ভবঘুরেকথা
সাংখ্য-দর্শনের উৎস

সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি চতুর্থ

-দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

অতএব, আমাদের পূর্বপক্ষ অনুসারে, উপনিষদের মধ্যেই বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত্বের সংমিশ্রণ রয়েছে; এজাতীয় বিভিন্ন তত্ত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করবার ফলেই আমাদের দেশে উত্তরযুগে বেদান্ত নাম নিয়েই বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিলো।

তাই প্রাচীন আচার্যদের ধর্মমোহের কাছে কথাটা যতোই অপ্রীতিকর হোক না কেন, আধুনিক ঐতিহাসিকের পক্ষে এ-কথা স্বীকারযোগ্য যে, ব্রহ্মসূত্রের মধ্যেই ঔপনিষদিক চিন্তাধারা বলে কোনো একটিমাত্র নির্দিষ্ট চিন্তাধারার পরিচয় আবিষ্কার করবার প্রস্তাবটি অসঙ্গত।

এই যুক্তির উত্তরে আমরা বলবে, উপনিষদগুলিকে বিভিন্ন চিন্তাধারার সংমিশ্রণ হিসেবে দেখবার চেষ্টাটা ঐতিহাসিকভাবে সঙ্গত হোক আর নাই হোক, এ-বিষয়ে নিশ্চয়ই কোনো রকম সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না যে বিভিন্ন বৈদান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একদিক থেকে যে-রকম দার্শনিক তত্ত্বের অমিল আছে অপরদিক থেকে আবার তেমনিই মৌলিক দার্শনিক তত্ত্বের মিলও আছে।

এ-কথার সবচেয়ে সহজ দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, ব্রহ্ম সগুণ না নিগুৰ্ণ এ-প্রশ্ন নিয়ে দুটি প্রধান বৈদান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে দার্শনিক দ্বন্দ্ব যতোই থাকুক না কেন, চিন্ময় ব্রহ্মই যে জগৎকারণ সে-বিষয়ে উভয় সম্প্রদায়ই একমত। অর্থাৎ, বৈদান্তিক চিন্তার সাধারণ দার্শনিক কাঠামো বলতে একটিই, যদিও এই কাঠামোর মধ্যে নানাপ্রকার বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সম্প্রদায়গুলির মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

এবং বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রে আমরা বেদান্ত-দর্শনের ওই সাধারণ কাঠামোটিরই পরিচয় পাই। অতএব স্বীকার করা দরকার, সাধারণভাবে উপনিষদের দার্শনিক তত্ত্বকে চেনবার চেষ্টায় বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রই আমাদের কাছে প্রাচীনতম ও প্রামাণ্যতম- অতএব প্রধানতম- সহায়।

তাহলে, উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্যের বীজ অন্বেষণ করা একান্তই সঙ্গত কিনা,- অর্থাৎ, ঔপনিষদিক চিন্তার সাধারণ কাঠামোটির মধ্যে সাংখ্যদর্শনের কোনো স্থান থাকা একান্তই সম্ভবপর কি না- এ-সমস্যার সমাধানে ব্রহ্মসূত্রের সাক্ষ্যই প্রধানতম বলে গৃহীত হওয়া উচিত।

আমরা একটু পরেই দেখতে পাবে, আধুনিক বিদ্বানের উপনিষদের যে-অংশগুলিতে সাংখ্যের বীজ আবিষ্কার করবার চেষ্টা করছেন, প্রকৃতপক্ষে সেগুলি সাংখ্য-দর্শনের খণ্ডন প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়; অতএব উপনিষদের দার্শনিক তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বাদরায়ণ যে সাংখ্য-মত খণ্ডনের অতো আয়োজন করেছেন, তা আসলে উপনিষদের দর্শনের প্রতি তাঁর গভীর নিষ্ঠারই পরিচায়ক।

কিন্তু আধুনিক বিদ্বানের এ-বিষয়ে প্রায় সম্পূর্ণ উদাসীন এবং সেই ঔদাসীন্যই উপনিষদের মধ্যে সাংখ্য-দর্শনের বীজ আবিষ্কার সংক্রান্ত কল্পিত কাহিনীর মূল উপজীব্য। কেননা, ব্রহ্মসূত্রের সাক্ষ্য অনুসারে বেদান্ত দর্শনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ওই সাংখ্য-দর্শনই।

