ভবঘুরেকথা
সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন

সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন

সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন একদিন মন্দিরে বসে মায়ের পুজো করার সময় হঠাৎই ইচ্ছা হল মায়ের রাঙাচরণে পদ্মফুল অর্পণ করার। পুষ্পপাত্রে ফুল থাকলেও পদ্মফুল ছিল না। তিনি অস্থির হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন-

‘মা – মা, তুই সত্য, তুই সর্বনিয়ন্তা, তোর ভিতরেই না জগৎ বিধৃত হয়ে আছে, তুই আমার বাসনা পূর্ণ করে দেন মা, তোর রাঙাচরণে পদ্মফুল অঞ্জলি দেবার জন্য আমার প্রাণ যে বড়ই ব্যাকুল মা।’

অবিরাম কেঁদে চলেছেন প্রসাদ। এমন সময় তাঁর মনের ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলেন, প্রসাদ, তুমি একটা কাজ কর। ওই যে বাড়ির কোণেতে ওই গাছটি দেখছ, ওখানে গেলেই তুমি পদ্মফুল পাবে। সেটি ছিল গাব গাছ। রামপ্রসাদ সেই গাছে উঠে অবাক হয়ে দেখলেন থরে থরে পদ্মফুল ফুটে আছে। তিনি মনের সুখে সেই ফুল সংগ্রহ করে এনে মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে তৃপ্ত হলেন।

‘মুক্ত কর মা মুক্ত কর মা – মুক্তকেশী।
ভবে যন্ত্রণা পাই দিবানিশি।।’

মায়ের ডাকে জগদীশ্বরী বাবাকে কিছু না বলেই ভাত খেতে চলে গেলেন। কন্যা যে খেতে গেছে তার বিন্দুবিসর্গও প্রসাদ জানতে পারলেন না। তিনি আপন মনে গান গাইতে গাইতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে দড়ি গলিয়ে দিতে লাগলেন এবং জগদীশ্বরীর মতোই কেউ ওপ্রান্ত থেকে সেই দড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন সাধকপ্রবরকে।

একবার প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বহু মানুষ গৃহহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রসাদের ভিটেতে। মায়ের করুণায় দুর্যোগের হাত থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা পেয়েছিল প্রসাদের ভিটা বাড়িটি। দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর প্রসাদ দেখলেন, মানুষের ভিড়ে তাঁর ভিটার বেড়াটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। তিনি কন্যা জগদীশ্বরীকে নিয়ে বেড়া বাঁধার কাজে হাত দিলেন।

অল্পক্ষণের মধ্যেই বাবা ও মেয়ে মিলে বেড়ার কাজ অনেকটাই এগিয়ে ফেলেন। প্রসাদ দুপুরের খাবার খেয়েই বেড়া বাঁধার কাজে হাত দিয়েছিলেন কিন্তু তখনও জগদীশ্বরীর খাওয়া হয়নি। মায়ের ডাকে জগদীশ্বরী বাবাকে কিছু না বলেই ভাত খেতে চলে গেলেন। কন্যা যে খেতে গেছে তার বিন্দুবিসর্গও প্রসাদ জানতে পারলেন না।

তিনি আপন মনে গান গাইতে গাইতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে দড়ি গলিয়ে দিতে লাগলেন এবং জগদীশ্বরীর মতোই কেউ ওপ্রান্ত থেকে সেই দড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন সাধকপ্রবরকে।

জগদীশ্বরী বললেন, না বাবা, আমি তো এতক্ষণ এখানে ছিলাম না। আমি ভাত খেতে ঘরে গিয়েছিলাম। কন্যার কথা শুনে, হায় হায় করে উঠলেন রামপ্রসাদ।

বেশ কিছুক্ষণ বাদে আহার শেষ করে কন্যা ফিরে এসে দেখলেন বেড়া বাঁধার কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি অবাক হয়ে বাবার কাছে জানতে চাইলেন, এতখানি বেড়া তুমি একা কী করে বাঁধলে বাবা ! প্রসাদ চমকে উঠে বললেন, কেন মা ! তুমি তো আমার সঙ্গেই ছিলে। তাহলে আমি একলা কোথায় ?

জগদীশ্বরী বললেন, না বাবা, আমি তো এতক্ষণ এখানে ছিলাম না। আমি ভাত খেতে ঘরে গিয়েছিলাম। কন্যার কথা শুনে, হায় হায় করে উঠলেন রামপ্রসাদ। তিনি মায়ের কারসাজির কথা বুঝতে পেরে বললেন, ‘বেটি এতক্ষণ কাছে বসে থেকে গান শুনতে শুনতে সমস্ত কাজ করে গেলেন, একবারও সাড়া দিলেন না। মা হয়ে এ কী ছলনা তিনি আমার সঙ্গে করলেন।’ তারপর তিনি গাইলেন এই গানটি-

‘মন কেন মায়ের চরণ ছাড়া।
ও মন ভাব শক্তি, পাবে মুক্তি, বাঁধ দিয়ে ভক্তি-দড়া,
সময় থাকিতে না দেখলে মন, ছি ছি রে তোর কপাল পোড়া।

মা ভক্তে ছলিতে তনয়া রূপেতে, বাঁধেন আসি ঘরের বেড়া।
মায়ে যত ভালবাসে, বুঝা যাবে মৃত্যু-শেষে,
মোলে দু’চার দণ্ড কান্নাকাটি, শেষে দেবে গোবর ছড়া।। …’
জয় মা

………………….
পুণঃপ্রচারে বিনীত- প্রণয় সেন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………….
আরও পড়ুন-
সাধক কবি কিরণচাঁদ দরবেশ
মরমী সাধক মহেন্দ্রনাথ গোস্বামী
কাওয়ালির জনক আমির খসরু
মহান সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপ কুমার রায়
সাধক কমলাকান্ত
বাঙালির প্রাণনাথ বেতারের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ্ খাঁ
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র ৪৭তম মহাপ্রয়াণ দিবস
মীর্জা গালিব
ফকির আব্দুল খালেক
অচেনা যোগী কাজী নজরুল
সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!