ভবঘুরেকথা
স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামীজী-প্রচারিত মতসমূহের সমষ্টিভাবে আলোচনা : এক

-ভগিনী নিবেদিতা

খ্রীস্টের জন্মের কয়েক শতাব্দী পূর্বে বুদ্ধের আবির্ভাব দ্বারা দ্বিবিধ প্রয়োজন সাধিত হয়। যে শক্তিপ্রবাহ স্বদেশ হইতে নির্গত হইয়া দূরবর্তী দেশসমূহকে সঞ্জীবিত করিয়াছিল, একদিকে তিনি ছিলেন তাহার উৎসস্বরূপ। ভারতবর্ষ তাহার বাণী সমগ্র প্রাচ্য জগতে বিস্তার করিয়া অবশেষে নিজ সীমার বহুদূরে অবস্থিত বিভিন্ন দেশে নানা জাতি, ধর্মসম্প্রদায়, সাহিত্য, কলা ও বিজ্ঞানচর্চার স্রষ্টারূপে গণ্য হয়।

কিন্তু ভারতের নিজসীমার মধ্যে ঐ মহাপুরুষের জীবনই ছিল জাতি সংগঠনের প্রথম উপায়স্বরূপ। উপনিষদ্‌-নিহিত আর্য সংস্কৃতি আপামর জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করিয়া বুদ্ধ সাধারণ ভারতীয় সভ্যতার আদর্শ নির্ণয় করেন, এবং ভাবীকালের জন্য এক অখণ্ড ভারতীয় জাতির সূত্রপাত করেন।

যে মহান জীবনের পরিচয় আমি লাভ করি, আমার স্থির বিশ্বাস, সেই জীবনেও অনুরূপভাবে দ্বিবিধ প্রয়োজন সাধিত হইয়াছেঃ প্রথম-সমগ্র জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি করা; দ্বিতীয়- এক মহাজাতি সংগঠন। বিদেশের কথা বলিতে গেলে, স্বামী বিবেকানন্দই পাশ্চাত্য জাতিসমূহের নিকট বেদ ও উপনিষদের ভাবাদর্শের প্রথম প্রামাণিক ব্যাখ্যাকার।

তাহার নিজস্ব কোন ধর্মমত প্রচার করিবার ছিল না। তিনি বলিয়াছিলেন, “বেদ ও উপনিষদ্ ব্যতীত আমি অন্য কোন গ্রন্থ থেকে কখনো কিছু উদ্ধৃত করিনি, এবং তাদের মধ্য থেকেও কেবল শক্তির কথাই বলেছি।”

স্বর্গের পরিবর্তে তিনি প্রচার করেন মুক্তি, পরিত্রাণের পরিবর্তে ‘জ্ঞানলাভ’; ঈশ্বরের পরিবর্তে সর্বব্যাপী বা সর্বভূতে অবস্থিত অখণ্ড ব্রহ্মের সাক্ষাৎকার ছিল তাহার উপদেশ, এবং কোন বিশেষ ধর্মের মাহাত্ম ঘোষণার পরিবর্তে তিনি ঘোষণা করিতেন সকল ধর্মের সত্যতা।

পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ সময়ে সময়ে বিস্মিত এবং অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিতেন যে, ধৈর্যসহকারে বহু গবেষণার দ্বারা তাহারা যে-সকল সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন, এই প্রচারক ধর্মব্যাখ্যাতার স্বভাবসিদ্ধ ওজস্বিতার সহিত সেই সব কথা জীবন্ত সত্যের ন্যায় অনর্গল বলিয়া যাইতেছেন।

কিন্তু তাহারা যত প্রকার পরীক্ষাই উপস্থিত করুন না, এই প্রচারকের পাণ্ডিত্য অনায়াসে তাহাদের বহু ঊর্ধ্বে অবস্থিত বলিয়া প্রমাণিত হইত। তাঁহার প্রচারিত মতবাদ কেবল বিদ্যালয়ে অধিগত দর্শনচর্চামাত্র ছিল না, যাহা ঐতিহাসিক ও প্রাচীন ভাষাবিদ্যাগত- অতএব লোকের চিত্তাকর্ষক হইবে, উহা ছিল এক জীবন্ত জাতির হৃদয়েব চিরপোষিত বিশ্বাস, যে জাতি পঞ্চবিংশ শতাব্দী ধরিয়া জীবনে-মরণে ঐ সত্য উপলব্ধি করিবার জন্য ক্রমাগত সংগ্রাম করিয়া আসিয়াছে।