ব্রহ্মসূত্রে অবশ্যই বেদান্ত-দর্শনের আরো কয়েকটি দার্শনিক প্রতিপক্ষের খণ্ডন রয়েছে, কিন্তু সাংখ্যের বিরুদ্ধে দার্শনিক অভিযানের তুলনায় এগুলি গৌণ। স্বয়ং শঙ্করাচার্যও(৭২৫) এই কথাই বলেছেন। ব্রহ্মসূত্রের ওই সাংখ্য-খণ্ডনই প্রধান-মল্লনিবর্হণের মতো।

অর্থাৎ, মল্লক্ষেত্রে প্রধান মল্লকে পরাস্ত করলেই যে-রকম অপেক্ষাকৃত অপ্রধানদেরও পরাস্ত করা হয় তেমনি যেসব যুক্তির সাহায্যে সাংখ্য খণ্ডিত হলো তারই সাহায্যে পরমাণুকারণবাদ প্রভৃতিও নিরস্ত বা খণ্ডিত হবে।

ব্রহ্মসূত্র রচনা করবার সময় বাদরায়ণ বারবার নানানভাবে ও নানানদিক থেকে এই সাংখ্য-দর্শনের দাবি খণ্ডন করবার প্রসঙ্গে ফিরে এসেছেন।

বস্তুত, ভারতীয় দর্শনের ক্ষেত্রে পূর্বপক্ষ খণ্ডনের যে-কটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে বাদরায়ণ তার প্রায় প্রতিটিরই প্রয়োগ করেছেন সাংখ্য-দর্শনের বিরুদ্ধে; তিনি যুক্তির সাহায্যে দেখাতে চাইছেন, সাংখ্যের প্রধান-কারণবাদ কিছুতেই স্বীকারযোগ্য নয়; তিনি লৌকিক দৃষ্টান্তের সাহায্যে দেখাবার চেষ্টা করছেন, সাংখ্যের পরিণামবাদ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তিনি শ্রুতির সাহায্যে প্রমাণ করবার চেষ্টা করছেন, সাংখ্য-দর্শন সর্বতোভাবে বেদবিরুদ্ধ। উপনিষদের ব্যাখ্যায় স্বয়ং বামরায়ণ যে-মতটিকে এতোবার এতোভাবে খণ্ডন করবার চেষ্টা করলেন উপনিষদোটর মধ্যেই সে-মতবাদের বীজ অন্বেষণ করা কী ভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে?

অতএব আমাদের যুক্তি অনুসারে, উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্যা-দর্শনের বীজ আবিষ্কার করার প্রচেষ্টাটাই যে ভ্রান্ত সে-বিষয়ে চরম প্রমাণ হলো বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্র।

আমরা একটু পরেই দেখতে পাবে, আধুনিক বিদ্বানের উপনিষদের যে-অংশগুলিতে সাংখ্যের বীজ আবিষ্কার করবার চেষ্টা করছেন, প্রকৃতপক্ষে সেগুলি সাংখ্য-দর্শনের খণ্ডন প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়; অতএব উপনিষদের দার্শনিক তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বাদরায়ণ যে সাংখ্য-মত খণ্ডনের অতো আয়োজন করেছেন, তা আসলে উপনিষদের দর্শনের প্রতি তাঁর গভীর নিষ্ঠারই পরিচায়ক।

প্রশ্ন উঠতে পারে শঙ্করাচার্যের এই যে কথা- “কপিলস্য তন্ত্রস্য বেদবিরুদ্ধত্বং বেদানুসারিনমুবচনবিরুদ্ধত্বঞ্চ” ইত্যাদি, কিংবা “অ-লোক-বেদ-প্রসিদ্ধাত্বাত্তু মহদাদীনাং”, ইত্যাদি- এ কি তিনি সাংখ্য-দর্শনকে হেয় প্রতিপন্ন করবার উদ্দেশ্যে দেশের প্রকৃত ঐতিহকে অগ্রাহ্য করেই প্রচার করতে চাইছেন?

