ভবঘুরেকথা
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস কারবালা

-ড. হাসান রাজা

(পূর্বে প্রকাশের পর)
১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদের পবিত্র আহলে বাইত শহীদে আকবর হজরত মাওলা হোসাইন (আ), তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীসহ ৭২ জন পবিত্র শাহাদত বরণকারী মুমিনগণ হলেন-

১. হজরত মাওলা হোসাইন (আ)।
২. হজরত আব্বাস ইবনে আলী (র)।
৩. হজরত জাফর ইবনে আলী (র)।
৪. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আলী (র)।
৫. হজরত আবু ওসমান ইবনে আলী (র)।
৬. হজরত আবু বকর ইবনে আলী (র)।
৭. হজরত মুহাম্মদ ইবনে আলী (র)।
৮. হজরত কাসেম ইবনে ইমাম হাসান (র)।
৯. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইমাম হাসান (র)।
১০. হজরত আবু বকর ইবনে ইমাম হাসান (র)।
১১. হজরত আলী আকবর ইবনে ইমাম হোসাইন (র)।
১২. হজরত আলী আসগর ইবনে ইমামা হোসাইন (র)।
১৩. হজরত জাফর ইবনে আকিল (র)।
১৪. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুসলিম (র)।
১৫. হজরত আওন ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাফর (র)।
১৬. হজরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাফর (র)।
১৭. হজরত আবদুল রহমান ইবনে আকিল (র)।
১৮. হজরত মুহাম্মদ ইবনে আবি সাঈদ ইবনে আকিল (র)।
১৯. হজরত আলী ইবনে আব্বাস (র)।
২০. হজরত হাবিব ইবনে মুজাহের (র)।
২১. হজরত মুসলিম ইবনে আউসাজা আল আসাদি (র)।
২২. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমের আল্ কালবি (র)।
২৩. হজরত আনাস ইবনে হারেস (র)।
২৪. হজরত বারির ইবনে হোযাইর হামাদানি (র)।
২৫. হজরত যুহাইর ইবনে কাইন বাজালি (র)।
২৬. হজরত হাজ্জাজ ইবনে মাসরুক আল্ জু’ফি (র)।

এছাড়াও হজরত মাওলা হোসাইন (আ)-এর সঙ্গী-সাথীগণের মধ্যে ছিলেন-

২৭. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমাইর আল্ কালবি (র)।
২৮. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আযরা আল্ গেফারী (র)।
২৯. হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আযরা আল্ গেফারি (র)।
৩০. হজরত নাফে ইবনে হেলাল আল্ জামালি (র)।
৩১. হজরত জাবের ইবনে হাজ্জাজ আত্ তামিমি (র)।
৩২. হজরত জাবালা ইবনে আলী আশ শায়বানি (র)।
৩৩. হজরত জুনাদা ইবনে হারেস ইবনে সুলায়মান (র)।
৩৪. হজরত জুনাদা ইবনে কা’ব আনসারি (র)।
৩৫. হজরত হানযালা ইবনে আসয়াদ আশ শাবামি (র)।
৩৬. হজরত হাবাশ ইবনে কাইস নাহসি (র)।
৩৭. হজরত যাইন ইবনে মালেক আত্ তাইমি (র)।
৩৮. হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আবদে রাব্বিহ আল্ আনসারি (র)।
৩৯. হজরত ওমর ইবনে জুনাইদা (র)।
৪০. হজরত আমর ইবনে কারজাতাল আনসারি (র)।
৪১. হজরত ওহাব ইবনে আব্দুল্লাহ্ আল্ কালবি (র)।
৪২. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে বাসার খেলমি (র)।
৪৩. হজরত ওয়াকিয়াহ ইবনে সাঈদ ইবনে আল হাতেম আত্ তায়ি (র)।
৪৪. হজরত আসমার ইবনে হেশাম ইবনে আল্ হাতেম আত্ তায়ি (র)।
৪৫. হজরত মুসলিম ইবনে কাজাইর ইবনে আল্ হাতেম আত্ তায়ি (র)।
৪৬. হজরত আসলাম আত্ তুরকি (র)।
৪৭. হজরত সাইফ ইবনে হারেস ইবনে সুরাই (র)।
৪৮. হজরত হারেস ইবনে সুরাই (র)।
৪৯. হজরত কাসেম ইবনে হাবিব (র)।
৫০. হজরত মাসউদ ইবনে হাজ্জাজ আত্ তাইমি (র)।
৫১. হজরত যিয়াদ ইবনে গরিয আল্ সায়দাবি (র)।
৫২. হজরত জাহের ইবনে আমর আল্ কিন্দি (র)।
৫৩. হজরত সাঈদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ আল্ হানাফি (র)।
৫৪. হজরত সালমান ইবনে নাজ্জার আল্ বাজালি (র)।
৫৫. হজরত সুয়ায়েদ ইবনে আমর ইবনে আবিল মুতা (র)।
৫৬. হজরত সাইফ ইবনে মালেক আবদি (র)।
৫৭. হজরত জারসাগা ইবনে মালেক তাবলাগি (র)।
৫৮. হজরত শোওয়াব ইবনে আব্দুল্লাহ্ আশ্ শাকেরি (র)।
৫৯. হজরত ইয়াহিয়া ইবনে সালেম আযদি (র)।
৬০. হজরত আবেস ইবনে আবি শাবিব শাকেরি (র)।
৬১. হজরত ওমর ইবনে আব্দুল্লাহ্ জুন্দি (র)।
৬২. হজরত মাওকা ইবনে সামানা (র)।
৬৩. হজরত নোমান ইবনে আমর আররাসি (র)।
৬৪. হজরত আয়েদ ইবনে যিয়াদ কাবাদি (র)।
৬৫. হজরত আয়েদ ইবনে মিগভিল খাওকি (র)।
৬৬. হজরত হুর ইবনে ইয়াজিদ আর রিয়াহি (র)।
৬৭. হজরত মাআছ ইবনে ইয়াজিদ আর রিয়াহি (র)।
৬৮. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইয়াজিদ আর রিয়াহি (র)।
৬৯. হজরত আব্দুল আলা ইবনে ইয়াজিদ আর রিয়াহি (র)।
৭০. হজরত মুনজেহ (র)।
৭১. হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে বুকতুর (র)।
৭২. হজরত আবু যব (র)।

