ভবঘুরেকথা
যীশু খ্রিস্ট ইশা খ্রিস্টান ঈশ্বরপুত্র

এই রেখা ব্যতীত পেটে বা বুকের অন্য কোথাও চুল থাকবে না। তার হাতের তালু ও পায়ের তলা হবে মাংসল। কোন দিকে তাকালে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকবেন। হাঁটার সময় মনে হবে সম্মুখে ঝুকে যেন নিম্ন দিকে নেমে আসছেন। ঘামক্তি অবস্থায় দেখলে মনে হবে যেন চেহারার উপরে মুক্তার দানা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং মিশকের ঘাণ চারিদিকে ছড়াচ্ছে।

তাঁর পূর্বেও কাউকে এমন দেখা যায়নি এবং পরেও কেউ এমন আসবে না। তার দৈহিক গঠন ও অবয়ব হবে অত্যন্ত সুশ্রী। তিনি অধিক বিবাহকারী, তাঁর সন্তান সংখ্যা হবে কম এবং তাঁর বংশধারা চলবে এক বরকতময় মহিলা থেকে। জান্নাতে তার জন্যে থাকবে নির্ধারিত প্রকোষ্ঠী। প্রকোষ্ঠটি একটি প্রকাণ্ড ফাঁপা মুক্তোয় নির্মিত। সেখানে থাকবে না কোন ক্লান্তি, থাকবে না কোন চিৎকার ধ্বনি।

হে ঈসা! তুমি শেষ যামানার যিম্মাদার হবে, যেমন যাকারিয়া ছিল তোমার মায়ের যিম্মাদার, জান্নাতে তার জন্যে থাকবে সাক্ষ্য দানকারী দটি পাখীর ছানা। আমার নিকট তার যে মর্যাদা, তা অন্য কোন মানুষের নেই। তার কিতাবের নাম হবে কুরআন, ধর্মের নাম হবে ইসলাম। আমার এক নাম সালাম। ধন্য সেই, যে তার সময়কাল পাবে, তার কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করবে ও তার কথা শ্রবণ করবে।

তুবা বৃক্ষের বর্ণনা

নবী ঈসা (আ) একদা আল্লাহর নিকট নিবেদন করলেন, হে আমার প্রতিপালক! তুবা কী? আল্লাহ জানালেন, তুবা একটি বৃক্ষের নাম। আমি নিজ হাতে তা রোপণ করেছি। এটা প্রত্যেকটা জান্নাতের জন্যই। এর শিকড় রিযওয়ানে এবং তার পানির উৎস তাসনীম। এর শিশির কপূরের মত, এর স্বাদ আদার এবং ঘাণ মিশকের মত। যে ব্যক্তি এর থেকে একবার পান করবে।

তোমার অন্তরে যেন আমার ভালবাসা বিরাজ করে। অবসর সময়ে সদা সচেতন থাক। সূক্ষ্ম প্রজ্ঞাকে সুদৃঢ় কর। আমার প্রতি আগ্রহ ও ভীতি পোষণ কর। আমার ভীতি দ্বারা অন্তরকে সমাহিত কর। আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে রাতের সদ্ব্যবহার করবে।

সে কখনও পিপাসাবোধ করবে না। ঈসা (আ) বললেন, আমাকে একবার সে পানি পান করার সুযোগ দিন। আল্লাহ বললেন, সেই নবী পান করার পূর্বে অন্য নবীদের জন্যে এটা পান করা নিষিদ্ধ এবং সেই নবীর উম্মতরা পান করার পূর্বে অন্য নবীদের উম্মতদের জন্যে এর স্বাদ গ্ৰহণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে আমার নিকট উঠিয়ে আনব।

ঈসা। বললেন, প্রভো! কেন আমাকে উঠিয়ে নিবেন? আল্লাহ বললেন, আমি প্রথমে তোমাকে উঠিয়ে আনিব। তারপর শেষ যামানায় আবার পৃথিবীতে পাঠাব। এতে তুমি সেই নবীর উম্মতের বিস্ময়কর অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে পারবে এবং অভিশপ্ত দাজ্জালকে হত্যা করার ব্যাপারে তাদেরকে সাহায্য করতে পারবে। কোন এক নামাযের সময় তোমাকে পৃথিবীতে নামাব।

