ভবঘুরেকথা

যুদ্ধ

-লুৎফর রহমান

সর্বনাশ! এভাবে মানুষকে মানুষ হত্যা করতে কে শিক্ষা দিয়েছে? আমি ভাববাদী নই, মহামানুষও নই- তথাপি প্রাণ আমার কেঁদে জিজ্ঞেস করেছে- মানুষ এত নিষ্ঠুর হল কী প্রকারে? তোমরা জীবনে কোনো না কোনো ধর্ম মান নিশ্চয়ই। এই কী তার পরিচয়? আমি বলি, তোমাদের কোনো ধর্ম নেই।

সবই যেন তোমাদের পাগলের খেলা। জাত এ কি ঈশ্বরের ব্যবস্থা? হায়, হয়তো ছোঁয়াছুঁয়ি তোমাদের ধর্ম। প্রেম তোমাদের জন্য নেই। পোশাক, গীর্জা ও মসজিদই তোমাদের ধর্ম। প্রেম তোমাদের ধর্ম নয়। হায়, তোমাদের প্রাণে দরদ কই, মানুষের জন্য মমতা কই?

দিনের মধ্যে শতবার অজু করছ যাতে শুদ্ধ ও পবিত্র হতে পার। স্নান করছ, যাতে পাপ ধৌত হয়। কতবার ভগবান-ভগবান, (Lord-Lord) আল্লা-আল্লা করছ, এতেই কী ঈশ্বর তুষ্ট হন? আলখেল্লা পরা ধার্মিকগণ! সারা রাত উপাসনা করছ- প্রাণে কিন্তু দরদ নেই, সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠা নেই।

বাঃ বেশ তোমাদের ধর্ম! সন্ধ্যায় কুকুরের মতো ক্রোধে মানুষের বুকের মাংস খেতে উদ্যত হচ্ছ! তোমরা সত্যই ধার্মিক। হায়! দরদহীন, প্রেমহীন, মমতাহীন ধর্ম!

উত্তেজিত, ক্রুদ্ধ মানুষকে মারাত্মক ভীষণ অস্ত্র ত্যাগ করতে বল্লে কে তা আর শোনে? একটা মানুষকে শান্ত করা যায় না, জগৎকে কী করে বুঝান যাবে? যুদ্ধে সঙ্গীন, বন্দুক, কামান, তীর, গ্যাস, বর্শা এসব ব্যবহার বড়ই নিষ্ঠুরতা। মানুষ এত নিষ্ঠুর, তার প্রাণে দরদের এত অভাব যে তারা উত্তেজিত পশুর মতো অতি নিষ্ঠুরভাবে তার ভ্রাতাকে হত্যা করে।

আর তোমরা মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস পর্যন্ত ফেল না। আমাকে ফাসীকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মার, কুঠার দিয়ে আমার মাথা কেটে ফেল, শুধু নিষ্ঠুর বর্বরের মতো যাতনা দিয়ে, অপরিসীম দুঃখ দিয়ে মের না।

প্রাচীনকালে মানুষ নিজ নিজ শরীরের শক্তি দ্বারা শত্রুকে পরাজিত করতে চেষ্টা করতো। যুদ্ধে তরবারি এবং মুগ্ধার ছাড়া আর কোনো কিছু ব্যবহার করা মহাপাপ। মানবপ্রাণে দরদই যদি না জাগল, ভ্রাতাকে দুঃখ দিতে যদি তার অন্তরে মমতাই না হল, তবে আর সে জগতে ধর্মের মানে কি আর পালন করে?

এরই নাম কি মানব সভ্যতা? কার শরীরে কতখানি শক্তি আছে, সম্মুখ সময়ে তারই পরীক্ষা হোক। তিন ক্রোশ দূর থেকে কামান দেগে মানুষকে হত্যা করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। দূর থেকে মানুষের বুকে তীর ছোঁড়া, সঙ্গীন দিয়ে তার বুক ফেঁড়া, গুলি করে তার হৃৎপিণ্ড বিদ্ধ করা হয়, কতখানি নির্মমতা!

কীসের জন্য মানুষ এত নিষ্ঠুর হয়? মানুষ জীবনে কদিন বাঁচে। মানুষের মধ্যে শক্তির পরীক্ষা হোক, তার শৌর্য-বীর্যের পরীক্ষা হোক, হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কি লাঠালাঠি হোক। নিষ্ঠুর যুদ্ধ কেন?