পরবর্তী বত্সরগুলিতে তাহার ভারত-ভ্রমণকালে স্বামীজী উহার পৃথক পৃথক ধর্মমতবিশিষ্ট অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়গুলিকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং উহার প্রত্যেকটির মধ্যে তিনি সেই ধর্মজ্যোতির সামান্য একটু আধটু প্রকাশ দেখিতে পান, যাহার পূর্ণ বিকাশ তাহার গুরুদেবের চরিত্রেই দেখিয়াছিলেন।

ধর্মগ্রন্থসকল তাঁহার নিকট জ্ঞানভাণ্ডারের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দেয় নাই; পরন্তু এক মহান জীবনের টীকা ও ব্যাখ্যাস্বরূপ ছিল, যে জীবনের অত্যুজ্জ্বল আলোকচ্ছটা ঐ সকল গ্রন্থের কোনরূপ সহায়তা ব্যতীত তাঁহার চক্ষুকে প্রতিহত করিত, এবং যাহার বিশ্লেষণে তিনি একান্ত অপারগ ছিলেন। ভগবান রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনই তাহার মনে এই ধারণা দৃঢ়বদ্ধ করিয়া দেয় যে, শঙ্করাচার্য প্রচারিত অদ্বৈতবাদই শেষ পর্যন্ত একমাত্র সত্য।

পরমহংসদেবের জীবনই তাহার নিজস্ব অনুভূতির দ্বারা দৃঢ় হইয়া তাহাকে হৃদয়ঙ্গম করাইয়া দেয় যে, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ, দ্বৈতবাদ প্রভৃতি যে-সকল বিভিন্ন মতবাদ সেই ‘একমেবাদ্বিতীয়’ অবস্থায় উপনীত হইতে না পারিলেও প্রায় উহার সমীপবর্তী হইয়াছে, তাহারাও অবশেষে অদ্বৈতাবস্থারূপ সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতিরই নিম্নতর বিভিন্ন অবস্থা বলিয়া প্রমাণিত হইবে।

কিন্তু এই চরম আদর্শের প্রকাশ হিসাবে প্রত্যেক ব্যক্তির আন্তরিক বিশ্বাসই সত্য। শ্রীরামকৃষ্ণ বলিয়াছিলেন, “যেখানে অন্যান্য লোকে উপাসনা করে, সে স্থানকে প্রণাম ও পূজা করবে, কারণ লোকে যে রূপে তাকে আরাধনা করে, তিনি সেইরূপেই তাকে দেখা দেবেন–এটা ধ্রুব সত্য।”

স্বামীজী বলিলেন, “পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে যে ব্যবধান, তার প্রতি পদক্ষেপে যদি আমরা কল্পনার সাহায্যে সূর্যের এক-একটি ফটো তুলি তাহলে তার কোন দুইটিই পরস্পরের অবিকল অনুরূপ হবে না, তবু ঐ ফটোগুলির মধ্যে কোটিকে তুমি অসত্য বলতে পার?”

এই সকল উক্তির তাৎপর্য এই যে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মমতের মধ্যে যে বিরোধ, তাহাদের সমন্বয় সম্ভব। কিন্তু দক্ষিণেশ্বরের সেই আচার্যশ্রেষ্ঠ যখন সাধনা দ্বারা আবিষ্কার করিলেন যে, নারীগণের জীবনেও উচ্চতম জ্ঞানলাভ সম্ভব, তখন হয়তো আমাদের এইরূপ ধারণা সঙ্গত বলিয়া মনে হইতে পারে যে, সাধারণতঃ যে-সকল ব্যবহারকে সামাজিক ও সাংসারিক বলিয়া হেয় করা হয়, তাহাদেরও পবিত্রজ্ঞানে যথোচিত সমাদর করিতে হইবে।

যে জগতে রূপকের এত আধিক্য, যেখানে শত শত বস্তু প্রতীকরূপে ব্যবহৃত হইয়া ঈশ্বরের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, সেই জগতে তিনি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করিয়া দিলেন যে, মন্দিরে পূজা-অর্চনার ন্যায় গৃহকর্মের সম্যক অনুষ্ঠান ভগবান লাভের সহায়ক হয়; মন্দিরে পুরোহিত দেবতার উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করিয়া যে আশীর্বাদ লাভ করেন, গৃহে জননী বা পত্নী অন্নব্যঞ্জন প্রস্তুত করিয়া পরিবারের সকলকে পরিবেশনপূর্বক তাহা অপেক্ষা কম ভগবৎকৃপা লাভ করেন না।

