ভবঘুরেকথা
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য

বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : দুই

-সুকুমারী ভট্টাচার্য

পরের যুগে জ্ঞানকাণ্ডে, আরণ্যক উপনিষদে পূর্বতন সংশয়ের উত্তর আর মিলল না, বরং যজ্ঞ তখন ব্যাপক ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ক্রমশ যেন গৌণ একটি ধর্মক্রিয়ায় পর্যবসিত হল এবং আত্মব্রহ্মতত্ত্ব নিয়ে চর্চাই হয়ে উঠল মুখ্য ও গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যায়ে পরিবর্তিত সমাজজীবনের দ্বারা প্রভাবিত মনন জগতে যে সব নতুন সমস্যার উদয় হল, তার মধ্যে জন্ম নিল নবতর সংশয়। এগুলির সঙ্গে পূর্বতন সংশয়ের অনেক পার্থক্য চোখে পড়ে।

বিশেষ কোনও দেবতা, তার উদ্ভব, আচরণ, ক্ষমতা, অভিপ্রায় বা যজ্ঞকর্ম ও তার যথাযথ্য সম্বন্ধে প্রশ্ন আর তেমন নেই। তার বদলে এবং বিশ্বচরাচর মানুষের শরীর, ইন্দ্রিয়, মন এবং এগুলির সঙ্গে বহির্জগতের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন অনেক বেশি। তা ছাড়া- নতুন কিছু সংশয় আসে আত্মা ও ব্রহ্মা এবং তাদের সম্পর্ক নিয়ে, মরণোত্তর অবস্থান নিয়ে (অবশ্য এ বিষয়ে কিছু সংশয় আগেও দেখা গেছে)।

এখন সমাজপতি, শাস্ত্রকার ও পুরোহিতদের সমবেত চেষ্টায় মানুষের জীবনদর্শন ও ধর্মাচরণের লক্ষ্য একেবারে বদলে যায়; পরলোকের অস্তিত্ব এখন স্বীকৃত, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ জানে মৃত্যুতেই সব শেষ হয় না, আত্মা থাকে, অতএব পরলোক আছে, স্বর্গ, নরক ও পুনর্জন্ম আছে। স্বভাবতই এখনকার প্রশ্ন মুখ্যত এইগুলি নিয়েই।

এই সব উপাত্ত নিয়ে যে-বিশ্ববিধান লোকের মনে দেখা দিল, এ পর্যায়ের প্রশ্নগুলি সেই নিয়ে এবং সে-বিশ্ববিধানের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতার বস্তুনিচয়- শরীর, মন, প্রাণ, ইন্দ্রিয়, পঞ্চভুত ও বহির্বিশ্ব, ইত্যাদির সম্পর্ক নিয়ে।

বৃহদারণ্যক উপনিষদে একাধিকবার পড়ি, ‘ ‘মৃত্যুর পর চেতনা নেই সে কথা বলছি।’ এমন বলেন যাজ্ঞবল্ক্য।[১১] এটি সংশয়ের উক্তি নয়, নাস্তিক্যের; কঠোপনিষদে নাস্তিকের একটি সংজ্ঞা হল, যে পরলোকে বিশ্বাস করে না সে নাস্তিক। এখন উপনিষদের বিশিষ্ট তত্ত্বগুলির এক মুখ্য প্রবক্তা হলেন যাজ্ঞবল্ক্য। তিনি স্বয়ং বলছেন, মৃত্যুর পরে আর জ্ঞান থাকে না।

তাই উপনিষদের আত্ম-ব্রহ্মতত্ত্ব প্রতিপাদন করেও বলেন, মৃত্যুর পরে চেতনা থাকে না। বলছেন। দ্বিধাহীন প্রত্যয়ের স্বরে, ঘোষণার ভাষায়। এই উক্তিতে আত্মা পরলোক জন্মান্তরের সযত্ন রচিত ইমারত যে বিধবস্ত হয়ে যায় তা কি তিনি জানেন না? জানেন, কিন্তু তবু যে বলছেন এটা তার তত্ত্ব নয়, উপলব্ধি বা মননজাত তত্ত্ব, একে তিনি অস্বীকার করেন কী করে?

