ভবঘুরেকথা

ঈদ-ই-রিসালাত

-ড. হাসান রাজা

হযরত মুহাম্মদ (স) জীবনে একবার মাত্র হজ পালন করেছিলেন। যাকে বলা হয় বিদায় হজ। তিনি তার প্রিয় জন্মভূমিকে চিরবিদায় জানিয়ে তাঁর জন্মভূমি ত্যাগের প্রাক্কালে যে ভাষণ দেন তাকে বলা হয় বিদায় হজের ভাষণ। মক্কায় অবস্থিত সকলকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে হজের এহরামের পোশাক না খুলেই হযরত মহানবী (স) মদিনার পথে রওনা হন। প্রায় সোয়া লক্ষ লোক তাঁর সহযাত্রী ছিলেন।

১৮ জিলহজ তারিখে তিনি ‘গাদিরে খুম’ নামক একটি জায়গায় উপস্থিত হলে তাঁর উপর কোরানের সব শেষের আগের আয়াতটি নাজিল হয়। সেখানে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা দেন- ‘হে রাসুল, আপনার রব হতে যা নাজেল করা হয়েছে তা পৌঁছে দিন। আর যদি তা না করেন তা হলে তাঁর (আল্লাহর) রেসালাত পৌঁছে দেওয়া হলো না। আল্লাহ আপনাকে মানব মণ্ডলী হতে নিয়ে আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের দলকে হেদায়েত করেন না (আল কোরান ৫ : ৬৭)।’

তিঁনি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম পুরুষ যিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (আ)-এর কাছে প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করে পবিত্র আত্ম সমর্পণের ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে। পৃথিবীর আদি উপাসনালয় মক্কার পবিত্র কাবা গৃহে তিনিই একমাত্র মানব সন্তান হিসাবে ৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ ১৩ রজব ২৩ পূ. হি. শুক্রবার জন্মলাভ করেন।

এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা বললেন- ‘হে রাসুল, যে কথা আলীর মাওলাইয়াত ঘোষণা করার বিষয়ে নাজেল করা হয়েছিল তা এখন পৌঁছে দিন। আর তা যদি না করেন তবে আল্লাহর রেসালাত মানব মণ্ডলীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় না। কারণ শিঘ্রই আল্লাহ আপনাকে জনমণ্ডলী থেকে তাঁর গভীর সান্নিধ্যে টেনে নিবেন; অর্থাৎ আপনার কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

এমতাবস্থায় যদি নবুয়তের কার্যাবলীর এন্তেজাম করার যোগ্য প্রতিনিধি নিয়োগ করে জনগণের কাছে তাকে উপস্থাপন না করেন তা হলে আল্লাহর রেসালাত জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হলো না। ‘রিসালাত’ অর্থ প্রতিনিধিত্ব। নবী বিদায় গ্রহণ করবেন। নবী আল্লাহর প্রতিনিধি।

হযরত আলীকে (আ) আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। কেননা, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে কয়জন মহাগুণী মহাজন পৃথিবীতে সত্য, ন্যায় আর আত্মদর্শী জীবনাদর্শের প্রচার এবং প্রসারে নিজ জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হযরত মাওলা আলী (আ)। তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ (আ)-এর পর পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি, যিঁনি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ (আ)-এর আমৃত্যু সহযোগী-সহচর, আপন চাচাত ভাই এবং জামাতা।

তিঁনি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম পুরুষ যিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (আ)-এর কাছে প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করে পবিত্র আত্ম সমর্পণের ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে। পৃথিবীর আদি উপাসনালয় মক্কার পবিত্র কাবা গৃহে তিনিই একমাত্র মানব সন্তান হিসাবে ৫৯৮ খ্রিস্টাব্দ ১৩ রজব ২৩ পূ. হি. শুক্রবার জন্মলাভ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন হযরত আবু তালেব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ও মাতা ছিলেন ফাতিমা বিনতে আসাদ।

সকল সৃষ্টির আদি স্রষ্টা, আদি নূর, ‘নূর মুহাম্মদ’-এর পবিত্র প্রকাশ হিসাবে পবিত্র আল কোরান ও সুফি দর্শনে যে পবিত্র পাঁচ জনকে পাক পাঞ্জাতন হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মাওলানা মুহাম্মদ (আ), শের-এ খোদা মাওলাল মোমেনীন হযরত মাওলা আলী (আ), জগৎ জননী হযরত মা ফাতিমাতুজ্জাহরা (আ), বেহেস্তের সর্দার-এ ইমাম হযরত মাওলা হাসান (আ) ও হযরত মাওলা হোসাইন (আ)। এই পাক পাঞ্জাতনের অন্যতম দু’জন সদস্য মাওলা হাসান (আ) ও মাওলা হোসাইন (আ)-এর জনক ছিলেন হযরত মাওলা আলী (আ)।