শ্রীরামকৃষ্ণ বলিয়াছিলেন, “যা কিছু সবই মায়ার ভেতরে ঈশ্বরের নাম পর্যন্ত। কিন্তু এই মায়ার কতক অংশ জীবকে মুক্তির পথে সাহায্য করে; বাকি অংশ শুধু অধিকতর বন্ধনের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। আমার মনে হয়, সাধ্বী নারীর প্রাত্যহিক জীবনও যে এইরূপে ঈশ্বরের আশীর্বাদলাভে ধন্য হইয়া থাকে, গৃহ যে মন্দিরস্বরূপ,

এবং শিষ্টাচার, অতিথির সেবা ও সাংসারিক ব্যপালন প্রভৃতি যে এক দীর্ঘকালব্যাপী পূজার অঙ্গরূপে পরিণত হইতে পারে- ইহা প্রদর্শন করিয়া শ্রীরামকৃষ্ণ উত্তরকালে তাঁহার মহান শিষ্যের জীবনে এক মুখ্য চিন্তাধারার ভিত্তি স্থাপন ও অনুমোদন করিয়া গিয়াছিলেন।

পরবর্তী বত্সরগুলিতে তাহার ভারত-ভ্রমণকালে স্বামীজী উহার পৃথক পৃথক ধর্মমতবিশিষ্ট অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়গুলিকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং উহার প্রত্যেকটির মধ্যে তিনি সেই ধর্মজ্যোতির সামান্য একটু আধটু প্রকাশ দেখিতে পান, যাহার পূর্ণ বিকাশ তাহার গুরুদেবের চরিত্রেই দেখিয়াছিলেন।

কিন্তু ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দে যখন ভারতের বাহিরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলি দেখিতে আরম্ভ করেন, তখনই তিনি জাতীয়তা ও দেশাত্মবোধ দ্বারা একতাবদ্ধ জনসঙঘসমূহের সম্মুখীন হইলেন।

এইরূপে, স্বামীজীর দৃষ্টিতে প্রত্যেক জাতির জাতীয়ত্ব বিশেষ বিশেষ ধর্মমতের ন্যায় পবিত্রতাস্বরূপ বলিয়া গণ্য হইত। তাঁহার মতে, প্রত্যেকেই যেন আদর্শ মানবত্ব সম্পর্কে নিজের ধারণা প্রকাশ করিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছে। একবার তিনি সহসা বলিয়া ওঠেন, “যত বয়স হচ্ছে, ততই আমার মনে হচ্ছে, মনুষ্যত্ব বা ‘পৌরুষের মধ্যেই সব তত্ত্ব নিহিত রয়েছে।”

আর স্বভাবতই স্বদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মতো এই সকল জনসমষ্টির মধ্যেও তিনি মানবের অন্তর্নিহিত সেই ব্রহ্মভাবের লীলাবিলাস অনুভব করিতে লাগিলেন। বহু বৎসর ধরিয়া ইহা তাহার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারেই ঘটিতেছিল; তথাপি বিভিন্ন জাতির মধ্যে তাহাদের বিশেষ গুণগুলি অনুধাবন করিবার যে আন্তরিক চেষ্টা তিনি করিতেন, অন্তরঙ্গ ভক্ত মাত্রকেই তাহা আকৃষ্ট করিয়াছিল।

একদিন ইংলন্ড যাত্রার পথে তিনি অত্যন্ত আনন্দসহকারে আমাকে তুর্কী নাবিকের দক্ষতা ও অপূর্ব সৌজন্যের বিষয় বলিতেছিলেন, তখন আমি তাহার চরিত্রের ঐ বিস্ময়কর উৎসাহ প্রদর্শনের প্রতি তাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সম্ভবতঃ তিনি জাহাজের খালাসীদের কথা ভাবিতেছিলেন; তাহার প্রতি তাহাদের বালকের ন্যায় প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার তাহাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করিয়াছিল।

যেন আমি তাহাকে কোন দোষে অভিযুক্ত করিয়াছি, এইভাবে তিনি শুধু বলিলেন, “কি জান, আমার মুসলমানদের আমি ভালবাসি।” উত্তরে আমি বলি, “তা বুঝলাম, কিন্তু আমি জানতে চাই, এই যে প্রত্যেক জাতিকে তাদের শ্রেষ্ঠ গুণগুলির দিক থেকে বুঝতে চেষ্টা করার অভ্যাস, এ আপনি কোথা থেকে পেলেন? কোন ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ব্যক্তির চরিত্রে কি আপনি এটা দেখতে পেয়েছেন? অথবা কোন সূত্রে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকেই লাভ করেছেন?”