কিন্তু তুমি তাদের নামাযে ইমামতি করবে না। কেননা তারা হচ্ছে রহমতপ্রাপ্ত উন্মত। তাদের যিনি নবী, তারপর আর কোন নবী নেই।

হিশাম, ইব্‌ন আম্মার. যায়দ থেকে বর্ণিত। ঈসা বলেছিলেন, প্রভো! আমাকে এই রহমত প্রাপ্ত উম্মত সম্পর্কে কিছু জানান। আল্লাহ বললেন, তারা আহমদ নবীর উম্মত। তারা হবে নবীতুল্য আলিম ও প্রজ্ঞাবান। আমার অল্প অনুগ্রহে তারা সস্তুষ্ট থাকবে। শুধু লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুর বদৌলতেই তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো।

তারাই হবে জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসী। কেননা, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুর যিকির দ্বারা তাদের জিহবা যে পরিমাণ সিক্ত হয়েছে, সে পরিমাণ সিক্ত অন্য কোন জাতির হয়নি এবং সিজদা করাতে তাদের গর্দান যতবার ভূ-লুষ্ঠিত হয়েছে, ততবার অন্য কোন জাতির গর্দন ভুলুষ্ঠিত হয়নি। (ইব্‌ন আসাকির)

ইব্‌ন আসাকির আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আওসাজা থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে ঈসা। ইব্‌ন মারিয়ামকে বলেন, তোমার চিন্তা-ভাবনায় আমাকেও নিত্য সাখী করে রাখা এবং তোমার আখিরাতের জন্যে আমাকে সম্বলারুপে রােখ। নফল ইবাদতের, দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন কর, তাহলে আমি তোমাকে প্রিয় জানবো। আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে তোমার বন্ধু বানিয়ো না।

এরূপ করলে তুমি লাঞ্ছিত হবে। বিপদে ধৈর্যধারণ কর এবং তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাক। তোমার মধ্যে আমার সন্তুষ্টিকে জাগ্রত রােখ। কেননা তোমার সন্তুষ্টি আমার আনুগত্যে নিহিত, অবাধ্যতায় নয়। আমার নৈকট্য লাভের চেষ্টা কর, আমাকে সর্বদা স্মরণ রাখ।

তোমার অন্তরে যেন আমার ভালবাসা বিরাজ করে। অবসর সময়ে সদা সচেতন থাক। সূক্ষ্ম প্রজ্ঞাকে সুদৃঢ় কর। আমার প্রতি আগ্রহ ও ভীতি পোষণ কর। আমার ভীতি দ্বারা অন্তরকে সমাহিত কর। আমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে রাতের সদ্ব্যবহার করবে।

ইবলীস বলল, তা হলে আপনি এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠুন এবং সেখান থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়ে দেখুন জীবিত থাকেন। কিনা। ঈসা (আ) বললেন, তুমি জান না, আল্লাহ বলেছেন, বান্দা আমাকে পরীক্ষা করতে পারে না, আমি যা চাই তাই করে থাকি? যুহরী বলেছেন, মানুষ কোন বিষয়ে আল্লাহকে পরীক্ষা করতে পারে না, বরং আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন।

এবং দিনের বেলা থাকবে তৃষ্ণার্থ, যাতে করে আমার নিকট পূর্ণ পরিতৃপ্তির দিলা লাভ করতে পোর। কল্যাণকর কাজে তোমার চেষ্টা-সাধনা নিয়োজিত রােখ। যেখানেই থাক, কল্যাণকর কাজের সহায়ক থাক। মানুষের

নিকট আমার উপদেশ পৌছিয়ে দাও। আমার ন্যায়পরায়ণতার সাথে আমার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা কর। তোমার নিকট আমি এমন উপদেশ নাযিল করেছি, যা মনের সন্দেহ-সংশয় ও বিস্মৃতি রোগের নিরাময় স্বরূপ। তা চোখের আবরণ দূর করে ও দৃষ্টিকে প্রখর করে।

