ভবঘুরেকথা
তথাগত গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধ ভগবান

স্রষ্টা আমাদের থেকে কী চান?

-মেঘনা কুণ্ডু

আমরা হয়তো নিশ্চয়ই অহরহ শুনেছি যে, ধ্যানের দ্বারা অশান্ত মন শান্ত হয়, চৈতন্যপ্রাপ্তি ঘটে। এর সাথে সাথে আধ্যাত্মিকতার বিকাশও ঘটে। আরও বলা হয় যে, এতে করে সাধকের আত্মার সাথে স্রষ্টাের তথা পরমব্রহ্মের যোগসূত্র আরও প্রগাঢ় হয়। সৃষ্টি হয় যোগ। অর্থাৎ যোগাযোগ। অগণিত মহাযোগীরা তাঁদের ধ্যান নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা মানবের মাঝে তুলে ধরেছেন।

তাঁদেরই মধ্যে একজন মহাপুরুষ, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ‘রাজযোগ’- গ্রন্থে ধ্যান বা meditation সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, যা সত্যিই অনবদ্য। সত্যি বলতে গেলে, সিংহাসনে দু-তিনটে মূর্তি রেখে জল-বাতাসা দিলে তাঁকে আস্তিক বলা চলে বটে; কিন্তু আধ্যাত্মিক বলা চলে না। বলছি না যে, পূজা-প্রার্থনা অন্যায়; সে আমি নিজেও করি।

কারণ সাধারণ মানুষের পক্ষে নিরাকার স্রষ্টার উপর আস্থা রাখা একটু অসুবিধাজনক, আকার থাকলে সুবিধা হয় নিজের ভক্তি প্রকাশ করতে এবং ওটাও আধ্যাত্মিকতার এক পর্যায় বা ধাপ। মহাপুরুষদের আধার অনেক উচ্চতর হবার কারণে তাঁদের সাথে পরমাত্মার সম্পর্ক অনেক উচ্চস্তরের; এবার প্রশ্ন হলো, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ সংসারে থেকেও কীভাবে সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে কি করে এই ঐশ্বরিক ভক্তিপ্রেমরস আস্বাদন করতে পারি?

আসলে আমরা বারংবার ভুলে যাই যে, স্রষ্টা আমাদের থেকে কিছুই চান না, বরং তিনি আমাদেরকে চান। আমরা কতটুকু সমর্পিত তাঁর প্রতি, হাজার কষ্টের মাঝেও তিনি আমাদের হৃদয়ে সেই ভক্তিভাবের সহিত বিরাজিত কিনা, সেটাই তাঁর দেখার বিষয়। আপনি তাঁকে একগুণ ভালোবাসলে, তিনি আপনাকে একশতগুণ বেশি ভালোবাসা ফেরৎ দেবেন, শুধু চাই তাঁর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর চাই সরল মনোভাব।

এইভাবে চলতে চলতেই একসময় আপনি নিজেই বুঝবেন যে, আপনার সাথে পরমাত্মার সম্পর্ক অনেক উচ্চতরভাবে স্থাপিত হয়েছে, তখন আপনি এক ডাকেই তাঁর সাড়া অনুভব করবেন এবং আপনার জীবনে এক প্রগতি লক্ষ্য করবেন এবং জীবন সুখ-সম্বৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। সর্বশেষে এটাই বলবো যে-

অশান্ত মনে এবং জোর করে ধ্যান হয় না। হচ্ছে না যখন, তখন চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই আপাতত; বেশি করে ভক্তিমূলক সঙ্গীত শ্রবণ করতে পারি, ভক্তিবাদকে বোঝার চেষ্টা করতে পারি, নিজ নিজ ইষ্টদেবের নাম জপ করতে পারি, অন্তত ১০৮ বার (দুবার করে)-

এটা আবশ্যক, কারণ, আমাদের আত্মার ওপর জাগতিক জীবনের ক্রোধ, লোভ-লালসা,কামনা-বাসনার যে ধুলো পড়ে আছে সেগুলোকে পরিস্কার করা আবশ্যক, কারণ, আমাদের দেহ-ই এক একটি মন্দির, মসজিদ, গির্জা বা যা-ই বলতে চাই বলতে পারি এবং পরিশুদ্ধ স্থান ছাড়া স্রষ্টা অধিষ্ঠান অসম্ভব। মোটকথা হলো আগে মনে ভক্তিভাব না উদয় হলে অধরকে ধরা যায় না। ভক্তিভাবের উদয় হলেই মন স্থির হয়-একিভূত হয়। ভক্তের ভক্তিতেই স্রষ্টার প্রকাশ ঘটে।

এইভাবে চলতে চলতেই একসময় আপনি নিজেই বুঝবেন যে, আপনার সাথে পরমাত্মার সম্পর্ক অনেক উচ্চতরভাবে স্থাপিত হয়েছে, তখন আপনি এক ডাকেই তাঁর সাড়া অনুভব করবেন এবং আপনার জীবনে এক প্রগতি লক্ষ্য করবেন এবং জীবন সুখ-সম্বৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। সর্বশেষে এটাই বলবো যে-

“ভগবান আমাদের দিতেই পারেন,
কিন্তু নিতে যে হয় নিজের গুণে।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ঘরে-বাইরে )

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই “সাধু পঞ্জিকা” দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………..
আরো পড়ুন:
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: এক
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: দুই
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি: তিন


লালন ফকিরের নববিধান: এক
লালন ফকিরের নববিধান: দুই

লালন ফকিরের নববিধান: তিন

লালন সাঁইজির খোঁজে: এক
লালন সাঁইজির খোঁজে: দুই


মহাত্মা লালন সাঁইজির দোলপূর্ণিমা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজির স্মরণে বিশ্ব লালন দিবস
লালন গানের বাজার বেড়েছে গুরুবাদ গুরুত্ব পায়নি
লালন আখড়ায় মেলা নয় হোক সাধুসঙ্গ
কে বলে রে আমি আমি
ফকির লালন সাঁই
ফকির লালনের ফকিরি
ফকির লালন সাঁই


বিশ্ববাঙালি লালন শাহ্
ফকির লালন সাঁইজির শ্রীরূপ
গুরুপূর্ণিমা ও ফকির লালন
বিকৃত হচ্ছে লালনের বাণী?

লালন অক্ষ কিংবা দ্রাঘিমা বিচ্ছিন্ন এক নক্ষত্র
লালন ফকির : হিন্দু কি যবন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!