ভবঘুরেকথা
আজ্ঞা চক্র যোগ আসন ধ্যান

আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো

-দ্বীনো দাস

আজ্ঞা চক্র

(Third Eye Chakra – খফি- Pitutary Gland)

এই চক্রের অবস্থান দুই ভ্রূ’র মাঝে। এই চক্রটি আর সমস্ত চক্রগুলোর মধ্যে একটা সামঞ্জস্য সমানতা রক্ষার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই চক্রের আকার হলো ২টি দল বা পাপড়ি যুক্ত পদ্মের মত। এর রঙ নীল।

মানুষ এই চক্রের সাধনার দ্বারা তার অত্মজ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারে। এটি বাহ্যিক জ্ঞানের কেন্দ্র, সুকর্ম অনুভূতির প্রধান উৎস।

আধ্যাত্মিক জ্ঞান, অনুভূতি এবং বিকাশের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবাকে এই জায়গাতে কেন্দ্রীত কর হয়। আজ্ঞা চক্রের জাগরণ ও বিকাশের দ্বারা দূর দূরান্তের অবস্থানকৃত ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। এমনকি এই চক্রের জাগরণের দ্বারা ভাবী, বা ভবিতব্যের ঘটনা সম্পর্কে পূর্বাহ্নে অনুমান বা প্রত্যক্ষ লাভ করা যায়।

দমের সাথে কর সন্মিলন
অজান খবর জানবিরে মন
বিনয় করে বলছে লালন
ঠিকের ঘর ভুলনা। ।
-সাঁইজি লালন ফকির

যেমন দূর-দেশে কোন প্রিয়বন্ধু কিছু প্রশ্ন জড়িত একটা চিঠি লিখছে-ঠিক একই সময় একই লগ্নে অপর প্রান্তে আজ্ঞা জাগরিত বন্ধু বা ব্যক্তি ঠিক হুবহু তার বন্ধুর লেখার উত্তর লিখছে। পরের দিন চিঠি পোষ্ট করে দেখা গেল প্রশ্নকারী তার উত্তর পেল। আর উত্তরকারী সেতো আগেই উত্তর লিখে দিয়েছে।

এমন ঘটনা ঘটেছে বহু জায়গায়। আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। আমার এক ভক্ত ছিল খুলনা মংলা বন্দরে। নাম দ্বীন মোহাম্মদ। এর সাথে বহুবার তার লেখা চিঠির উত্তর সে আগেই পেয়েছিল। আর এ ঘটনার নিরব দর্শক ছিল খলিফা নূর-উন-নবী চিশতি সাহেব।

এটি অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি দূর-সংবেদন এবং অন্তর্বোধের কেন্দ্র বলা হয়। এটি ইচ্ছাশক্তি, পবিত্রতা ও চেতনার কেন্দ্র এক কথায় এটিকে পীযুষ গ্রন্থি (Petuitary) মেরুদণ্ড, মস্তিষ্ক, বাম চোখ, নাক ও কানের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক।

যা হোক এই চক্রের সাথে বিশেষ ভাবে সুষুম্না নাড়ী মস্তিষ্কের নিচের দিকে বাম চোখ, কান, নাক সংশ্লিষ্ট থাকে। এই চক্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত গ্রন্থি হল- pituitary গ্রন্থি ও অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম (autonomic nervous system) হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) একে ত্রিনেত্র বা দিব্য দৃষ্টির যন্ত্র বলা হয়।

এই কেন্দ্রটি সূক্ষ্ম জ্ঞানাদি লাভের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এটি অন্তজ্ঞান বিকাশে অত্যধিক সহায়ক ভূমিকা রাখে। ভাবী ঘটনার অনুমান বা সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম ঘটনা ও তথ্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

এখান থেকে মস্তিষ্ক প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়। মধুমেহ- ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এই আজ্ঞা চক্রের জাগরণের কাজ করা খুব জরুরী। আজ্ঞা চিকিৎসা আশ্চর্যজনক ভাবে শরীরের শক্তি প্রদান করে। নাকের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত সমস্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।

এটি অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি দূর-সংবেদন এবং অন্তর্বোধের কেন্দ্র বলা হয়। এটি ইচ্ছাশক্তি, পবিত্রতা ও চেতনার কেন্দ্র এক কথায় এটিকে পীযুষ গ্রন্থি (Petuitary) মেরুদণ্ড, মস্তিষ্ক, বাম চোখ, নাক ও কানের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক।

যোগসাস্ত্রমতে ওঁ কারের নিম্নদেশে ললাটমণ্ডলে ভ্রূমধ্যে এই চক্র চন্দ্রবৎ শ্বেতবর্ণ দ্বিদল বা শতদল পদ্ম বলা হয়।

শতদল সহস্রদল রসরতি
রূপে করে চলাচল,
দ্বিদলে স্থিতি বিদ্যুত আকৃতি
ষোড়দলে বারাম যোগান্তরে।।

ষোড়দলে সে তো ষড়তত্ত্ব হয়
দশমদলের মৃনালগতি গঙ্গাময়,
ত্রিধারা তার ত্রিগুণ বিচার
লালন বলে গুরু অনুসারে।।
-সাঁইজি লালন ফকির

এই দুই দলে হং ক্ষং রক্তবর্ণ বর্ণ আছেও এর কর্ণিকা মধ্যে ত্রিকোনাকৃতি শক্তি যন্ত্রোপরি লং বীজ সহ প্রণবাকৃতি তেজোময় ইতবাখ্য শিবলিঙ্গ বিদ্যমান আছে। দুই পত্রে ও কর্ণিকায় সত্ব, রজ+তম গুণ আছে। ইহা যং বীজ ও বায়ুর আলয় সহ হংসরূপ পরশিব ও তাহার শক্তি সিদ্ধকালী আছে।

