ভবঘুরেকথা
সাংখ্য-দর্শনের উৎস

সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি পঞ্চম

-দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

অতএব, এখানে অন্তত একটি বিষয়ে গার্বে ওবং ওল্ডেনবার্গ-এর মতের মিল দেখা যায়। বিষয়টি হলো, গীতা ও উপনিষদের আলোচ্য অংশগুলির মধ্যে প্রকৃত সাংখ্যমতেরই উল্লেখ আছে। আমাদের মন্তব্য হলো, সাংখ্য-বিচারে ব্রহ্মসূত্রের সাক্ষ্যকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করেছেন বলেই আধুনিক বিদ্বানের উপনিষদে সাংখ্য-দর্শনের খণ্ডনপ্রচেষ্টাকেই সাংখ্য-পরিচয় বলে কল্পনা করবার মতো ভ্রান্তিকে এতোখানি প্রশ্রয় দিতে পেরেছেন।

প্রথমত, বাদরায়ণ অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বৈদিক সাহিত্যে সাংখ্য-দর্শনের অব্যক্তাদি পারিভাষিক শব্দ দেখলেই, সাংখ্য-চিন্তাধারা অনুমান করবার সুযোগ নেই-

আনুমানিকমপ্যেকেষামিতি চেন্ন, শরীররূপকবিন্যস্ত-গৃহীতের্দ্দর্শয়তি চ।।১।৪।১

বৈদান্তিক আচার্যরা এই সূত্রটির ভাষ্য-রচনা করবার সময় স্বভাবতই আর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন, শ্রুতিতে মহৎ, অব্যক্ত প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার দেখলেই সাংখ্য চিন্তাধারা কল্পনা করা যায় না। শঙ্কর(৭৩০) যেমন বলছেন;

সাংখ্য যে স্বতন্ত্র ত্রিগুণ অব্যক্ত প্রতিপাদন করে, সেই অব্যক্তই যে কঠশ্রুতিতে পঠিত হইয়াছে, এরূপ প্রত্যভিজ্ঞ জন্মে না। কঠশ্রুতিতে কেবল সাংখ্যের অব্যক্ত শব্দটি পঠিত হইয়াছে বলিয়া প্রত্যভিজ্ঞ জন্মে সত্য; কিন্তু তাহার অর্থের প্রত্যভিজ্ঞ জন্মে না।

খুব সম্ভব এমন এক যুগে কপিল-দর্শন প্রণীত হয় যখন বৈদিক যাগযজ্ঞাদি ক্রিয়ার প্রবল প্রভাব ছিলো এবং সাধারণের বিশ্বাস ছিলো যে বিহিত-পদ্ধতিতে যজ্ঞ করলে যজমানের স্বর্গলাভ হবে। বৈদিক পুরোহিতের কাছে স্বর্গই ছিলো পরমপুরুষার্থ।

অর্থাৎ, যে অব্যক্তশব্দ সাংখ্য স্মৃতিতে ত্রিগুণ অচেতন পদার্থবিশেষের বোধক, কঠশ্রুতির অব্যক্তও যে সেই অব্যক্তই, এরূপ প্রত্যভিজ্ঞা-জ্ঞান জন্মে না। যাহা ব্যক্ত নয় তাহাই অব্যক্ত, এ-অর্থ বা এরূপ যোগার্থ লইয়া দুর্লক্ষ্য সূক্ষ্মতত্ত্বেও অব্যক্ত শব্দের প্রয়োগ হইতে পারে। অব্যক্ত-নামে কোনো রূঢ় (সর্ববিদিত) পদার্থ নাই। যাহা কেবলমাত্র সাংখ্যের রূচি, সাংখ্যের পরিভাষা, তাহা লইয়া বেদার্থ নিরূপণ হয় না।

বাদরায়ণের কাছে উপনিষদের তত্ত্ব এবং সাংখ্যের স্বরূপ- উভয় বিষয়ই সম্যকভাবে বোঝবার পক্ষে এই বিষয়টির গুরুত্ব অত্যন্ত মৌলিক। তাই তিনি একাধিকবার এ-কথা উত্থাপন করেছেন। পাছে সাংখ্যবিদ পণ্ডিতেরা উপনিষদের নজির দেখিয়েই ত্রিগুণাত্মক অচেতন প্রধানকে বা প্রকৃতিকেই, জগৎকারণ বলে প্রমাণ করবার চেষ্টা করেন, এই আশঙ্কা নিরসনের জন্য তিনি বলছেন-

