ভবঘুরেকথা
সৃষ্টিতত্ত্ব রহস্য ব্রহ্মাণ্ড জগৎ

কুরআন শরীফের সূরা বাকারায় সর্বপ্রথম যেখানে আদম (আ) সৃষ্টি প্রসঙ্গটি উল্লিখিত হইয়াছে সেখানেই তাঁহার সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করিয়াছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন- “(স্মরণ কর সে সময়ের কথা), যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলিলেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করিতেছি।” (২-৩০)

ইমাম তাবারী বলেন, এই আয়াতের অর্থ হইল, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি প্রেরণ করিব। এই ব্যাখ্যা হাসান ও কাতাদার অভিমতের সহিত অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইবন আব্বাস (রা) বলেন, পৃথিবীর প্রথম বাসিন্দা ছিল জিন্ন জাতি।

তাহারা এখানে ফিঙ্গা-ফাসাদ, হানাহানি ও খুন-খারাবীতে লিপ্ত হইল। তখন আল্লাহ তাআলা তাহাদের শাস্তি বিধানের জন্য ফেরেশতাদের একটি বাহিনীসহ ইবলীসকে পাঠাইলেন। ইবলীস ও তাহার সাথী ফেরেশতাগণ তাহাদেরকে হত্যা করিল এবং বিভিন্ন সাগরের দ্বীপে ও পাহাড়-পর্বতে তাড়াইয়া দিল।

অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করিয়া তাহাকে ও মানবজাতিকে তাহাদের স্থলাভিষিক্ত করিলেন। সেই হিসাবে উক্ত আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়? আমি পৃথিবীতে জিন্ন জাতির স্থলাভিষিক্ত সৃষ্টি করিব- যাহারা তাহাদের স্থলাভিষিক্ত হইয়া পৃথিবীতে বসবাস করিবে এবং তাহা আবাদ করিবে।

ইব্‌ন যায়দ-এর সূত্রে ইউনুস (র) বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ পাক ফেরেশতাগণকে বলিলেন:আমি মনস্থ করিয়াছি পৃথিবীতে এমন একটি লূতন জাতি সৃষ্টি করিব যাহারা পৃথিবীতে আমার খলীফা (প্রতিনিধি) হইবে। ঐ সময় ফেরেশতাগণ ছাড়া আল্লাহর আর কোন মাখলুক ছিল না বা পৃথিবীতে অন্য কোন সৃষ্ট জীবও ছিল না।

আল্লাহ পাক ফেরেশতাগণকে খবর দিয়াছিলেন যে, তিনি পৃথিবীতে তাঁহার খলীফা সৃষ্টি করিবেন। তাহারা সেখানে তদীয় সৃষ্টিকূলের মধ্যে আত্মাহ পাকের বিধান কার্যকরী করিবে।

ইব্‌ন মাসউদ (রা) প্রমুখ সাহাবী হইতে বর্ণিত আছে যে, ঐ খলীফার প্রকৃতি কী হইবে ফেরেশতাগণের এইরূপ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ্ তাআলা বলিলেন:তাহার কতক সন্তান এমনও হইবে যাহারা পৃথিবীতে ফিন্যা-ফাসাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি, খুনাখুনিতে লিপ্ত হইবে।

জাহেলী ধর্ম ও মতবাদের কথাতো বলাই বাহুল্য, খোদ ইহুদী ধর্ম এবং তার বিকৃত সংস্করণ তথা খৃষ্ট ধর্মও এক্ষেত্রে ইসলাম থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে বাইবেলে শুধু বলা হয়েছে- সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষান নাই, আর পৃথিবীতে কৃষিকর্ম করিতে মনুষ্য ছিল না।

ইবন মাসউদ (রা) হইতে উদ্ধৃত উক্ত রিওয়ায়াত অনুসারে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হইবে, আমি পৃথিবীতে আমার মাখলুকসমূহের মধ্যে আইব্‌ন পরিচালনার্থ আমার খলীফা নিয়োগ করিব। সেই খলীফা হইবে আদম এবং তাহার সেই সব সন্তানরা যাহারা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করিবে এবং সৃষ্টিকূলের মধ্যে ইব্‌নসাফ কায়েম করিবে।

