ভবঘুরেকথা
সন্তোষী মা

বন্দনা

বন্দিদেব গণপতি পার্বতী তনয়।
যাহার প্রসাদে সর্ব কার্য সিদ্ধি হয়।।
সর্ব বিঘ্ন নাশ হয় তোমার স্মরণে।
কর দয়া কর ত্রাণ এই জীবগণে।।
তুমি যে সিদ্ধিদাতা গণেশ মহারাজ।
কৃপা তুমি কর মোরে মাগি এই আজ।।
লহ প্রণাম সন্তোষী মাগো দয়াবতী।
যাহাতে লিখিতে পারি করি এ মিনতি।।
কৃপা করি মোর হৃদে কর তুমি বাস।
যাহাতে সমর্থ হই করিতে প্রকাশ।।
গণেশের তনয়া তুমি সন্তোষী মাতা।
সবে মোরা শুনিয়াছি তোমার বারতা।।

ব্রহ্ম দেব শুক্রাচার্য সর্ব শুভদাতা।
তৃপ্ত হয় শুনি সবে তোমার ক্ষমতা।।
শুক্রবারে তব ব্রত যেবা সদা করে।
সর্ব কার্য সিদ্ধ হয় তোমারই বরে।।
ত্রাণদাত্রী দেবীরূপে ত্রি-জগতে রয়।
দাম্পত্য জীবনে শান্তি তব বরে হয়।।
আড়ম্বরে করি পূজা দেবী নাহি চান।
ভক্তিভরে বাঁধ তারে ব্রতের বিধান।।
সবে মিলি শুন তবে করি নিবেদন।
সন্তোষী মাতার ব্রতের অপূর্ব কথন।।
কর্মহীনে কর্ম দেন, নির্ধনের ধন।
পুত্রহীনে পুত্র দেন, জানে সর্বজন।।

যে পুরুষ কামনা করি, ব্রত যে করে।
অচিরেতে দিব্য নারী আসে তার ঘরে।।
যেই নারী এই গ্রন্থ রাখ তার ঘরে।
সেই ঘর সুখ শান্তি আসে মা’র বরে।।
উদ্বিগ্ন যার চিত্ত থাকে অনুক্ষণ।
গ্রন্থ পাছে শুদ্ধ মন হয় সেই জন।।
ধনের বাসনা করি পড়ে একমন।
বহু ধনের অধিকারী হয় সেই জন।।
যে জন এ গ্রন্থ পড়ে সন্তানের তরে।।
অচিরেতে সু-সন্তান হয় তার বারে।।
দেবালয়ে নির্জনেতে সমাহিত চিত্তে
শুদ্ধভাবে কর পূজা ভক্তির সহিতে।।

ধন লাগি কষ্ট পায় না জোটে আহার।
মাতার কৃপায হয় ঐশ্বর্য তাহার।।
গণপতির কন্যা হন সন্তোষী মাতা।
সিদ্ধিদাত্রী রূপে তার অশেষ ক্ষমতা।।
নারায়ণ সদা তুষ্ট হন অতিশয়।
সন্তোষী মাতার পূজা যে স্থানে হয়।।
ভক্তিতে দেখিয়া মতি মাতা দয়াবতী।
তুষ্ট হয়ে শুভদৃষ্টি করে তার প্রতি।।
ব্রতশেষে করাইবে বালক-ভোজন।
তাহাতে সন্তোষী মা বলে কথা শেষ কর।
জয় সন্তোষী মা বলে কথা শেষ কর।
কথা শেষে মা অন্নপূর্ণার নাম ধর।।
অন্নপূর্ণার কৃপায় দু:খ নাহি রবে।
গৃহ অন্নে পূর্ণ হবে অভাব ঘচিবে।।

জয় সন্তোষী মা জয় বল উচ্চমনে।
হলুধ্বনি দাও পরে মিলি সর্বজনে।।
এইরূপে স্তুতি করি ভক্তিযুক্ত মনে।
শ্রদ্ধা ভরে স’পে দাও মাতার চরণে।।
ভক্তি শ্রদ্ধা ভিন্ন মাতা কিছু নাহি চান।
মাতার স্বরূপ জানে শ্রীকৃষ্ণ ভাগবান।।
অত্যাচারেই অতিষ্ঠ করিলে রাবণ।
দেবগণে নারায়ণে করিল স্মরণ।।
স্তব করে দেবগণ হৃষ্টচিত্ত মনে।
মন দিয়া সব কথা নারায়ণ শোনে।।
তুমি বিনা নারায়ণ নাই কোন গতি।
তবে দেব রহিবেনা এই সৃষ্টি-স্থিতি।।
যাদের প্রতাপে ধ্বংস হয় চরাচরে।
নিধন করিতে পার তাদের সংহারে।।

অতএব কর এবে যাতে পাই ত্রাণ।
করিতে হইবে তব পাপের বিধান।।
সব কথা শুনি নারায়ণ অত:পর।
এক একে বলিলন হইয়া তৎপর।।
ব্রহ্মরূপে করি আমি জগৎ সৃজন।
বিষ্ণুরূপে ধরি করি সবার পালন।।
প্রেম রূপে থাকি আমি কল্যাণের তরে।
মহাকাল রূপে থাকি সবার সংহারে।।
আমার গুণেতে চলে এ বিশ্ব সংসার।
আমি বিনা এ জগতে কিছু নাই আর।।
ভক্তি আর প্রেম ডোরে বশ করি সবে।
আমা হতে ভক্ত শ্রেষ্ঠ নিশ্চয় জানিবে।।

দেব-দেবী মাঝে সদা ব্যাপ্ত আমি রই।
তাঁদের পূজিলেই আমি তৃপ্তি হই।।
পূজা করে যে রূপেতে পূজা কর মোরে।
আমাকেই সব পূজা অর্পণ সে করে।।
তাই বলি কলিযুগে শ্রীসন্তোষী মায়।
সুখ শান্তি চাও যদি সঁপি তার পায়।।
সিদ্ধিদাতা গণপতি জগত বিখ্যাত।
গণপতি কন্যা সন্তোষী নামে খ্যাত।।
অতএব ভক্তি ভরে লওগো স্মরণ।
সিদ্ধি লাভ হবে তব যশ, অর্থ, ধন।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!