জ্ঞানই যদি না থাকে তো আত্মা থাকলেও তেমন আত্মা সুখ-দুঃখের অনুভবের বাইরে। কাজেই স্বর্গনরকও তেমন আত্মার পক্ষে নিৰ্ম্মফল, পুনর্জন্মও সেই কারণে নিরর্থক। অথচ এই যাজ্ঞবল্ক্যই বৃহদারণ্যক উপনিষদেই একটির পর একটি উপমা সাজিয়ে আত্মার দেহ থেকে দেহাস্তরে পরিক্রমা বর্ণনা করেছেন, নানা ভাবে আত্মব্রহ্মা-তত্ত্ব প্রতিপাদন করতে চেয়েছেন।

আবার তিনিই বলছেন, মৃত্যুর পরে চেতনা থাকে না। এই যাজ্ঞবল্ক্যই (এমন মতও অবশ্য আছে যে, একাধিক যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন, তারা ভিন্ন ভিন্ন মতের প্রবক্তা) শতপথব্রাহ্মাণে অনেক কারণ দেখিয়ে গোমাংসভক্ষণ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন, এবং বলেই প্রায় এক নিশ্বাসেই বলেছেন, ‘আমি কিন্তু খাব যদি রান্নাটা ভাল হয়’।

ইনি ব্রহ্মোদ্যে ব্রহ্মোদ্যে আত্মব্রহ্মা-তত্ত্ব নিয়ে বহু পণ্ডিত ও জিজ্ঞাসুর সঙ্গে তর্ক করেছেন, দৃশ্যমান জগৎ মায়াস্বরূপ ঘোষণা করেছেন, আবার জনকের সভায় উপস্থিত হলে রাজা যখন র্ত্যকে প্রশ্ন করেছেন, ‘কী মনে করে ঠাকুর, ব্রহ্মজ্ঞান না গোধনের জন্যে এসেছেন?’ তখন অসংকোচেই বলেছেন, ‘দুটোরই জন্যে, মহারাজ।’

জনক ব্রহ্মিষ্ঠের (ব্রহ্মজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতের) পুরস্কার হিসেবে যে বহুসংখ্যক সোনায়-মোড়া শিং গাভি সাজিয়ে রেখেছিলেন, যাজ্ঞবল্ক্য বিনা ব্রহ্ম-সম্বন্ধীয় পরিতর্কে ওই গাভিগুলি নিয়ে বাড়ি চললেন। সমবেত পণ্ডিতরা প্রশ্ন করলে বললেন, ‘যিনি ব্রিক্ষিষ্ঠ তাকে আমরা নমস্কার করি, কিন্তু আমরা এখন এখানে সকলে গাভীর কামনায় এসেছি।’ কথাটা সত্যও ছিল, তাই প্রতিপক্ষ তেমন আপত্তিও করেনি, তবু তর্ক হয়েছিল।

যাজ্ঞবল্ক্য সম্বন্ধে এত কথা বলার কারণ উপনিষদের বিশিষ্ট আত্ম-ব্রহ্মতত্ত্বের তিনিই মুখ্য প্রবক্তা, তা সত্ত্বেও ঐহিক প্রয়োজন–গাভি অর্থাৎ বিত্ত সম্বন্ধে তাঁর কোনও ঔদাসীন্য নেই। জনকের কাছে তিনি ব্রহ্মীজিজ্ঞাসুও বটে। আবার গোধনপ্রাথীও বটে, গোমাংসভক্ষণ সমাজে নিষেধ করার সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, ‘আমি কিন্তু খাব’। অর্থাৎ তত্ত্ব ও ব্যবহারিক জীবনে অসংগতি তাঁকে পীড়া দেয় না।

তাই উপনিষদের আত্ম-ব্রহ্মতত্ত্ব প্রতিপাদন করেও বলেন, মৃত্যুর পরে চেতনা থাকে না। বলছেন। দ্বিধাহীন প্রত্যয়ের স্বরে, ঘোষণার ভাষায়। এই উক্তিতে আত্মা পরলোক জন্মান্তরের সযত্ন রচিত ইমারত যে বিধবস্ত হয়ে যায় তা কি তিনি জানেন না? জানেন, কিন্তু তবু যে বলছেন এটা তার তত্ত্ব নয়, উপলব্ধি বা মননজাত তত্ত্ব, একে তিনি অস্বীকার করেন কী করে?

মরণোত্তর আত্মার সংজ্ঞা তার যুক্তিবুদ্ধির কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না, তাই দৃঢ়স্বরে তা অস্বীকার করলেন। সমাজের বহু মনীষীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই এই রকম ছিল: কোথাও প্রত্যয়, কোথাও সংশয়, কোথাও স্পষ্ট নাস্তিক্য।

শুধু বৃহদারণ্যক উপনিষদেই নয়, সাব-কটি উপনিষদ মিলেও একটি সুসংহত দর্শন একেবারেই পাওয়া যায় না। ‘উপনিষদগুলি স্বতন্ত্র ভাবে অথবা সমগ্র ভাবে কোনও সম্পূর্ণ, সংহত কিংবা যুক্তিপূর্ণ ভাবে সংগঠিত বিশ্বতত্ত্ব উপস্থিত করে না।’[১২]