তবে ফাসাদ সৃষ্টি ও অন্যায় কার্যাদি সংঘটিত হইবে খলীফা ভিন্ন অন্য আদম সন্তানদের দ্বারা। আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতাগণের প্রশ্নের উত্তরে বলিয়াছেন ও খলীফার বংশধরদের মধ্যকার একটি অংশ ফিত্না-ফাসাদ, বিদ্বেষ, হানাহানি ও খুনাখুনিতে লিপ্ত হইবে।

এখানে লক্ষ্যণীয়, এই জবাবে ফিত্না-ফাসাদ, হানাহানি ও খুনাখুলির সহিত খলীফার বংশধরদের একাংশকেই কেবল সম্পৃক্ত করা হইয়াছে, স্বয়ং খলীফাঁকে বা তদীয় সৎকর্মশীল বংশধরগণকে এই অপবাদ হইতে আল্লাহ্ তাআলা মুক্ত রাখিয়াছেন। (তাফসীর তাবারী, ১খ, সূরা বাকারার ৩০তম আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে)

তাফসীরে মাআলিমুত-তানযীলের ভাষায় খলীফা প্রেরণের উদ্দেশ্য:সেই নতুন সৃষ্টি হইবে পৃথিবীতে তাঁহার প্রতিনিধিস্বরূপ, যাহাতে সে তাহার বিধান কার্যকরী করে এবং তাহার ফয়সালাসমূহকে বাস্তবায়িত করিতে পারে।

এতদসংক্রান্ত মওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদীর ব্যাখ্যামূলক পাদটীকা প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেন, “মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়ায় কোন ধর্মই মাটির মানুষকে আল্লাহর খিলাফত ও প্রতিনিধিত্বের মত এমন সুমহান মর্যাদায় অভিষিক্ত করেনি।

জাহেলী ধর্ম ও মতবাদের কথাতো বলাই বাহুল্য, খোদ ইহুদী ধর্ম এবং তার বিকৃত সংস্করণ তথা খৃষ্ট ধর্মও এক্ষেত্রে ইসলাম থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে বাইবেলে শুধু বলা হয়েছে- সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষান নাই, আর পৃথিবীতে কৃষিকর্ম করিতে মনুষ্য ছিল না।

আর পৃথিবী হইতে কুজ্জটিকা উঠিয়া সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মনুষ্যকে) নির্মাণ করিলেন এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণ বায়ু প্রবেশ করাইলেন। তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল (আদি পুস্তক ২:৫-৭)

“যেন অন্যান্য প্রাণী যেভাবে অস্তিত্ব লাভ করেছিল, আদম নামের এক প্রাণীও অনুরূপ অস্তিত্ব লাভ করল। বেশীর চেয়ে বেশী তার কর্ম ছিল ভূমি কর্ষণ।

কোথায় সুদীর্ঘ ও অন্তঃসারশূন্য এ বিবরণ যেখানে মানুষকে আবদ্ধ করা হয়েছে হালচাষের সংকীর্ণ গণ্ডীতে আর কোথায় কুরআনের সংক্ষিপ্ত সারগর্ভ ও সর্বাঙ্গীন বিবরণ যেখানে মানুষকে আসীন করা হয়েছে খিলাফতে ইলাহীর অনন্য মর্যাদায়।” (তাফসীরে মাজেদী, বাংলা অনু, ইফা, পৃ. ৬৯; সূরা বাকারার ৩০নং আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে পাদটীকা নং-১১০)

আল্লাহর খিলাফতের তাৎপর্য

পৃথিবীতে আল্লাহর খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের তাৎপর্য ব্যাখ্যায় মিসরীয় মুফাঁসির সাইয়েদ কুতুব শহীদ (র) বলিয়াছেন,

