ভবঘুরেকথা
শ্রী ওঙ্কারনাথ

আমি তোর সম্মুখে রয়েছি, এই যে পার্শ্বে রয়েছি, এই পশ্চাতে রয়েছি, ঊর্দ্ধে, অধে, ভিতরে, বাহিরে- সর্ব্বত্রই রয়েছি। আমি যে বিশ্বব্যাপ্ত হয়ে রয়েছি রে! আমি ভিন্ন জগতে আর কিছু নাই।

ক্ষিতিরূপী আমি- আমায় প্রণাম করে নাম কর। জল আমি- আমায় প্রণাম করে নাম কর্‌। অগ্নি আমি, বায়ু আমি, ক্ষুদ্র আমি, বৃহৎ আমি, সৎ অসৎ যা কিছু দেখছিস্‌ শুনছিস্‌ সব আমি; দশদিক্‌ আমার কান- তোর প্রতি ডাক্‌, প্রতি কথা আমি শুনছি, আমি বধির নই।

ডাক্‌ ডাক্‌ আমার নাম কর্‌। আমি তোকে আজ্ঞা করছি, যতক্ষণ তোর জিহ্বা স্ববশ আছে ততক্ষণ তুই অবরাম্‌ নাম কর্‌। ফলাফল, শান্তি অশান্তি দেখে কাজ নেই; আমার আদেশ, আমি সন্তুষ্ট হব- তাই জেনে নাম কর্‌।

দেখ্‌ তোর মুখে নাম শুনতে বড় মিষ্টি লাগে। তাই তোর কাছে কাছে বেড়াই আর বলি নাম কর্‌। তোর কপটতা, আসক্তি আছে বলে নাম করতে ভয় কি? তোর পাপ, তাপ স্ত্রী-পুত্রাদিতে আসক্তি, আধি-ব্যাধি সব নষ্ট করে দিব, ওরে তুই নাম কর্‌।

আমি সর্ব্বভূতের সুহৃৎ, তোর সংসারের জন্য ভাবতে হবে না- নাম কর্‌। আমার নাম মঙ্গলময়; আমি তোর মঙ্গলই করছি, করছি, করব- নাম কর্‌। লোক-সঙ্গে চঞ্চল হয়ে পড়িস্‌- নাম করতে পারিস্‌ না, বিশ্বাস রাখতে পারিস্‌ না- লোক সঙ্গ ত্যাগ কর।

বিষয় লয়ে উন্মাদ হয়ে থাকলে দুঃখ ভোগ করতেই হবে। নির্জ্জন আমি বড় ভালবাসি, তুই নির্জ্জনে বসে বসে নাম কর্‌ আর আমি বসে বসে শুনি।

দেখতে পাচ্ছিস্‌ না বলে, আক্ষেপ করিস্‌ না, আমি সময়ের অপেক্ষা করছি, সময় হলেই দেখা দিব- নাম কর্‌, শান্তি পাবি- নাম কর্‌, অমর হবি- নাম কর্‌, জীবন্মুক্ত হয়ে যাবি- নাম কর্‌, আমি বল্‌ছি বলে- নাম কর্‌, আমি শুনছি জেনে- নাম কর্‌-

শ্রীরাম-রাম-রামোতি যে বদন্ত্যপি সর্ব্বদা।
তেষাং ভুক্তিশ্চ মুক্তিশ্চ ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ।।

তুই নাম কর্‌। তুই জ্ঞান জ্ঞান করিস্‌, শুধু জ্ঞানে কি হয়? ‘একজন রাজার প্রচুর অর্থ আছে’ – এই জ্ঞান লাভ করলেই তোর যেমন দুঃখ নিবৃত্তি হয় না, সেবার দ্বারা রাজাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে অর্থ প্রাপ্তি হয়, তবে দুঃখ নিবৃত্তি হয়। সেইরূপ রাম, কৃষ্ণ, শ্যামা, শঙ্কর অথবা পরমব্রহ্ম কিংবা সোহহং ইত্যাদিরূপে শুধু জ্ঞানে তোর লাভ কি?

তুই ভজনা কর্‌। এই কলিযুগে নামকীর্ত্তনরূপ যজ্ঞের দ্বারা আমার পূজা কর। হরিনামে পাপ তাপ দূরে যায়, হরিনামে সংসার-বন্ধন ছুটে যায়, হরিনামে দিবানিশি আমাকে দেখতে পায়, আমার নামে সর্ব্বদুঃখ নিবৃত্তি হয়, আমার নামে মোক্ষ হয়।

আচ্ছা নামে যে মোক্ষ হয় তুমি আজ বলছ, না আরও বলেছ?

কেন বরাহ-পুরাণে বলেছি-

নারায়ণাচ্যুতানন্ত-বাসুদেবেতি যো নরঃ।
সততং কীর্ত্তয়েদ্‌ভূমি যাতি মল্লয়তাং স হি।।

– হে ভূমি! নারায়ণ, অচ্যুত, অনন্ত, বাসুদেব আমার এই নাম সকল যে সর্ব্বদা কীর্ত্তন করে, সে আমাতেই লয় হয়।

শুধু বরাহপুরাণে বলেছ?

না রে না; গরুড়পুরাণে বলেছি-

কিং করিষ্যতি সাংখ্যেন কিং যোগৈর্নরনায়ক।
মুক্তিমিচ্ছসি রাজেন্দ্র কুরু গোবিন্দকীর্ত্তনম্‌।।

…………………………
‘শ্রী ওঙ্কারনাথ-রচনাবলী’(৩য়) থেকে বর্তমান পত্রিকা থেকে সংকলিত

আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে : ভারতের সাধক-সাধিকা

পুণঃপ্রচারে বিনীত – প্রণয় সেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!