ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে – ঠাকুরের শ্রীচরণপূজা

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে –
শ্রীযুক্ত রাখাল, রাম, কেদার, তারক
মাস্টার প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আজ সন্ধ্যারতির পর দক্ষিণেশ্বর-কালীমন্দিরে দেবী-প্রতিমার সম্মুখে দাঁড়াইয়া দর্শন করিতেছেন ও চামর লইয়া কিয়ৎক্ষণ ব্যজন করিতেছেন।

গ্রীষ্মমকাল। আজ (শুক্রবার) জ্যৈষ্ঠ শুক্লা তৃতীয়া তিথি, ৮ই জুন, ১৮৮৩। আজ কলিকাতা হইতে সন্ধ্যার পর রাম, কেদার (চাটুজ্যে), তারক ঠাকুরের জন্য ফুল মিষ্টান্ন লইয়া একখানি গাড়ি করিয়া আসিয়াছেন।

শ্রীযুক্ত কেদারের বয়ঃক্রম পঞ্চাশ হইবে। পরমভক্ত। ঈশ্বরের কথা হইলেই চক্ষু জলে ভাসিয়া যায়! প্রথমে ব্রাহ্মসমাজে যাতায়াত করিতেন – তৎপরে কর্তাভজা, নবরসিক প্রভৃতি নানা সম্প্রদায়ের সহিত মিলিয়া অবশেষে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পদাশ্রয় লইয়াছেন। রাজ-সরকারের অ্যাকাউন্ট্যান্টের কর্ম করেন। তাঁহার বাটী কাঁচড়াপাড়ার নিকট হালিসহর গ্রামে।

শ্রীযুক্ত তারকের বয়ঃক্রম ২৪ বৎসর হইবে। বিবাহ করিয়াছিলেন – কিছুদিন পরে পত্নীবিয়োগ হইল। তাঁহার বাটী বারাসাত গ্রামে। তাঁহার পিতা একজন উচ্চদরের সাধক – ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে অনেকবার দর্শন করিয়াছিলেন। তারকের মাতৃবিয়োগের পর তাঁহার পিতা দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করিয়াছেন।

তারক রামের বাটীতে সর্বদা যাতায়াত করেন। তাঁহার ও নিত্যগোপালের সঙ্গে তিনি প্রায় ঠাকুরকে দর্শন করিতে আইসেন। এখনও একটি আফিসে কর্ম করিতেছেন। কিন্তু সর্বদাই উদাস ভাব।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কালীঘর হইতে বহির্গত হইয়া চাতালে ভূমিষ্ঠ হইয়া মাকে প্রণাম করিলেন। দেখিলেন, রাম, মাস্টার, কেদার, তারক প্রভৃতি ভক্তেরা সেখানে দাঁড়াইয়া আছেন।

[শ্রীযুক্ত তারকের প্রতি স্নেহ – কেদার ও কামিনী কাঞ্চন ]

ঠাকুর তারকের চিবুক ধরিয়া আদর করিতেছেন। তাঁহাকে দেখিয়া বড়ই আনন্দিত হইয়াছেন।

ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া নিজের ঘরে মেঝেতে বসিয়া আছেন। পা দুখানি বাড়াইয়া দিয়াছেন, – রাম ও কেদার নানা কুসুম ও পুষ্পমালা দিয়া শ্রীপাদপদ্ম বিভূষিত করিয়াছেন। ঠাকুর সমাধিস্থ!

কেদারের নবরসিকের ভাব। শ্রীচরণের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ধারণ করিয়া আছেন। তাহা হইলে শক্তি সঞ্চার হইবে – এই ধারণা। ঠাকুর একটু প্রকৃতিস্থ হইয়া বলিতেছেন, “মা, আঙুল ধরে আমার কি করতে পারবে!” কেদার বিনীতভাবে হাতজোড় করিয়া আছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (কেদারের প্রতি, ভাবাবেশে) – কামিনী-কাঞ্চনে মন টানে (তোমার) – মুখে বললে কি হবে যে আমার ওতে মন নাই।

“এগিয়ে পড়। চন্দন কাঠের পর আরও আছে – রূপার খনি – সোনার খনি – হীরে-মাণিক। একটু উদ্দীপন হয়েছে বলে মনে করো না যে, সব হয়ে গেছে!”

ঠাকুর আবার মার সহিত কথা কহিতেছেন। বলিতেছেন, ”মা, একে সরিয়ে দাও।“

কেদার শুষ্ককণ্ঠ। রামকে সভয়ে বলিতেছেন, “ঠাকুর একি বলছেন?”

[অবতার ও পার্ষদ ]

শ্রীযুক্ত রাখালকে দেখিয়া ঠাকুর আবার ভাবাবিষ্ট হইতেছেন। ভাবে রাখালকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন –

“আমি অনেকদিন এখানে এসেছি! – তুই কবে এলি?”

ঠাকুর কি ইঙ্গিত করিয়া বলিতেছেন যে, তিনি ঈশ্বরের অবতার, আর রাখাল তাঁহার একজন পার্ষদ – অন্তরঙ্গ?

-১৮৮৩, ৮ই জুন-

………………..
রামকৃষ্ণ কথামৃত : দ্বাদশ অধ্যায় : সপ্তম পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!