যাঁর আচরণই দুর্বোধ্য, হীনবল ক্ষীণবুদ্ধি মানুষ যদি তা অবধারণ না করতে পারে তবে তা নিয়ে মানুষকে দোষ দেওয়া যায় না। যে-ঈশ্বর মানুষের সৃষ্টিকর্তা বিশ্ববিধানের নিয়ন্তা, তিনি মানুষকে এনে ফেলে রেখেছেন এমন এক পৃথিবীতে যেখানে কেন কখন কী ঘটে তা মানুষের বোধের অতীত। অথচ মানুষ বুঝতে চায় ও বারে বারে অন্ধগলিতে মাথা ঠুকে মরে।

একটু ভাবলেই বোঝা যায় উত্তর ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে, প্রায় দু-আড়াইশো বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে, কালে, বিভিন্ন মনীষীর চিন্তার সংকলন এই উপনিষৎ সাহিত্য; ফলে এর মধ্যে যুক্তির সংহতি খোঁজা বাতুলতা। যে যার অভিজ্ঞতা অকুণ্ঠ ভাবে ব্যক্ত করে গেছেন।

তাঁরা অধিকাংশই আচার্য ও শিক্ষাথী; তারা জানতেনও না যে তাঁরা উপনিষদ রচনা করছেন এবং তামাতুলসী গঙ্গাজল ছুয়ে প্রতিজ্ঞাও করেননি যে, নতুন একটি দর্শনপ্রস্থান তারা সৃষ্টি করতে বসেছেন। ফলে বহু পরস্পরবিরোধী উক্তির সমাহার এর মধ্যে রয়ে গেছে।

দেশে চিন্তার জগতে আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তরকে অবলম্বন করে যে নতুন হাওয়া বইছিল তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এরা প্রত্যেকে নিজের উপলব্ধি ও মনন গ্রন্থনা করে রেখে গেছেন। তাতে সৌষম্য ও সংহতি বজায় রইল। কি না সেটা লক্ষ্য করার দায়ও তাদের ছিল না, কারণ খুব সম্ভব তাদের সকলে পরস্পরকে চিনতেনও না। যজ্ঞ থেকে মানুষের মন সরে গেছে, এমনই একটা পরিবেশে মনীষীরা সমাজে সংহতি রক্ষার জন্যে যজ্ঞের একটা বিকল্প নির্মাণ করছিলেন।

যুক্তির কাঠামো গড়ে উঠেছিল প্রায় দেড় হাজার বছর পরে শংকরাচার্যের হাতে। উপনিষদে যা পাই তা তত্ত্বের দিকে শিথিল, পরস্পর-অসংলগ্ন, কখনও-বা পরস্পরবিরোধীও। তাই তখন যাঁরা জীবন সম্বন্ধে প্রশ্ন করছেন তখন সে-প্রশ্নগুলিও কোনও স্পষ্ট বিষয়কে অবলম্বন করে উদিত হয়নি, ফলে সমগ্র উপনিষদে তত্ত্বের দিকে নানা অসংগতি রয়ে গেছে এবং এইটেই স্বাভাবিক।

নানা বিষয়ে নানা অঞ্চলে ও সময়ে বিভিন্ন লোকের মনে নানা সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। এগুলি পরস্পর-অসম্পূক্ত, একই ধরনের প্রশ্ন বারে বারে উচ্চারিত হয়েছে। এই প্রশ্নের মধ্যে যেগুলি যজ্ঞ বা যজ্ঞীয় দেবতা সম্পর্কে নয়, সেগুলি এই বিশেষ যুগের চিন্তাধারা থেকে উদ্ভূত, জ্ঞানকাণ্ডের নিজস্ব চরিত্র সেগুলির মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে।

এ সবের মধ্যে যা বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় তা হল, প্রশ্নের বৈচিত্র্য, সংখ্যা ও কৌতুহলের ব্যাপক বিস্তার। সংশয় শুধু একটি স্বাভাবিক মননপ্রক্রিয়াই নয়; সংশয়, অবিশ্বাস ও নাস্তিক্য মানুষের জীবনে একটি যন্ত্রণার অভিজ্ঞতাও বটে।

যখন কোনও সংশয় থাকে না, নিজের দেহ,মন ও বহির্জগৎ সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট সর্বজনস্বীকৃত ছক মানুষ মেনে নিতে পারে তখন সে-অবস্থাটা মানুষের মানসিক শান্তি ও স্থৈার্যের অনুকুল, জীবন সম্বন্ধে একটা আশ্বাস ও স্বস্তি খুবই আরামের অবস্থা।

অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাওই সম্ভবত সামগ্রিক ভাবে এ-অবস্থা সত্য ছিল না; কিছু সজাগ মনের মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, সে সব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি, ফলে অনুত্তরিত প্রশ্ন যন্ত্রণা দিয়েছে সংশয়ে, বিশ্বাসহানিতে, নাস্তিক্যে।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতকে ইহুদি ধর্মের সৃষ্টিশীল পর্বের অবসান ঘটে। এই সময়ে নানা সংশয়, প্রশ্ন উচ্চারণ করেন মনীষীরা। এজরা ও নেহেমায়াহ এদের অন্যতম। এজরা ভগবানকে অনুযোগ জানিয়েছেন, ‘তুমি কাউকেই দেখিয়ে দাওনি তোমার আচরণ কেমন করে বুঝতে হয়।’[১৩]