তুমি কোথাও মৃত্যুবৎ স্থবির হয়ে থেকে না, যতক্ষণ তোমার শ্বাস-প্রশ্বাস চলে। হে ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম!! আমার প্রতি যে লোকই ঈমান আনে, সে আমাকে ভয় করে। আর যে আমাকে ভয় করে, সে আমার থেকে পুরষ্কারেরও আশা রাখে। অতএব, তুমি সাক্ষী থেকে, ঐ ব্যক্তি আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে- যাবৎ না। সে আমার নীতি পরিবর্তন করে। হে কুমারী তাপসী

দান কালে কোন লোক এবং দুনিয়াকে প্রত্যাখ্যান করে, দুনিয়ার স্বাদ বর্জন করে এবং আপন প্রভুর নিকট পুরস্কারের আকাজক্ষায় থাকে। লোকের সাথে কোমল ব্যবহার করবে। সালামের প্রসার ঘটাবে। মানুষ যখন নিদ্রায় বিভোর থাকে তখন তুমি কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা ও বিভীষিকাময় কঠিন ভূ-কম্পনের ভয়ে জাগ্রত থাকবে।

সেদিন আপন পরিবার ও ধন-সম্পদ কোনই কাজে আসবে না। নিবেধিরা যখন হাসিঠাট্টারত থাকে, তখন তুমি চক্ষুদ্বয়কে চিন্তার বিষাদের সুর্মা মেখে রাখা এবং এ ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ কর এবং একে তোমার পুণ্যপ্রাপ্তির হেতু করা। ধৈর্য অবলম্বককারীদের জন্যে আমি যে পুরস্কারের ওয়াদা করেছি, তা যদি তুমি পেয়ে যাও, তবে তোমার জীবন ধন্য। দুনিয়ার মোহ ছিন্ন করে ক্রমান্বয়ে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হতে থাক।

যে নিয়ামত তোমার আয়ত্বে এসেছে তা থেকে সামান্য স্বাদ গ্ৰহণ করা। যে নিয়ামত তোমার আয়ত্বে আসেনি তার লোভ করো না। দুনিয়ায় অল্পতেই সন্তুষ্ট থাক। জীবন ধারণের জন্যে একটি শুকনা খেজুরই তোমার জন্যে যথেষ্ট মনে করবে। দুনিয়া কোন পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তা তুমি প্রত্যক্ষ করছি। পরকালের হিসাবের কথা স্মরণ রেখে আমল করতে থাক।

কেননা সেখানে তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমি আমার মনোনীত নেককার লোকদের জন্যে সেখানে যেসব পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছি, তা যদি তুমি দেখতে, তাহলে তোমার অন্তর বিগলিত হয়ে যেত এবং সহ্য করতে না পেরে তুমি মারাই যেতে।

আবু দাউদ তাঁর কিতাবে তাকদীর অধ্যায়ে লিখেছেন, মুহাম্মদ ইব্‌ন ইয়াহিয়া. তাউস থেকে বর্ণিত। একদা ঈসা ইব্‌ন মারিয়ামের সাথে ইবলীসের সাক্ষাত হয়। ঈসা ইবলীসকে বললেন, তুমি তো জান, তোমার তাকদীরে যা লেখা হয়েছে তার ব্যতিক্রম কিছুতেই হবে না।

ইবলীস বলল, তা হলে আপনি এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠুন এবং সেখান থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়ে দেখুন জীবিত থাকেন। কিনা। ঈসা (আ) বললেন, তুমি জান না, আল্লাহ বলেছেন, বান্দা আমাকে পরীক্ষা করতে পারে না, আমি যা চাই তাই করে থাকি? যুহরী বলেছেন, মানুষ কোন বিষয়ে আল্লাহকে পরীক্ষা করতে পারে না, বরং আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন।

