ভবঘুরেকথা

মন নিয়ন্ত্রণ

-বিদ্যুৎ মিত্র

অনেক ভাবেই মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করা যায়। তার একটি হলো সম্মোহন। সম্মোহনের সাহায্যে নিজেকে প্রভাবিত করে অটো সাজেশনের মাধ্যমে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু সম্মোহিত অবস্থায় কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এসে যায় বলে স্বাধীনভাবে চিন্তা ও কল্পনার ক্ষমতা অনেকখানি লোপ পায়।

অথচ নতুন এই পদ্ধতিতে কল্পনাকে ব্যবহার করতে হবে আপনার নিজের প্রয়োজনে। সেইজন্যে সম্মোহনের কাছাকাছি আর একটি স্তর আবিষ্কার করা হয়েছে, যেখানে পৌঁছে স্থিত হবে মানুষ, কিন্তু তার প্রখর কল্পনাশক্তি যথেচ্ছ ব্যবহারে কোনো বাধা থাকবে না।

আমরা জানি, আমাদের ব্রেন ইলেকট্রিসিটি তৈরি করে। এই বিদ্যুতের সাইকেলকে বৈজ্ঞানিকেরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নাম দিয়েছেন বিটা, আলফা, থিটা ও ডেলটা রিদম।

যাঁরা ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাঁরা জানেন, সবচেয়ে ভালো সার্কিট সেটাই যার প্রতিরোধ ক্ষমতা (resistance) সবচেয়ে কম; কারণ ওই সার্কিটই নিজের বৈদ্যুতিক শক্তিকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে পারে। মস্তিষ্কের ব্যাপারেও কথাটা সত্যি।

ব্রেনটা যখন সবচেয়ে কম তৎপর থাকে তখন তার ক্ষমতা থাকে সবচেয়ে বেশি। কম ফ্রিকোয়েন্সিতে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ ও জমা করে রাখতে পারে ব্রেন।

সবগুলো পরিচ্ছেদ শেষ করার পর আপনি আবিষ্কার করবেন, সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে প্রবেশ করেছেন আপনি, সম্ভব-অসম্ভবের বেড়া আর ততোটা কঠিন মনে হচ্ছে। না, আশ্চর্য এক বিদ্যা চলে এসেছে হাতের মুঠোয়, নিজের ভেতর অনুভব করছেন এক অসাধারণ ক্ষমতা।

ধ্যানের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো বিটা লেভেল থেকে আলফা, থিটা ও ডেলটা লেভেলে ওঠানামা করতে শিখে নিয়েছেন সাধু-সন্ন্যাসীরা। সম্মোহন-জাতীয় পদ্ধতিতে শারীরিক ও মানসিক শিথিলতা সৃষ্টি করছেন তাঁরা, সেইসাথে, মানসচক্ষে পরিষ্কার ছবি ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা, অর্থাৎ কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাচ্ছেন নিজের মধ্যে সচেতনভাবে।

আমরাও যদি এই ধ্যান করাটা শিখে নিতে পারি তাহলে তাঁদের মতোই ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই ক্ষমতা আমরা কে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। সমস্ত সম্ভাবনাই তুলে ধরা হবে আপনার সামনে।

বইটা একবার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলুন। প্রথমবার পড়বার সময় কোনো অনুশীলনই চর্চা করতে যাবেন না। একবার সবটা পড়ে নিয়ে তারপর এক এক করে চর্চা শুরু করুন প্রথম থেকে। আগেরটা ভালোমতো রপ্ত না করে পরের অনুশীলনে যাবেন না।

সবগুলো পরিচ্ছেদ শেষ করার পর আপনি আবিষ্কার করবেন, সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে প্রবেশ করেছেন আপনি, সম্ভব-অসম্ভবের বেড়া আর ততোটা কঠিন মনে হচ্ছে। না, আশ্চর্য এক বিদ্যা চলে এসেছে হাতের মুঠোয়, নিজের ভেতর অনুভব করছেন এক অসাধারণ ক্ষমতা।

এতেই দেখবেন আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। থিটা বা ডেলটা। লেভেলে যদি সচেতনভাবে পৌঁছতে পারেন তাহলে একজন মানুষের ক্ষমতার সম্ভাব্য চূড়ান্ত পর্যায়ে উপস্থিত হবেন। এ সম্পর্কে বইয়ের শেষদিকে কিছু পথ নির্দেশ থাকবে।

বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে। কারণ পদ্ধতিটা এমনই যে এটা কারও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ধার ধারে না। যেভাবে যা করতে বলা হবে।

করুন, নাহয় অবিশ্বাস নিয়েই করুন, যখন নিজের ভেতর ক্ষমতা অনুভব করবেন স্পষ্টভাবে, যখন বিদ্যাটা কাজে লাগিয়ে ফল পেতে শুরু করবেন, তখন আপনিই আসবে বিশ্বাস, সাধতে হবে না।

অনুশীলন শুরু করবার আগে লেভেল সম্পর্কে দু একটি কথা।

আজকাল আলফা সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। এটা ব্রেন ওয়েভের একটা প্যাটার্ন। ইলেকট্রোএনকেফ্যালোগ্রাফের (Electroencephalograph) সাহায্যে মাপ-জোখ করে স্পন্দনের সাইকেল অনুযায়ী ব্রেন- ওয়েভকে ভাগ করা হয়েছে চারটি লেভেলে।

প্রতি সেকেণ্ডে কম্পন যদি চোদ্দ বা তারচেয়ে বেশিবার হয় তাহলে তাকে বলা হয় বিটা ওয়েভ। সেকেণ্ডে সাত থেকে চোদ্দবার হলে আলফা, চার থেকে সাত হলে থিটা, এবং চারের নিচে হলে ডেলটা ওয়েভ।

আপনি যখন সম্পূর্ণ জেগে রয়েছেন, দুনিয়াদারির কাজে রত, সচেতন, তখন আপনি বিটা লেভেলে রয়েছেন। যখন আপনি দিবাস্বপ্ন দেখছেন বা ঘুমিয়ে পড়তে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনো পুরোপুরি ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করেননি; কিংবা ঘুম ভাঙতে যাচ্ছে কিন্তু এখনো পুরোপুরি ভাঙেনি; তখন আপনি আলফা লেভেলে রয়েছেন।

যখন ঘুমিয়ে পড়লেন, তখন আপনি আলফা থেকে নেমে থিটা লেভেলে এমনকি কখনও কখন ও ডেলটা লেভেলে চলে যাচ্ছেন।

থিটা ও ডেলটা লেভেল নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করবো না আমরা। প্রথম দিকে অনুশীলনগুলোর মাধ্যমে আমরা আপনাকে শেখাবো কিভাবে ইচ্ছে করলেই সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন অবস্থায় যে-কোনো সময়ে আলফা লেভেলে চলে যেতে পারবেন। আপনি।

এতেই দেখবেন আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। থিটা বা ডেলটা। লেভেলে যদি সচেতনভাবে পৌঁছতে পারেন তাহলে একজন মানুষের ক্ষমতার সম্ভাব্য চূড়ান্ত পর্যায়ে উপস্থিত হবেন। এ সম্পর্কে বইয়ের শেষদিকে কিছু পথ নির্দেশ থাকবে।

এবার কাজে নেমে পড়া যাক। কেমন?

………………..
অশেষ কৃতজ্ঞতা- আত্ম-উন্নয়ন : বিদ্যুৎ মিত্র

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………..
আরও পড়ুন-
পাতজ্ঞল-যোগসূত্র : সমাধি পাদ
পাতজ্ঞল-যোগসূত্র : সাধন পাদ
পাতজ্ঞল-যোগসূত্র : বিভূতি পাদ
পাতজ্ঞল-যোগসূত্র : কৈবল্য পাদ
তৃতীয় খণ্ড : যোগ ও মনোবিজ্ঞান : ধ্যান
তৃতীয় খণ্ড : যোগ ও মনোবিজ্ঞান : রাজযোগ প্রসঙ্গে
প্রথম খণ্ড : সরল রাজযোগ
প্রথম খণ্ড : রাজযোগ
রাজযোগ-বিজ্ঞানের লক্ষ্য
মন নিয়ন্ত্রণ
ধ্যান বিজ্ঞানাদি
ধ্যান কি করে করতে হয় : প্রথম কিস্তি
ধ্যান কি করে করতে হয় : দ্বিতীয় কিস্তি
ধ্যান কি করে করতে হয় : তৃতীয় কিস্তি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!