মানুষ মানুষের বুকে কীভাবে সঙ্গীন চালিয়ে দেয়- ও দৃশ্য আমি দেখতে পারি নে, সহ্য করতেও পারি নে, ভাবতেও পারি নে। থাক তোমাদের রাজত্ব আমার জীবনের সঞ্চিত। সমস্ত ধন তুমি নিয়ে যাও, তথাপি তোমার বুকে আমি বর্শা চালাতে পারবো না।

মানুষ হত্যা কী পাপ নয়? আত্মরক্ষার জন্যে মানুষ অস্ত্র ব্যবহার করুক, মানুষের মতো মনে দরদ দিয়ে সে যুদ্ধ করুক। হায়, মানুষ মানুষকে এমন নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে! এমন জঘন্যভাবে মানুষের সঙ্গে মানুষের যুদ্ধ হয়!। আমার সঙ্গে কুস্তি কর, দেখি তোমার কেমন শিক্ষা, কেমন তোমার গায়ে বল?

দূর থেকে চোরের মতো আমার হৃদয়ে গুলীবিদ্ধ করে তোমার কী আনন্দ? তুমি কি মানুষ? তোমার কি মৃত্যু নেই। তোমার কাজের কি কোনো কৈফিয়ৎ নেই? এই কামান-বন্দুকের ব্যবহার কতদিন থেকে শিখেছ? মহাপুরুষ বুদ্ধদেব তীরবিদ্ধ রক্তাক্ত পাখিকে কোলে করে কেঁদেছিলেন।

আর তোমরা মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস পর্যন্ত ফেল না। আমাকে ফাসীকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মার, কুঠার দিয়ে আমার মাথা কেটে ফেল, শুধু নিষ্ঠুর বর্বরের মতো যাতনা দিয়ে, অপরিসীম দুঃখ দিয়ে মের না।

যিশুখ্রিষ্টকে কতবার তোমরা ক্রুশকাষ্ঠে ঝুলাবে? খ্রিষ্টের রক্তাক্ত দেহ, তার যাতনাক্লিষ্ট মুখ দেখে কি তোমাদের মায়া হয় না? ও দৃশ্য কি চোখে দেখা যায়? হায়! ধর্মহীন মানুষ!

এভাবেই জগতে পাপ বেড়েছে। প্রাচীনকালের মানুষ, যাদের কোনো ধর্ম ছিল না, কিংবা পশু দুরাত্মাদের মধ্যে এমন হতে পারে- সত্য মানুষ, যাঁরা যিশু, আব্রাহাম, বুদ্ধ, মুহাম্মদের শিষ্য, তাদের মধ্যেও কি পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধে তেমনি হবে?

যারা এত অধার্মিক, তারাই জগতে কর্তৃত্ব করবে। হাজার হাজার, কোটি কোটি মানুষ! খ্রিষ্টের মৃত্যু তোমরা চোখে দেখে শান্ত হয়ে আছ? তোমাদের ভিতর ক্রোধ জাগে না, অভিমান জাগে না?

আমি বলি তোমরা যুদ্ধনীতি বর্জন কর। সমস্ত বন্দুক, কামান, তীর, বর্শা সাগরজলে ফেলে দাও। যারা শুনবে না পৃথিবীর সমস্ত ঈশ্বরের মানুষ, সর্ব জাতির শান্তিকামী মানুষ মিলিত হয়ে সেই মনুষ্যহন্তা অত্যাচারী মনুষ্য দলের সঙ্গে সত্যাগ্রহ কর। তাদের সঙ্গে কারও কোনো সংশ্রব নেই; এইভাবে আমরা ঈশ্বরের রাজ্য স্থান করি।

শয়তানের অনুচরেরা যারা নিষ্ঠুর ঈশ্বরবিদ্রোহী, তারাই কি জগতের ক্ষমতার অধিকারী হবে? কার কথায়, কোন লাভে, কার স্বার্থে, কার আদেশে তোমরা দলে দলে যেয়ে ভ্রাতার বক্ষভেদ কর, নিজের বক্ষ বিদ্ধ হতে দাও? ও পাপের জন্য দায়ী কে? এই মনুষ্য হত্যার জন্য তোমরা জগতে কি রাজত্ব পেয়ে থাক?