“অর্থাৎ যখন মহান আল্লাহর সর্বোচ্চ ইচ্ছা এই নতুন সৃষ্টির হাতে পৃথিবীর দায়দায়িত্ব ন্যস্ত করার বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছে, তিনি পৃথিবীর বুস্কে মানুষের হাতকে ক্ষমতাশালী করে দিয়েছেন। তার কাছে ন্যস্ত করেছেন নব নব উদ্ভাবন ও আবিষ্কার।

বিভিন্ন বস্তুর মিশ্রণ ও সংযোজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিদ্যমান শক্তি ও খনিজ দ্রব্যাদি উত্তোলন এবং গোটা সৃষ্টি জগতকে আল্লাহ্ অনুমতিক্রমে আপন অনুগত করার খোদায়ী ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা। এটাই ছিল আল্লাহ কর্তৃক তার কাছে অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

“এ সবই হলো মহান আল্লাহর ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি বা খলীফা পাঠাতে মনস্থ করেছি এই উক্তির কিছু ব্যাখ্যা। সচেতন স্নায়ুমণ্ডল ও উন্মুক্ত অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে এবং এই নব্য সৃজিত প্রতিনিধির হাতে এই বিশাল পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে এ উক্তির উপরিউক্ত ব্যাখ্যাই দেওয়া যায়।”

“আর আল্লাহ মানুষকে সকল সুপ্ত শক্তি, যোগ্যতা ও প্রতিভা দান করলেন যাতে সে পৃথিবীর শক্তিকে এবং সকল খনিজ দ্রব্য ও কাঁচা মালকে ব্যবহার করতে পারে। আর আল্লাহর ইচ্ছাকে বাস্তবরূপ দিতে যে প্রচ্ছন্ন ক্ষমতার প্রয়োজন, তাও তাকে দিলেন।

“আর পৃথিবী ও গোটা সৃষ্টিজগতকে পরিচালনাকারী প্রাকৃতিক শক্তি এবং এই নতুন সৃষ্টিকে (মানুষকে) এবং তার শক্তি ও ক্ষমতাকে পরিচালনাকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর মধ্যে পরিপূর্ণ সমন্বয় সাজুয্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, যাতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মধ্যে সংঘাত না বেধে যায় এবং এই বিশাল বিশ্বে মানুষের শক্তি ধ্বংস হয়ে না যায়।

“তখন মানুষ অর্জন করলো এক সুমহান মর্যাদা। এই প্রশস্ত পৃথিবীতে মানুষ হয়ে দাঁড়ালো এক পরম সম্মানিত ও মর্যাদাবান সৃষ্টি।

“এ সবই হলো মহান আল্লাহর ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি বা খলীফা পাঠাতে মনস্থ করেছি এই উক্তির কিছু ব্যাখ্যা। সচেতন স্নায়ুমণ্ডল ও উন্মুক্ত অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে এবং এই নব্য সৃজিত প্রতিনিধির হাতে এই বিশাল পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে এ উক্তির উপরিউক্ত ব্যাখ্যাই দেওয়া যায়।” (তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন, বাংলা অনু, সূরা বাকারার ৩০ তম আয়াতের ব্যাখ্যায়, ১খ, পৃ. পৃ. ১০৬।

ফেরেশতাগণের মন্তব্য

তাহারা বলিল, “আপনি কি সেখানে এমন কাহাকেও সৃষ্টি করিবেন যে অশান্তি ঘটাইবে ও রক্তপাত করিবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস ও স্ততিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।” তখন আল্লাহ তাআলা বলিলেন:“আমি জানি যাহা তোমরা জান না।“

ফেরেশতাকুলের এই উক্তি আপক্তি, অহঙ্কার কিংবা তাঁহাদের আদম-সন্তানদের প্রতি বিদ্বেষপ্রলূত ছিল না। যেমন ইব্‌ন কাছীর বলিয়াছেন-

ইহা আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তিসূচক বা মানব সন্তানদের প্রতি বিদ্বেষপ্রলূত ছিল না যেমনটি কোন তাফসীরকার ধারণা করিয়াছেন (মুখতাসার তাফসীরে ইব্‌ন কাছীর, ১খ, পৃ. ৪৯)

