাস ]

“কি অবস্থাই গেছে। একটু সামান্যতেই একেবারে উদ্দীপন হয়ে যেত। সুন্দরীপূজা কল্লুম! চৌদ্দ বছরের মেয়ে। দেখলুম, সাক্ষাৎ মা। টাকা দিয়ে প্রণাম কল্লুম।

“রামলীলা দেখতে গেলুম। একেবারে দেখলুম, সাক্ষাৎ সীতা, রাম, লক্ষ্মণ, হনুমান, বিভীষণ। তখন যারা সেজেছিল, তাদের সব পূজা করতে লাগলুম।

““কুমারীদের এনে তখন পূজা করতুম। দেখতুম, সাক্ষাৎ মা।

“একদিন বকুলতলায় দেখলুম, নীল বসন পরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে, বেশ্যা। দপ্‌ করে একেবারে সীতার উদ্দীপন। ও মেয়েকে ভুলে গেলুম; কিন্তু দেখলুম, সাক্ষাৎ সীতা লঙ্কা থেকে উদ্ধার হয়ে রামের কাছে যাচ্ছেন। অনেকক্ষণ বাহ্যশূন্য হয়ে সমাধি অবস্থা হয়ে রইল।

“আর-একদিন গড়ের মাঠে বেড়াতে গিছলুম। বেলুন উঠবে – অনেক লোকের ভিড়। হঠাৎ নজরে পড়ল, একটি সাহেবের ছেলে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ত্রিভঙ্গ হয়ে। যাই দেখা, অমনি শ্রীকৃষ্ণের উদ্দীপন। সমাধি হয়ে গেল।

“সিওড়ে রাখাল-ভোজন করালুম। তাদের হাতে হাতে সব জলপান দিলুম! দেখলুম, সাক্ষাৎ ব্রজের রাখাল। তাদের জলপান থেকে আবার খেতে লাগলুম!

“প্রায় হুঁশ থাকত না। সেজোবাবু জানবাজারের বাড়িতে নিয়ে দিন কতক রাখলে। দেখতে লাগলুম, সাক্ষাৎ মার দাসী হয়েছি। বাড়ির মেয়েরা আদবেই লজ্জা করত না, যেমন ছোট ছেলেকে বা মেয়েকে দেখলে কেউ লজ্জা করে না। আন্দির সঙ্গে – বাবুর মেয়েকে জামাই-এর কাছে শোয়াতে যেতুম।

“এখনও একটু তাতেই উদ্দীপন হয়ে যায়। রাখাল জপ করতে করতে বিড় বিড় করত। আমি দেখে স্থির থাকতে পারতুম না। একেবারে ইশ্বরের উদ্দীপন হয়ে, বিহ্বল হয়ে যেতুম।”

ঠাকুর প্রকৃতিভাবের কথা আরও বলিতে লাগিলেন। আর বললেন, “আমি একজন কীর্তনীয়াকে মেয়ে-কীর্তনীর ঢঙ সব দেখিয়েছিলুম। সে বললে ‘আপনার এ-সব ঠিক ঠিক। আপনি এ-সব জানলেন কেমন করে’।”

এই বলিয়া ঠাকুর ভক্তদের মেয়ে-কীর্তনীয়ার ঢঙ দেখাইতেছেন। কেহই হাস্য সংবরণ করিতে পারিলেন না।

-১৮৮৩, ৪ঠা জুন-

…………………..
রামকৃষ্ণ কথামৃত : দ্বাদশ অধ্যায় : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!