ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৫, ২রা সেপ্টেম্বর
শ্রীযুক্ত ডাক্তার ভগবান রুদ্র ও ঠাকুর রামকৃষ্ণ

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মধ্যাহ্নে সেবা করিয়া নিজের আসনে বসিয়া আছেন। ডাক্তার ভগবান রুদ্র ও মাস্টারের সহিত কথা কহিতেছেন। ঘরে লাটু প্রভৃতি ভক্তেরাও আছেন।

আজ বুধবার, নন্দোৎসব, ১৮ই ভাদ্র; শ্রাবণ অষ্টমী-নবমী তিথি; ২রা সেপ্টেম্বর, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ। ঠাকুরের অসুখের বিষয় সমস্ত ডাক্তার শুনিলেন। ঠাকুর মেঝেতে আসিয়া ডাক্তারের কাছে বসিয়াছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – দেখো গা, ঔষধ সহ্য হয় না! ধাত আলাদা।

[টাকা স্পর্শন, গিরোবান্ধা, সঞ্চয় – এ-সব ঠাকুরের অসম্ভব ]

“আচ্ছা, এটা তোমার কি মনে হয়? টাকা ছুঁলে হাত এঁকে বেঁকে যায়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়! আর যদি আমি গিরো (গ্রন্থি) বাঁধি যতক্ষণ না গিরো খোলা হয়, ততক্ষণ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে থাকবে!”

এই বলিয়া একটি টাকা আনিতে বলিলেন। ডাক্তার দেখিয়া অবাক্‌ যে হাতের উপর টাকা দেওয়াতে হাত বাঁকিয়া গেল; আর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। টাকাটি স্থানান্তরিত করিবার পর, ক্রমে ক্রমে তিনবার দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়িয়া, তবে হাত পুনর্বার শিথিল হইল।

ডাক্তার মাস্টারকে বলিতেছেন, Action on the nerves (স্নায়ুর উপর ক্রিয়া)।

[পূর্বকথা – শম্ভু মল্লিকের বাগানে আফিম সঞ্চয় – জন্মভূমি কামারপুকুরে আম পাড়া – সঞ্চয় অসম্ভব ]

ঠাকুর আবার ডাক্তারকে বলিতেছেন, ‘আর একটি অবস্থা আছে। কিছু সঞ্চয় করবার জো নাই! শম্ভু মল্লিকের বাগানে একদিন গিছলাম। তখন বড় পেটের অসুখ। শম্ভু বললে – একটু একটু আফিম খেও তাহলে কম পড়বে। আমার কাপড়ের খোঁটে একটু আফিম বেঁধে দিলে। যখন ফিরে আসছি, ফটকের কাছে, কে জানে ঘুরতে লাগলাম – যেন পথ খুঁজে পাচ্ছি না। তারপর যখন আফিমটা খুলে ফেলে দিলে, তখন আবার সহজ অবস্থা হয়ে বাগানে ফিরে এলাম।

“দেশেও আম পেড়ে নিয়ে আসছি – আর চলতে পারলাম না, দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপর সেগুলো একটা ডোবের মতন জায়গায় রাখতে হল – তবে আসতে পারলাম! আচ্ছা, ওটা কি?”

ডাক্তার – ওর পেছনে আর একটা (শক্তি) আছে, মনের শক্তি।

মণি – ইনি বলেন, এটি ঈশ্বরের শক্তি (Godforce) আপনি বলছেন মনের শক্তি (Willforce)।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – আবার এমনি অবস্থা, যদি কেউ বললে, ‘কমে গেছে’ তো অমনি অনেকটা কমে যায়। সেদিন ব্রাহ্মণী বললে, ‘আট-আনা কমে গেছে’ – অমনি নাচতে লাগলুম!

ঠাকুর ডাক্তারের স্বভাব দেখিয়া সন্তুষ্ট হইয়াছেন। তিনি ডাক্তারকে বলিতেছেন, ‘তোমার স্বভাবটি বেশ। জ্ঞানের দুটি লক্ষণ – শান্ত ভাব, আর অভিমান থাকবে না।”

মণি – এঁর (ডাক্তারের) স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – আমি বলি, তিন টান হলে ভগবানকে পাওয়া যায়। মায়ের ছেলের উপর টান, সতীর পতির উপর টান, বিষয়ীর বিষয়ের উপর টান।

“যা হোক, আমার বাবু এটা ভাল করো!”

ডাক্তার এইবার অসুখের স্থানটি দেখিবেন। গোল বারান্দায় একখানি কেদারাতে ঠাকুর বসিলেন। ঠাকুর প্রথমে ডাক্তার সরকারের কথা বলিতেছেন, “শ্যালা, যেন গরুর জিব টিপলে!”

ভগবান – তিনি বোধ হয় ইচ্ছা করে ওরূপ করেন নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ – না, তা নয় খুব ভাল করে দেখবে বলে টিপেছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!