যাঁর আচরণই দুর্বোধ্য, হীনবল ক্ষীণবুদ্ধি মানুষ যদি তা অবধারণ না করতে পারে তবে তা নিয়ে মানুষকে দোষ দেওয়া যায় না। যে-ঈশ্বর মানুষের সৃষ্টিকর্তা বিশ্ববিধানের নিয়ন্তা, তিনি মানুষকে এনে ফেলে রেখেছেন এমন এক পৃথিবীতে যেখানে কেন কখন কী ঘটে তা মানুষের বোধের অতীত। অথচ মানুষ বুঝতে চায় ও বারে বারে অন্ধগলিতে মাথা ঠুকে মরে।

এ সব সংশয় সমাজের বিধায়কদের পক্ষে অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং অপমানকরী: তারা যে-বিধান ও যে-সমাধান দিয়েছেন, সংশয়ী তা মেনে নিচ্ছে না, অতএব সে পাপী। সমাজের প্রত্যন্ত দেশে তখন বহু নামে যজ্ঞবিরোধী, বেদবিরোধী নানা প্রস্থানের উদয় হয়েছে, তারা বেদ ও যজ্ঞ বাদ দিয়েও দিব্যি আছে। যেহেতু যজ্ঞকারীদের তারা উপেক্ষা করেছে, তাই সমাজও তাদের নিন্দা করেছে।

তাই এই অনুযোগ, কেন মানুষকে বুঝিয়ে দিলে না কোনও দিন, এই ভুবন যে-নিয়মে চলে তার প্রকৃতি কী? মানুষ বুঝতে চাইছে, পারছে না; কারণ তুমি দুর্বোধ্য আচরণও করবে। আর সে-নিয়ে মানুষের মনে বহুবিধ প্রশ্ন যখন উদিত হবে তখন তুমি তাকে কিছুই বুঝিয়ে দেবে না–কী হয়, কেমন করে হয়, তা কেন তেমন ভাবে ঘটে?

চারিদিকে তাকিয়ে মানুষ কোথাও তার সংশয়ের সমাধান খুঁজে পায় না!! এমন বোধ্যাতীত ভুবন-ব্যবস্থায় মানুষ কী রকম অসহায় এবং মনের জগতে কী পরিমাণ পীড়িত ও বিধ্বস্ত তা কি তুমি জান না? এ যেন ‘আঁধার রাতে একলা পাগল যায়৷ কেঁদে/আমায় বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে, বুঝিয়ে দে’।

এজরার অনুযোগ আরও গভীর, এমনই দুর্বোধ্য বিশ্ববিধানের মধ্যে যদি আমাকে ফেলে রেখে দেবে, তা হলে, স্রষ্টা, আমাকে এমন করে সৃষ্টি করনি কেন যেন আমার মধ্যে কোনও প্রশ্ন না জাগে? ‘প্রভু আমার, আমি তোমাকে মিনতি করছি (জানবার জন্যে), কেন তুমি আমার মধ্যে বোধশক্তি দিয়েছিলে?’[১৪] এই মর্মর্যন্ত্রণা থেকে বেদের মনীষীরাও প্রশ্ন করছেন এবং অনুরূপ নিবুক্তর স্তব্ধতার সম্মুখীন হয়েছেন।

সর্বত্রই প্রশ্ন, সংশয়, নিরীশ্বরবাদ, অজ্ঞেয়বাদ ও নাস্তিক্য সমাজবিধায়কদের উন্মার উদ্রেক করেছে। কেন? কারণ তাঁরা ভেবেচিন্তে যে-ব্যাখ্যা দিয়েছেন জীবনের, বিশ্ববিধানের, প্রকৃতির, মানবেদেহের এবং যে বিধান দিয়েছেন মানুষের সম্ভাব্য বিপদ-আপদের থেকে মুক্তির জন্যে, যে-পস্থার নির্দেশ দিয়েছেন প্রকৃতিকে নিজের অনুকূলে এনে সুস্থ, সুখী, দীর্ঘজীবন লাভ করবার জন্য, মানুষের সংশয় স্পষ্ট উচ্চারিত হলে সে-বিধানের ভিত টলে যায়।

পরবর্তীকালে, যখন সমাজে যজ্ঞানুষ্ঠান চললেও বহু মানুষের মনে যজ্ঞ সম্বন্ধে অনীহা দেখা দিয়েছে তখন সমাজে তৎকালীন শাস্ত্রকাররা অন্য কিছু তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন। সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের পক্ষে এই নতুন তত্ত্বগুলি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। দেখতে পাচ্ছি। রাজা, রাজন্য, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, জিজ্ঞাসু ব্রহ্মচারী ও অন্যান্য কিছু ব্রহ্মাসন্ধানী ব্যক্তিই এই নতুন তত্ত্বগুলি সম্বন্ধে আগ্রহী।