তিনি ছিলেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সত্য, ন্যায়, সাহস, নেতৃত্ব, বিজয়, আত্মত্যাগ ও আধ্যাত্মিক নির্মোহ জীবন-যাপনের প্রতীক। পবিত্র আল কোরানে হযরত মুসা (আ)-এর ভাই হযরত হারুনকে (আ) নিয়ে যেমন আল্লাহর আয়াত রয়েছে তেমনি পবিত্র কোরানেও হযরত মুহাম্মদ (স)-এর সাথে হযরত মাওলা আলী করম আল্লাহ ওয়াজহুর (আ) সম্পর্কেও অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে।

মহান আল্লাহর ইচ্ছায় যাঁদেরকে বেহেস্তের সরদার হিসাবে আল্লাহর রাসুল (আ) ঘোষণা দেন। হযরত মাওলা আলী (আ)-এর উপাধি ছিল ওয়াজহুল্লাহ, ইয়াদুল্লাহ, সাইফুল্লাহ, শের-এ-খোদা, আল্ মুরতজা, আবু তুরাব, আসাদুল্লাহিল গালিব ইত্যাদি। তিনি জীবদ্দশায় যতগুলো যুদ্ধের নেতৃত্ব দান করেন তার প্রত্যেকটিতে জয়লাভ করেন, এ জন্য তাঁকে শের-এ-খোদা বা আল্লাহর সিংহ হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়।

মানব মণ্ডলীর মধ্যে সর্বোচ্চ অনুসরণীয় আদর্শ হযরত মাওলানা মুহাম্মদের (আ) পরেই হযরত মাওলা আলী (আ)-এর স্থান। কেননা, আল্লাহর রাসুল (স) ঘোষণা করেছেন- ‘আমি ও আলী একই নূরের দুইটি খণ্ড।’ আল্লাহর পরম ইচ্ছায় আল্লাহর রাসুল (আ) তার প্রাণপ্রিয় তনয়া হযরত ফাতিমা (আ)-এর সাথে তাঁর আমৃত্যু সহযোগী হযরত মাওলা আলী (আ)-এর পবিত্র বিবাহবন্ধন সম্পন্ন করেন।

তিনি ৬৩ বছর বয়সে ১৮ রমজান ইরাকের কুফায় এক মসজিদে ভোরবেলা ফজরের সালাত আদায় করার সময় অভিশপ্ত মাবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের লেলিয়ে দেওয়া এক খারিজির বিষাক্ত তরবারীর আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন এবং ৬৬১ খ্রি., ৪০ হিজরী ২১ রমজান সোমবার শাহাদাত বরণ করেন। ইরাকের নজফে তাঁর রওজা মোবারক অবস্থিত। তিনি ছিলেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সত্য, ন্যায়, সাহস, নেতৃত্ব, বিজয়, আত্মত্যাগ ও আধ্যাত্মিক নির্মোহ জীবন-যাপনের প্রতীক।

পবিত্র আল কোরানে হযরত মুসা (আ)-এর ভাই হযরত হারুনকে (আ) নিয়ে যেমন আল্লাহর আয়াত রয়েছে তেমনি পবিত্র কোরানেও হযরত মুহাম্মদ (স)-এর সাথে হযরত মাওলা আলী করম আল্লাহ ওয়াজহুর (আ) সম্পর্কেও অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে।

তাঁকে কেন্দ্র করেই মুহাম্মদী ইসলামের পবিত্র আধ্যাত্মিক জীবনদর্শন পূর্ণ আত্ম-সমর্পণের জ্ঞান এলমে মারেফতের পরিচয়ে আজও বাইয়াত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব সমাজে গুরু-মুর্শেদ, সুফি-সাধকগণ প্রচার করে চলেছেন। তাঁর জীবনের পরম আদর্শের অসামান্য দলিল তার লেখা গ্রন্থ ‘নাহাজ আল বালাগা’, আজও বিশ্বমানুষের আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম সহায়ক।