বিশ্বভূবনে ও আপন দেহমনে পরম সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কারবালার আদর্শ মূলত সমগ্র বিশ্বজাহানের কাছে এক সর্বকালীন অনুস্মরণীয় ও অনুকবণীয় দৃষ্টান্ত। কারবালা যেন এক মহান শিক্ষালয়। জগৎ সংসারে মহান আল্লাহ্তায়ালা প্রতিটি মানুষকে যে উদ্দেশে সৃষ্টি করেছেন ও সমগ্র মানবতার কাছে তিনি যা চান তারই সফল আয়োজন এই কারবালার আত্মত্যাগ।

প্রিয় নবী (স) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের অভূতপূর্ব এ জীবনাদর্শ সৃষ্টি জাহানের সর্বোত্তম আলোকিত আত্মমুক্তির আদর্শ। স্রষ্টার মানবজীবন সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁর প্রিয় নবী (স) ও তাঁর আহলে বাইতের জীবনাদর্শের সুমহান আত্মত্যাগের অসামান্য ধৈর্য, প্রতিজ্ঞা ও সমর্পণে।

প্রিয় নবী (স) তাঁর ব্যক্তি জীবনে সৃষ্টিকুলের সর্বোত্তম আদর্শ হয়ে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় সমগ্র জীবনব্যাপী অশেষ দুঃখ-কষ্ট-বেদনা সহ্য করেছেন তবুও তাঁর পবিত্র মুখে কখনও কারও জন্য কোনোরকম অকল্যাণ উচ্চারিত হয়নি।

বরং তাঁর এই সুমহান আদর্শই তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণের নিরন্তর প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে সকল সৃষ্টির রহমত স্বরূপ। মহান আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারের ক্ষেত্রে তিঁনি তাই অসীম ধৈযের সাথে মানবিক প্রেম, সৌহার্দ আর সম্প্রীতির অতুলনীয় আলোকবর্তিকার উৎসধারা।

কিন্তু তলোয়ার প্রয়োগ বা বলপূর্বক কাউকে তিঁনি কোনোদিন কোন সময় কালেমাপাঠ করিয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত অকল্পনীয়। বরং যুদ্ধ এড়ানোর সকল উপায় অবলম্বন করার পরও যখন অনন্যোপায়। কেবল তখনই শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য তলোয়ার ধারণ করেছেন।

আসুন, আমরা নবী বংশের চির শক্র মিথ্যা, বাতেল ও মুসলমান নামধারী মুনাফেক উমাইয়া-আব্বাসীয়-এজিদী অনুসারী সন্ত্রাসীদের ইসলামের নামে প্রহসনের বিপরীতে আল্লাহ্ মনোনীত প্রেমময় মুহাম্মদী দ্বীন ইসলামের পথে কামিয়াব হতে আল্লাহ্ পবিত্র কোরান এবং হজরত মুহাম্মদ (স)-এর পবিত্র আহলে বাইত-এর অনুসারী গুরুমুখী আত্মদর্শী জীবনাদর্র পথে নিজেকে উৎসর্গ করি।