এবং বাদরায়ণের প্রতি পরিপূর্ণ নিষ্ঠ বজায় রেখে শঙ্করাচার্য খুব জোর দিয়েই বলছেন যে, প্রকৃত বৈদিক ঐতিহ্যের মধ্যে সাংখ্য-দর্শনের কোনো স্থান নেই। এ-বিষয়ে শঙ্করাচার্যের উক্তিগুলি এখানে উল্লেখ করা অবান্তর হবে না।

শ্রুতিতে কপিলের নাম আছে। শঙ্করাচার্য(৭২৬) বলছেন, এই উল্লেখ থেকে বিশেষ কিছু প্রমাণ হয় না-

বিশেষত যে শ্রুতিটি কপিলমাহাত্ম্য বর্ণন করিতেছেন- কেবল সেই শ্রুতিটি দেখিয়াই কপিলমতের উপর শ্রদ্ধাস্থাপন করা উচিত হয় না।

কারণ, কপিল শব্দটি ব্যক্তিবিশেষের বোধক নহে। (কপিল অনেক, তন্মধ্যে কোন কপিল সাংখ্য শাস্ত্র বলিয়াছেন এবং কোন কপিল বা শ্রুতি কর্তৃক প্রশংসিত হইয়াছেন, তাহারই বা স্থিরতা কি?) শ্রুতি কপিলের অপ্রতিহত জ্ঞান বর্ণনা করিয়াছেন সত্য, কিন্তু স্মৃতিশাস্ত্র সগরসন্তাননাশক বাসুদেব নামক অন্য কপিলেরও স্মরণ করিয়াছেন।

সাংখ্যবক্তা কপিল ভেদজ্ঞানের উপদেশ করিয়াছেন, পরন্তু তাহা অবৈধ, অর্থাৎ বেদানুমোদিত নহে; সেজন্য তাহা অপ্রমাণ বা অগ্রাহ্য।

আবার[৭২৭],

কেবল প্রধান বলিয়াছেন বলিয়াই নহে, নানা জীব বলাতেও কপিলের স্মৃতি বেদবিরুদ্ধ এবং বেদানুযায়ী শাস্ত্র-বিরুদ্ধ।…বেদবিরুদ্ধ বিষয়ে স্মৃত্যনবকাশ প্রসঙ্গ (স্মৃতির আনর্থক্য) যে দোষ নহে, তৎপ্রতি অন্যহেতুও আছে।–

সাংখ্যস্মৃতিতে যে প্রধানের পর পরিণামাত্মক মহত্তত্ত্বের ও অহংতত্ত্বের উল্লেখ আছে, সেগুলি কিন্তু লোকে বা বেদে কুত্রাপি উপলব্ধি হয় না। ভূত ও ইন্দ্রিয়বর্গ লোক ও বেদ উভয়প্রসিদ্ধ; সুতরাংসেগুলির স্মরণ অযোগ্য নহে। কিন্তু প্রকৃতির পরিণাম মহৎ ও অহংকার- যাহা সাংখ্যাস্মৃতির কল্পিত, তাহা লোকে ও বেদে উভয়েই অপ্রসিদ্ধ। যেহেতু অপ্রসিদ্ধ সেই হেতুই তাহা স্বরণের অযোগ্য।

প্রশ্ন উঠতে পারে শঙ্করাচার্যের এই যে কথা- “কপিলস্য তন্ত্রস্য বেদবিরুদ্ধত্বং বেদানুসারিনমুবচনবিরুদ্ধত্বঞ্চ” ইত্যাদি, কিংবা “অ-লোক-বেদ-প্রসিদ্ধাত্বাত্তু মহদাদীনাং”, ইত্যাদি- এ কি তিনি সাংখ্য-দর্শনকে হেয় প্রতিপন্ন করবার উদ্দেশ্যে দেশের প্রকৃত ঐতিহকে অগ্রাহ্য করেই প্রচার করতে চাইছেন?