যারা তোমাদেরকে যুদ্ধ হানাহানি করতে বলে, তারা তো সুখেই ঘরে বসে থাকে। মর তোমরা শুধু। বিভিন্ন দেশের মানুষ আপন ইচ্ছামত যার যেখানে ইচ্ছা, বাস করুক। কেন মারামারি হয়? আর যদি মারামারি হয় তবে কি অমন নির্মম মারামারি! সম্মুখ সমরে প্রবৃত্ত হও।

কেন মেঘের ভিতর থেকে মেঘের অন্তরালে লুকিয়ে দশ মাইল দূর থেকে বাণ নিক্ষেপ কর? বাণ যখন শত্রুর দেহ বিদ্ধ করে, তখন তার কত যন্ত্রণা হয়, তা কি একটুও ভাবতে পার না? কীভাবে মানুষকে অত ব্যথা দিয়ে তোমরা বেঁচে থাক? কুঠার দিয়ে কাছে এসে বরং এক আঘাতে তার শির দেহ হতে বিভক্ত করে ফেল।

একজনের দোষে নয়, পরস্পরের দোষে জগতে-যুদ্ধ, নৃশংসতা ও ভীষণতা বেড়ে গেছে। একজন যদি যুদ্ধে নৃশংস বধের পন্থা অবলম্বন করে, আত্মরক্ষার জন্যে আমাকেও তেমনি করতে হয়। এইভাবে মানব সমাজে মহাপাপ আসন পেতে বসেছে। যে ভালো সেও মন্দ ও বর্বর হয়েছে।

বরং যথাসম্ভব ক্ষতি স্বীকার করতত্রাচ নৃশংস আচরণ করো না। দেশে দেশে মানুষ সমস্ত ভীষণ যুদ্ধাস্ত্র তৈরি বন্ধ করে দিক, তা হলেই জগতে বর্বরতার অবসান হবে। যুদ্ধে নৃশংস আচরণের শেষ হবে।

দস্যু ও শয়তানের বুকে দানব রাজত্ব করে, যেখানে দয়া-মমতার নাম-গন্ধ নেই। তাদেরকে দমন করতে হলে হত্যা করতে হয়। তারা যেমন অস্ত্র ব্যবহার করে, আমাদেরকেও তার চেয়ে ভীষণ অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়।

এভাবেই জগতে পাপ বেড়েছে। প্রাচীনকালের মানুষ, যাদের কোনো ধর্ম ছিল না, কিংবা পশু দুরাত্মাদের মধ্যে এমন হতে পারে- সত্য মানুষ, যাঁরা যিশু, আব্রাহাম, বুদ্ধ, মুহাম্মদের শিষ্য, তাদের মধ্যেও কি পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধে তেমনি হবে?

তিনি নির্ভীক, দোষশূন্য ছিলেন। অবিচার তাঁর কাছে ছিল না। যোদ্ধা হলেও তাঁর হৃদয় ছিল দয়ার আঁধার। তিনি সত্য ছাড়া মিথ্যা জানতেন না। দুঃখ-বিপদ যত হত, তার সাহসও তত বেশি বাড়ত। বড়লোককে তিনি ঘৃণা করতেন, যদি তারা সজ্জন না হতেন।

আগে বাংলাদেশের নদী-নালা দস্যুতে ভর্তি ছিল। মানুষের জীবন, ধনরত্ন নিরাপদ ছিল না। দস্যুরা নিরীহ পথিকের সর্বস্ব লুণ্ঠন করত। একবার বরিশালের এক নদীতে এক ভদ্রলোক তাঁর পত্নীসহ নৌকায় কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সন্ধ্যার অন্ধকারে একদল দস্যু এসে তাদেরকে আক্রমণ করল।

ধনরত্ন তো নিলই, ভদ্রলোকটিকে নদীগর্ভে ফেলে দিল। নারীর ক্রন্দনে কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে তার মাথা কুঠার দিয়ে দুভাগ করে ফেল্ল। গহনাগুলো জীবিত অবস্থায় নাক-কান থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিল। হাত-পা’র গহনা খুলতে টানাটানি না করে হাত-পা কেটে ফেল্ল। খুলে দেবার দেরি সহ্য করল না।

এমনই নির্মম পিশাচ এরা। এদেরকে দমন করবার জন্যে অস্ত্র আবশ্যক। দুষ্টের দমনের জন্যে অস্ত্রের প্রয়োজন হবেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পর্তুগীজ দস্যুর অত্যাচার-কাহিনী সর্বজনবিদিত। মুসলমান সেনাপতিরা এদেরকে সমূলে দমন করেন। মানুষকে শান্তি দাও, নিষ্ঠুরের মতো নয়- বর্বরের মতো নয়।