ঈক্ষতের্নাশব্দম্।। ১।১।৫।।

ভাষ্যে শঙ্করাচার্য বলছেন-

সাংখ্যকল্পিত জড়রূপ প্রকৃতি বেদান্তশাস্ত্রে জগৎকারণরূপে স্থান পাইতে পারে না, অর্থাৎ বেদান্তশাস্ত্রে অচেতন প্রকৃতির জগৎকর্তৃত্ব প্রতিপন্ন হয় না। অথবা, সৃষ্টিবিষয়ক বেদান্তবাক্যের “অচেতন প্রধান জগৎকারণ” এরূপ অর্থও হয় না, অর্থাৎ প্রকৃতি বা প্রধান তদ্‌বাক্যস্থ পদের বাচ্য বা বোধ্য নহে। কেননা, যে জগৎকারণ, সে ঈক্ষিতা, এইরূপ শুনা যায়।

যেহেতু ঈক্ষিতৃত্ব শুনা যায় সেইহেতু প্রধান অশব্দ,- অর্থাৎ শৌত শব্দের অপ্রতিপাদ্য।- ইত্যাদি, ইত্যাদি।

শুধু তাই নয়। সাংখ্য যে আদিতে বেদ-বিরুদ্ধ ছিলো তার প্রমাণ হিসেবে বাদরায়ণ প্রমুখ সাংখ্য-বিরোধী দার্শনিকদের উক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের কাছে একমাত্র প্রমাণ নয়। সাংখ্য-কারিকা প্রভৃতি গ্রন্থেও আদিসাংখ্যের এই স্পষ্ট বেদ-বিরোধিতার চিহ্ন থেকে গিয়েছে। এ-বিষয়ে শ্রীযুক্ত পুলিনবিহারী চক্রবর্তী[৭৩১] আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন-

খুব সম্ভব এমন এক যুগে কপিল-দর্শন প্রণীত হয় যখন বৈদিক যাগযজ্ঞাদি ক্রিয়ার প্রবল প্রভাব ছিলো এবং সাধারণের বিশ্বাস ছিলো যে বিহিত-পদ্ধতিতে যজ্ঞ করলে যজমানের স্বর্গলাভ হবে। বৈদিক পুরোহিতের কাছে স্বর্গই ছিলো পরমপুরুষার্থ।

কিন্তু এর বিরুদ্ধে সাংখ্য প্রবল প্রতিবাদ ঘোষণা করে এবং প্রমাণ করতে চায়, স্বর্গের কথা অমূলক এবং বৈদিক যাগযজ্ঞ অনর্থক। ‘দৃষ্টবদানুশ্রবিক:’ ইত্যাদি সাংখ্য-কারিকার দ্বিতীয় শ্লোকে তার প্রমাণ আছে। অবশ্যই কারিকা খুব প্রাচীন গ্রন্থ নয়; কিন্তু তবুও তা প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক। (স্বাধীন তর্জমা)।

তা না হলে কল্পনা করতে হয়, বাদরায়ণ সাংখ্য নাম দিয়ে কোনো এক কল্পিত দার্শনিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন। সে রকম একটা কল্পনা যে নেহাতই অসম্ভব, আশাকরি সকলেই তা মানবেন। সাংখ্য নিশ্চয়ই ব্রহ্মসূত্রের চেয়েও পুরোনো, ব্রহ্মসূত্র রচনাকালে সাংখ্য নিশ্চয়ই ভারতীয় চিন্তার ক্ষেত্রে প্রচুর প্রভাব বিস্তার করেছিলো; তা না হলে সাংখ্য-খণ্ডনে বাদরায়ণের অতোখানি উৎসাহের আর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

