ভবঘুরেকথা
শামস তাবরিজি

রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২

-মাবরুকা রাহমান

কথিত আছে, এভাবেই পাখির মত ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনি এক সভায় উপস্থিত হন। সেখানে একুশ বছরের এক যুবকের বির্তক বা বক্তব্য শুনতে পান। তিনি বুঝেন একেই তিনি খুঁজছেন। কিন্তু যুবকটি তখনো ঠিক প্রস্তুত নয় বলেই তার ধারণা হলো।

তার মতো মহাসমুদ্রকে ধারণ করতেও তো পরিপক্কত্বার প্রয়োজন।

তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। দীর্ঘ ষোল বছর পরের কথা, সেই যুবকটির বয়স সাঁইত্রিশ। ততদিনে সে কোনিয়ার অন্যতম জ্ঞানী একজন আইন প্রণেতা এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা গুরু। তিনি তার শিষ্যদের সাথে বাজারের মধ্যে কথা বলছিলেন।

হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় কালো জীর্ণ আলখাল্লা পরা এক ভ্রাম্যমাণ বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা। এসেই সেই জ্ঞানী ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেন, ‘ইমানের সংজ্ঞা কী?’

সেই আধ্যাত্মিক শিক্ষাগুরু নানাভাবে তাকে ইমানের সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করে।

কিন্তু জীর্ণ পোশাকধারী ব্যক্তি তার উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পেরে বললেন, ‘ইমানের সংজ্ঞা হলো- নিজের থেকে নিজেকে পৃথক করে ফেলা।’

এটুকু শুনেই সেই ধনাঢ্য জ্ঞাণী লোকটি নিজের সাওয়ারি থেকে নেমে আসে মলিন গৃহহীন বৃদ্ধিটির হাত জড়িয়ে ধরলেন।

এই বৃদ্ধ আর এই ধনাঢ্য শিক্ষাগুরু, এরা দুইজনই হলেন সুফিবাদের ইতিহাস সৃষ্টির দুই প্রধান চরিত্র। একজন গুরু শামস তাবরিজি আর অপরজন শিষ্য মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি।

প্রথম সাক্ষাতটি যথেষ্ট নাটকীয় হলেও; এই সাক্ষাতেই রুমি বুঝে যান শামসই সেই সূর্যপুরুষ যে তাকে পথ দেখাবে।

তবে রুমির সে পথ চলা খুব সহজ ছিল না।

শুরুতেই শামস রুমিকে জানিয়ে দেন-

‘শেখার জন্য তুমি পড়াশোনা করো, কিন্তু বুঝতে হলে তোমার প্রয়োজন ভালবাসা।’

কথিত আছে, তাবরিজি একদিন রুমির সমস্ত বই পানিতে ফেলে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে রুমি সেগুলো পানি থেকে তুলতে উদ্দত্য হয়ে জানতে চাইলো তাবরিজি কেনো এরূপ কাজ করলো।

তখন শামস তাবরিজি হেসে বললেন-

‘তোমাকে নতুন শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে, পুরানো সব শিক্ষা ভুলে যেতে হবে। আর তা যদি তুমি না চাও, তাহলে আমি চলে যাব। যাবার আগে তোমার বইগুলো এমনভাবে তুলে দিবো যাতে বইগুলোর একটি পৃষ্ঠাও ভেজা পাবে না।’

ওদিকে শামস তাবরিজি লোকেদের মাঝে মিষ্টভাষী ছিলেন না। স্বভাবতই অন্যদের গুরু-শিষ্যের এই জুগলবন্দীর বিষয়টাই পছন্দ হচ্ছিল না। আর এর জের ধরেই শামসের সাথে তারা বাজে আচরণ করতে শুরু করে।

রুমি বইয়ের মায়া ত্যাগ করে গুরুবাক্য মেনে নিলো। অল্প বয়সেই জ্ঞান সম্পদ আর সম্মান পাওয়াতে রুমির ভেতরে যে অহং বোধ তৈরি হয়েছিল তা শেষ হতে শুরু করলো। যত সময় যায় তিনি তত বিমোহিত হতে থাকেন এই প্রজ্ঞাবান আধ্যাত্মিক পুরুষের সংস্পর্শে।