তাই নিঃসন্দেহে নবীর পরে রেসালাতের কাজে হযরত আলীই (আ) একমাত্র তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন। জনমণ্ডলীতে রাসুলের (স) পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার নির্দেশক সংবাদ এর কিছুকাল আগেই নাজেল করা হয়েছে। কিন্তু রাসুল (স) বিশেষ একটি কারণে তাৎক্ষণিক তা প্রচার থেকে বিরত ছিলেন।

এ গ্রন্থটি শুধু পবিত্রতা অর্জন ও ধর্মীয় সমস্যা সমাধানের আত্মদর্শী ফয়সালায় নয়, একইসঙ্গে বিশ্বসাহিত্যেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিঁনি অসামান্য কবিতাও রচনা করেছেন। তাঁর কবিতার মধ্যে সাধক জীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক জীবনদর্শনের আলাকিত পাঠ অতুলনীয়ভাবে সর্বকালের জন্য উপস্থিত রয়েছে। তাঁকে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

হযরত মাওলানা মুহাম্মদ (স) বলেছেন- ‘আমি জ্ঞানের শহর আলী তার দরজা। আমি আর আল্লাহ ছাড়া আলীকে কেউ চিনে না, আলী আর আল্লাহ ছাড়া আমাকে কেউ চিনে না এবং আমি আর আলী ছাড়া আল্লাহকে কেউ চিনে না। আলী যেদিকে মুখ ফিরায় ইসলাম সে দিকে মুখ ফিরায়, আলীর যে শত্রু সে আল্লাহর শত্রু।’ সকল সাহাবা কেরামের মধ্যে হযরত মাওলা আলী (আ)-এর নবী প্রেম ছিল অভূতপুর্ব এবং সকলের চেয়ে বেশী।

তার অসংখ্য প্রমাণের একটি হচ্ছে, মদিনাতে হিজরতের রাতে কাফের কওমেরা হযরত মুহাম্মদকে (স) হত্যার উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর বাড়ি ঘেরাও করলে রাতের আঁধারে হযরত মুহাম্মদকে (স) মদিনার পথে চলে যেতে সাহায্য করেন এবং হযরত মুহাম্মদের (স) পবিত্র বিছানায় নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে হযরত মাওলা আলী (আ) রাত্রী যাপন করেন।

কাফেররা হযরত মুহাম্মদকে (স) হত্যা করতে এসে তরবারী চালানোর প্রারম্ভে বিছানায় চাদর আচ্ছাদিত ব্যক্তিই যে হযরত মুহাম্মদ (স) সেটি নিশ্চিত হওয়ার সময় দেখতে পায় যে, তিনি হযরত মুহাম্মদ (স) নন, তিঁনি হযরত মাওলা আলী (আ)। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি সর্বস্ব নিবেদনের এই নজীরবিহীন বিরত্ত্বগাঁথা অসামান্য রাসুল প্রেমের প্রতীক স্বরূপ।

আল্লাহতায়ালাও তাই হযরত মুহাম্মদ (স)-এর অবর্তমানে তাঁর একমাত্র যোগ্য প্রতিনিধি হিসাবে সারা জাহানের সকল মোমিন নরনারীর আত্মমুক্তির গুরুভার অর্পণ করেন মাওলা আলীর (আ) কাধে। তাই নিঃসন্দেহে নবীর পরে রেসালাতের কাজে হযরত আলীই (আ) একমাত্র তাঁর যোগ্য প্রতিনিধি ছিলেন। জনমণ্ডলীতে রাসুলের (স) পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার নির্দেশক সংবাদ এর কিছুকাল আগেই নাজেল করা হয়েছে। কিন্তু রাসুল (স) বিশেষ একটি কারণে তাৎক্ষণিক তা প্রচার থেকে বিরত ছিলেন।

ইসলামের ইতিহাসে আজও যারা হযরত মাওলা আলীকেই (আ) মহানবীর (স) একমাত্র যোগ্য উত্তরাধীকার হিসাবে গাদিরে খুমের ঘটনাকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন তাদেরকে ‘শিয়া’ (অনুসারী) বলেন তারা, যারা ঐ ঘটনাকে মানেন না অর্থাৎ সুন্নী সম্প্রদায়ের লোকেরা।