এই কালপর্বে সংশয় উচ্চারণ করেছেন এরাই, সমাধান দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন। এঁরাই, তবে প্রায়ই প্রশ্নের সঙ্গে সমাধানের কোনও সংগতি থাকেনি। প্রশ্নকর্তারা কখনও-বা ব্যক্তিগত প্রশ্ন ছাড়াও জনমানসে সঞ্চারমাণ অন্য প্রশ্নও উচ্চারণ করেছেন। এঁদের মধ্যে সমাজের বঞ্চিত শ্রমিকরাও আছেন, তারা নিজের যে-প্রশ্ন করলে ওপরমহলে উত্তর দেওয়ার কোনও তাগিদ থাকত না, সেই প্রশ্নই কখনও কখনও অন্যান্য মনীষীরা করেছেন।

যেমন নচিকেতা। উত্তর বা সমাধান বহু ক্ষেত্রেই সমাজের সুবিধাভোগী, বিত্তবান শ্রেণির স্বার্থের অনুকূলে; যেমন জন্মান্তরবাদ। যে-মানুষ দুঃখে, অভাবে, অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে ইহজীবন যাপন করে গেল, তার পক্ষে জন্মান্তর তো অভিশাপ। যতই তাকে বোঝানো হোক, এ জন্মে শাস্ত্র-অনুমোদিত ধর্মাচরণ করলে পরজন্মে সুখী জীবন পাওয়া যাবেই।

তবু তার এ সংশয় ঘোচে না যে, পরজন্ম এ জন্মেরই পুনরাবৃত্তি হতে পারে, এবং সে-সম্ভাবনা তার পক্ষে ভয়াবহ আতঙ্কের। তা ছাড়া পরজন্মের অস্তিত্বটা তো সংশয়িত। এদের হয়ে কেউ কেউ বলেছেন, ‘এ জন্ম থেকে পরজন্মে যাওয়ার কোনও পথ নেই, কিংবা মৃত্যুর পরে কোনও চেতনা থাকে না’।

এ সব সংশয় সমাজের বিধায়কদের পক্ষে অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং অপমানকরী: তারা যে-বিধান ও যে-সমাধান দিয়েছেন, সংশয়ী তা মেনে নিচ্ছে না, অতএব সে পাপী। সমাজের প্রত্যন্ত দেশে তখন বহু নামে যজ্ঞবিরোধী, বেদবিরোধী নানা প্রস্থানের উদয় হয়েছে, তারা বেদ ও যজ্ঞ বাদ দিয়েও দিব্যি আছে। যেহেতু যজ্ঞকারীদের তারা উপেক্ষা করেছে, তাই সমাজও তাদের নিন্দা করেছে।

লোকায়াত সংশয়

তখনকার সমাজের বোধহয় সবচেয়ে বড় নিন্দাসূচক শব্দই ছিল নাস্তিক’। নাস্তিক বেদ স্বীকার করে না, পরলোক ও পুনর্জন্ম স্বীকার করে না এবং কেউ কেউ আত্মাও স্বীকার করে না। এই শেষোক্তারা চার্বাকপন্থী, এরা বলত, ‘ন স্বর্গো নাপবর্গে বা নৈবাত্মা পারলৌকিকঃ’।

অর্থাৎ স্বর্গ নেই, মোক্ষ নেই এবং পরলোকে কোনও আত্মা নেই। উপনিষদে ক্ষীণ ভাবে মোক্ষের কথা আছে, কিন্তু স্বর্গ আত্মা এবং পরলোকের কথা সংহিতা, ব্রাহ্মণ ও উপনিষদে আছে; অতএব বেদের কিছু মৌলিক তত্ত্বকে এরা অস্বীকার করল। যারা এ সব বিশ্বাস করে, তাদের সম্বন্ধে এরা বলল, তারা ‘বুদ্ধিপৌরুষহীন’, অর্থাৎ তারা নিবুদ্ধি এবং নিষ্পৌরুষ অর্থাৎ কাপুরুষ। কাপুরুষ বা নিবুদ্ধি কেন?