তাহলে শুধু যে বৈদান্তিকেরাই বলছেন সাংখ্য বেদবাহ্য ও বেদ-বিরুদ্ধ তাই নয়, সাংখ্যের নিজস্ব সাহিত্য থেকেও আদি-সাংখ্যের বেদবিরোধিতার[৭৩২] পরিচয় মুছে যায়নি। এদিক থেকেও বেদান্তের মধ্যেই আদি-সাংখ্য আবিষ্কার অত্যন্ত অস্বাভাবিক প্রচেষ্টা হতে বাধ্য।

আধুনিক বিদ্বানদের মধ্যে যাঁরা উপনিষদের ভিতরেই সাংখ্য-চিন্তার পরিচয় পেয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই বাদরায়ণ এবং তার অনুগামী বৈদান্তিক আচার্যদের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে বলবেন, এইভাবে সাংখ্যের প্রধানকে ‘অশব্দ’ অর্থাৎ বৈদিক ঐতিহ্য বিরুদ্ধ বা বৈদিক ঐতিহ্য বহির্গত বলে প্রমাণ করবার চেষ্টাটা নেহাতই আত্মপক্ষ সমর্থনে গায়ের-জোরের কথা।

কেননা, উপনিষদের অংশ-বিশেষে এবং গীতায় সাংখ্যের তত্ত্ব রয়েছে এবং অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই রয়েছে। অর্থাৎ, চলতি কথায় আমরা যাকে বলি ফ্যাক্ট- চোখের-সামনে থাকা বাস্তব সত্য- তা অস্বীকার না করে বাদরায়ণ বা বৈদান্তিক আচার্যদের কথা স্বীকার করা যায় না।

অতএব আমাদের পক্ষে এখানে ভালো করে দেখা দরকার, উপনিষদাদি গ্রন্থে সত্যিই কী আছে। প্রধানাদি সাংখ্য-দর্শনের পারিভাষিক শব্দ যে আছে সে-কথা বাদরায়ণও অবশ্যই অস্বীকার করবেন না। কিন্তু সাংখ্য-দর্শনের পারিভাষিক শব্দ থাকা মানেই সাংখ্যের দার্শনিক তত্ত্ব থাকা নয়।

বস্তুত, উপনিষদাদির যে-অংশে আধুনিক বিদ্বানের সাংখ্যের নিদর্শন পাচ্ছেন বলে কল্পনা করেন সেগুলিকে বিচার করলে আমরা দেখতে পাই যে, আসলে সেখানে সাংখ্যের খণ্ডনই বর্তমান।

এইটেই হলো আসল ফ্যাক্ট এবং এ-ফ্যাক্ট অগ্রাহ্য না করলে সবিনয়ে স্বীকার করতেই হবে যে, আধুনিক বিদ্বানদের তুলনায় বাদরায়ণ উপনিষদের প্রকৃত ঐতিহ্যের অনেক কাছে ছিলেন বলেই, উপনিষদরচকদের পদামুসরণ করে ব্রহ্মসূত্রের মধ্যে প্রধানকারণবাদ খগুনের প্রচেষ্টাকেই অতোখানি প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

উপনিষদাদির আলোচ্য অংশে ঠিক কী আছে? সাংখ্য-তত্ত্ব, না, সাংখ্যখণ্ডন? এ-প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে সাংখ্যের আদি-অকৃত্রিম তত্ত্ব বলতে ঠিক কী বোঝায়, সে-বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। কোথা থেকে সে-ধারণা পাওয়া যাবে? আমাদের যুক্তি অনুসারে, ওই বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্র থেকেই।

তার কারণ, ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে সাংখ্য-দর্শনের এর চেয়ে পুরোনো আর কোনো উল্লেখ আমরা পাই না। অর্থাৎ কিনা, সাংখ্য-মত হিসেবে বাদরায়ণ তাঁর ব্রহ্মসূত্রে ঠিক যে মতবাদটিকে খণ্ডন করছেন তাকেই সাংখ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে স্বীকার করা প্রয়োজন।