ধীরে ধীরে তাহার মুখের বিস্মিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়ভাব অপনীত হইল। তিনি উত্তর দিলেন, “খুব সম্ভব এ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিক্ষারই ফল। আমরা সকলেই কতকটা তারই পথে চলেছিলাম। অবশ্য, তিনি নিজে যে কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, আমাদের ততদূর করতে হয়নি।

তিনি যে-সব ব্যক্তির ভাব আয়ত্ত করতে চাইতেন, তাদের মতো আহার করতেন, তাদের পরিচ্ছদ ধারণ কবতেন; তাদের দীক্ষা গ্রহণ করতেন এবং তাদের ভাষাতেই কথা বলতেন। তিনি বলতেন, ‘আমাদের যেন অপরের সত্তার মধ্যে নিজেকে প্রবিষ্ট করাতে হবে। এই যে প্রণালী, এ তার নিজস্ব। ভারতবর্ষে এর পূর্বে কেউ এমনভাবে পর পর বৈষ্ণব, মুসলমান ও খ্রীস্টানধর্ম গ্রহণ করেননি।”

এইরূপে, স্বামীজীর দৃষ্টিতে প্রত্যেক জাতির জাতীয়ত্ব বিশেষ বিশেষ ধর্মমতের ন্যায় পবিত্রতাস্বরূপ বলিয়া গণ্য হইত। তাঁহার মতে, প্রত্যেকেই যেন আদর্শ মানবত্ব সম্পর্কে নিজের ধারণা প্রকাশ করিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছে। একবার তিনি সহসা বলিয়া ওঠেন, “যত বয়স হচ্ছে, ততই আমার মনে হচ্ছে, মনুষ্যত্ব বা ‘পৌরুষের মধ্যেই সব তত্ত্ব নিহিত রয়েছে।”

তিনি বলিতেন, হিন্দুধর্ম ঘোষণা করে, একমাত্র এই ধর্মই অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক সত্যরূপ প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকেই বলে, ইহাকেই একমাত্র পথপ্রদর্শকরূপে গ্রহণ কর’। সকল শাস্ত্রের মূলে জ্ঞানের উৎপত্তিবিষয়ক যে-সকল নিয়ম বর্তমান, এবং যাহা হইতে সকল শাস্ত্রের উদ্ভব, হিন্দুধর্মে ‘বেদ’ শব্দে প্রকৃতপক্ষে তাহাই বুঝায়।

মনের এক স্বাভাবিক নিয়মানুসারে, যতই তিনি অন্যান্য জাতির শক্তির পরিমাণ ও প্রীতিকর গুণগুলির সহিত পরিচিত হইতে লাগিলেন, ততই ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণের জন্য তিনি নিজেকে অধিকতর গৌরবান্বিত বোধ করিতেন; কারণ, যে-সকল গুণে তাহার জন্মভূমি সকলের উর্ধ্বে বিরাজ করিতেছিল, সেগুলি সম্বন্ধে প্রতিদিন তিনি অধিকতর সচেতন হইয়া উঠিতে লাগিলেন।

বিভিন্ন যুগের ন্যায় বিভিন্ন জাতিকেও তিনি ক্রমান্বয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি হইতে আলোচনা করিতেন- তাহাদের বিরাট সত্তার একটি দিকেই তাহার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিতেন না। রোমক সাম্রাজ্যের বংশধরদের তিনি সর্বদাই নিষ্ঠুর প্রকৃতি বলিয়া বিবেচনা করিতেন এবং জাপানীদের বিবাহসম্পৰ্কীয় ধারণা তাহার নিকট ভয়াবহ ছিল।

তথাপি, কোন জাতির সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করিবার সময় সর্বদা তিনি তাহাদের গঠনমূলক আদর্শ গুণগুলির প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন, কখনও কোন সম্প্রদায়ের দোষগুলি দেখিয়াই বিচার করিতেন না। এই সকল বিষয়ে আলোচনার সময়ে আমি তাহাকে শেষ যেসব মন্তব্য করিতে শুনিয়াছি, তাহার অন্যতম হইল, “স্বদেশপ্রীতি দেখতে হলে জাপানীদের দেখ।