এই নির্দেশক সংবাদ নাজেল হওয়ার সময় তিনি তা প্রকাশ না করে বিরাট জনতার মধ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে বিশেষ পরিবেশ এবং উপযুক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এর অন্তর্নিহিত কারণ তিনি খুব ভালভাবেই জানতেন যে, হযরত আলীর (আ) এই মাওলাইয়াত বা প্রতিনিধিত্ব হিংসার বশবর্তী হয়ে কিছু লোকেরা অস্বীকার করবে। তারা পরবর্তীতে আলীর (আ) বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে প্রকৃত ধর্মকে বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাবে।

এই জন্যই তিনি ঐ পরিবেশে সংবাদটি জনগণের কাছে না পৌঁছিয়ে তাকে অধিক কার্যকরী করার লক্ষ্যে উপযুক্ত পরিবেশের অপেক্ষায় ছিলেন। হজ সেরে যাত্রাপথে মক্কা থেকে মদিনার পথে ২০৩ কি.মি. দূরে গাদিরে খুম নামক জায়গায় সেটা করার জন্য আল্লাহতায়ালা পুনরায় আদেশ দান করলেন। যাত্রাপথে ওহিলাভের আশা করেই তিনি এহরামের পোশাক না খুলেই রওনা দেন, যাতে লোকেরা এই ওহির গুরুত্ব অত্যধিক মনে করে।

এক দিকে আল্লাহর কাছ থেকে ওহি অন্য দিকে এহরাম অবস্থায় বিরাট জনতার মধ্যে তার আগমন এবং ঘোষণা। উপস্থিত প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোকেরা সেই ওহিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রাসুল (স)-এর আশঙ্কায় সত্য হয়েছিল। নবীর অন্তর্ধানের পর এই নির্দেশকে ছিন্নভিন্ন করে পরবর্তী সময়ে খলিফারা সমাজ থেকে তার পরিচিতি নিশ্চিহ্ন করতে সকল ক্ষমতা আরোপ করে।

কিন্তু পৃথিবী থেকে এই পরম সত্য একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয় নি। মূলত এসব কারণেই হযরত মুহাম্মদ (স) বিশেষ পরিবেশে অত্যধিক মানুষকে এর সঙ্গে জড়িয়ে দেন। ইসলামের ইতিহাসে আজও যারা হযরত মাওলা আলীকেই (আ) মহানবীর (স) একমাত্র যোগ্য উত্তরাধীকার হিসাবে গাদিরে খুমের ঘটনাকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন তাদেরকে ‘শিয়া’ (অনুসারী) বলেন তারা, যারা ঐ ঘটনাকে মানেন না অর্থাৎ সুন্নী সম্প্রদায়ের লোকেরা।

‘গাদির’ অর্থ জলাশয়, খুম একটি জায়গা। খুম নামক জলাশয়ের কাছে কোরানের উল্লিখিত আয়াতটি এইভাবে নাজিল হয়- ‘ইয়া আইউহার রাসুল বাল্লেগ মা উনজিলা ইলাইকা মির রাব্বেকা আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন। অইনলাম্ তাফআল ফামা বাল্লাগতা রেসালাতাহু। আল্লাহ ইয় সেমুকা মিনান নাস।’

হযরত ওসমান বিন আফফন-এর সংকলিত কোরান থেকে এই ‘আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়। হযরত মুসার (আ) ভাই হারুনের (আ) নামে যেমন কোরানে উল্লেখ রয়েছে তেমনি হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নামের সাথে সাথে বিভিন্ন বিষয়ে হযরত মাওলা আলীর (আ) নামও কোরানে উল্লেখ ছিল।

এই অবস্থায় জনতার মুখে উচ্চারিত ‘মারহাবা মারহাবা শব্দে গাদিরে খুমের আকাশ-বাতাস মুখরিত ও আলোকিত হয়ে উঠল। রাসুল (স)-এর আদেশ অনুসারে ইসলামের নব নিযুক্ত নেতার কাছে এসে উপস্থিত সকলেই তিন দিন ব্যাপী এই আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ করল।

এই আয়াত নাজেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহনবী (স) পথের মধ্যে সেই স্থানেই থেমে যান। তিনি কাফেলার পূর্ববর্তী ও পশ্চাদবর্তী সকলকে একসঙ্গে করে মাওলাল মোমেনীনরূপে হযরত আলীর (আ) অভিষেক ক্রিয়া সু-সম্পন্ন করেন। এই কাজে তিনি উটের উপর বসার কয়েকটি আসন একত্রে একের পর এক স্থাপন করে মিম্বর তৈরী করে সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর উপর অবতীর্ণ বাণী পেশ করলেন। সেখানে তিনি ভাষণে বললেন- ‘আলাসতু আওলা বেকুম্ মিন্ আনফুসিকুম?’