তা বলা যায় না। কেননা, দেশের প্রকৃত ঐতিহ্য থেকে এ-বিষয়ে রিচার্ড গার্বে আরো প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। রিচার্ড গার্বের সিদ্ধান্তটি মূল্যবান, তাই আমরা সুদীর্ঘভাবে সে-সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করবো।

গার্বের নিম্নোক্ত মন্তব্যটি উদ্ধৃত করবার আগে বলে রাখা দরকার যে, তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসারে সাংখ্য থেকেই বৌদ্ধধর্মের উৎপত্তি এবং সাংখ্য-প্রবর্তক কপিলের নাম থেকেই কপিলবাস্তুর নামকরণ হয়েছিলো। তাই তিনি বলছেন, পুরাণ, মহাভারতাদি গ্রন্থে কপিল সম্বন্ধে যে-সব নানাবিধ কাল্পনিক ও পরস্পর-বিরোধী তথ্য পাওয়া যায় সেগুলির মূল্য খুব বেশি নয়। অপরপক্ষে[৭২৮]–

কপিল সম্বন্ধে একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঐতিহ্য হলো কপিলবাস্তু নামটি- যার অর্থ কপিলের বাসস্থান। ওই আদিবিদ্বানের সম্মানেই স্থানটির নামকরণ হয়েছিলো; কিন্তু তিনি সেখানে জন্মেছিলেন, না বাস করতেন সে-বিষয়ে কিছু জানা নেই।

আপাতত, আমাদের মন্তব্য হলো, গার্বের উদ্ধত মন্তব্যে সাংখ্য-দর্শনের আদি-অবৈদিকত্ব সংক্রান্ত যে-যুক্তি ও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা অগ্রাহ্য করবার কোনো কারণ নেই। এবং যদিও গার্বে নিজে বাদরায়ণের এবং অন্যান্য বৈদান্তিক আচার্যের মন্তব্যকে একেবারে গুরুত্ব দেননি, তবুও তাঁর সিদ্ধান্ত এঁদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যায়নি।

সাংখ্য-দর্শনের উৎপত্তি ঠিকমতো বোঝবার জন্য মনে রাখা দরকার যে, ভারতবর্ষের এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্যপ্রভাব সবচেয়ে কম ছিলো বলেই এখানে বিশ্বের ও মানবসত্বার রহস্য শুধুমাত্র বুদ্ধি দিয়ে বোঝবার প্রথম প্রচেষ্টা সম্ভব হয়েছিলো।

কেননা, সাংখ্য-দর্শনের যে-পুঁথিগুলি আমাদের সামনে রয়েছে তার মধ্যে শ্রুতির প্রতি যতোকিছু নির্ভরতা, তার সবটুকুই উত্তরকালে সাংখ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে; সাংখ্যের উপর এইভাবে গ্রথিত সমস্ত বৈদিক অঙ্গগুলিকে বাদ দিলেও সাংখ্য-দর্শনের কিছুমাত্র ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না।

মূল তত্ত্বের দিক থেকে সাংখ্য-দর্শন আদিতে বেদবাহ্য এবং ব্রাহ্মণ্য-ঐতিহ্য মুক্ত ছিলো এবং এখনো তাই হয়ে আছে। মহাভারতে (১৩, ১৩৭১২) সাংখ্য, যোগ, পঞ্চরাত্র এবং পাশুপত সম্প্রদায় থেকে স্বতন্ত্র হিসেবেই বেদের উল্লেখ দেখা যায়; এবং ১৩৭১১ শ্লোকে সর্ব-বেদের (অর্থাৎ, সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ) পাশে স্বতন্ত্র দুটি সনাতন সম্প্রদায় হিসেবেই সাংখ্য ও যোগের কথা বলা হয়েছে।

প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহে যে-প্রভেদ এককালে নিশ্চয়ই বর্তমান ছিলো, এখানে তারই পরিচয় পাওয়া যায়। উত্তরকালে সাংখ্য-দর্শন যে আস্তিকদর্শনের অন্তর্গত হয়েছে তাতে বিস্ময়ের কারণ নেই; তার থেকে প্রমাণ হয়, সংযত সারল্যের গুণে সাংখ্য-দর্শন বেদান্তের অলৌকিকত্বের সামনে মাথা নোয়াননি; এবং ব্রাহ্মণেরাও, মূল্যবান তত্ত্বকথা গ্রহণ করতে পারবার ক্ষমতার দরুন, এই সাংখ্য-দর্শনকেও গ্রহণ করেছিলো।

…মৌখিকভাবে বেদকে স্বীকার করা এবং ব্রাহ্মণদের উৎসাহ- এই দুটি কারণই সাংখ্য-দর্শনের পক্ষে আস্তিক্যপদ লাভ করার পক্ষে পর্যাপ্ত ছিলো। (স্বাধীন তর্জমা)

