ভবঘুরেকথা
ফকির কাশেম আলী চিশতী

১০১
মানব জীবন হইল, একটা শুক্রবারের মতো।
শুক্রবার সকালে দুনিয়ার সৃষ্টি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দুনিয়ার ধ্বংস।
মাঝখানে, জুমবা কইরা গেলাম -ভালোবাসার
মানুযগো লইয়া।

১০২
শুনতে শুনতে ‘সনাতন’।

১০৩
জমতে জমতে-জমজম।

১০৪
জানতে জানতে জানোয়ার।
বুঝতে বুঝতে বুযূর্গান।
(জানার সাথে ভক্তি যোগ হলে বুঝ হয়)

১০৫
হারতে হারতে জয়।
জিততে জিততে ক্ষয়।
(হার> আহার> বিহার> সমাহার)

১০৬
হজ্ব মানে -আত্মদর্শন।

ফানা ফির শেখ,
ফানা ফির রাসূল;
ফানা ফিল্লাহ্ বাকা;
বাকা বিল্লাহ্ বাকা;
-তারপর হবে দেখা।

১০৭
বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজি* আমাদের জন্য
একটাই যুদ্ধ রাইখা গেছেন, ‘যুদ্ধ-ই আকবর’।
নফ্সের বিরূদ্ধে জেহাদ।

‘নিজ স্বাধীন’ না হইয়া, পরেরে স্বাধীনতার মন্ত্রনা
দেওন যায় না।
(দরূদ)

১০৮
নবী’র মতে যার মত,
সে-ই নবী’র উম্মত।

১০৯
নবী-রাসূলগণের কাহিনী, -মনোশিক্ষা।

১১০
আগে জাগাও মোহাম্মদী নূর।
তইলে জাগবো, জাতি নূর।

১১২
একজন ওফাতুন্নবী,
আর একজন হায়াতুন্নবী।

১১৩
হিযরত, কোরবানী; মহররমা’র অন্তর্নিহিত শিক্ষা নিজেতে ধারণ করা-ই সাধকের সাধনা।

১১৪
জীবের মরণকালকে ‘মহররম’ বলা হয়।

১১৫
যার যার ভিতরের জিদ-ই, তার এজিদ। এজিদা’রে বধ কর।
(নিজের জান্তবতাকে বলিদান করতে
হয়। পশুত্ব কোরবানী করতে হয়।
আর, আমিত্ব’কে উৎসর্গ করে
পরমত্বে বিলীন হওয়াকে, ‘মহররমা’ বলা হয়)

১১৬
মন’ডা পরিস্কার অইয়া গেলে,
গুরু হইল কাচের পৃষ্ঠে পায়রা (পারদ);
আয়নায় তখন সব দেখা যায়।

১১৭
গুরু থুইয়া গোবিন্দ ভজো?
এ মন্ত্রনা তোমায় কে দিলো?

১১৮
গুরু’র চাইতে ভক্ত বড়।
ভক্তের চাইতে, ভক্তের চরণ ধূলি বড়।

১১৯
গুরু হইলো ঘণ্টা।
বাজাইলে -‘বাজান’।

১২০
রাধা কৃষ্ণের প্রেমের গুরু।
কৃষ্ণ রাধা’র জ্ঞানের গুরু।

১২১
মেয়েদের দেখলে মায়ের চেহারা মনে কইরো।
কামভাব দূর হইব, মন পরিষ্কার অইব।
(শিক্ষাগুরু তাঁর শিষ্যকে বললেন)

১২২
মাতা গুরু, পিতা গুরু;
গুরু জেষ্ঠ্য ভাই।
তারচেয়ে অধিক গুরু-
ভজিলে সে-ন পাই।

শরীয়ত মানে সুন্দর।
শরীয়তের গুরু মাতা-পিতা।

১২৩
গুরু কোন মানুয নয়। গুরু হইল জ্ঞান।
বাইরে শিক্ষা গুরু’র থাইক্যা শিক্ষা নিয়া,
ভিতরে দীক্ষা গুরু’রে জাগাইয়া তুলতে অয়।
গূঢ় এ থাইক্যা গুরুত্ব পাইলে, ‘গুরু’ অয়।

১২৪
আইন-গাইন। আইন জ্ঞানের অধিকারী।
আইন না মানলে জ্ঞান থাকে না।

সদকর্মে জ্ঞান বাড়ে।

১২৫
বুদ্ধি-বিবেক- জ্ঞান<(মন-ধ্যান-জ্ঞান) এক কইরা,
জ্ঞানের আশ্রয়ে চলতে অয়।

১২৬
অল্প জ্ঞানে, বুদ্ধি বেশী।
বেশী জ্ঞানে, নিগুম বেশী।
ন্যাচড়া কাথায়, উঁম বেশী।
ক্যাতরা চোখে, ঘুম বেশী।