জনসাধারণ্যে যখন এ সব সন্দেহ–যার অন্তিম রূপটি হল নাস্তিক্য–প্রসার লাভ করছিল তখন তাকে ‘লোকায়াত’ বলে গাল দেওয়া ছাড়া শাস্ত্রকারদের গত্যন্তর ছিল না। লোকে, লোকমানসে এর বিস্তাঁর ছিল বলেই লোকায়তের সম্বন্ধে আতঙ্কটি এত বাস্তব, এবং তাই এত অসহিষ্ণুতা।

কারণ তারা স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতে পারে না। বলেই শাস্ত্রকাররা জীবন সম্বন্ধে যা তাদের বুঝিয়েছেন তাই তাঁরা মেনে নিয়েছে। শুধু চার্যাক নয়, বার্হস্পত্য, জৈন, বৌদ্ধ এবং আজীবিকরাও বেদের বহু মৌলিক তত্ত্বকে সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে নিজস্ব মতামত উপস্থাপিত করেছেন। যজ্ঞের উপযোগিতা এরা কেউই মানেননি, এবং বেদ মূলত যজ্ঞনির্ভর।

মুণ্ডক উপনিষদেই একবার মাত্র স্পষ্ট ভাবে উচ্চারণ করা হয়েছে যে যজ্ঞগুলি অদৃঢ় নৌকো, পারে নিয়ে যাওয়ার শক্তি তাদের নেই। এ ছাড়া পুরো জ্ঞানকাণ্ডে কিন্তু ধরেই নেওয়া হচ্ছে যে, সমাজে যজ্ঞ চলছে এবং চলবে। তারই মধ্যে এক বিরুদ্ধশক্তি নানা নামে, নানা প্রস্থানে চিহ্নিত হয়ে সমাজে বিদ্যমান। কৌতুকের বিষয় হল, অবৈদিক প্রস্থানগুলিকে পরবর্তী সাহিত্যে সাধারণ ভাবে লোকায়ত বলা হয়েছে।

লোকায়ত শব্দের অভিধানগত অর্থ, ‘লোকে আয়ত’ অর্থাৎ যা সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিব্যাপ্ত। যজ্ঞের পরে ফলের অপ্রাপ্তি যজ্ঞযুগে সংশয়ের সবচেয়ে বড় ভিত্তি রচনা করেছিল। তারই সঙ্গে সঙ্গে চক্ষুন্মান মানুষের অভিজ্ঞতা যখন তার অন্তর্নিহিত ন্যায়ের বোধের বিপরীত হয়, যখন সে দেখে দুর্জনের প্রতিপত্তি বাড়ছে, সজ্জন দু’।

বেলা অন্নসংস্থান করতে পারছে না, যে-মানুষ বিবেকবান, সৎ-কর্মচারী, সে নিরন্তর দুঃখই পাচ্ছে, তখন তার জীবন ও ন্যায়বিচার সম্বন্ধে এবং পূর্বতন ‘ঋত’র বোধের সম্বন্ধে অন্তর্নিহিত প্রত্যাশা গুরুতর ধাক্কা খায়; দেখা দেয় সংশয়। লোকায়াত চার্বাক্যমত যজ্ঞ, আত্মা, দেবদেবী, স্বর্গনারক, পরলোক ও জন্মান্তর স্বীকার করে না, বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকার করে না। এই মত ও বিশ্বাস লোকে আয়ত বা সমাজে গণমানসে বিস্তৃত ছিল?

এটা স্বীকার করলে বোঝা যায়, শাস্ত্র লোকায়ত মত সম্বন্ধে কেন এত অসহিষ্ণু, কেন চার্যাককে মহাভারত-এ (ও পরে বেণীসংহার নাটকেও) রাক্ষস বলা হয়েছে! দুর্যোধনের বন্ধু বলা হয়েছে। কেন ‘ধামিক’ ব্রাহ্মাণেরা তাকে তাড়া করে বধ করে। লোকায়তিক চার্বক তা হলে সেই সব কথাই বলেছেন যা জনসাধারণের মনে সন্দেহের আকারে ছিল; তার ভাষায় তা প্রত্যয়ের বুপে প্রকাশিত হল।

বোঝা যায় কেন পরস্পরবিরোধী দর্শনপ্রস্থানও (যেমন মীমাংসা, যার অপর নাম পূর্বমীমাংসা এবং বেদান্ত, যার প্রতিশব্দ উত্তরমীমাংসা) এবং সাব-কটি দর্শনগ্রন্থই চার্বক মত আগে খণ্ডন করে পরে নিজ মত প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর থেকে সূচিত হয় যে, চার্বক মত আসলে শুধু জনপ্রিয়ই ছিল না; সমাজে এ মতের বহু অনুগামী ছিল, তাই প্রয়োজন হয়েছিল সে-মতকে খণ্ডন করার–যাতে তার প্রসার রোধ করা যায়।

মানুষ যখন তার অভিজ্ঞতায় ও মননে স্বর্গনরক, দেবদেবী, আত্মা, পরলোকের অস্তিত্বের কোনও নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ না পেয়ে সন্দিগ্ধ হয়, তখন বেদে নির্দেশিত তত্ত্বগুলিতে সে আর বিশ্বাস রাখতে পারে না। তখনই তার ওপরে নেমে আসে শাস্ত্রকারদের অজস্র কটুবাক্য এবং অভিসম্পাত।