আমরা একটু পরেই দেখতে পাবো, রিচার্ড গার্বের এই মহামূল্যবান মন্তব্যের মধ্যে দুর্বলতম অংশ বলতে শেষের কথাগুলিই। কেননা, সাংখ্য-দর্শনের পক্ষে আস্তিক্যপদ লাভের যে সহজ-সরল ব্যাখ্যা তিনি এখানে দিয়েছেন তা স্বীকারযোগ্য হতে পারে না।

বস্তুত, নিজস্ব মৌলিক তত্ত্বগুলি বিসর্জন দেবার পরই সাংখ্য-দর্শন আস্তিক বলে স্বীকৃত হয়েছে- অর্থাৎ আদি-সাংখ্য এবং আস্তিক-সাংখ্য মোটেই এক নয়। সাংখ্য-দর্শনের ইতিহাসে এই গুণগত পরিবর্তনটির কথা রিচার্ড গার্বে একেবারেই স্বীকার করেন না।

আপাতত, আমাদের মন্তব্য হলো, গার্বের উদ্ধত মন্তব্যে সাংখ্য-দর্শনের আদি-অবৈদিকত্ব সংক্রান্ত যে-যুক্তি ও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা অগ্রাহ্য করবার কোনো কারণ নেই। এবং যদিও গার্বে নিজে বাদরায়ণের এবং অন্যান্য বৈদান্তিক আচার্যের মন্তব্যকে একেবারে গুরুত্ব দেননি, তবুও তাঁর সিদ্ধান্ত এঁদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যায়নি।

আমরা ইতিপূর্বেই দেখেছি, ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুটি স্বতন্ত্র ধারা প্রবাহিত হয়েছে। সেই দুটি ধারাকে আমরা আর্য ও অনার্য বা আর্য ও দ্রাবিড় বা বৈদিক ও অবৈদিক- যে-কোনো নামেই উল্লেখ করি না কেন, দুটি ধারার মধ্যে পার্থক্যটা জাতিগত নয়, তথাকথিত আর্যদের কোনো রকম সনাতন মনস্তত্ত্বজনিতও নয়। এই প্রভেদের মূলে ছিলো উৎপাদন পদ্ধতির মৌলিক প্রভেদ।

কিন্তু বাদরায়ণের সাক্ষ্যকে গুরুত্ব না দেবার ফলে গার্বের নিজের সিদ্ধান্তের মধ্যেই স্ব-বিরোধিতা থেকে গিয়েছে; তার আলোচনায় পরে প্রত্যাবর্তন করা যাবে।

সাংখ্যের উৎপত্তি-প্রসঙ্গে আমরা যে-সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি তার পক্ষে প্রধানতম প্রয়োজন হলো আধুনিক বিদ্বানদের ওই মতবাদটি খণ্ডন করা, যে-মতবাদ অনুসারে উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্য-দর্শনের বীজ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অতএব আমরা সুবিস্তৃতভাবে সে-মতবাদের আলোচনা করলাম।

সুখের বিষয়, বৃদ্ধসম্মতি হিসেবে রিচার্ড গার্বের নাম ছাড়াও এখানে আমরা আরো কয়েকজন আধুনিক বিদ্বানের নাম উপস্থিত করতে পারি যাঁদের সিদ্ধান্তের গুরুত্বকে অগ্রাহ্য করতে ভারতীয় দর্শনের ছাত্র-মাত্রই দ্বিধা করবেন- মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং হেইনরিখ জিমার। মহামহোপাধ্যায়ের উক্তি আমরা ইতিপূর্বেই (পৃ ৫০৮) কিছুটা উদ্ধৃত করেছি; তাই এখানে জিমার-এর সিদ্ধান্ত আলোচনা করা যাক। সাংখ্য-মত প্রসঙ্গে জিমার(৭২৯) বলছেন-