ইহার যুক্তিও তিনি ব্যাখা করিয়াছেন এইভাবে ও বস্তত তাহারা ইহার রহস্য জানিবার জন্যই এই প্রশ্ন করে (তাফসীর ইব্‌ন কাছীর-উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায়)

আল্লাহ তাআলা তখন আমি জানি তোমরা যাহা জান না বলিয়া ফেরেশতাদের প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিলেন। ইব্‌ন কাছীর তাঁহার এই কথার ব্যাখ্যাস্বরূপ লিখেন ও অর্থাৎ তোমরা জান না, অচিরেই তাহাদের মধ্যে নবী-রাসূল, সিদ্দীক, শহীদ ও পুণ্যবানদের উদ্ভব হইবে (কাসাসুল আম্বিয়া (আরবী), পৃ.১১-৪]।

মাটি সংগ্রহের জন্য পৃথিবীতে ফেরেশতা প্রেরণ

তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁহার পরিকল্পনা অনুসারে মানব সৃষ্টির জন্য পৃথিবী মাটি লইয়া যাওয়ার জন্য ফেরেশতাকুল শিরোমণি জিবরাঈল ও মীকাঈলকে পৃথিবীতে পাঠাইলেন। মাটি তখন আল্লাহর দোহাই দিয়ে তাহার অঙ্গহানি না করিতে অনুরোধ করিল।

তাঁহারা দুই জনই পরপর খালি হাতে পৃথিবী হইতে ফিরিয়া যান এবং আল্লাহর দোহাই দিয়া পৃথিবীর অনুরোধে তাঁহাদের এ ব্যাপারে অসামর্থ্যের কথা আল্লাহ তাআলার কাছে আরয করেন। অতঃপর আল্লাহর হুকুমে মালাকুল মওত আযরাঈল পৃথিবীতে নামিয়া আসেন এবং পৃথিবীর আল্লাহর দোহাই দিয়া তাহার অনুরোধ উপেক্ষা করিয়া পৃথিবীর নানাবর্ণের নানা ধরনের মাটি লইয়া যান।

রূহ যখন তাহার চক্ষে প্রবেশ করিল তখন তিনি জান্নাতের ফলফলাদি দেখিতে পাইলেন। রূহ তাহার বুকে ও পেটে প্রবেশ করিলে তাহার ক্ষুধা ও আহার প্রবৃত্তি জাগ্রত হইল। রূহ তাঁহার পদদ্বয়ে পৌঁছিতে না পৌঁছিতেই আদমের দেহ জান্নাতের ফল আহরণের উদ্দেশ্যে উঠিয়া দাঁড়াইতে চেষ্টা করিল।

পৃথিবীর ‘আল্লাহর দোহাই’-এর জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহর দোহাই শুনিয়া আমি কি তাহার হুকুম পালন না করিয়াই ফিরিয়া যাইব? তাহা কোন ক্রমেই হইতে পারে না। উক্ত মাটি ভিজান হইলে তাহা এঁটেল মাটিতে পরিণত হয়। অতঃপর তাহা বিকৃত হইয়া দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া পর্যন্ত পতিত অবস্থায়ই থাকে।

“আমি মানুষকে ছাঁচে ঢালা কর্দমের ঠনঠনে শুষ্ক মাটি হইতে সৃষ্টি করিয়াছি।” (১৫:২৬)

উক্ত আয়াতে ঐ দিকেই ইঙ্গিত করা হইয়াছে। তারপর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের প্রতি নির্দেশ দিলেন, আমি মৃত্তিকা দ্বারা একটি মানুষ সৃষ্টি করিব। তাহাকে আমি যখন পূর্ণাঙ্গ রূপ দান করিব এবং তাহার মধ্যে রূহ সঞ্চার করিব তখন তোমরা তাহার সম্মানার্থে সিজদাবনত হইবে।

তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁহার বরকতপূর্ণ কুদরতী হাতে আদমের অবয়ব সৃষ্টি করিলেন, যাহাতে ইবলীস তাহার ব্যাপারে অহঙ্কার করিতে না পারে। দীর্ঘ চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত আদমের ঐ অবয়ব পড়িয়া রহিল। ফেরেশতাগণ তাহার পার্শ্ব দিয়া অতিক্রমকালে তাহাকে অত্যন্ত সমীহ করিতেন, কিন্তু ইবলীসের গায়ে জ্বালা ধরিয়া যাইত।

ইবলীস আদমের দেহকে লক্ষ্য করিয়া বলিত, কী কাজের জন্য তোমাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে। সে ঐ দেহের মুখ দিয়া প্রবেশ করিয়া উহার পশ্চাৎদেশ দিয়া বাহির হইত এবং ফেরেশতাগণকে অভয় দিয়া বলিত, “ইহাকে দেখিয়া ঘাবড়াইয়া যাইও না। ইহা একটি ফাপা জিনিস, আমি তাহাকে বাগে পাওয়া মাত্রই উহার সর্বনাশ করিয়া ছাড়িব।”

অতঃপর যখন আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা অনুযায়ী আদমের দেহে রহ সঞ্চারের সময় উপস্থিত হইল তখন তিনি ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন:আমি উহাতে রুহ সঞ্চার করিলে তোমরা তাহাকে সিজদা করিবে।

যথা সময়ে যখন তাহাতে রূহ সঞ্চার করা হইল এবং রূহ তাহার মস্তকে পৌঁছিল তখন আদম (আ) হাঁচি দিয়া উঠিলেন। ফেরেশতাগণ তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিনে? বলুন, আল-হামদুলিল্লাহ। তিনি আল-হামদুলিল্লাহ বলিলেন, তখন আল্লাহ তাহার উদ্দেশ্যে বলিলেন- … অর্থাৎ তোমার প্রতি আল্লাহ রহম করুন।

রূহ যখন তাহার চক্ষে প্রবেশ করিল তখন তিনি জান্নাতের ফলফলাদি দেখিতে পাইলেন। রূহ তাহার বুকে ও পেটে প্রবেশ করিলে তাহার ক্ষুধা ও আহার প্রবৃত্তি জাগ্রত হইল। রূহ তাঁহার পদদ্বয়ে পৌঁছিতে না পৌঁছিতেই আদমের দেহ জান্নাতের ফল আহরণের উদ্দেশ্যে উঠিয়া দাঁড়াইতে চেষ্টা করিল।

…………………………
সীরাত বিশ্বকোষ থেকে

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………………..
আরও পড়ুন-
মহাবিশ্বের উৎপত্তি : প্রথম কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি : দ্বিতীয় কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : প্রথম কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : দ্বিতীয় কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : তৃতীয় কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : চতুর্থ কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : পঞ্চম কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : ষষ্ঠ কিস্তি
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও পরিণতি : সপ্তম কিস্তি
সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে প্লাতনের মতবাদ
মহাবিশ্বের সৃষ্টি কাহিনী
পবিত্র কোরানে সৃষ্টিতত্ত্ব
আরশ ও কুরসী সৃষ্টির বিবরণ
সাত যমীন প্রসঙ্গ
সাগর ও নদ-নদী
পরিচ্ছেদ : আকাশমণ্ডলী
ফেরেশতা সৃষ্টি ও তাঁদের গুণাবলীর আলোচনা
পরিচ্ছেদ : ফেরেশতাগণ
জিন সৃষ্টি ও শয়তানের কাহিনী
সীরাত বিশ্বকোষে বিশ্ব সৃষ্টির বিবরণ
আদম (আ) পৃথিবীর আদি মানব
আদম সৃষ্টির উদ্দেশ্য
আদম (আ)-এর সালাম
আদম (আ)-এর অধস্তন বংশধরগণ
হাদীসে আদম (আ)-এর সৃষ্টি প্রসঙ্গ
আদম (আ)-এর সৃষ্টি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!