রুমি জ্ঞানী ছিলেন, সম্মানীয় ছিলেন। কিন্তু কবি হয়ে ওঠেন তিনি শামস তাবরিজির কারণেই। মূলধারা থেকে বের হয়ে রুমি সুফিবাদকে নতুন করে ধারণ করেন শামস তাবজিরির কল্যাণেই।

‘যখন সবাই কিছু একটা হতে চাইছে, তখন তুমি বরং কিছুই হতে যেয়ো না। শূন্যতার সীমানায় নিজেকে মেলে দাও। মানুষের উচিত একটা পাত্রের মতন হওয়া। একটি পাত্রের মধ্যকার শূন্যতা যেমন তাকে ধরে রাখে। তেমনি একজন মানুষকে ধরে থাকে তার নিজের কিছুই না হয়ে থাকার সচেতনতা।’ -শামস তাবরিজি

সুফি কবি জালালউদ্দিন রুমির লেখার মধ্য দিয়েই মূলত শামস তাবরিজি প্রকাশিত হতে থাকেন। রুমি ভক্তিভরে তার গুরু সম্পর্কে না লিখলে হয়তো বিশ্ববাসীর এই অদ্ভুত সাধকের কথা জানতে পারত না। আর শামস না থাকলে হয়ত রুমি কখনো সুফিবাদে নিমজ্জিত হয়ে কাব্য রচনাই করতেন না।

প্রথম সাক্ষাতেই শামস তাবরিজির জ্ঞানের মূর্ছনায় রুমি অভিভূত হয়ে পড়েন। ক্রমাগত তিনি সব ছেড়ে শামসের সাথেই সময় কাটাতে শুরু করেন। তাদের এ সমস্ত কথোপকথনে তৃতীয় কেউ থাকতো না।

শামস তাবরিজি যতটা অসামাজিক আর লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে নিজের সাধনা করতেন, ঠিক ততটাই জালালউদ্দিন রুমি ছিলেন কোনিয়ায় বিখ্যাত। রুমি তার অসংখ্য শিষ্যদের দ্বারা তিনি সর্বদাই পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন। জ্ঞানের কথা বলতেন।

শামসের সাথে পরিচয়ের পর থেকে তিনি ক্রমশ তার শিষ্যদের থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করলেন। নিজে শামসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে কাছে থাকতে লাগলেন।

ওদিকে শামস তাবরিজি লোকেদের মাঝে মিষ্টভাষী ছিলেন না। স্বভাবতই অন্যদের গুরু-শিষ্যের এই জুগলবন্দীর বিষয়টাই পছন্দ হচ্ছিল না। আর এর জের ধরেই শামসের সাথে তারা বাজে আচরণ করতে শুরু করে।

অদ্ভুত হলেও, শামস সেই প্রথম মানবীর প্রেমে পড়লেন। বিয়ের পর তার আরেকটা ভালোবাসার অধ্যায়ের সাথে পরিচয় ঘটে। যে ভালোবাসা মানবের সাথে মানবীর। তাছাড়া তিনি রুমির এই বুদ্ধিতেও মুগ্ধ হন।

অনেকে বলে এ ঘটনার ফলেই শামস তাবরিজি একদিন কোনিয়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তবে গবেষকরা মনে করেন, শামস তাবরিজির মত ব্যক্তিত্ব অন্যদের কথায় কোনিয়া ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি কোনিয়া ছেড়েছিলেন রুমিকে বিরহ আগুনে পুড়িয়ে আরও শুদ্ধতম হবার জন্য।

