ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

জ্ঞানযোগ ও রস প্রকরণ।
পয়ার।

শ্রীরামে যখন বিশ্বামিত্র ল’য়ে গেল।
স্বয়ং জানিয়া তবু মন্ত্র শিক্ষা দিল।।
তাড়কা বধিতে যবে রাম ছাড়ে বাণ।
বিশ্বামিত্র কেন ভীত হইল অজ্ঞান।।
পারে কিনা পারে রাম বধিতে তাড়কা।
তিন জনে খাইবেক যদি পায় দেখা।।
যদ্যপি বৈকুণ্ঠপতি বিষ্ণু অবতার।
তথাপি শ্রীরামরূপে মানুষ আকার।।
যখন বশিষ্ঠ মুনি অভিষেক করে।
সাগরের জলে স্নান করা’ল রামেরে।।
চারি সাগরের জল মুনি আনাইল।
শ্রীরামে ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান করাইল।।
যদ্যপি জানেন রাম সংসারের সার।
তথাপি করা’ল রামে মানুষ আচার।।
লীলার সময় সবে তেমতি জানিবে।
স্বয়ং জানিলে সেও নরভাবে ভাবে।।
ভূ-ভার হরণ তার প্রতিজ্ঞা সমস্ত।
অসুরের মুণ্ডচ্ছেদ ধরি ধনু অস্ত্র।।
গৌরাঙ্গ লীলায় দয়া অস্ত্র ধনু ধরি।
কলির কলুষ নাশ করিল শ্রীহরি।।
লিখিলেন গোস্বামীরা অস্ত্র সাঙ্গোপাঙ্গ।
করিলেন পাষণ্ড দলন শ্রীগৌরাঙ্গ।।
ধন্য লীলা প্রেম-ভক্তি করিল প্রকাশ।
রামচন্দ্র নরোত্তম প্রভু শ্রীনিবাস।।
তবু নাহি গেল বৈষ্ণবের কুটিনাটি।
জ্ঞানকাণ্ড কর্মকাণ্ড বিষয় ভ্রুকুটি।।
বৈষ্ণবের পক্ষে হরি ভকতি বিলাস।
লিখিলেন গ্রন্থ কবিরাজ কৃষ্ণদাস।।
তাহার মধ্যেতে প্রকাশিল বিধি ভক্তি।
বিধি ভক্তে নাহি হয় ব্রজভাব প্রাপ্তি।।
স্বয়ং এর শ্রীমুখের বাক্য নিদর্শন।
চৈতন্য চরিতামৃত মঙ্গলাচরণ।।
এবে দয়া প্রকাশিয়া প্রভু হরিচাঁদ।
বৈষ্ণবের কাটিলেন নাম অপরাধ।।
জ্ঞানকাণ্ড কর্মকাণ্ড মুক্তি অষ্টপাশ।
দয়া সুদর্শনে কাটিলেন হরিদাস।।
ভক্তি অঙ্গ জানাইতে নাম হরিদাস।
আপনি আপনা লীলা করেন প্রকাশ।।
বিরাগ বিশুদ্ধ প্রেম ভক্তি আচরণ।
রাগ ভক্তি দিয়া মাতাইল সর্বজন।।
গৃহে থেকে প্রেম ভক্তি সেই হয় শ্রেষ্ঠ।
অনুরাগ বিরাগেতে প্রেম ইষ্ট নিষ্ঠ।।
সাক্ষী তার কাশিখণ্ডে দেবতা সবাই।
শুনিলেন ধর্মকথা লোপামুদ্রা ঠাই।।
গৃহকর্ম রক্ষা করে বাক্য সত্য কয়।
বাণপ্রস্থ পরমহংস তার তুল্য নয়।।
গয়া গঙ্গা প্রয়াগ পুষ্কর দ্বারাবতী।
প্রভাস নর্মদা কুরুক্ষেত্র সরস্বতী।।
পৃথিবীর পুণ্য ক্ষেত্র আছে যত্র যত্র।
সব তীর্থ শ্রেষ্ঠ সে প্রয়াগ পুণ্যক্ষেত্র।।
