ভবঘুরেকথা
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ মতুয়া

-জগদীশচন্দ্র রায়

কবি আচার্য মহানন্দ হালদার কত সুন্দরভাবে কবিতার ছন্দের মধ্যে গুরুচাঁদ ঠাকুরের দূরদৃষ্টিকে তুলে ধরেছেন, সেটা ভাবতে গেলে আশ্চর্যই হতে হয়। কিন্তু দু:খের বিষয় বেশিরভাগ মতুয়ারা যেখানে হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুরকেই সঠিকভাবে চিনল না সেখানে জীবনী রচয়িতাকে আর কে চিনবে? যাইহোক, এবার মূল বিষয়ে আসি।

হরিচাঁদ ঠাকুর এই অস্পৃশ্য পতিতদেরকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর জ্ঞান-দর্শনের উপলব্ধিতে মানবকল্যাণের জন্য গড়ে তুললেন ‘মতুয়া ধর্ম’ নামের ধর্ম। যার মধ্যে তিনি তাঁর জ্ঞান-দর্শনের প্রকাশ ঘটালেন বিভিন্ন কর্ম ও নীতিনিয়মের মাধ্যমে।

আর এর মাধ্যমে তিনি সকলকে এক ছত্রছায়ার নিচে স্থান দিলেন। সেই ছত্রছায়ায় গড়ে উঠল এক সংঘশক্তি। যার ফলে ঘটল নানা ঘটনা। যেমন তৎকালীন জমিদারের দরবারেও এই সঙ্ঘশক্তির প্রদর্শন করে নিজের মতাদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর।

ঠাকুর গুরুচাঁদও পিতার আদেশ মাথায় রেখে নেমে পড়েন সার্বিক মানবকল্যাণের সংগ্রামে। এই আন্দোলেনর সহযোগী হিসাবে তিনি পান মীড সাহেবকে। যার ফলে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে এই পিছিয়ে রাখা সর্বহারা মানুষেরা পেলেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সম্পত্তির অধিকার।

এদের কাছে এখন সমাজ নামটা হচ্ছে লোক দেখানো। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থই হচ্ছে মূখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু এই মহামানবেরা নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শক্তির প্রদর্শন করতে হবে। শক্তি না দেখালে কেউ সম্মান করবে না।

দূর হলো চণ্ডাল গালিসহ অনেক অসুবিধা। একটা মৃতপ্রায় সমাজ জেগে উঠল এই আন্দোলনের জোয়ারে। এই সব কিছুর মূল হিসাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি- সংঘশক্তিকে। সঙ্ঘশক্তির কাছে পৃথিবীতে বহুবার স্বৈরাচারী শাসক হয়েছে পদানত।

হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর যেসব কাজ এই নিপীড়িত জনগণের কল্যাণের জন্য করেছেন, সেই কাজগুলোকেই প্রসারিত করার জন্য তাঁরা নির্দেশ দিয়ে গেছেন। এই পিছিয়ে পড়া সমাজ আজ সামাজিক, আর্থিক ও শিক্ষাগত গোলামি থেকে এই মহামানবদের সংগ্রামের ফলে মুক্ত হলেও আজও ডুবে আছে সেই বস্তা পঁচা বৈদিকতার গহ্বরে।

মেতে আছে প্রতিহিংসায়। রাজনীতি ক্ষেত্রে অন্যের ধামাধরা হয়ে ঘুরছে। হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুরকে গড়ে তুলেছে নিজেদেরে ব্যক্তিগত সুবিধার মাধ্যম হিসাবে।

এদের কাছে এখন সমাজ নামটা হচ্ছে লোক দেখানো। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থই হচ্ছে মূখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু এই মহামানবেরা নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শক্তির প্রদর্শন করতে হবে। শক্তি না দেখালে কেউ সম্মান করবে না।

আর এই শক্তির মূল উৎস হচ্ছে সংগঠিত হওয়া- সংগঠিত ভাবে আন্দোলন করা এবং তাঁরা সেইভাবে কাজও করে গিয়েছেন। কিন্তু এরা সিংহশাবক হয়ে আজও ভেড়া হয়ে আছে। আর অন্যের গোলামি করছে। তাই এই গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে শক্তিশালী হওয়ার জন্য গুরুচাঁদ ঠাকুর নির্দেশ দিয়েছেন সমস্ত পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষদেরকে সংঘবদ্ধভাবে শক্তিশালী হয়ে রাজক্ষমতা দখল করার জন্য।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………………
আরো পড়ুন:
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: এক
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: দুই
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: তিন

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: এক
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: দুই
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: তিন

তারকচাঁদের চরিত্রসুধা
অশ্বিনী চরিত্রসুধা
গুরুচাঁদ চরিত
মহান ধর্মগুরু হরিচাঁদ নিয়ে প্রাথমিক পাঠ
হরিলীলামৃত
তিনকড়ি মিয়া গোস্বামী
শ্রী ব্রজমোহন ঠাকুর

……………………………
আরো পড়ুন:

মতুয়া ধর্ম দর্শনের সারমর্ম
মতুয়া মতাদর্শে বিবাহ ও শ্রদ্ধানুষ্ঠান
মতুয়াদের ভগবান কে?
নম:শূদ্রদের পূর্ব পরিচয়: এক
নম:শূদ্রদের পূর্ব পরিচয়: দুই
মতুয়া মতাদর্শে সামাজিক ক্রিয়া

বিধবাবিবাহ প্রচলন ও বর্ণবাদীদের গাত্রদাহ
ঈশ্বরের ব্যাখ্যা ও গুরুচাঁদ ঠাকুর
বিধবাবিবাহের প্রচলন ও গুরুচাঁদ ঠাকুর

……………………………
গুরুচাঁদ ঠাকুরের সমাজসংস্কার ও মুক্তির দিশা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!