‘আওলা’ অর্থ নিজের জীবন থেকে যিনি অধিক প্রিয় এবং সর্ব বিষয়ে অধিকার প্রাপ্ত। যার জন্য প্রয়োজন হওয়া মাত্র জীবন উৎসর্গ করা যায় তিনিই আওলা। ‘কালু : বালা ইয়া রাসুলাল্লাহ (আ)’ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের আপন জীবন থেকে অধিক আওলা নই? উত্তরে লোকেরা বলল : হ্যাঁ, হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ (আ)। প্রিয় নবী (স) ঘোষণা করলেন- আমি কি তোমাদের নিকট ঠিকমত আমার কালেমা, সালাত, সিয়াম, হজ, জাকাত পৌঁছিয়েছি?

উত্তর আসে, কালু বালা ইয়া রাসুলাল্লাহ। নিশ্চয় আপনি আল্লাহর সমস্ত আদেশ পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে আমাদের মাঝে পৌঁছিয়েছেন। জনগণ থেকে এইভাবে স্পষ্ট স্বীকৃতি লাভের পর হযরত মুহাম্মদ (স) হযরত আলী (আ)-এর ডান দুই হাত ধরে জনতার সামনে তাকে তুলে ধরলেন এবং বললেন- ‘মান্ কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু আল্লাহুমা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদা মান আদাহু, অনসুর মান নাসারা, অখ্জুল মান খাজালা, ফাল্ ইয়াস হাদিল্ হাজেরুল খায়েরা।’

অর্থাৎ- ‘আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ্, তুমি তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর যে তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তাকে শত্রু রূপে গ্রহণ কর যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে এবং সাহায্য কর তাকে যে সাহায্য করে এবং লাঞ্ছনা দাও তাকে যে লাঞ্ছনা দেয়।’ এই অবস্থায় জনতার মুখে উচ্চারিত ‘মারহাবা মারহাবা শব্দে গাদিরে খুমের আকাশ-বাতাস মুখরিত ও আলোকিত হয়ে উঠল।

রাসুল (স)-এর আদেশ অনুসারে ইসলামের নব নিযুক্ত নেতার কাছে এসে উপস্থিত সকলেই তিন দিন ব্যাপী এই আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ করল। হযরত ওমর বিন খাত্তাব হযরত মাওলা আলী (আ)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করার সময় বললেন- ‘বাখ্ খিন বাখ্ খিন ইয়া আলী ইবনে আবি তালেব…।’ আর্থাৎ তুমি ধন্য, ধন্য হে আবু তালিবের সন্তান আলী…।

এই কথার ভাবধারা ছিল এই রকম যে, আজ থেকে তুমি সকাল-সন্ধ্যা সকল মোমিন নরনারী কর্তৃক স্মরণীয় এবং প্রশংসিত হতে থাকবে। অর্থাৎ- আল্লাহর এবাদত করতে গেলে তাঁর যে গুণকীর্তণ করতে হয়, তার সাথে নবীর মাধ্যম ছাড়া সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। তেমনি আজ থেকে হযরত মাওলা আলী (আ) সেই স্থানের অধিকারী হলেন।

‘আল্লাহ মহানতর। দ্বীনকে কামেল করে দেওয়ার উপর এবং নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার উপর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। এবং আমার রেসালাতের (কর্তব্য পালনের) উপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং আবু তালেব নন্দন আলীর (আ) রেসালাতের জন্য সকল প্রশংসা আল্লাহর।’

মূলত এরপর থেকে আল্লাহর গুণকীর্তণের সঙ্গে মাওলানা মুহাম্মাদ (স) এঁর পর হযরত মাওলা আলীর (আ) উছিলা এবং মাধ্যম গ্রহণ করা ব্যতিরেখে মুসলমান নরনারীর কোন এবাদত আল্লাহর কাছে আর গ্রহণীয় হবে না। কেননা হযরত মাওলা আলী (আ) হলেন মহান আল্লাহ্কর্তৃক মনোনীত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর একমাত্র যোগ্য উত্তরাধিকারী শিষ্য, অনুসারী ও স্থলাভিষিক্ত মওলাল মোমেনীন।