পবিত্রতা চাইলে হিন্দুদের দেখ, আর যদি পৌরুষ দেখতে চাও, তবে ইউরোপীয়দের দিকে তাকাও।” তারপর জোরের সহিত বলিলেন, “কোন ব্যক্তির পক্ষে মানুষের গৌরবের বস্তু কি হওয়া উচিত, তা ইংরেজ যেমন বোঝে, জগতে আর কোন জাতি তেমন বোঝে না।”

এক ব্যক্তিগত আলোচনাকালে স্বামীজী বলিয়াছিলেন, ভারত সম্পর্কে তাহার বরাবর ইচ্ছা ছিল, “হিন্দুধর্মকে অপর ধর্মের উপর প্রভাবশালী করা।” সনাতন ধর্মকে সক্রিয় ও প্রচারশীল হইতে হইবে; বিশেষ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে প্রচারকদল প্রেরণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে স্বমতে আনয়ন, এবং তাহার নিজের যে সকল সন্তান কুহকে পড়িয়া ধর্মান্তর গ্রহণ করিয়াছে, তাহাদের পুনরায় নিজ ক্রোড়ে গ্রহণের সামর্থ্য থাকা চাই; পরিশেষে জ্ঞাতসারে ও বিশেষ বিবেচনাপূর্বক নূতন নূতন ভাবকে আত্মসাৎ করিতে হইবে।

স্বামীজী কি জানিতেন যে, কোন জাতি অথবা সম্প্রদায় যে মুহূর্তে নিজেদের জীবশরীরের ন্যায় সুসংবদ্ধ বলিয়া সচেতন হয়, সেই মুহূর্তে উহা অপরের উপর প্রভাবশালী এবং সক্রিয় হইয়া উঠে? তিনি কি জানিতেন যে, তিনিই তাহার পূর্বপুরুষগণের ধর্মের মধ্যে স্বস্বরূপ জ্ঞান উপলব্ধির পুনরুদ্বোধনে সহায়ক হইবেন?

যেভাবে হউক, তাহার নিজের উক্তি অনুসারে প্রথমাবধি তাহার একমাত্র কার্য ছিল, ‘হিন্দুধর্মের সাধারণ ভিত্তিগুলি আবিষ্কার করা। স্বাভাবিক প্রেরণার বশে তিনি হৃদয়ঙ্গম করেন, এইগুলির আবিষ্কার ও দৃঢ় প্রত্যয়ের সহিত উহাদের সমর্থনই একমাত্র পন্থা, যাহা দ্বারা তিনি জননীস্বরূপ হিন্দুধর্মকে নিজের অটুট যৌবন ও শক্তি সম্বন্ধে এক আনন্দময় প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিতে পারেন।

বুদ্ধ কি ত্যাগ ও নির্বাণ প্রচার করেন নাই, এবং যেহেতু এই ত্যাগ ও নির্বাণলাভ জাতীয় জীবনের সারবস্তু, তাহার দেহাবসানের দুই শতাব্দীর মধ্যেই কি ভারতবর্ষ এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয় নাই? সুতরাং স্বামীজীও সেইরূপ জাতীয় জীবনের পক্ষে অপরিহার্য সার বস্তুগুলির উপর নির্ভর করিয়া তাহাদের প্রচার করিবার সঙ্কল্প গ্রহণ করেন- ফল যাহা হয় হউক।

তিনি বলিতেন, হিন্দুধর্ম ঘোষণা করে, একমাত্র এই ধর্মই অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক সত্যরূপ প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকেই বলে, ইহাকেই একমাত্র পথপ্রদর্শকরূপে গ্রহণ কর’। সকল শাস্ত্রের মূলে জ্ঞানের উৎপত্তিবিষয়ক যে-সকল নিয়ম বর্তমান, এবং যাহা হইতে সকল শাস্ত্রের উদ্ভব, হিন্দুধর্মে ‘বেদ’ শব্দে প্রকৃতপক্ষে তাহাই বুঝায়।

এবং যাহাতে সময় সময় চরম গোড়ামি পর্যন্ত স্থান পাইয়া থাকে- হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে তাহা অসত্য বা সঙ্কীর্ণতার চিহ্ন নহে, পরন্তু অপরিণত মনেরই লক্ষণ বলিয়া বিবেচিত হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলিতেন, উহা বিচারের বেড়া- চারাগাছের পক্ষে অত্যাবশ্যক, কিন্তু বৃক্ষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।

