ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

নাট্যালয়ে নিত্যানন্দবংশ ও শ্রীরামকৃষ্ণের উদ্দীপন

মাস্টার, বাবুরাম, খড়দার নিত্যানন্দবংশের গোস্বামী 

নবদ্বীপে নিত্যানন্দ আসিয়াছেন, তিনি নিমাইকে খুঁজিতেছেন এমন সময় নিমাই-এর সহিত দেখা হইল। নিমাইও তাঁহাকে খুঁজিতেছিলেন । মিলনের পর নিমাই বলিতেছেন –

সার্থক জীবন; সত্য মম ফলেছে স্বপন;
লুকাইলে স্বপ্নে দেখা দিয়ে।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারকে গদ্‌গদ স্বরে) – নিমাই বলছে, স্বপ্নে দেখেছি!

শ্রীবাস ষড়্‌ভুজ দর্শন করছেন, আর স্তব করছেন।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হইয়া ষড়্‌ভুজ দর্শন করিতেছেন।

গৌরাঙ্গের ঈশ্বর আবেশ হইয়াছে। তিনি অদ্বৈত, শ্রীবাস, হরিদাস ইত্যাদির সহিত ভাবে কথা কহিতেছেন।

গৌরাঙ্গের ভাব বুঝিতে পারিয়া নিতাই গান গাইতেছেন-

কই কৃষ্ণ এল কুঞ্জে প্রাণ সই!
দে রে কৃষ্ণ দে, কৃষ্ণ এনে দে, রাধা জানে কি গো কৃষ্ণ বই।

শ্রীরামকৃষ্ণ গান শুনিতে শুনিতে সমাধিস্থ হইলেন। অনেকক্ষণ ওইভাবে রহিলেন। কনসার্ট চলিতে লাগিল। ঠাকুরের সমাধি ভঙ্গ হইল। ইতিমধ্যে খড়দার নিত্যানন্দ গোস্বামীর বংশের একটি বাবু আসিয়াছেন ও ঠাকুরের চেয়ারের পশ্চাতে দাঁড়াইয়া আছেন। বয়স ৩৪/৩৫ হইবে। ঠাকুর তাঁহাকে দেখিয়া আনন্দে ভাসিতে লাগিলেন। তাঁহার হাত ধরিয়া কত কথা কহিতেছেন। মাঝে মাঝে তাঁহাকে বলিতেছেন, “এখানে বসো না; তুমি এখানে থাকলে খুব উদ্দীপন হয়।” সস্নেহে তাহার হাত ধরিয়া যেন খেলা করিতেছেন। সস্নেহে মুখে হাত দিয়া আদর করিতেছেন।

গোস্বামী চলিয়া গেলে মাস্টারকে বলিতেছেন, “ও বড় পণ্ডিত, বাপ বড় ভক্ত। আমি খড়দার শ্যামসুন্দর দেখতে গেলে, যে ভোগ একশ টাকা দিলে পাওয়া যায় না সেই ভোগ এনে আমায় খাওয়ায়।

“এর লক্ষণ বড় ভাল; একটু নেড়েচেড়ে দিলে চৈতন্য হয়। ওকে দেখতে দেখতে বড় উদ্দীপন হয়। আর একটু হলে আমি দাঁড়িয়া পড়তুম।”

গোস্বামীকে দেখিতে দেখিতে আর একটু হলে ঠাকুরের ভাবসমাধি হইত; এই কথা বলিতেছেন।

যবনিকা উঠিয়া গেল। রাজপথে নিত্যানন্দ মাথায় হাত দিয়া রক্তস্রোত বন্ধ করিতেছেন। মাধাই কলসির কানা ছুঁড়িয়া মারিয়াছেন; নিতাইয়ের ভ্রূক্ষেপ নাই। গৌরপ্রেমে গরগর মাতোয়ারা! ঠাকুর ভাবাবিষ্ট। দেখিতেছেন, নিতাই জগাই মাধাইকে কোল দিবেন। নিতাই বলিতেছেন:

প্রাণ ভরে আয় হরি বলি, নেচে আয় জগাই মাধাই।
মেরেছ বেশ করেছ, হরি বলে নাচ ভাই ৷৷
বলরে হরিবোল; প্রেমিক হরি প্রেমে দিবে কোল।
তোল রে তোল হরিনামের রোল ৷৷
পাওনি প্রেমের স্বাদ, ওরে হরি বলে কাঁদ, হেরবি হৃদয় চাঁদ।
ওরে প্রেমে তোদের নাম বিলাব, প্রেমে নিতাই ডাকে তাই ৷৷

এইবার নিমাই শচীকে সন্ন্যাসের কথা বলিতেছেন।

শচী মূর্ছিতা হইলেন। মূর্ছা দেখিয়া দর্শকবৃন্দ অনেকে হাহাকার করিতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ অণুমাত্র বিচলিত না হইয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন; কেবল নয়নের কোণে একবিন্দু জল দেখা দিয়াছে!

-১৮৮৪, ২১শে সেপ্টেম্বর-

…………………..
রামকৃষ্ণ কথামৃত : ষড়বিংশ অধ্যায় : সপ্তম পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!