যত যত তীর্থ আছে অবনী ভিতরে।
সত্য বাক্য সমকক্ষ হইতে না পারে।।
পর অন্ন খায় যে বা তীর্থধামে যায়।
ষড়াংশের এক অংশ ফল সেই পায়।।
বাণিজ্য কারণে যে বা তীর্থধামে যায়।
তীর্থের নাহিক ফল বাণিজ্য সে পায়।।
দেহের ইন্দ্রিয় বশ না হয়েছে যার।
তীর্থে গেলে ফলপ্রাপ্তি না হইবে তার।।
দেহের ইন্দ্রিয় বশ করেছে যে জন।
তার দরশনে সব তীর্থ দরশন।।
গৃহেতে থাকিয়া যার ভাবোদয় হয়।
সেই সে পরম সাধু জানিবে নিশ্চয়।।
অনুধ্বজ, শিখিধ্বজ, সুধন্বা, সুরথ।
অম্বরীষ, বিভীষণ, রঘু, ভগিরথ।।
প্রহলাদ, নারদ, শুক, ধ্রুব, মুচুকন্দ।
বিদুর, গুহক, বলী, শ্রীসহস্রস্কন্দ।।
এ সব গৃহস্থ নর বিধি ভক্তি রসে।
অন্তরঙ্গ ভক্ত সব থাকে গৃহবাসে।।
তার মধ্যে পঞ্চ অঙ্গ অতি অন্তরঙ্গ।
দাস্য সখ্য বাৎসল্য মধুর পঞ্চঅঙ্গ।।
শান্তভাব নিষ্ঠা-বতী চারি রসে রয়।
শান্ত রস রতি নিষ্ঠা পঞ্চ অঙ্গ কয়।।
অনর্পিত চরিং চিরাৎ শ্লোকে বাখানি।
লিখে বিল্বমঙ্গল উজ্জ্বল নীলমণি।।
অতি অন্তরঙ্গ মধ্যে করিয়াছে ঠিক।
তিন প্রভু ছয় গোঁসাই পঞ্চ রসিক।।
ইহারা সকলে মাত্র গৃহাশ্রমী হয়।
গৃহত্যাগী শেষে হয় গোস্বামীরা ছয়।।
ঢাকিয়া রসিক ধর্ম গৃহধর্ম দিয়া।
অবনীতে অবতীর্ণ শ্রীহরি আসিয়া।।
গৃহধর্ম লভিবেক যজিবে যাজন।
অন্তরঙ্গ রসিক হইবে সেই জন।।
পূর্বে যার যেই পথ আছে জানাজানি।
এদানি লইবে তারে সেই পথে টানি।।
বিশ্বনাথে বাঁচাইয়া হরিচাঁদ নিল।
সেই বিশ্বনাথ শেষে দরবেশ হ’ল।।
করেছেন কত লীলা পৌগণ্ড সময়।
লিখিতে অসাধ্য মোর পুঁথি বেড়ে যায়।।
কিছুদিন পরে হ’ল গোচারণ সায়।
বিবাহ করিল প্রভু কৈশোর সময়।।
ঠাকুরের জন্ম অগ্রে পরে যে সময়।
রামকান্ত আসিতেন মোহান্ত আলয়।।
বৈরাগী ব্রাহ্মণ আদি অতিথি আসিত।
কারু না কহিত প্রভু নিজ মনোনীত।।
নিন্দা কি বন্দনা কারু কিছু না করিত।
রামকান্ত এলে গিয়া পদে লোটাইত।।
কিছু অন্তরেতে রামকান্তে ল’য়ে যেত।
দুই প্রভু একাসনে নির্জনে বসিত।।
রামকান্তে বলিতেন তুমি মম গুরু।
যুগে যুগে তুমি মোর বাঞ্ছাকল্পতরু।।
এইভাবে রামকান্তে করিতেন স্তুতি।
কথোপকথনে কাটাতেন দিবারাতি।।
প্রভু সব মনোবৃত্তি কান্তে জানাইল।
মধুময় শ্রীহরি চরিত্র হরিবল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!