এমনকি ইবলীস সমুদ্রের নীচে কাদার সংগে লেগে যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ঈসা ইব্‌ন মারিয়ামকে বলে, আমি আপনার থেকে যে শিক্ষা পেলাম, এমন শিক্ষা কেউ কারও থেকে পায় না। এ জাতীয় ঘটনা আরও বিশদভাবে ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

আবু দাউদ বলেন, আহমদ তাউসের বরাতে বলেন। একবার শয়তান হযরত ঈসার নিকটে এসে বলল, আপনি তো নিজেকে সত্যবাদী বলে মনে করেন, তা হলে আপনি উর্ধে উঠে নীচে লাফিয়ে পড়ুন দেখি। ঈসা বললেন, তোমার অমঙ্গল হোক, আল্লাহ কি এ কথা বলেন নি যে, হে আদম সন্তান! তোমরা আমার নিকট মৃত্যু কামনা করবে না?

কেননা আমি যা চাই তা-ই করে থাকি। আবু তাওয়া আর রবী… খালিদ ইব্‌ন ইয়ায়ীদ থেকে বর্ণিত। শয়তান দশ বছর কিংবা দা বছর যাবত ঈসা (আ)-এর সাথে ইবাদত বন্দেগী করতে থাকে। একদিন তারা এক পাহাড়ের উপরে অবস্থান করছিলেন। তখন শয়তান ঈসা (আ)-কে বলল, আমি যদি এখান থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়ি, তাহলে আমার তাকদীরে যা লেখা আছে তার কি কোন ব্যক্তিক্রম ঘটবে?

ঈসা (আ) বললেন, আমি আল্লাহকে পরীক্ষা করার ক্ষমতা রাখি না, বরং আল্লাহর যখন ইচ্ছা আমাকে পরীক্ষা করে থাকেন। ঈসা (আ) এতক্ষণে চিনতে পারলেন যে, এ শয়তান ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং তিনি তাকে তাড়িয়ে দিলেন। আবু বকর ইব্‌ন আবিদ দুনিয়া… আবু উছমান (র) থেকে বর্ণিত। একদা হযরত ঈসা (আ) এক পাহাড়ের উপরে সালাত আদায় করছিলেন।

এমন সময় তার নিকট ইবলীস এসে বলল, আপনি কি এই দাবী করে থাকেন যে, প্রতিটি বিষয়ই তার পূর্ব নির্ধারিত তাকদীর অনুযায়ী সংঘটিত হয়? ঈসা (আ) বললেন, হ্যাঁ। ইবলীস বলল, তাহলে আপনি এ পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়ুন এবং বলুন যে, এটাই আমার তাকদীরে ছিল। ঈসা (আ) বললেন, ওহে অভিশপ্ত শয়তান! আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করতে পারেন, কিন্তু বান্দারা কখনও আল্লাহকে পরীক্ষা করতে পারে না।

আবু বকর ইব্‌ন আবিদ দুনিয়া… সুফিয়ান ইব্‌ন উয়ায়না (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা হযরত ঈসার সাথে ইবলীসের সাক্ষাত হয়। ইবলীস বলল, হে ঈসা ইব্‌ন মারয়াম! আপনি দোলনায় শিশু অবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন, এটা আপনার প্রভুত্বের বড় নিদর্শন। আপনার পূর্বে আর কোন মানব সন্তান ঐ অবস্থায় কথা বলেনি।

ঈসা (আ) বললেন, না। -প্রভুত্ব তো ঐ আল্লাহর জন্যে নির্ধারিত, যিনি আমাকে শিশু অবস্থায় কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, এরপরে এক সময় আমাকে মৃত্যু দিবেন এবং পুনরায় জীবিত করবেন। ইবলীস বলল, আপনি মৃতকে জীবিত করে থাকেন, এটা আপনার প্রভু হওয়ার বড় প্রমাণ। ঈসা (আ) বললেন, তা হয় কিভাবে, প্রভু তো একমাত্র তিনি, যিনি জীবিত করার প্রকৃত মালিক।

