ভবঘুরেকথা
শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

সেই সময় ঢাকায় প্রভুপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ঢাকার সর্বত্র বাবা লোকনাথের অলৌকিক যোগশক্তি ও মহিমার কথা প্রচার করতে থাকেন। তা শুনে হরিচরণ নামে এক ধর্মপরাায়ণ ব্যক্তি সদ্গুরু লাভের আশায় একদিন ছুটে আসেন বারদীর আশ্রমে।

বাবা লোকনাথকে দর্শন করার সঙ্গে সঙ্গেই ভক্তিভাব জাগল হরিচরণের অন্তরে। তাঁর মনে অনুশোচনা হতে লাগল, এতদিন তিনি এই মহাযোগী মহাপুরষটিকে চিনতে পারেন নি।

বাবা লোকনাথের চরণে নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দিলেন হরিচরণ। তাঁর নিষ্ঠা ও শুদ্ধ ভক্তিভাব দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বাবা তাঁকে দীক্ষা দিলেন। সেই সঙ্গে পরম সত্যলাভের উপায়স্বরূপ যোগসাধনার পথ নির্দেশ করে দিলেন বাবা লোকনাথ। পরে তাঁর ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে বাবা লোকনাথ তাঁর ব্যবহৃত পাদুকা দু’টি দান করেন তাঁকে। বাড়িতে এই পাদুকা দু’টি বিগ্রহের মত প্রতিষ্ঠা করে নিয়মিত পূজা করে যান হরিচরণ।

একবার হরিচরণের পুত্র সত্যচরণ এক দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন। ক্রমে তাঁর প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়, বাঁচার কোন আশা নেই। শীর্ণ কঙ্কালসার দেহটি বিছানার সঙ্গে মিশে গেছে।

গুরুদেব লোকনাথের উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল হরিচরণের। তিনি ঠিক করলেন, পুত্রকে তিনি গুরু চরণে সঁপে দেবেন ; তিনি যা করার করবেন।

তাই হরিচরণ ডাক্তারী চিকিৎসা একেবারে বন্ধ করে, একদিন আশ্রমে পুত্রকে এনে বাবার চরণের কাছে শুইয়ে দিলেন। তখন উঠে বসারও ক্ষমতা নেই। হরিচরণ বাবাকে বললেন- বাবা, এবার আপনি যা করার করুন ; আমরা সব চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম।

রোগ কোন চিকিৎসায় না সারায়, হরিচরণ তাকে আশ্রমে বাবার কাছে নিয়ে এলেন। এবার কিন্তু বাবা সারদার রোগ সারাবার জন্য অদ্ভুত এক লীলা করলেন। তিনি তাকে বললেন- আমি তোর রোগ সারাবার ভার তোরই হাতে দিচ্ছি সারদাচরণ, তুই যা হোক একটা ওষুধ বেছে আন, যা তোর মন চায়।

বাবা লোকনাথ একবার মুমূর্ষু ছেলেটির দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন- সত্যচরণ, তুই তো ভাল হয়ে গেছিস ; তুই উঠে চলাফেরা কর।

বাবা এই কথা বলার সঙ্গে শক্তিসঞ্চার হলো মৃতপ্রায় সত্যচরণের দেহে। সে তৎক্ষণাৎ উঠে বসল, তারপর আশ্রমের সারা উঠোনময় সুস্থ স্বাভঅবিক মানুষের মত চলাফেরা করতে লাগল।

এইভাবে বাবা লোকনাথের কেবল একটিমাত্র কথা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করল সত্যচরণকে।

একবার হরিচরণের আর এক পুত্র সারদাচরণের এক কঠিন ব্যাধি হয়। সারদাচরণ বয়সে বালকমাত্র ; বাবা লোকনাথ তাকে স্নেহ করতেন। বালক সারদাচরণ মাঝে মাঝে আশ্রমে আসত।

রোগ কোন চিকিৎসায় না সারায়, হরিচরণ তাকে আশ্রমে বাবার কাছে নিয়ে এলেন। এবার কিন্তু বাবা সারদার রোগ সারাবার জন্য অদ্ভুত এক লীলা করলেন। তিনি তাকে বললেন- আমি তোর রোগ সারাবার ভার তোরই হাতে দিচ্ছি সারদাচরণ, তুই যা হোক একটা ওষুধ বেছে আন, যা তোর মন চায়।

এই কথা শুনে সারদাচরণ একটি গাছের লতা ছিঁড়ে সেটাকে বালার মত হাতে পরল। বাবা লোকনাথের অমোঘ ইচ্ছাশক্তির গুণে তাতেই তার রোগ একেবারে সেরে গেল।

এরপর একদিন বাবা লোকনাথ ভক্ত হরিচরণকে বললেন- হরিচরণ, আজ আমি কল্পতরু হলাম, তোর যা ইচ্ছা আমার কাছে চাইতে পারিস।

তখন হরিচরণ ও তাঁর স্ত্রী বাবাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে, তাঁর চরণ বন্দনা করে বললেন- তোমার প্রসন্নতাই আমাদের একমাত্র কাম্য, তোমার যা খুশি দাও।

বাবা তাদের মনের কথা জানতে পেরে সজ্ঞানে ব্রহ্ম চিন্তা করতে করতে আসক্তিবিহীন অবস্থায় দেহত্যাগ করার বর দান করলেন।

<<লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল ।। লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার>>

………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগারো
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা

……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!