অন্যদিকে আত্মদর্শী মানবপ্রেম দ্বারা পথভ্রষ্ট মানুষগুলোকে আত্মমুক্তির পথ সেরাতুল মোস্তাকীম দেখিয়েছেন জীবনের সকল কিছুর বিনিময়ে।

আর এই সেরাতুল মোস্তাকীমের অন্যতম সর্বোত্তম অভিভাবক হচ্ছেন তাঁরই প্রাণপ্রিয় আল বা নূরের বংশধর, যাঁকে তিঁনি বেহেস্তের সর্দার বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিঁনি হচ্ছেন শহীদে আকবর হজরত মাওলা হোসাইন (অ)। যাঁকে ভালবাসা ইবাদত, যাঁকে স্মরণ করা সর্বোত্তম সালাত।

কারবালার মরু প্রান্তরে সকল সৃষ্টির মাঝে মাওলা হোসাইন (আ) ও তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীগণ মানবজীবনের সর্বোত্তম আত্মত্যাগের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিয়েছেন পবিত্রতার, নবুয়াত, রেসালাত আর একত্ববাদের।

সৃষ্টির অনুকরণীয় সুমহান মানবিক সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে ঘোষণা করেছেন আত্মত্যাগ আর আত্মমুক্তির অনিঃশেষ বিজয়গাঁথা। যা পরম প্রভুর কাছে মাওলানা মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহর (স) আহলে বাইতের পবিত্রতার সাক্ষীস্বরূপ সৃষ্টিকুলের সর্বোকালীন চির সত্যের বিস্ময়মণ্ডিত সমর্পণ। তাই উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে আমাদের সকলের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মাওলানা মোহাম্মদ (স) ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি স্মরণ এবং সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ নৈকট্য অর্জন করা।

এবং একইভাবে যুগে যুগে তাঁর একত্ববাদ প্রচারকারীদের সাথে আল্লাহ্ পথে ইমানের কাজ করা তথা নুসরাত করা। তাই মহান আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরানে ঘোষণা করেছেন- ‘ইয়া আইয়্যু হাল্লাজিনা আমানু কুনু আনসারুল্লাহ’ (৬১:১৪)। অর্থাৎ- ‘হে ঈমানের মহড়াকারীগণ আল্লাহ্ নুসরতকারী হয়ে যাও’। যার ফলে তোমরা আপন দেহমনের মধ্যে আপন ররকে জাগিয়ে তোলার পবিত্র সাধনায় সফল হতে পারবে।

কারবালা প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদ (স)-এর পবিত্র আহলে বাইত হজরত মাওলা হোসাইন (আ), তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের আল্লাহ্ মনোনীত মুহাম্মদী ইসলামের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যে মহান আত্মত্যাগ, তার প্রতি বিশ্ব মুসলিম জাহানের সকল মুসলিম নর-নারীর পক্ষ থেকে আমাদের সংযোগ এবং সমর্পণ।

আসুন, আমরা নবী বংশের চির শক্র মিথ্যা, বাতেল ও মুসলমান নামধারী মুনাফেক উমাইয়া-আব্বাসীয়-এজিদী অনুসারী সন্ত্রাসীদের ইসলামের নামে প্রহসনের বিপরীতে আল্লাহ্ মনোনীত প্রেমময় মুহাম্মদী দ্বীন ইসলামের পথে কামিয়াব হতে আল্লাহ্ পবিত্র কোরান এবং হজরত মুহাম্মদ (স)-এর পবিত্র আহলে বাইত-এর অনুসারী গুরুমুখী আত্মদর্শী জীবনাদর্র পথে নিজেকে উৎসর্গ করি।

মহান আল্লাহ্পাক তার মনোনীত পথে আমাদের জীবনকে কবুল করুন। আল্লাহুম্মা ছল্লে আলা মুহাম্মদেও ওয়া আলে মুহাম্মদ। পৃথিবীতে আগত অনাগত সকল সৃষ্টির কল্যাণ হউক।

(সমাপ্ত)

<<১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-১ ।। কারবালায় মাওলা ইমাম হুসাইনের শেষ প্রশ্ন>>

…………………………
লেখক : ড. হাসান রাজা
লেখক ও গবেষক
রাজশাহী
ই-মেইল : hassa-raja_raj@yahoo.com

…………………………
আরো পড়ুন:
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-১
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-২

কারবালার আগে
কারবালায় মাওলা ইমাম হুসাইনের শেষ প্রশ্ন
কারবালায় ইমাম কাসেম (আ) মর্মান্তিক ইতিহাস
কারবালায় আব্বাস আলমদারের মাজারে অলৌকিক পানি
ঈদ-ই-রিসালাত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!