এই কর্ণিকা মধ্যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর রূপে শক্তি রয়েছে। এবং তমধ্যে শুক্লবর্ণা চতুভুর্জা ষড়মুখী হাকিনি শক্তি আছে।

এই চক্রকে যুক্ত ত্রিবেনী বলে যেহেতু এই স্থানে গঙ্গা যমুনা সরশ্বতী রূপে ইড়া পিঙ্গলা ও সুষুম্না নাড়ী একত্রে মিলিত হয়ে সহস্রার পর্যন্ত গমন করিয়াছে। মতান্তরে ওঁকারের নিন্মে নিরালম্বপুরী আছে এবং ইহার নিম্নে সোম চক্র নামে একটি গুপ্ত চক্র আছে ইহা ষোড়শদল বিশিষ্ট। ঐ ষোড়শদলকে চন্দ্রের ষোড়শ কলা বলা হয় যেমন-

১. কৃপা।
২. মৃদুতা।
৩. ধৈর্য্য।
৪. বৈরাগ্য।
৫. ধৃতি।
৬. সম্পৎ।
৭. হাস্য।
৮. রোমাঞ্চ।
৯. বিনয়।
১০. ধ্যান।
১১. সুস্থিরতা।
১২. গাম্ভীর্য্য।
১৩. উদ্যম.
১৪. অক্ষোভ।
১৫. ঔদার্য।
১৬. একাগ্রতা।

এই হল ১৬।

ইহার নিম্নে আর একটা গুপ্ত ষড়দল পদ্ম আছে উহাকে জ্ঞান চক্র বলে। ইহার এক এক দলক্রমে- রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ ও স্বপ্ন জ্ঞান জন্মে। ইহারই নিম্নে আজ্ঞা নামক চক্রের স্থান নির্মিত হইয়াছে। আজ্ঞা চক্রের নিচে তালুমূলে একটা গুপ্ত চক্র আছে এই চক্রটাকে দ্বাদশদল যুক্ত রক্তবর্ণ পদ্ম বলা হয়।

এই পদ্মে পঞ্চ সূক্ষ্ম ভূতের পঞ্চীকরণ দ্বারা পঞ্চ স্থূল ভূতের উদ্ভাবন হইয়া থাকে। ইহার এক এক দলক্রমে- শ্রদ্ধা, সন্তোষ, অপরাধ, দম, মান, স্নেহ, শোক, খেদ, শুদ্ধতা, অরতি, সম্ভ্রম ও উর্ম্মি এই দ্বাদশটা বৃত্তি উদ্ভাবিত হয়। এরই নিচে রহিয়াছে বিশুদ্ধ চক্র।

এই দ্বিদল পদ্মে দুই দলে চিত্ত ও মন রহিয়াছে। বেদান্ত মতে ইহার দুই দলকে প্রাণ ও মনোময় কোষ বলা হয়। কেউ কেউ সূক্ষ্ম শরীরের স্থান বলেন।

চক্রের সংক্ষেপ বিবরণ-

১. নাম- আজ্ঞা চক্র (Third eye) খফি, pituitary gland.
২. আকৃতি- শুভ্র আলোর ২টি পাপড়ি বিশিষ্ট পদ্মের মতো।
৩. রঙ- ঘন নীল।
৪. দলের অক্ষর- হ, ক্ষ।
৫. তত্ত্ব- l আকার- মহাতত্ত্ব।
৬. সম্পর্ক- পিটুইটারী, পিযুষ গ্রন্থি।
৭. ফল- বিভিন্ন চক্রের ধ্যানের ফল একমাত্র এই চক্রের ধ্যানের দ্বারা প্রাপ্ত হয়।
৮. শক্তির উৎস- জাগৃতি এবং ক্রোধ এর কেন্দ্র।
৯. স্থান- উভয় দু ভ্রূর মধ্যবর্তী ভ্রূকুটির ভেতর।
১০. নিয়ন্ত্রণ- অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম (Autonomic)।

(চলবে…)

সহস্রার চক্র : পর্ব বারো>>

…………….
আরো পড়ুন:
ধ্যানযোগ : পর্ব এক
সপ্তচক্র লতিফা : পর্ব দুই

প্রবৃত্তি : পর্ব তিন
ধ্যান : পর্ব চার
অন্তস্রাবী গ্রন্থি : পর্ব পাঁচ
চক্র : পর্ব ছয়
সাধিষ্ঠান চক্র : পর্ব সাত
মনিপুর চক্র : পর্ব আট  
অনাহত চক্র : পর্ব নয়
বিশুদ্ধ চক্র : পর্ব দশ
আজ্ঞা চক্র : পর্ব এগারো
সহস্রার চক্র : পর্ব বারো

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………….
আরো পড়ুন:
অবশ জ্ঞান চৈতন্য বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া
ঈশ্বর প্রেমিক ও ধৈর্যশীল ভিখারী
সুখ দুঃখের ভব সংসার
কর্ম, কর্মফল তার ভোগ ও মায়া
প্রলয়-পূনঃউত্থান-দ্বীনের বিচার

ভক্তি-সংসার-কর্ম

………..
বি.দ্র.
আমার এই লেখা কিছু ইতিহাস থেকে নেওয়া কিছু সংগৃহীত, কিছু সৎসঙ্গ করে সাধুগুরুদের কাছ থেকে নেওয়া ও আমার মুর্শিদ কেবলা ফকির দুর্লভ সাঁইজি হতে জ্ঞান প্রাপ্ত। কিছু নিজের ছোট ছোট ভাব থেকে লেখা। লেখায় অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।। আলেক সাঁই। জয়গুরু।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!