গুরুর প্রেমে মত্ত প্রেমিক শিষ্যই কেবল জানে বিচ্ছেদ বেদনা কতটা কঠিন। স্রষ্টার প্রেমে মত্ত হলেই বোঝা যায় তার দর্শন বিনে কতটা কষ্টকর এ জীবন। প্রেমের ধর্মটাই এমন, বিচ্ছেদের মধ্য দিয়েই পাওয়া যায় মিলনের সুখ।

শামসের অবর্তমানে রুমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরে বন্দী হয়ে থাকতেন। জানা যায়, তিনি সে সময়টায় সুফি নৃত্যে মত্ত থাকতেন। এই নৃত্য সাদা পোশাকে একাধারে দু’হাত ছাড়িয়ে ঘুরতে থাকা। এ এক অদ্ভুত সুন্দর সাধনা। তিনি গুরুর বিরহে কাতর হয়ে এক সময় অসুস্থ হয়ে পরেন।

তিনি কারো সাথেই ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলতেন না। এ অবস্থায় নিজের পুত্রকে তিনি পাঠালেন শামস তাবরিজিকে খুঁজে ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে আনতে।

শামস ফিরে এলেন ঠিকই। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টালো না। শামস আগের মতোই আপন ভাবনায় রইলেন।

এ সময় রুমি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তার পনেরো বছর বয়সী সৎ মেয়ে কিমিয়ার সাথে শামসের বিবাহ দিলেন। যেন শামসকে আর কখনোই হারাতে না হয়।

অদ্ভুত হলেও, শামস সেই প্রথম মানবীর প্রেমে পড়লেন। বিয়ের পর তার আরেকটা ভালোবাসার অধ্যায়ের সাথে পরিচয় ঘটে। যে ভালোবাসা মানবের সাথে মানবীর। তাছাড়া তিনি রুমির এই বুদ্ধিতেও মুগ্ধ হন।

‘এই​ পথ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা জানার চেষ্টা করা অর্থহীন।’ তুমি শুধু প্রথম ধাপটি নিয়ে চিন্তা করো, পরেরগুলো এমনিতেই চলে আসবে।’ -শামস তাবরিজি​

কিন্তু যে প্রথমেই যাযাবর জীবনের সাথে আবদ্ধ তার জীবনে কি থিতু হওয়ার সুযোগ হয়? হয় না। পথ তাকে বারবার ঘরহীন মুসাফিরই করেছে।

তবুও জহুরী যেমন হীরে চিনে তেমনই তিনি রুমিকে বা রুমি তাকে চিনে নিয়ে সৃষ্টি করেন অমরকথা। সুফিবাদের এক অন্যান্য বিস্ময়কর দিগন্তের উন্মোচন করেন আধ্যাত্মিক গুরু শামস তাবরিজি তার শিষ্য জগৎ বিখ্যাত কবি জালালউদ্দিন রুমির মধ্য দিয়ে।

বিয়ের কয়েক মাস পরেই হঠাৎ একদিন কিমিয়া মারা গেলো। এরপর শামস তাবরিজি ভীষণ বিষাদে ডুবে যান। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এর কিছুদিন পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

কেউ বলে রুমির অপর পুত্ররা তাকে হত্যা করেছে। কেউ বলে তিনি নিজ থেকেই চলে গিয়েছিলেন। যাই হোক, এভাবেই এই অনন্ত প্রেমিক রহস্যময় সাধক পুরুষের যাযাবর পাখির মতো জীবন অনন্তে লীন হলো।

জানা যায়, গুরুকে চিরতরে হারিয়ে রুমি মুখে মুখে রচনা করেন তার দীর্ঘ কাব্যগ্রন্থ ‘দেওয়ান-এ-শামস-এ-তাবরিজি’। গুরুর ধারাকে এগিয়ে নিতে রুমি সুফিবাদের বিস্তার ঘটান। তার সাধনায় যুক্ত হয় ঘূর্নিনৃত্য, গান-কবিতা।

শামস তাবরিজি জীবদ্দশায় চেয়েছিলেন একজন এমন শিষ্য, যার আত্মার মধ্য দিয়ে তিনি তার আত্মার প্রকাশ করবেন। যার মধ্য দিয়ে তিনি স্রষ্টাকে প্রেম নিবেদন করবেন।