১২৭
দাদার জ্ঞানে গাধা।
বাপের জ্ঞানে আধা।
নিজ জ্ঞনে শাহাজাদা।

১২৮
জ্ঞাতা-জ্ঞেয়-জ্ঞান।
প্রেমিক-প্রেমাস্পদ-প্রেম।

১২৯
জ্ঞান হইল ‘বড় পীর’।

১৩০
দেহ’ডা হইল গাড়ি।
জ্ঞান হইল স্টিয়ারিং।
প্রেম হইল এক্সেলেটর।
কাম হইল ক্লাচ।
গাড়ী চালাও জ্ঞান কইরা।-এক্সেলেটর দাবাও,
ক্লাচ নামাও।

১৩১
বাবারে, আমরা একটাই দোয়া করি।
-যার জ্ঞান (ঈমান) আছে সের, তারে সোয়া
সের কইরা দাও। ছটাক, আধ’বা
বাদ কইরা দাও।

১৩২
এক জ্ঞানী যায়, আরেক জ্ঞানীর কাছে।
চৈতন্যজ্ঞান পাবার আশে।
অজ্ঞানী কখনো জ্ঞানীর কাছে যায় না।

১৩৩
জ্ঞান অর্জন করতে অইলে,
শিক্ষা-দীক্ষা দুইডাই লাগবো।

১৩৪
জ্ঞানীর ঘুম -’চেতন ঘুম’।

১৩৫
প্রেম, -’সুক্ষ্ম প্রেম’।
সুক্ষ্ম প্রেম, -মাখামাখি প্রেম। উর্ধ্বগামী।
স্থুল প্রেম, -জড়াজড়ি। ডুবে যায়।
কামে (নিষ্কাম কর্ম) -প্রেমে দুনিয়া।

১৩৬
কামে (নিষ্কাম কর্ম), প্রেমে -দুনিয়া।

১৩৭
কামাই করতে আইয়া, কামাই কইরো না বাবা।

১৩৮
প্রেমের রশি, দুইজন দুই দিকে টানলে-ছিড়া যাইব।
একজন টানলে,আরেকজন ঢিল দিতে অইব।

১৩৯
যোগী, যুগ যুগান্তরে ঘুরে।
প্রেমিক প্রেম ধারন করে।

১৪০
প্রেমভাব মিলনের সন্তান মা-বাবারে মাইন্যা চলে, ধার্মিক অয়।
কামভাব মিলনের সন্তান, হয় তার উল্টা।

১৪১
অ-প্রেমিকের কাছে যাওয়া শাস্ত্রেতে বারন।

১৪২
বন্ধু’রে দোষ দেওন যায় না।

১৪৩
মত’টা যখন আলোকিত হইয়া যায়,
প্রেমকুমার তখনই আইসা বসে।
এই তো, আলোমতি- প্রেমকুমারের প্রেম কাহিনী।

১৪৪
প্রেমের খেলা, ইশ্কের মামলা;
-আজীবন চলতেই থাকবো।

১৪৫
বুঝতে অয় ‘সংক্ষেপে’।

১৪৬
পরেরে বুঝানির ঠেকা নাই। নিজে বুঝা’ই ঠেকা।
ভালোবাসলে- ঠেকা আছে।

১৪৭
ভালোবাসা ভাঙ্গে না।
পোকমারাবাসা (পোকামাকড়ের বাসা) ভাইঙ্গা
যায়। এই দেহডাই(একটি পাকা/সাধন সিদ্ধ দেহ) ভালোবাসা। ভালোবাসা ভাঙ্গে না-ঝড়ি,তুফান আইলেও। ভালোবাসা’য় প্রেম থাকে।ভান্ড (দেহভান্ড) পরিস্কার রাইখো, বাবা। রাব দোনায় ঘি আটে না।

১৪৮
তৌহীদ কর।
(সৃষ্টিকূলের সকল প্রাণী তাদের জন্য নির্ধারিত সামাজিক আইন, প্রাকৃতিক আইন; ঐশী আইন মেনে চলে -সেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়; শুধুমাত্র মানবজাতি ব্যতীত। তাই মানব জাতিকে তৌহীদ করতে হয়। সকলই তাঁর থেকে আগত, তাঁর প্রতি প্রত্যাবর্তিত এবং ব্যক্তি যেন তাঁর মতে উপভোগ করে। তৌহীদ করা মানে, একাত্মভাবে সকল কিছুকে এক করা। তৌহীদ করা-ই সকল ধর্ম-কর্মের মূল ভিত্তি।)

১৪৯
যা আছে বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডে,
তা আছে এই দেহ ভান্ডে।
তার চেয়ে একটা বেশী আছে -‘তৌহীদ’।
মালিক স্বয়ং এখান আছেন।

১৫০
বান বাতাসে বৃষ্টি,
ভাল মন্দ আল্লাহ’র সৃষ্টি।

<<ফকির কাশেম আলী চিশতী’র বাণী : দুই ।। ফকির কাশেম আলী চিশতী র বাণী : চার>>

………………………
আরো পড়ুন-
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : এক
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : দুই
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : তিন
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : চার
ফকির কাশেম আলী চিশতী কাদ্দসাল্লাহ সের্রুহু’র বাণী : অন্যান্য

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!