সাংখ্যের তত্ত্বগুলি বৈদিক বা ব্রাহ্মণ্য ঐতিহ্যের অন্তর্গত নয়।…দুটি ধ্যানধারণার উৎস স্বতন্ত্র- সাংখ্য ও যোগ জৈনদের যান্ত্রিক দর্শনের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত এবং এই জৈন চিন্তাধারাকে সুদীর্ঘ তীর্থঙ্কর পরম্পরার দিক থেকে আধা-ঐতিহাসিক এবং আধা-পৌরাণিকভাবে, প্রাচীন ভারতের এক সুদূর বন্য অ-বৈদিক যুগ পর্যন্ত পিছনে দেখতে পাওয়া যায়।

অতএব, সাংখ্য আর যোগের মূল ধারণাগুলি অসম্ভব পুরোনো। তবুও, আস্তিক রচনায় এগুলির আবির্ভাব অনেক পরের ঘটনা- উপনিষদের অপেক্ষাকৃত নবীন অংশে এবং গীতায়-ই প্রথম এই ধারণাগুলির আবির্ভাব ঘটেছে এবং তাও বৈদিক দর্শনের মূল ধ্যানধারণার সঙ্গে ইতিমধ্যেই মিশ্রিত হয়ে।

তীব্র প্রতিরোধের দীর্ঘ ইতিহাস উত্তীর্ণ হয়ে আর্যদের ব্রাহ্মণ মনের রুদ্ধ দরজা শেষ পর্যন্ত খুলে গেলো, এবং স্থানীয় সভ্যতা থেকে ইংগিত ও প্রভাব গ্রহণ করতে শুরু করলো। তারই ফলে দুটিঐতিহ্যের মিলন হলো। (স্বাধীন তর্জমা)

তাহলে জিমার এবং গার্বে উভয়েই সিদ্ধান্ত করছেন, সাংখ্য-যোগের মূল কথাগুলি আদিতে ভারতীয় আদিবাসীদের চিন্তাধারার,- অতএব অ-বৈদিক ঐতিহ্যের,- অন্তর্গত ছিলো এবং কালক্রমে তা বৈদিক ঐতিহ্য-দ্বারা গৃহীত হয়েছিলো। এ-সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই মূল্যবান, যদিও এ-সিদ্ধান্তের প্রকৃত তাৎপর্য দু’জন বিদ্বানের মধ্যে কেউই নির্ণয় করবার চেষ্টা করেনি।

আমরা ইতিপূর্বেই দেখেছি, ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুটি স্বতন্ত্র ধারা প্রবাহিত হয়েছে। সেই দুটি ধারাকে আমরা আর্য ও অনার্য বা আর্য ও দ্রাবিড় বা বৈদিক ও অবৈদিক- যে-কোনো নামেই উল্লেখ করি না কেন, দুটি ধারার মধ্যে পার্থক্যটা জাতিগত নয়, তথাকথিত আর্যদের কোনো রকম সনাতন মনস্তত্ত্বজনিতও নয়। এই প্রভেদের মূলে ছিলো উৎপাদন পদ্ধতির মৌলিক প্রভেদ।

অবশ্যই সাংখ্য-দর্শনও যে আদিতে প্রাক-অধ্যাত্মবাদী ও লোকায়তিক বা বস্তুবাদী চেতনারই অঙ্গ ছিলো সে-বিষয়ে দীর্ঘতর আলোচনা এখনো বাকি আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে যাঁরা সাংখ্যকে অ-বৈদিক ঐতিহ্যের পরিচায়ক বলে ঘোষণা করলেন তাঁরাও তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের প্রকৃত বৈজ্ঞানিক তাৎপর্যের দিকে অগ্রসর হতে পারেননি। অতএব, আমাদের পক্ষে তাদের যুক্তির প্রধান দুর্বলতাকে বিশ্লেষণ করেই অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে।

পশুপালন-প্রধান অর্থনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বৈদিক ধ্যানধারণা স্বভাবতই পুরুষ-প্রধান, কৃষিমূলক অর্থনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত অ-বৈদিক ধ্যানধারণা স্বভাবতই মাতৃপ্রধান বা নারীপ্রধান। এই নারীপ্রধান ধ্যানধারণারই প্রকটতম উদাহরণ হলো তন্ত্র- তন্ত্রমতে প্রকৃতিই প্রধান, জগৎ বামোস্তৃত, অকৃত্রিম তন্ত্রের সাধনপদ্ধতিও বামাচার বা স্ত্রীআচার।