হিন্দুধর্মের সন্তানগণের মধ্যে কেহ কেহ বেদনামক গ্রন্থসমূহে আস্থা স্থাপন করেন নাই- যেমন, জৈনেরা; তথাপি জৈনেরা হিন্দুপদবাচ্য ব্যতীত আর কিছু নহে। যাহা কিছু সত্য, তাহাই বেদ, এবং জৈনেরাও সত্য বলিয়া যাহা বুঝিয়াছেন, তাহাই পূর্ণরূপে মানিয়া চলিলেই হইল। যতদূর সম্ভব হিন্দুধর্মের পরিধি বিস্তৃত করিয়া দেওয়া ছিল স্বামীজীর উদ্দেশ্য।

পক্ষিণী যেমন দুটি ডানা দিয়া তাহার শাবকগুলিকে আচ্ছাদন করিয়া রাখে, হিন্দুধর্মও তাহার সকল শাখাপ্রশাখা তেমন আচ্ছাদন করিয়া রাখুন- ইহাই ছিল স্বামীজীর মননগত ভাব। প্রথম বার আমেরিকা যাত্রার পূর্বে তিনি নিজের সম্বন্ধে বলেন, “আমি এমন একটি ধর্ম প্রচার করতে যাচ্ছি, বৌদ্ধধর্ম যার বিদ্রোহী সন্তান, এবং খ্রীস্টধর্ম সকল আস্ফালন সত্ত্বেও যার দূরাগত প্রতিধ্বনি মাত্র।”

স্বামীজী বলিতেন, ‘বেদ’ শব্দে যদি গ্রন্থগুলিকেই ধরা যায়, তথাপি ধর্মের ইতিহাসে বেদের মাহাত্ম্য অতুলনীয়। কেবল উহাদের অতি প্রাচীনত্বের জন্য নহে, পরন্তু এই কারণেই উহা বহুগুণে শ্রেষ্ঠ যে, জগতের সমুদয় গ্রন্থের মধ্যে একমাত্র বেদই মানবকে সতর্ক করিয়া বলিতেছেন, তাহাকে সকল গ্রন্থের পারে যাইতে হইবে।[১]

এইরূপে, হিন্দুধর্মের অন্তর্গত সকল সম্প্রদায়ের একমাত্র উদ্দেশ্য হইল সত্য। আবার এই সত্য গ্রন্থনিবদ্ধ নহে, সুতরাং উহাকে শুধু মানিয়া লইতে হইবে তাহা নহে; সকলেই অনুভূতি দ্বারা এই সত্য লাভ করিতে পারেন। ইহা হইতে বুঝা যায়, হিন্দুধর্মে বিজ্ঞানসম্মত-বিশ্বাস এবং ধর্মবিশ্বাস এই উভয়ের মধ্যে কোন প্রকার বাস্তব ও কাল্পনিক বিরোধ নাই।

এই বিষয়ে স্বামীজী দেখিয়াছিলেন যে, বিজ্ঞানকে জ্ঞানরাজ্যের সর্বত্র প্রয়োগ করিবার আধুনিককালের যে বৈশিষ্ট্য, ভারতবাসীর সেই ভাবগ্রহণে বিশেষ যোগ্যতা আছে। ভারতের ধর্মচর্চায় রত মনীষিগণ কখনও কোন জ্ঞানের উন্নতির পথে বাধা প্রদান করেন নাই।

ইহাও গৌরবের কথা, এখনও পর্যন্ত হিন্দু যাজকগণ কোন ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা ও মতবাদে বিশ্বাস করিবার অধিকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিয়াছেন বলিয়া শোনা যায় নাই। শেষোক্ত তথ্য হইতেই ইষ্টদেবতার প্রতি নিষ্ঠারূপ মনের উদ্ভব- অর্থাৎ প্রত্যেককে আত্মোন্নতির জন্য স্বয়ং নিজের পথ নির্বাচন করিয়া লইতে হইবে, এবং স্বামীজীর মতে ইহাই হিন্দুধর্মের একমাত্র সার্বভৌম বৈশিষ্ট্য।