জনসাধারণ্যে যখন এ সব সন্দেহ–যার অন্তিম রূপটি হল নাস্তিক্য–প্রসার লাভ করছিল তখন তাকে ‘লোকায়াত’ বলে গাল দেওয়া ছাড়া শাস্ত্রকারদের গত্যন্তর ছিল না। লোকে, লোকমানসে এর বিস্তাঁর ছিল বলেই লোকায়তের সম্বন্ধে আতঙ্কটি এত বাস্তব, এবং তাই এত অসহিষ্ণুতা।

মহাভারত-এর শান্তিপর্বে একটি উপাখ্যানে পড়ি

‘এক ধনী বণিক রথে চড়ে যাচ্ছিলেন, পথে এক ব্রাহ্মণ চাপা পড়েন; ব্রাহ্মণটি আত্মহত্যা করতে উদ্যত হলে এক শৃগাল তাকে নিবৃত্ত করে বলে যে, ‘আত্মহত্যা নাস্তিকোচিত কাজ, এটা করা ঠিক নয়। গতজন্মে সে নিজে নিরর্থক আম্বীক্ষিকী ও তর্কবিদ্যায় অনুরক্ত ছিল, হৈতুক অর্থাৎ যুক্তি দিয়ে সব কিছুর হেতু নির্ণয় করতে চেষ্টা করত, বেদনিন্দক ও নাস্তিক ছিল, তাই এজন্মে শৃগাল হয়েছে।’

এখানে লক্ষ্যণীয় তর্ক, আম্বীক্ষিকী (যুক্তিবিদ্যা) ও নাস্তিকতা এক নিশ্বাসে উচ্চারিত; এগুলি গহিত পাপ, যার ফলে বক্তার শৃগালজন্ম হয়েছে। এখানে পুরোহিততন্ত্রের ও শাস্ত্রকারদের উন্মা যুক্তিবাদের ওপরে–বেদের নিন্দা, নাস্তিকতা, হেতুবাদিত্বের ওপরে।

অর্থাৎ পরিষ্কার দুটি বিকল্প: এক দিকে বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে শাস্ত্রকার পুরোহিতদের নির্দেশ মতো যজ্ঞ করা, দেবদেবী, আত্মা, পরলোক, স্বর্গনরক, জন্মান্তরে চোখ বুজে বিশ্বাস করা; অন্য দিকে এ সব সম্বন্ধে মনে সন্দেহের উদয় হলে যুক্তিতর্ক দিয়ে ব্যাপারটা যুক্তিগ্রাহ্য কি না, অর্থাৎ বিশ্বসনীয় কি না বুঝে দেখার চেষ্টা করা এবং যদি যুক্তিতর্কে তার যথার্থ সম্বন্ধে নিশ্চয়তা না মেলে, তবে খোলাখুলি তাকে স্বীকার করা এবং বিশ্বাসের বদলে সংশয় পোষণ করা।

কাজেই ব্যাপক সংশয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিপন্ন হতে পারে বলেই বেদের প্রামাণ্যতা প্রতিষ্ঠা করা এত জরুরি, এবং পৃথিবীর সমস্ত ধর্মগ্রন্থ সম্বন্ধেই এ কথা প্রযোজ্য। সন্দেহ প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংহতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। বলেই সন্দেহ সম্পর্কে সমাজপতিদের সন্দাজাগ্রত আশঙ্কা এবং উদগ্র রোষ।

শৃগালের উপাখ্যানে উল্লিখিত পাপগুলি একই গোত্রের অর্থাৎ চোখ বুজে আপ্তবাক্যে বিশ্বাস না করে সাধারণ বুদ্ধি, যুক্তি, তর্ক, হেতুবিদ্যা (অর্থাৎ কোনও ব্যাপারে কার্যকারণ সম্বন্ধের খোজ করা) এ সবের ওপরে ভরসা রাখা। এতে সমাজপতিদের এত উন্মা কেন?

বেদনিন্দক, হৈতুক, তর্কাশ্রয়ী মানুষ বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকার না করে তার নিজস্ব চিন্তা যুক্তিতর্কের ওপরে ভরসা করে চললে শাস্ত্রকাররা সমাজের সংহতির জন্যে যে-ছকটা তৈরি করেছেন সেটা ঝরে পড়বে। এই অবাধ্যতা তো আধ্যাত্মিক স্তরে একটা প্রতিস্পর্ধা এবং জাগতিক স্তরে অসহযোগ, সমাজের ওপরতলার লোকের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব অস্বীকার করা।