আধুনিক বিদ্বানেরা যদি অনুমান করতে বাধ্য হন যে, আদিতে সাংখ্যমতও ওই অ-বৈদিক ঐতিহ্যেরই অন্তর্গত ছিলো, তাহলে স্বীকার করা প্রয়োজন যে, যে-ধ্যানধারণাগুলিকে আমরা ব্যাপক অর্থে তান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে থাকি, আদিতে সাংখ্য বলতে তারই অপেক্ষাকৃত দার্শনিক সংস্করণ বুঝিয়েছে।

প্রাচীন-রচনায় আমরা এ-ইংগিত পেয়েছি যে, লোকায়তিক ধ্যানধারণা এবং ওই তান্ত্রিক ধ্যানধারণা অভিন্ন ছিলো এবং এই দুয়ের মধ্যে তত্ত্বগত সাদৃশ্যও ঠিক কোথায় তা আমরা তন্ত্রের দেহতত্ত্ব বিশ্লেষণ করে বোঝবার চেষ্টা করেছি- মানবদেহের অনুরূপ হিসেবে তন্ত্রে বিশ্বরহস্যকে বোঝবার চেষ্টা করা হয়েছে বলেই তার আদি-অকৃত্রিম রূপটির মধ্যে অধ্যাত্মবাদের বা ভাববাদের কোনো স্থান হয়নি।

তাই, উত্তরযুগে ওই তান্ত্রিক ধ্যানধারণাগুলির উপর অধ্যাত্মবাদের আর ভাববাদের প্রলেপ যতোই মাখানো হোক না কেন, আদিতে এই ধ্যানধারণ লোকায়তিক বা বস্তুবাদীই ছিলো- সে-বস্তুবাদ আদিম বলেই অফুট, তুর্বল এবং অচেতন। বস্তুবাদের আদিম রূপটির- তথা, ওই প্রাক্‌-অধ্যাত্মবাদী ধ্যানধারণার- আলোচনা পরে তোলা যাবে।

আপাতত আমাদের মন্তব্য হলো, সাংখ্যের আদিরূপটিকেও যদি একই বেদবাহ ঐতিহ্যের অন্তর্গত বলে স্বীকার করতে হয়, তাহলে তার উৎসকেও একইভাবে বোঝবার চেষ্টা করা প্রয়োজন। এই কারণে আমরা শুরুতেই সাংখ্যের সঙ্গে তন্ত্রের এ-সাদৃশ্যের প্রতি মনোযোগ দেবার চেষ্টা করেছি এবং আমরা দেখেছি, সাদৃশ্যের পরিচয় শুধুমাত্র কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক ইংগিতের মধ্যেই আবদ্ধ নয়- মূল দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকেও উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট!

অবশ্যই সাংখ্য-দর্শনও যে আদিতে প্রাক-অধ্যাত্মবাদী ও লোকায়তিক বা বস্তুবাদী চেতনারই অঙ্গ ছিলো সে-বিষয়ে দীর্ঘতর আলোচনা এখনো বাকি আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে যাঁরা সাংখ্যকে অ-বৈদিক ঐতিহ্যের পরিচায়ক বলে ঘোষণা করলেন তাঁরাও তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের প্রকৃত বৈজ্ঞানিক তাৎপর্যের দিকে অগ্রসর হতে পারেননি। অতএব, আমাদের পক্ষে তাদের যুক্তির প্রধান দুর্বলতাকে বিশ্লেষণ করেই অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে।

গার্বে এবং জিমার উভয়েই বলছেন, সাংখ্য-মত আদিতে অ-বৈদিক হলেও কালক্রমে তা বৈদিক ঐতিহ্যের মধ্যে স্বীকৃত ও গৃহীত হয়েছিলো।

সাংখ্য-দর্শনের বৈদিক-ঐতিহা-স্বীকৃত সংস্করণটির পরিচয় হিসেবে গার্বে ভগবদগীতা ও উপনিষদের সেই অংশগুলিরই উল্লেখ করছেন যেগুলির নজির দেখিয়ে ওল্ডেনবার্গ-প্রমুখ বিদ্বানেরা উপনিষদের মধ্যেই সাংখ্য-দর্শনের বীজ আবিষ্কার করবার কল্পনা করেছিলেন।

(চলবে…)