যারা জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অস্ত্র ধারণ করেন- তাঁরা মহাপুরুষ। গত জার্মান যুদ্ধে বাঙালি সৈন্যদলের করাচী হতে পল্টনে যোগ দিবার সময় কম্যান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ. এল. ব্যারেট সৈন্যদলের মাঝে বক্তৃতায় বলেছিলেন- সিপাহী লোককা য্যায়সা ইজ্জত হ্যাঁয়, এ্যায়সা আওর কিসিকা নেহি হ্যাঁয়।

অর্থাৎ জগতে সৈনিকের যেমন মর্যাদা, এমন আর কারো নয়। একথা সত্যি। লেখক কয়েক বছর আগে ‘মোস্লেম ভারতে’ লিখেছিলেন : সৈনিকের মর্যাদার কথা। দুর্বলকে দানবের অত্যাচার লীলা হতে বাঁচাতে, বিশ্বের কল্যাণ স্থাপনের জন্য যে আপন প্রাণ দেয়, সে কী সহজ?

সে নমস্য, সে নমস্য, সে নমস্য। কতকাল আগে অবজ্ঞা, অসম্মানিত অবস্থায় এক সৈনিক আপন বুকের রক্ত দিয়ে মাটি রঞ্জিত করেছিল- আজ তিনশত বছর পরে সেই রক্তধারা ফুল হয়ে আমার বিছানার চারপাশে পড়ে আছে।

বড়ই দুঃখের বিষয়, ভারি বেদনার কথা, যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে, মানব কল্যাণের নামে অস্ত্র ধারণ করেছে- তারা যদি ঘুষ খায়, চরিত্রহীন হয়, দুর্বল, নিরপরাধীর উপর অত্যাচার করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে। দেশের অনেক কর্মচারী সম্বন্ধে সাধারণের মধ্যে নানা অপবাদ শোনা যায়।

যারা জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পবিত্র নামে আপন কার্যের অবমাননা করে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তাদের মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত নেই। যারা হবে বেশি ভালো, তারাই যদি হয় অধিক মন্দ, তবে আর সে অবস্থায় মীমাংসা কী? ফরাসি সেনাপতি বেয়ার্ড আদর্শ সেনাপতি ছিলেন। তিনি মহাপ্রাণ, নিষ্পাপ এবং মহামানুষ ছিলেন।

তিনি নির্ভীক, দোষশূন্য ছিলেন। অবিচার তাঁর কাছে ছিল না। যোদ্ধা হলেও তাঁর হৃদয় ছিল দয়ার আঁধার। তিনি সত্য ছাড়া মিথ্যা জানতেন না। দুঃখ-বিপদ যত হত, তার সাহসও তত বেশি বাড়ত। বড়লোককে তিনি ঘৃণা করতেন, যদি তারা সজ্জন না হতেন।

তিনি সমস্ত অর্থ দরিদ্রদের মধ্যে দান করে দিতেন। তিনি সর্বদা গোপনে এবং নিরহঙ্কারচিত্তে প্রতিবেশীদেরকে সাহায্য করতেন। তিনি শত শত নিঃসহায় বালিকাকে মাসিক বৃত্তিদান করতেন। বিধবারা কখনও তাঁর সাহায্য হতে বঞ্চিত হত না।

আলেকজান্ডার প্রাচীন সিনিসিয়ার রাজধানী টায়ার ধ্বংস করতে গিয়ে রাজপথসমূহে রক্তের নদী সৃষ্টি করেছিলেন। আলেকজান্ডার, চেঙ্গীস খ, হালাকু খাঁ, সুলতান মাহমুদ, নাদিরশাহ্ পবিত্র তরবারির অপমান করেছেন। অনন্ত মানুষের বুকে আগুন জ্বেলে এরা। জগতে রক্তনদী সৃষ্টি করে আনন্দ পেয়েছে। এরা সেনাপতি, না দস্যু?