স্রষ্টা তার সেই আকুল অনুনয় শুনেছিলেন। তিনি তার সেই শিষ্য পেয়েছিলেন। তাদের গুরু শিষ্যের দুই আত্মা একীভূত হয়ে স্রষ্টার প্রেমে মশগুল অন্যান্য এক দর্শনের জন্ম দেয়।

সর্বোপরি বলা যায়, ইতিহাসে শামস তাবরিজি এক রহস্যময় সাধক। তার অদ্ভুত জীবন যাপন, একই সাথে তার প্রচণ্ড খামখেয়ালি মেজাজী জীবন। কাঁটার মত আচরণ আবার সেই সাথে প্রবল খোদাভক্ত দেওয়ানা। ফুলের চেয়েও নরম। এ সমস্ত তাকে আরও দুর্বোধ্য করে তোলে।

তবুও জহুরী যেমন হীরে চিনে তেমনই তিনি রুমিকে বা রুমি তাকে চিনে নিয়ে সৃষ্টি করেন অমরকথা। সুফিবাদের এক অন্যান্য বিস্ময়কর দিগন্তের উন্মোচন করেন আধ্যাত্মিক গুরু শামস তাবরিজি তার শিষ্য জগৎ বিখ্যাত কবি জালালউদ্দিন রুমির মধ্য দিয়ে।

‘তুমি হয়ত এখনো দেখতে পাচ্ছো না,
কিন্তু এই পথের শেষে অনেকগুলো জান্নাত আছে।’
-শামস তাবরিজি

(সমাপ্ত)

………………….
আরো পড়ুন:
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-১
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২

………………….
আরো পড়ুন:
শামস তাবরিজির বাণী: এক
শামস তাবরিজির বাণী: দুই

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

………………………………….
আরও পড়ুন-
হযরত শাহ্জালাল
নাসির উদ্দিন সিপাহসালার
বাবা খানজাহান আলী
শাহ মখদুম রূপোশ: এক
শাহ মখদুম রূপোশ: দুই

হযরত ছৈয়দ শাহ্ আলী বোগদাদী
হযরত কেল্লা শাহ্‌ বাবা

মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: এক
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: দুই
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: তিন
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: চার
মনসুর হাল্লাজ ফকির সে তো: পাঁচ

বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী
সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-১
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-২
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৩
দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া-৪
খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়ার কাশফের নিদর্শন

মুজাদ্দিদে আলফে সানী: এক
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: দুই
মুজাদ্দিদে আলফে সানী: তিন

শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: এক
শেখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী: দুই

ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: এক
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: দুই
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: তিন
ইমাম গাজ্জালী : জীবন ও দর্শন :: চার
সালমান আল-ফারেসী: এক
সালমান আল-ফারেসী: দুই
সালমান আল-ফারেসী: তিন
সালমান আল-ফারেসী: চার

উয়াইস করনি পাগল: এক
উয়াইস করনি পাগল: দুই
উয়াইস করনি পাগল: তিন
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-১
রহস্যাবৃত শামস তাবরিজি: পর্ব-২
মাওলানা শ্রেষ্ঠ জালালউদ্দিন রুমি
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : এক
আত্তারের সাধনার সপ্ত স্তর : দুই
সুফিবাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ইবনে আল আরাবী
হযরত বাবা হাজী আলী
খাজা ফুজাইল : ডাকাত থেকে ওলী
সাধক বায়জিদ বোস্তামী
মরমী বুল্লেশাহ্
সারমাদ কাশানি

বাংলাদেশের প্রথম ইসলাম প্রচারক শাহ্ সুলতান
শাহানশাহ রাহাত আলী শাহ
বাবা সিরাজ শাহ্
বাবা হায়দার শাহ্
মদন পাগলার মোরতবা
মোখলেছ শাহর কারামতি
বাবা জাহাঙ্গীর

সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব এক
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব দুই
সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী : পর্ব তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!