<<সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি তৃতীয় ।। সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি পঞ্চম>>

……………………….
আরও পড়ুন-
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি প্রথম
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি দ্বিতীয়
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি তৃতীয়
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি চতুর্থ
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি পঞ্চম
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি ষষ্ঠ
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি সপ্তম

………………….
লোকায়ত দর্শন (২ম খণ্ড- বস্তুবাদ)- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………..
৬৯৪. সাংখ্যকারিকা ২১, গৌড়পাদভাষ্য।
৬৯৫. বিশ্বকোষ ৭:৫০৭।
৬৯৬. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- বৌদ্ধধর্ম ৩৭ ৷
৬৯৭. H. Zimmer PI 282–সাংখ্যকারিকাকে লেখক আরো পরে (পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি ) রচিত বলে বিবেচনা করেন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও (বৌদ্ধধর্ম ৩৮) একই মত পোষণ করেন।
৬৯৮. সাংখ্যকারিকা ৭০।
৬৯৯. ঐ ৭১।
৭০০. শঙ্করাচার্য- ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২.৪.৯।
৭০১. S. N. Dasgupta HIP 1:213.
৭০২. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade HIP 2:412.
৭০৩. Ibid. 2:413f.
৭০৪. H. H. Wilson SK 160.
৭০৫. P. B. Chakravarti ODSST দ্রষ্টব্য I
৭০৬. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- রচনাবলী (সাহিত্য-সংসদ ) ২:২২২।
৭০৭. মণীন্দ্রমোহন বস্তু- সহজিয়া সাহিত্য ৫২ ৷
৭০৮. উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য- ভারতদর্শনসার ১৪৯-৫০।
৭০৯. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op. cit. 2:428.
৭১০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২.২.৭। নিয়োস্থত তৰ্জমা কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১৪০।
৭১১. ERE 11:191.
৭১২. P. R. T. Gurdon K xix-xx.
৭১৩. G. Thomson SAGS 153.
৭১৪. K. Marx. & F. Engels C 210.
৭১৫. ERE 6:706.
৭১৬. R. Garbe SPB Preface ix.
৭১৭. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- বৌদ্ধধর্ম ৩৭।
৭১৮. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op cit. 2:415.
৭১৯. S.N. Dasgupta op. cit. 1:213.
৭২০. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op. cit. 2:418f.
৭২১. Ibid. 2:420f.
৭২২. Ibid. 2:426f.
৭২৩. E. H. Johnston Es.
৭২৪. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op cit. 2:416.
৭২৫. ব্রহ্মসূত্রভাষ ২. ১, ১২। তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:৪৭।
৭২৬. ঐ ২, ১, ১। তৰ্জমা- কালীবর বেদাস্তবাগীশ ২৮।
৭২৭. ঐ। কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১০।
৭২৮. R. Garbe IACOPVMCSS Preface xx-xxi.
৭২৯. H. Zimmer PI 281.
৭৩০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ১. ৪.১। তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ১:৪৯৭।
৭৩১. P. B. Chakravarti ODSST 4.
৭৩২. Ibid.
৭৩৩. তর্জমা- কালীবর বেদাস্তবাগীশ ২:১২৩-৪।
৭৩৪. তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১২৮।
৭৩৫. কালীবর বেদান্তবাগীশ- সাংখ্য-দর্শনম্ ২২১-২।
৭৩৬. R. Garbe SPB Preface দ্রষ্টব্য।
৭৩৭. S. N. Dasguta op. cit. 1:213.
৭৩৮. R. Hume TPU.
৭৩৯. বরং আমরা দেখাবার চেষ্টা করেছি (পৃ. ৫৩৬ ), গীতা-বর্ণিত অসুরমতের সঙ্গেই সাংখ্যের আদিরূপের সংযোগ অনুমান করা যায়। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মতটিই যদি আদি-অকৃত্রিম সাংখ্য হতো তাহলে অবশ্যই বাদরায়ণ সাংখ্য-খণ্ডনের জন্য অতো আয়োজন করতেন না।
৭৪০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২. ১. ২.।
৭৪১. R. Garbe IACOPVMCSS Preface xii.
৭৪২. F. Engels LF 19.
৭৪৩. R. Garbe op. cit. Preface xix.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!