এবং আমি যাকে জীবিত করি, তিনি তাকে মৃত্যু দেন এবং পুনরায় তাকে জীবিত করেন। ইবলীস বলল, আল্লাহর কসম, আপনি আকাশেরও প্রভু এবং দুনিয়ারও প্রভু। এ কথা বলার সাথে সাথে ফিরিশতা জিবরাল (আ) তাকে আপন ডানা দ্বারা এক ঝাপটা মেরে সূর্যের কিনারায় পৌঁছিয়ে দেন। তারপরে আর এক ঝাপটা মেরে সপ্তম সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছিয়ে দেন।

এমনকি ইবলীস সমুদ্রের নীচে কাদার সংগে লেগে যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ঈসা ইব্‌ন মারিয়ামকে বলে, আমি আপনার থেকে যে শিক্ষা পেলাম, এমন শিক্ষা কেউ কারও থেকে পায় না। এ জাতীয় ঘটনা আরও বিশদভাবে ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর ইবলীস কখনও ঈসা (আ)-এর নিকট আসেনি। ইসমাঈল আত্তার. আবু হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর ইবলীসের নিকট তার দলবল শয়তানরা জমায়েত হয় এবং বলে, হে আমাদের সর্দার! আজি যে আপনাকে খুবই ক্লান্ত শ্রান্ত মনে হচ্ছে! ইবলীস হযরত ঈসার প্রতি ইংগিত করে বললঃ তিনি হচ্ছেন আল্লাহর নিষ্পাপ বান্দা।

হাফিজ আবু বকর আল খাতীব. আবু সালমা সুয়ায়দ থেকে বর্ণিত। হযরত ঈসা (আ) একদা বায়তুল মুকাদাসে সালাত আদায় করে বাড়ি ফিরছিলেন। একটি গিরিপথ দিয়ে যাওয়ার সময় ইবলীস তাঁর সম্মুখে এসে পথরোধ করে দাঁড়ায়। ঈসা (আ) ঘুরে গেলে সে আবার সম্মুখে এসে দাঁড়ায় এবং বলতে থাকে- আপনার জন্যে অন্য কারও দাসত্ব করা শোভা পায় না।

এ কথাটি সে বারবার ঈসা (আ)-কে বলতে থাকে। ঈসা (আ) তার হাত থেকে ছুটে আসার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পারছিলেন না। ইবলীস বারবার এ কথাই বলছিল যে, হে ঈসা! কারও দাস হওয়া আপনাকে মানায় না। শেষ পর্যন্ত তিনি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন। তখন হযরত জিবরীল ও মিকাঈল ফিরিশতাদ্বয় সেখানে হাজির হলেন।

ইবলীস তাদেরকে দেখা মাত্র থেমে গেল। কিছুক্ষণ পর ঐ গিরিপথেই ইবলীস ঈসা (আ)-এর সম্মুখে উপস্থিত হল। তখন ফিরিশতাদ্বয় ঈসা (আ)-এর সাহায্যে অগ্রসর হলেন। হযরত জিবরীল। তার ডানা দ্বারা ঝাপটা মেরে ইবলীসকে বাতনে ওয়াদীতে নিক্ষেপ করে দেন। ইবলীস সেখান থেকে উঠে পুনরায় ঈসা (আ)-এর নিকট আসল।

সে ধারণা করল, সে ফেরেশতাদ্বয়কে যা হুকুম করা হয়েছিল তা পালন করে তারা চলে গিয়েছেন, আর আসবেন না। সুতরাং সে ঈসা (আ)-কে পুনরায় বলল, আমি আপনাকে ইতিপূর্বেই বলেছি, দাস হওয়া আপনার জন্যে শোভনীয় নয়। আপনার ক্রোধ কোন দাসের ক্রোধ নয়। আপনার সাথে সাক্ষাতকালে প্রকাশিত ক্রোধ থেকে আমি এ কথা বুঝেছি। আমি আপনাকে এমন এক বিষয়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছি যা আপনার জন্যে লাভজনক।

আমি শয়তানদেরকে হুকুম দিব, তারা আপনাকে প্রভু মানবে। মানুষ যখন দেখবে জিনরা আপনাকে প্রভু মানছে তখন তারাও আপনাকে প্রভূ বলে মানবে এবং আপনার ইবাদত করবে। আমি এ কথা বলছি না যে, আপনিই একমাত্র মাবুদ আর কোন মাবুদ নেই। আমার কথা হচ্ছে, আল্লাহ থাকবেন আসমানের মাবুদ আর আপনি হবেন দুনিয়ার মাবুদ।