তা না হলে কল্পনা করতে হয়, বাদরায়ণ সাংখ্য নাম দিয়ে কোনো এক কল্পিত দার্শনিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন। সে রকম একটা কল্পনা যে নেহাতই অসম্ভব, আশাকরি সকলেই তা মানবেন। সাংখ্য নিশ্চয়ই ব্রহ্মসূত্রের চেয়েও পুরোনো, ব্রহ্মসূত্র রচনাকালে সাংখ্য নিশ্চয়ই ভারতীয় চিন্তার ক্ষেত্রে প্রচুর প্রভাব বিস্তার করেছিলো; তা না হলে সাংখ্য-খণ্ডনে বাদরায়ণের অতোখানি উৎসাহের আর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

কিন্তু সাংখ্যের দার্শনিক তত্ত্ব বলতে ঠিক কী বোঝাতে এ-বিষয়ে বাদরায়ণের রচনায় পূর্বপক্ষ হিসেবে বর্ণিত সাংখ্যের ওই পরিচয়টির চেয়ে পুরোনো আর কোনো পরিচয় আমাদের জানা নেই। তাই এই পরিচয়টির উপর নির্ভর না করে সাংখ্যের আদিরূপ সংক্রান্ত অন্য যে-কোনো মতবাদ দাড় করবার চেষ্টা করলে তা মনগড়া হবারই সম্ভাবনা।

মৃত্তিকাই হউক আর রথাদিই হউক, কুম্ভকারের ও রথবাহকের অধিষ্ঠান ব্যতীত আপনা হইতে কেহ কখনও মৃত্তিকাকে ও রথকে বিশিষ্ট কার্যাভিমুখ হইতে দেখে নাই।…যেহেতু, অনুমান সমর্থক দৃষ্টান্ত নাই, সেইহেতু অচেতনের প্রবৃত্তি অননুমেয়।…যেহেতু অচেতনের বিশিষ্ট কার্য প্রবৃত্তির অনুমান তুর্ঘট, সেইহেতুই অচেতন জগৎকারণের অনুমানও দুর্ঘট।”

এই কথাটি স্বীকার করলে মানতে হবে, অন্যত্র আমরা সাংখ্যের যে-পরিচয় পাই- এমনকি সাংখ্য-কারিকা ও সাংখ্য-প্রবচন-সূত্র নামে উত্তরকালে রচিত সাংখ্যের ওই ছুটি পুঁথিতে সাংখ্য-দর্শনের যে-পরিচয় পাওয়া যায়- তার সঙ্গে আদি-অকৃত্রিম সাংখ্যের কতোখানি মিল আছে, এ-প্রশ্নের উত্তর পেতে হলেও আমাদের পক্ষে বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রে প্রত্যাবর্তন করে সেখানে সাংখ্যের যে-পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে তার সঙ্গে এগুলিকে মিলিয়ে দেখা দরকার।

এবং উপনিষদাদির অংশ-বিশেষে সাংখ্য-দর্শনের পারিভাষিক শব্দের পরিচয় পেলেও আমাদের পক্ষে এই পদ্ধতি অনুসারেই বিচার করা প্রয়োজন যে, সেখানে সাংখ্য-তত্ত্ব না সাংখ্য-খণ্ডন- ঠিক কিসের নমুনা রয়েছে। কেননা, উপনিষদ যদিও অবশ্যই ব্রহ্মসূত্রের চেয়ে পুরোনো, তবুও উপনিষদে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়নি কোনটি সাংখ্য-মত এবং কোনটি সাংখ্য-মত নয়, ব্রহ্মসূত্রেই সর্ব প্রথম স্পষ্টভাবে সে-কথা বলে দেওয়া হয়েছে।

এইভাবে, ব্রহ্মসূত্রে যেকথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে তারই আলোয়, উপনিষদে যে-কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি তা বোঝবার চেষ্টা করা ছাড়া আর উপায় কি?