কত সাদা কাপড়পরা ভদ্রলোক নির্মমভাবে দরিদ্রের অভাব দেখলে সেখান থেকে সরে যান, বেয়ার্ড তাদেরকে সাহায্য করা কর্তব্য বলে মনে করতেন। তিনি অধীনস্থদেরকে অতিশয় স্নেহের চোখে দেখতেন। বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেওয়া, পীড়িতকে ঔষধ দেওয়া, ঋণীর ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া ছিল তার স্বভাব।

তিনি প্রশংসা তোষামোদ ঘৃণা করতেন। বাল্যকালে যে-সব মহৎ গুণ তার চরিত্রে প্রকাশ পেয়েছিল, বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আরও বেড়েছিল। অনেক সময় দেখা যায়, যুবক বয়সে মহৎ ও সাধু থাকে, শেষে তারাই নিষ্ঠুর এবং অসাধু হয়ে উঠে। ডিউক অব ওয়েলিংটনও আদর্শ সেনাপতি ছিলেন।

তিনি পরাজিত দেশবাসীর প্রতি অতিশয় দয়াপূর্ণ ব্যবহার করতেন। একবার তার সৈন্যগণ কতকগুলো কাঠ তার গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিলো। সেনাপতির কাছে অভিযোগ করা মাত্র তিনি কড়ায় গণ্ডায় তাদের প্রাপ্ত দাম বুঝে দেন। তিনি অত্যাচারকে আন্তরিক ভাবে ঘৃণা করতেন।

তিনি ঘুষ গ্রহণ করা অতিশয় হীন কাজ বলে মনে করতেন। তার হৃদয় দয়ার সাগর ছিল। একবার যুদ্ধে যখন তাঁকে মৃতের সংখ্যার তালিকা দেওয়া হয়, তখন তিনি বালকের ন্যায় শোকে ক্রন্দন করেন। এই দয়ার সাগর সেনাপতি ক্ষমা করতে পারলে কখনও শাস্তি দিতেন না।

নিম্নপদস্থদের সঙ্গে অতিশয় ভদ্র ও মধুর ব্যবহার করতেন। যুদ্ধে লুণ্ঠন-কার্যকে তিনি অতিশয় ঘৃণা করতেন! আহত সৈন্যদের রক্ষার জন্য তাঁর আন্তরিকতা ছিল অসীম-স্বজাতি, বিদেশী যেই সে হোক।

অন্যেরা যাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ফেলে এসেছে তিনি তাকে কুড়িয়ে এনেছেন। নেপোলিয়নের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ করতে যেয়ে তিনি বলেন- সেনাপতি জল্লাদ নয়। নেপোলিয়ন কিন্তু মৃত্যুকালে, ডিউককে যে ব্যক্তি হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল, তাকে দশহাজার ফ্রাঙ্ক পুরস্কার দিয়ে যান।

এই ব্যক্তিও সৈনিক, কিন্তু দুজনের মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান। প্রাচীনকালে বর্বর গথ এবং জার্মানের হন জাতি.ল্যাটিন সভ্যতা ধ্বংস করেছিল- আগুন, রক্ত, ধূম, হাহাকার ক্রন্দন তাদের গমন পথকে কলঙ্কিত করেছিল। এরা হচ্ছে আল্লাহর গজব। আল্লাহর অভিশাপ হয়ে এরা জগতে রক্তস্নাত করেছে।

আলেকজান্ডার প্রাচীন সিনিসিয়ার রাজধানী টায়ার ধ্বংস করতে গিয়ে রাজপথসমূহে রক্তের নদী সৃষ্টি করেছিলেন। আলেকজান্ডার, চেঙ্গীস খ, হালাকু খাঁ, সুলতান মাহমুদ, নাদিরশাহ্ পবিত্র তরবারির অপমান করেছেন। অনন্ত মানুষের বুকে আগুন জ্বেলে এরা। জগতে রক্তনদী সৃষ্টি করে আনন্দ পেয়েছে। এরা সেনাপতি, না দস্যু?

তরবারি ধারণ করবার যোগ্যতা কার আছে?- যিনি মহাজন, যিনি প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষ, যিনি মানুষের রক্ষাকর্তা- বন্ধু, যিনি দুর্বলের বল, মানব জাতির পরম হিতাকাক্ষী, সহায়।

<<মহামানুষ ।। স্বাধীন গ্রাম্যজীবন>>

……………………
মহা জীবন -লুৎফর রহমান।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………
আরও পড়ুন-
মহামানুষ … মহামানুষ কোথায়
মহিমান্বিত জীবন
মহামানুষ
যুদ্ধ
স্বাধীন গ্রাম্যজীবন
আত্মীয়-বান্ধব
সত্য প্রচার
নিষ্পাপ জীবন
উপাসনা
নমস্কার
তপস্যা
তীর্থ-মঙ্গল
আত্মার স্বাধীনতার মূল্যবোধ
মনুষ্য পূজা
মন্দতাকে ঘৃণা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!