তিনদিন ব্যাপী বাইয়াত অনুষ্ঠান শেষ হলে কোরানের সবশেষ আয়াতটি নাজিল হলো- ‘আল ইয়াওমা ইয়া এসা আল্লাজিনা কাফারু মিন দ্বীনিকুম ফালা তাখশাওহুম অখশাওনি। আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম অ আতমামতু আলাইকুম নেয়ামাতি ওয়া রাজিতু লাকুমুল্ ইসলামা দ্বীনা (৫:৩)।’ অর্থাৎ- আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদের আর ভয় কোর না, ভয় কর আমাকে।

আজ তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতের পরিপূর্ণতা দান করলাম এবং তোমাদের দ্বীন ইসলামের উপর আমি রাজি হলাম। (অর্থাৎ তোমাদের আত্মসমর্পণজনিত ধর্মের উপর বা নীতির উপর আমি সন্তুষ্ট হলাম।) উম্মতে মুহাম্মদীর দ্বীন পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা এবং তাদের উপর আল্লাহর নেয়ামত দান করা বিষয়টা সম্পূর্ণ হলো। তাই রসুল পাক (স) আল্লাহর কাছে কর্তব্য সম্পাদনের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন এই বাক্য উচ্চারণ করে-

‘আল্লাহু আকবার। আল হামদুলিল্লাহ আকমালে দ্বিনা ওয়া এতমামেন নেয়ামাতিন ওয়া রেজায়ে রাব্বি আলা রেসালাতি ওয়া বেলায়াতি আলী ইবনে আবি তালিব।’ অর্থ – ‘আল্লাহ মহানতর। দ্বীনকে কামেল করে দেওয়ার উপর এবং নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার উপর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। এবং আমার রেসালাতের (কর্তব্য পালনের) উপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং আবু তালেব নন্দন আলীর (আ) রেসালাতের জন্য সকল প্রশংসা আল্লাহর।’

বিশ্ববাসীর জন্য এলানে নবুয়ত যেমন একটা বিশেষ স্মরণীয় এবং পালনীয় দিবস তেমনই ১০ হিজরীর ১৮ জিলহজ এলানে মাওলাইয়াত তথা ঈদে গাদির বা ঈদ-ই-রিসালাতও একটা বিশেষ পালনীয় দিবস। কেননা পবিত্র হাদিসে কুদসীতে আল্লাহর রাসুল ঘোষণা দিয়েছেন- ‘আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা। তাই বিশ্ববাসীর উদ্ধারের জন্য জ্ঞানের এই দরজার বিশেষ কৃপা ভিক্ষা বা বকশিশ পেতেই হবে।

এছাড়া অজ্ঞতার জাহান্নাম থেকে উত্তরণ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। যদিও পরবর্তী সময়ে দেখা যায় মহানবী (স)-এর দেহত্যাগের পর প্রিয় নবীর পবিত্র দেহ মোবারক পৃথিবীর উপর রেখেই বনি সকিফা নামক স্থানে ক্ষমতালোভী মোনাফেকরা একত্রিত হয়ে নবী (স)’র স্থলাভিষিক্ত হযরত মাওলা আলী (আ)-এর এই নেতৃত্ত্বকে অস্বীকার করে তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হযরত আবু বকর বিন কুহাফা ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচিত করে।

সমগ্র সৃষ্টির মাঝে বিশেষ করে আহলে বাইত প্রেমিক সকল গুরুবাদী আধ্যাত্মিক জগতের সাধকদের কাছে তাই এই দিনটি বিশেষভাবে আনন্দ উৎসবের দিন। এই দিনটিকে তাই বলা হয় ঈদ-ই-রিসালাত বা ঈদে গাদিরে খুম তথা মাওলার অভিষেক দিবস।

এরপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে রহিত করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে হয়রত ওমর বিন খাত্তাব ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। এরপর একই ধারায় খেলাফত লাভ করে হযরত ওসমান বিন আফফান। সবশেষে ইসলামের ঘোর সংকটে জনতার জোর দাবীর মুখে চতুর্থ খলিফা হিসাবে হযরত মাওলা আলী (আ) দ্বায়িত্বভার নিতে বাধ্য হন। তাঁর সাড়ে চার বছরের নেতৃত্বকালীন সময়ে ইসলামের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা মোনাফেক মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারী, যারা ওসমান বিন আফফান এর হত্যাকারী তাদের বহুমূখী ষড়যন্ত্রের শীকার হন মাওলা আলী (আ)।