এই বৈশিষ্ট্য হিন্দুধর্মকে জগতের সর্বপ্রকার ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি কেবল যে সহনশীল করিয়াছে তাহা নহে, উহাদিগকে আত্মসাৎ করিয়া লইবার সামর্থ্যও প্রদান করিয়াছে। তিনি দেখাইয়া দেন যে, এমনকি, সাম্প্রদায়িক ভাবও- যাহাতে ঈশ্বর স্বয়ং বিশ্বাসীর বা সাধকেরই মতাবলম্বী বলিয়া বিশ্বাসের দ্বারা সূচিত, এবং নিজের ক্ষুদ্র সম্প্রদায়টি একমাত্র খাঁটি সম্প্রদায় বলিয়া অভিহিত,

এবং যাহাতে সময় সময় চরম গোড়ামি পর্যন্ত স্থান পাইয়া থাকে- হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে তাহা অসত্য বা সঙ্কীর্ণতার চিহ্ন নহে, পরন্তু অপরিণত মনেরই লক্ষণ বলিয়া বিবেচিত হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলিতেন, উহা বিচারের বেড়া- চারাগাছের পক্ষে অত্যাবশ্যক, কিন্তু বৃক্ষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এতদিন ধরিয়া অদ্বৈতবাদ, দ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ, এই তিনটি দর্শন জীবাত্মার মুক্তির তিনটি বিভিন্ন আদর্শ প্রদর্শন করিতেছে, এইরূপ বিবেচনা করা হইত। এই বিভিন্ন মতবাদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনের কোন চেষ্টা ইতিপূর্বে হয় নাই।

আমরা যে কোন কিছুর সীমা নির্দেশ করি, ইহাই প্রমাণ করে যে, আমরা এখনও পর্যন্ত সসীম বস্তু লইয়াই নাড়াচাড়া করিতেছি। যখন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ হইবে, তখন আমাদের মন কেবল অনন্তের চিন্তায় মগ্ন থাকিবে। শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতেন, “সকলেই জমির খানিকটা অংশে বেড়া দিয়ে বলে, ওটা আমার জমি’, কিন্তু আকাশকে কে বেড়া দিয়ে ভাগ করতে পারে?”

যে অসংখ্য সম্প্রদায় ও মতমতান্তর লইয়া হিন্দুধর্ম গঠিত, তাহাদের প্রত্যেকটির ভিত্তি হইল অপরোক্ষানুভূতি, এবং সকলেরই বৈশিষ্ট্য হইল অনন্ত উদারতা- যাহা সকলকে গ্রহণ করিতে সমর্থ। অবশ্য পালনীয় বলিয়া পুরোহিতশ্রেণী যে-সকল নিয়মের প্রবর্তন করেন, তাহা কেবল সামাজিক ক্ষেত্রে।

যদিও ইহার ফলে আচার প্রথায় অত্যধিক কড়াকড়ির সৃষ্টি হয়, ইহা দ্বারা স্পষ্টই অনুমিত হয়, তাহাদের মতে মানবমন চিরকালই স্বাধীন। কিন্তু ইহা অস্বীকার করিতে পারা যায় না যে, হিন্দুধর্মের মধ্যে চিন্তাশক্তির যতদূর প্রসারলাভ ঘটে, তাহার মধ্যে কয়েকটি বিশিষ্ট ভাবের সমাবেশ পরিলক্ষিত হয়। ১৮৯৩ খ্রীস্টাব্দে শিকাগো ধর্মমহাসভায় এইগুলি ছিল স্বামীজীর বক্তৃতার প্রধান বিষয়।

অস্থিমজ্জাস্বরূপ যে-সকল বিশিষ্ট ধাবণা হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ভারতবর্ষের অস্তিত্ব ভাবা যায় না, তাহার প্রথমটি হইল সৃষ্টিপ্রবাহের চত্রবৎ আবর্তন। সৃষ্টি থাকিলেই তাহার একজন স্রষ্টা থাকিবে, এবং স্রষ্টা বলিলেই সৃষ্টি বুঝা যায়- উভয়েই তুল্যভাবে পরস্পর সাপেক্ষ।

এই দ্বৈতমূলক সম্পর্ক আপেক্ষিক সত্য ব্যতীত আর কিছু নহে। হিন্দুধর্মে এ বিষয়ে গভীর দার্শনিক বিচার আছে এবং স্বামী বিবেকানন্দ তাহার দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করিবার ক্ষমতা দ্বারা স্বল্প কথায় উহা প্রকাশ করিতে সমর্থ হন। সাধারণভাবে ভারতীয় চিন্তার প্রকৃষ্ট উদাহরণস্বরূপ তিনি যে দ্বিতীয় মতটির আলোচনা করেন, তাহা পুনর্জন্ম ও কর্মবাদ, যাহার চরম পরিণতি মানবের অন্তর্নিহিত দেবত্বের পূর্ণ বিকাশে।