ইবলীসের মুখে এ কথা শুনার পর ঈসা (আ) আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং উচু আওয়াজ করেন। তখন হযরত ইসরাফীল (আ) উপর থেকে নীচে নেমে আসেন। জিবরীল ও মীকাঈল ফিরিশাদ্বয় তার দিকে লক্ষ্য করেন। ইবলীস থেমে যায়। অতঃপর ইসরাফীল তার ডানা দ্বারা ইবলীসকে আঘাত করেন এবং আয়নুশ শামসে নিক্ষেপ করেন। কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয়বার আঘাত করেন।

এরপর ইবলীস সেখান থেকে অবতরণ করে ঈসা (আ)-কে একই স্থানে দেখতে পায় এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, হে ঈসা! আজি আমি আপনার জন্যেই দারুণ কষ্ট ভোগ করেছি। তারপর তাকে আয়নুশ শামসে নিক্ষেপ করা হয। সেখানে আয়নুল হামিয়াতে সাত রাজাকে দেখতে পায়, তারা তাকে তাতে ডুবিয়ে দেয়। যখনই সে চিৎকার করেছে তখনই তারা তাকে সেই কর্দমে ডুবিয়ে দেয়।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর ইবলীস কখনও ঈসা (আ)-এর নিকট আসেনি। ইসমাঈল আত্তার. আবু হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর ইবলীসের নিকট তার দলবল শয়তানরা জমায়েত হয় এবং বলে, হে আমাদের সর্দার! আজি যে আপনাকে খুবই ক্লান্ত শ্রান্ত মনে হচ্ছে! ইবলীস হযরত ঈসার প্রতি ইংগিত করে বললঃ তিনি হচ্ছেন আল্লাহর নিষ্পাপ বান্দা।

হে ঈসা। যে দিন আমি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি- সে দিন-ই আমি এ বিষয়টি চূড়ান্ত করে রেখেছি যে, যে ব্যক্তি আমার দাসত্ব কবুল করবে এবং তোমার ও তোমার মা সম্পর্কে আমার বাণীকে সঠিক বলে মেনে নিবে, তাকে আমি তোমার ঘরের প্রতিবেশী বানাব, সফরের সাখী করব এবং অলৌকিক ঘটনা প্রকাশে তোমার শরীক করব।

তার উপর প্রভাব বিস্তার করার সাধ্য আমার নেই। তবে তাকে কেন্দ্র করে আমি বিপুল সংখ্যক লোককে বিপদগামী করব। বিভিন্ন প্রকার কামনা-বাসনা তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলার। তাদেরকে নানা দলে-উপদলে বিভক্ত করব। তারা তাকে ও তাঁর মাকে আল্লাহর আসনে বসাবে। কুরআন মজীদে আল্লাহ হযরত ঈসাকে ইবললীসের ধোঁকা থেকে হেফাজত করাকে তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন –

হে মারিয়াম তনয় ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার জননীর প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ করা। পবিত্র আত্মা অর্থাৎ জিবরীল ফিরিশতা দ্বারা আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম।

হিকমত, তাওরাত ও ইনজীল শিক্ষা দিয়েছিলাম; তুমি কর্দম দ্বারা আমার অনুমতিক্রমে পাখি সদৃশ আকৃতি গঠন করতে এবং তাতে ফুৎকার দিতে, ফলে আমার অনুমতিক্রমে তা পাখি হয়ে যেত; জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে তুমি আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় করতে এবং আমার অনুমতি ক্রমে তুমি মৃতকে জীবিত করতে; আমি তোমা হতে বনী-ইসরাঈলকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম; তুমি যখন তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন এনেছিলে তখন তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এ তো স্পষ্ট যাদু। (৫ মায়িদাঃ ১১০)।