ফলে ইরাকের কুফায় এক মসজিদে ভোরবেলা ফজরের সালাত আদায়কালে মোনাফেক মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান কর্তৃক নিয়োজিত স্বর্ণমূদ্রার লোভে পথভ্রষ্ট এক খারিজি আব্দুর রহমা বিন মুলজেম বিষাক্ত তরবারী দিয়ে তাঁকে পেছন থেকে আঘাত করার ফলে তিঁনি ১৮ রমজান ৪০ হিজরী গুরুতর আহত হন। এরপর তিনদিনের মাথায় ২১ রমজান সোমবার ৬৩ বছর বয়সে তিঁনি শাহাদাত বরণ করে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।

তাঁর প্রতি সমগ্র মানব জাতির পক্ষ থেকে সালাম এবং সমর্পণ। মানবধর্ম প্রেমময় মুহাম্মদী ইসলামের ইতিহাসে ১৮ জিলহজ্ব ‘ঈদে গাদির’ বা ‘ঈদ-ই-রিসালাত’ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর স্থলাভিষিক্ত মুসলিম জাহানে আল্লাহর মনোনীত নবীর যোগ্যতম উত্তরাধিকার হিসাবে হযরত মাওলা আলী (আ)-এর মোমিনের মাওলা রূপে অভিষেক তথা দ্বায়িত্বলাভের ঘটনাটি মানবজীবনে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুমুখী আত্মদর্শী জীবন সাধনায় এই ঘটনাটি মানবজাতির আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ বিনির্মাণেরও আলোকবর্তিকা স্বরূপ। রাসুলের (স) দৈহিক অবর্তমানে রাসুলাল্লাহর (স) স্থলে বিশ্ববাসীর নেতৃত্বদানের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নির্দেশে রাসুলে পাক (স) জীবনের একমাত্র হজ শেষে এহরামের পোষাক না খুলে মদিনার পথে রওনা হলে ১৮ জিলহজ্ব তারিখে গাদিরে খুমের কাছে প্রায় দেড় লক্ষ সাহাবিদের সামনে তাঁর রিসালাত তথা যোগ্য প্রতিনিধিরূপে হযরত মাওলা আলী (আ)-কে ‘মাওলাইয়াত বা রাসুলের (স) স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন।

সমগ্র সৃষ্টির মাঝে বিশেষ করে আহলে বাইত প্রেমিক সকল গুরুবাদী আধ্যাত্মিক জগতের সাধকদের কাছে তাই এই দিনটি বিশেষভাবে আনন্দ উৎসবের দিন। এই দিনটিকে তাই বলা হয় ঈদ-ই-রিসালাত বা ঈদে গাদিরে খুম তথা মাওলার অভিষেক দিবস।

ঈদ-ই-রিসালাত তথা মাওলা আলী (আ)-এর মাওলাল মোমেনীন রূপে নবীর(স) প্রতিনিধিত্বলাভের এই মাহেন্দ্র ক্ষণের আলোয় আলোকিত হবার প্রত্যাশায় পৃথিবীর সকল মানবজাতির কাছে আত্মিকভাবে আমন্ত্রণ জানাই, আসুন আমরা মানব মনের সকল শয়তানরূপী আমিত্বের বিসর্জন দিয়ে সাম্প্রদায়িক ক্ষুদ্রতা ঝেড়ে ফেলি।

তরিকায়ে মুহাম্মদীর প্রচারক পৃথিবীর সকল কালের সকল অলিয়ে কামেলের কাছে এই দিনটির তাৎপর্য অশেষ। যদিও কারবালার মরু প্রান্তরে মুহাম্মদী ইসলামের চিরশত্রু এজিদ বাহিনীর হাতে সত্য রক্ষার্থে মাওলা হোসাইন (আ)-এর সপরিবারে শাহাদত বরণের মধ্য দিয়ে ক্ষমতালিপ্সু এজিদী-উমাইয়া-আব্বাসীয় স্বৈরাচারী শাসনের ডামাডোলে আল্লাহর মনোনীত ‘মাওলাইয়াত’ কে মুসলিম জাহান ভুলতে বসেছে।

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর দেহত্যাগের পর আল্লাহ মনোনীত ‘মাওলাইয়াত’ তথা নবীর স্থলাভিষিক্ত যোগ্য প্রতিনিধিরূপে হযরত মাওলা আলীকে (আ) অস্বীকার করে ষড়যন্ত্রকারীরা পরম সত্যকে গ্রহণ না করে তথাকথিত খেলাফতী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। যার ফলে সারাবিশ্বের মুসলমানেরা আজ দ্বিধাবিভক্ত, ঐক্যহীন-বিভ্রান্ত। অথচ গুরুমুখী মানবধর্ম প্রেমময় মুহাম্মদী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রিত আত্মশুদ্ধির সর্বজনীন সাধনা আত্মদর্শন।