পরিশেষে, চিন্তা ও উপাসনার মধ্যে আকারভেদ সত্ত্বেও সকল সময়ে এবং সর্বাবস্থায় সত্যের সর্বজনীনত্ব ঘোষণা দ্বারা তিনি হিন্দুধর্মের এই সকল বৈশিষ্ট্য যে প্রকৃতপক্ষে গৌণ সে বিষয়ে তাহার বক্তব্যের সমাপ্তি করেন। কয়েকটি প্রাঞ্জল বাক্যের মাধ্যমে তিনি সর্বাদিসম্মতরূপে হিন্দুধর্মের একত্ব প্রতিপাদন করেন এবং উহার মুখ্য লক্ষণগুলি চিত্রিত করেন।

পাশ্চাত্য-জগতে তাহার অবশিষ্ট কার্য ছিল, প্রধানতঃ সনাতন ধর্মের অন্তর্গত মহান সত্যগুলিকে আধুনিক কালের ও সর্বজনের উপযোগী করিয়া অকাতরে সকলের মধ্যে বিতরণ করা। ধর্মের প্রবক্তা হিসাবে তাহার নিকট সমগ্র জগৎই ছিল ভারতবর্য, সর্বদেশের মানবমাত্রেই তাহার নিজধর্মের অন্তর্ভুক্ত।

১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে ভারতে প্রত্যাবর্তনের পরেই, স্বামীজী তাঁহার স্বদেশবাসীর চিন্তাধাবায় তাহার দান দার্শনিক আকারে প্রদান কবেন। ভাবতের সকল যুগপ্রবর্তকেরই উহা দিবার প্রয়োজন হয়, একথা পূর্বেই অন্যত্র বলা হইয়াছে।

এতদিন ধরিয়া অদ্বৈতবাদ, দ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ, এই তিনটি দর্শন জীবাত্মার মুক্তির তিনটি বিভিন্ন আদর্শ প্রদর্শন করিতেছে, এইরূপ বিবেচনা করা হইত। এই বিভিন্ন মতবাদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনের কোন চেষ্টা ইতিপূর্বে হয় নাই।

কিন্তু ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দে মাদ্রাজে উপনীত হইয়া স্বামী বিবেকানন্দ সাহসপূর্বক ঘোষণা করেন যে, দ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের চরম অনুভূতিও অদ্বৈতবাদেরই নিম্নতর বিভিন্ন অবস্থামাত্র, এবং সকলের পক্ষেই চরম আনন্দ সেই একমেবাদ্বিতীয় তত্ত্বে বিলীন হইয়া যাওয়া।

স্বামীজী-প্রচারিত মতসমূহের সমষ্টিভাবে আলোচনা : দুই>>

……………….
১. গ্রন্থমভ্যস্য মেধাবী জ্ঞানবিজ্ঞানতত্ত্বতঃ।
পলালমিব ধান্যার্থী ত্যজে গ্রন্থমশেষতঃ।।- অমৃতবিন্দু উপনিষদ
শাস্ত্রানাধীত্য মেধাবী অভ্যস্য চ পুনঃ পুনঃ।
পরমং ব্রহ্ম বিজ্ঞায় উল্কাবৎ তান্যথোৎসুজেৎ।।- অমৃতদোপনিষদ্‌

……………….
স্বামীজীকে যেরূপ দেখিয়াছি – ভগিনী নিবেদিতা।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………..
আরও পড়ুন-
উনচল্লিশ বছর, পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন : এক
উনচল্লিশ বছর, পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন : দুই
উনচল্লিশ বছর, পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন : তিন
উনচল্লিশ বছর, পাঁচ মাস, চব্বিশ দিন : চার

……………….
আরও পড়ুন-
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি এক
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি দুই
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি তিন
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি চার

…………………
আরও পড়ুন-
স্বামীজী-প্রচারিত মতসমূহের সমষ্টিভাবে আলোচনা : এক
স্বামীজী-প্রচারিত মতসমূহের সমষ্টিভাবে আলোচনা : দুই
মহাপুরুষদর্শন-প্রসঙ্গে
ঐতিহাসিক খ্রীস্টধর্ম সম্বন্ধে স্বামীজী
হিন্দুধর্ম
মহাপুরুষদর্শন-প্রসঙ্গে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!