ভবঘুরেকথা
সত্যনারায়ণ

শুন মাতা, সে দেবতা, পূজন ত্বরিৎ।
আসিবে পিতা, লয়ে জামাতা, ধনের সহিত।।
সেই কথা, শুনি তথা, হরষিত মন।
পাইয়া দীক্ষা করিয়া ভিক্ষা পূজে নারায়ণ।।
যথাশক্তি, করি ভক্তি, পাইল প্রসাদ।
হয়ে তুষ্ট, মনোভীষ্ট, পুরাও জগন্নাথ।
রহিল তথা, সাধুর সূতা, ভাবিয়া গোঁসাই।
যায় ত্বরিতে, উদ্ধারিতে, শ্বশুর-জামাই।।
নিদ্রা যায়, অত্যুষায়, নৃপতি নন্দন।
শির: স্থানে, নারায়ন, কহিল স্বপনে।।
শুন রাজ, কিবা কাজ, কর নৃপবন।
সর্ব্বথায়, করা বিদায়, সাধুর কুমার।
কেনে তুল্য, দিয়া মূল্য দ্রব্য মহাজন।
অবিচারে, কারাগরে, কর অপমান।।
দেখিয়া স্বপন, চমকিত মন, উঠে নরপতি।
সাধুতনয়, কর বিদায়, বলে শীঘ্রগতি।
হইল সদয়, দীন দয়াময়, দেব গদাধর।
করি যত্ন, দিয়া রত্ন, তোষে নরবর সম্ভাষণ,
আলিঙ্গন, নৃপতি নন্দন।
করে ধরি, বিনয় করি, মিত্র সম্ভাষণ।।

ত্যাজিয়া সন্দে, পরমানন্দে, বলে সদাগরে।
মাল্লা-মাঝি, ধরি কাছি, হরিধ্বনি করে।।
মনে অদ্য, ভাবি সত্য, চরণারবিন্দ।
নাহি শঙ্কা, বলেন গঙ্গা, পাঁচালী প্রবন্ধে।।
চলে ধনপতি হয়ে হৃষ্টমতি,
জামাতা লইয়া সঙ্গে।।
যতি মাঝি-দাঁড়ি, সবেগাহে সারি,
হাস পরিহাস রঙ্গে।।
যতেক সুন্দরী, যায় জলভরি,
বসনে ঢাকিয়া মুখ।।
দেখিয়া সু-শোভা, হয়ে মনোলোভা,
নিন্দে, নিজ পতি মুখ।।
দামারি বাদন, লাগায়ে নিশান,
নৃপতি দণ্ডক ধরে।
দেখিছ কি ঘাট, মারে মাল ছাট,
বাহ বাহ রব করে।।
হেন সময়, সত্য মায়াময়,
সাধুকে করিল মায়া।
গঙ্গা নারায়ণে, রাখহ চরণে
দিয়া তব পদছায়া।।

এইরূপে সদাগর করিল গমন।
কপট করিল পথে সত্যনারায়ণ।
হইল বৈষ্ণব রূপ অতি মনোহর।
গলায় দোলন ভালে তিলক সুন্দর।
জয় রাধাকৃষ্ণ মুখে বলে সর্বক্ষণ।
আসিয়া নদীর তটে দিল দরশন।।
জিজ্ঞাসিল করিয়া বিনয়।
কি ভরা ভরেছ বাছা সাধুর তনয়।।
ধনে মত্ত সদাগর করে অহঙ্কার।
ভরিয়াছি লতা-পাতা বলে বারবার।।
শুনিয়া সাধুর কথা কোপে নারায়ণ।
লতা-পাতা লইয়া তরী ভাসিল তখন।।
তরণী দেখিয়া সাধু পরম চিন্তিত।
অহঙ্কার চূর্ণ হইল বড়ই দু:খিত।।
তরণী ত্যাজিয়া সাধু পরিয়া চরণে।।
কাতর হইয়া স্তব করে নারায়ণে।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!