কামেল গুরুর হাতে বাইয়াত গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃত মানবধর্ম প্রেমময় মুহাম্মদী ইসলামে প্রবেশ করলে তাকেই প্রকৃত মুসলমান বলা হয়। আর এইসব প্রকৃত মুসলমানদের জীবনে আধ্যাত্মিক শক্তি ও নেতৃত্ব লাভের জন্য ১৮ জিলহজ ঈদে গাদির বা ঈদ-ই-রিসালাত উদযাপন তথা মাওলাল মোমেনীন রূপে মাওলা আলী (আ)-এর স্মরণ এবং সংযোগের কোন বিকল্প নেই।

ইরাক-ইরান ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদ-ই-রিসালাত বা গাদিরে খুম হিসাবে ১৮ জিলহজকে পরম পবিত্রতায় প্রকৃত মুহাম্মদী সুফি-সাধকেরা প্রকৃত ঈদের আনন্দ ও আত্মমুক্তির মহামানবিক জীবনচর্যাকে উৎসাহিত করতে বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকেন। আত্মমুক্তি ও পবিত্র সত্যের স্বাক্ষ্য দিতে মাওলাল মোমেনীন হযরত মাওলা আলী (আ)-এর প্রতি সর্বোচ্চ সংযোগ ও সমর্পণের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সুফি সাধকেরাও পরমানন্দে এ দিনটি উৎযাপন করে আসছেন।

ঈদ-ই-রিসালাত তথা মাওলা আলী (আ)-এর মাওলাল মোমেনীন রূপে নবীর(স) প্রতিনিধিত্বলাভের এই মাহেন্দ্র ক্ষণের আলোয় আলোকিত হবার প্রত্যাশায় পৃথিবীর সকল মানবজাতির কাছে আত্মিকভাবে আমন্ত্রণ জানাই, আসুন আমরা মানব মনের সকল শয়তানরূপী আমিত্বের বিসর্জন দিয়ে সাম্প্রদায়িক ক্ষুদ্রতা ঝেড়ে ফেলি।

একই সাথে মহিমান্বিত এই দিনটিকে আমাদের জীবনে আত্মশুদ্ধির সাধনায় বিজয় অর্জন ও সর্বজনীন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামানবিক জীবনদর্শনের দীক্ষালাভের আত্ম প্রত্যয়ে মাওলামুখী সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করে তুলি। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স) তাই ঘোষণা করেছেন- ‘নিশ্চয় মুমিনদের শ্রেষ্ঠ ঈদ, ঈদ ই রিসালাত বা ঈ ই গাদীর।’ পৃথিবীতে আগত অনাগত সকল সৃষ্টির কল্যাণ হউক। পরমস্রষ্টা আমাদের সকলকে তাঁর পবিত্র মনোনীত পথে কবুল করুন। আমিন।  

<<কারবালার আগে ।।  ১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-১>>

…………………………
লেখক : ড. হাসান রাজা
লেখক ও গবেষক
রাজশাহী
ই-মেইল : hassa-raja_raj@yahoo.comৱ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………………
আরো পড়ুন:
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-১
১০ মহররম বিশ্ব শহীদ দিবস: পর্ব-২

কারবালার আগে
কারবালায় মাওলা ইমাম হুসাইনের শেষ প্রশ্ন
কারবালায় ইমাম কাসেম (আ) মর্মান্তিক ইতিহাস
কারবালায় আব্বাস আলমদারের মাজারে অলৌকিক পানি
ঈদ-ই-রিসালাত

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন-
voboghurekotha@gmail.com

Related Articles

2 Comments

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • শ্রী শঙ্কর পাল , বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই ২০২১ @ ২:৪০ অপরাহ্ণ

    সম্মৃদ্ধ হলাম – বিষয়টি এত ভাক করে কখনো বুঝা বা জানার সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার উপরে করুনাময় ঈশ্বরের রহমত বর্ষিত হোক।

    • ভবঘুরে , বৃহস্পতিবার ২৯ জুলাই ২০২১ @ ২:৪৭ অপরাহ্ণ

      জয়গুরু দাদা
      প্রেম ও ভক্তি নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!