পৃথিবীতে কোনও সময়ে কোনও সমাজের অধিকর্তারা সাধারণ লোকের আনুগত্যের এই অভাবকে স্বীকার করেননি, উপেক্ষাও করেননি। এখানেও তাই নানা হুমকি, অভিশাপ, পরজন্মে হীন অস্তিত্বের ভয় দেখানো।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র-তে তাই সাংখ্য, যোগ ও আধীক্ষিকীকে একই পর্যায়ের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মনুতে আন্ধীক্ষিকীকে পরিহার করা হয়েছে; দণ্ডনীতি, অর্থনীতি, ত্রয়ী (বেদচর্চা) ও বার্তাকে (কৃষি, ইত্যাদি) স্বীকার করা হয়েছে। শংকরাচার্য মনুকে বারবার উদ্ধৃত করেন এবং সবচেয়ে প্রামাণ্য ধর্মশাস্ত্র বলে প্রয়োজনীয় শাস্ত্র হিসেবে স্বীকার করেন।

মনুই প্রাচীন ভারতের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের নিরিখ নির্মাণ করেছেন। এবং মনুতে যুক্তিতর্ক দিয়ে বুঝবার শাস্ত্রগুলিকে পরিহার করা হয়েছে। যুক্তির চর্চা না থাকলে সমাজে আপ্তবাক্য, বেদ ও ধর্মশাস্ত্রের অনুজ্ঞাই চূড়ান্ত ভাবে প্রামাণ্য বলে স্বীকৃত হবে, অপর পক্ষে যুক্তিতর্ক ও তৎসংশ্লিষ্ট কোনও বিদ্যা বা শাস্ত্রকে স্বীকার করলেই সমূহ বিপদ।

তখন মানুষ নিজের দেহমন, বহিঃপ্রকৃতি, বিশ্বচরাচর, যজ্ঞ, এসবের সমর্থন যখন যুক্তির মধ্যে পায় না। এবং সন্দিহান হয়ে ওঠে, এবং প্রকাশ্যে সে সংশয় যখন ঘোষণা করে, তখন সে বৈপ্লবিক সন্দেহ সংক্ৰামক হয়ে যায়।

অন্য লোকের মনে যদি বীজাকারেও কোনও সংশয় চাপা থাকে তখন প্রকাশ্যে অপরের ঘোষিত সংশয়ে সে আপনি সন্দেহের সমর্থন পায়; এমনই করে বিস্তার লাভ করে অবিশ্বাস, ফলে সমাজপতিদের সযত্ননির্মিত সংহতি বিপন্ন হয়। ‘বেদের বক্তব্য সম্বন্ধে শাস্ত্রকারদের যথার্থ আগ্রহ নেই।

তার পরিবর্তে তাদের উৎসাহ বেদকে একটি রাষ্ট্রনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখায়–যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরলোক ও দেবতার ভয় দেখিয়ে জনসাধারণকে সার্থক ভাবে বশীভুত রাখা যায়; অতএব তারা সদর্পে ঘোষণা করতে পারেন যে, বেদেই সর্বোত্তম প্রজা বিধৃত আছে।’[১৫]

কাজেই ব্যাপক সংশয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিপন্ন হতে পারে বলেই বেদের প্রামাণ্যতা প্রতিষ্ঠা করা এত জরুরি, এবং পৃথিবীর সমস্ত ধর্মগ্রন্থ সম্বন্ধেই এ কথা প্রযোজ্য। সন্দেহ প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংহতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। বলেই সন্দেহ সম্পর্কে সমাজপতিদের সন্দাজাগ্রত আশঙ্কা এবং উদগ্র রোষ।

বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : তিন>>

…………………
[১০] After this event the creative period of Brahmanism appears to have come to and end. lines of tcachers are recorded and there was clearly some revision of Vedic texts… but original composition seems to have been confined to the subsidiary studies, actual law, linguistics, astronomy and geometry.–A K. Warder. p 28

[১১] ন প্রেত্য সংজ্ঞাস্তি ইতি আরো ব্রবীমীিতি হোবাচ। যাজ্ঞবল্ক্য। বৃহদ, (২:৪:১২; ৪:৫:১৩)

[১২] ‘The Upanisads either individually or as a whole do not offer a complete, consistent and logically systematized conception of the world.’–Hajime Nakamura, p. 79

[১৩] ‘(Thou) has not shown anyone how thy way is to be comprehended. –Ezra (১৪) ‘I beseech you, my lord, why have been endowed with the power of understanding.’–Ezra 4:22.

[১৫] ‘the lawgivers are not really interested in the actual contents of the Veda What they are interested instead in is the Veda as a political instrument which can be effectively used to keep the people under control with the fear of the other world and gods etc which, because they boldly proclaim as supreme wisdom supposed to be contained in the Veda’- Chatterjee, p. 180

…………………
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য – সুকুমারী ভট্টাচার্য।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………
আরও পড়ুন-
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : এক
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : দুই
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য : তিন

.……………….
আরও পড়ুন-
বেদ রচনার গোড়ার দিক : এক
বেদ রচনার গোড়ার দিক : দুই

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!