আমি গরীব ও মিসকীন লোকদেরকে তোমার একান্ত ভক্ত ও সাখী বানিয়েছি— যাদের উপরে তুমি সন্তুষ্ট; এমন সব শিষ্য ও সাহায্যকারী তোমাকে দিয়েছি, যারা তোমাকে জান্নাতের পথ প্রদর্শনকারী রূপে পেয়ে সন্তুষ্ট। জেনে রেখাে, উক্ত গুণ দটি বান্দার জন্যে প্রধান গুণ। যারা এ গুণ দুটি নিয়ে আমার কাছে আসবে, তারা আমার নিকট সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও মনোনীত বান্দা হিসেবে গণ্য হবে।

বনী ইসরাঈলরা তোমাকে বলবে, আমরা রোজা রেখেছি কিন্তু তা কবুল হয়নি, নামায পড়েছি কিন্তু তা গৃহীত হয়নি, দান-সাদকা করেছি। কিন্তু তা মঞ্জর হয়নি, উটের কান্নার ন্যায় করুণ সুরে কেঁদেছি কিন্তু আমাদের কান্নার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হয়নি। এ সব অভিযোগের জবাব তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, এমনটা কেন হল? কোন জিনিসটি আমাকে এসব কবুল করা থেকে বাধা দিয়েছে?

আসমান ও যমীনের সমস্ত ধন ভাণ্ডার কি আমার হাতে নেই? আমি আমার ধন ভাণ্ডার থেকে যেরূপ ইচ্ছা খরচ করে থাকি। কৃপণতা আমাকে স্পর্শ করে না। আমি কি প্রার্থনা শ্রবণের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম এবং দান করার ব্যাপারে সবচেয়ে উদার সত্তা নই? না। আমার দান- অনুগ্রহ সংকুচিত হয়ে গিয়েছে? দুনিয়ার কেউ কারও প্রতি অনুগ্রহশীল হলে সে তো আমারই দয়ার কারণে তা করে থাকে।

হে ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম! ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তরে আমি যে সব সদগুণ প্রদান করেছিলাম তারা যদি সেগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগােত তা হলে আখিরাতের জীবনের উপরে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিত না এবং বুঝতে পারত যে, কোথা থেকে তাদেরকে দান করা হয়েছে, আর তারা এটাও বিশ্বাস করত যে, মনের কামনা বাসনাই তাদের বড় দুশমন।

তাদের রোজা আমি কিভাবে কবুল করি। যখন হারাম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে তারা শক্তি সঞ্চয় করেছে? তাদের নামায আমি কিভাবে কবুল করি, যখন তাদের অন্তর ঐ সব লোকদের প্রতি আকৃষ্ট যারা আমার বিরোধিতা করে এবং আমার নিষিদ্ধ বস্তুকে হালাল জানে? কি করে তাদের দান-সাদকা আমি মঞ্জর করি, যখন তারা মানুষের উপর জুলুম করে অবৈধ পন্থায় তাদের ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।

হে ঈসা! আমি ঐ সব লোকদেরকে যথাযথ প্রতিদান দিব। হে ঈসা! তাদের কান্নায় আমি দয়া দেখাব কিভাবে, যখন তাদের হাত নবীদের রক্তে রঞ্জিত? এ কারণে তাদের প্রতি আমার ক্রোধ অতি মাত্রায় বেশী।

হে ঈসা। যে দিন আমি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি- সে দিন-ই আমি এ বিষয়টি চূড়ান্ত করে রেখেছি যে, যে ব্যক্তি আমার দাসত্ব কবুল করবে এবং তোমার ও তোমার মা সম্পর্কে আমার বাণীকে সঠিক বলে মেনে নিবে, তাকে আমি তোমার ঘরের প্রতিবেশী বানাব, সফরের সাখী করব এবং অলৌকিক ঘটনা প্রকাশে তোমার শরীক করব।

<<হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : এক ।। হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : তিন>>

………………..
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………….
আরও পড়ুন-
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : এক
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : দুই
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : তিন
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : চার
হযরত ঈসা (আ)-এর জন্ম ও ওহীর সূচনা : পাঁচ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!