বাদরায়ণের ব্রহ্মসূত্রে সাংখ্য-মত হিসেবে নির্দিষ্ট কোন দার্শনিক তত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়? প্রাচীনদের পরিভাষায় তার নাম হলো, অচেতনকারণ-বাদ বা প্রধান-কারণ-বাদ। অর্থাৎ, অচেতন বা জড় প্রকৃতিই জগৎকারণ। ব্রহ্মসূত্রের ব্যাখ্যায় শঙ্করাচার্য[৭৩৩] যেমন বলেছেন,

“সাংখ্যের সিদ্ধান্ত এই যে, যেমন ঘটাদি মৃন্ময় পদার্থে মৃত্তিকারূপের অন্বয় থাকায় মৃত্তিকাজাতি সে-সকলের কারণ, তেমনি, যে-কিছু বাহ্য ও আন্তরিকভাবে (পদার্থ) আছে, সে সমস্তই সুখদুঃখমোহ রূপে অম্বিত থাকায় সুখদুঃখমোহাত্মক কোনো এক সামান্য পদার্থ সে-সকলের কারণ। সুখদুঃখমোহাত্মক সেই সামান্য পদার্থটি ত্রিগুণ ও মৃত্তিকাদির ন্যায় অচেতন”। সাংখ্য-দর্শনকে এই অর্থে বুঝেছিলেন বলেই স্বয়ং বাদরায়ণ সাংখ্য-খণ্ডনের একটি চূড়ান্ত যুক্তি হিসেবে বলছেন,

রচনানুপপত্তেশ্চ নানুমান্‌ম্‌।।২।২।১৷৷
প্রবৃত্তেশ্চ।।২।২।২৷৷
ইত্যাদি, ইত্যাদি।

অর্থাৎ, অচেতন প্রধানের পক্ষে জগৎকারণ হওয়া সম্ভবই নয়, কেননা জগতে রচনা বা উদ্দেশ্য-সাধনের (purposiveness) পরিচয় আছে এবং তা অচেতন-জনিত হতে পারে না। এবং “রচনা দূরে থাকুক, রচনাসিদ্ধির জন্য যে প্রবৃত্তি- অমুকুল প্রচেষ্টা,- তাহাও অচেতন প্রধানের পক্ষে স্বাধীনভাবে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।…হেতু এই যে, মৃত্তিকার ও রথাদি অচেতনের তাদৃশী বিশিষ্ট প্রবৃত্তি দেখা যায় না।

মৃত্তিকাই হউক আর রথাদিই হউক, কুম্ভকারের ও রথবাহকের অধিষ্ঠান ব্যতীত আপনা হইতে কেহ কখনও মৃত্তিকাকে ও রথকে বিশিষ্ট কার্যাভিমুখ হইতে দেখে নাই।…যেহেতু, অনুমান সমর্থক দৃষ্টান্ত নাই, সেইহেতু অচেতনের প্রবৃত্তি অননুমেয়।…যেহেতু অচেতনের বিশিষ্ট কার্য প্রবৃত্তির অনুমান তুর্ঘট, সেইহেতুই অচেতন জগৎকারণের অনুমানও দুর্ঘট।”[৭৩৪]

জগৎকারণ হিসেবে অচেতন বস্তুকে স্বীকার করা একান্তই সম্ভবপর কিনা- এ-প্রশ্ন অবশ্যই স্বতন্ত্র। আধুনিক বস্তুবাদীরা নিশ্চয়ই বলবেন, তা সম্ভবপর এবং বাদরায়ণের উপরোক্ত যুক্তি সত্ত্বেও। আমাদের পক্ষে বর্তমানে এই সমস্যার আলোচনায় প্রবেশ করবার প্রয়োজন নেই।

…ভাষ্যকার বিজ্ঞানভিক্ষু আভাস দিয়াছেন যে, এ-স্থলে ঈশ্বরাপলাপ করা কপিলের উদ্দেশ্য নহে; বাদীর মুখস্তম্ভ করাই তাহার উদ্দেশ্য। ঈশ্বর নাই বলিবার অভিপ্রায় থাকিলে “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ” এরূপ না বলিয়া “ঈশ্বরাভাবাৎ” এইরূপ বিস্পষ্ট উক্তি করিতেন। ভাষ্যকার যাহাই বলুন, আমরা বুঝি “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ”, “ঈশ্বরাভাবাৎ” ফলকল্পে তুল্য।

কেননা, এখানে আমাদের মূল সমস্ত হলো সাংখ্যের আদিরূপটিকে সনাক্ত করা। এবং সাংখ্যের বিরুদ্ধে প্রাচীনদের এ-জাতীয় যুক্তি থেকে আমরা অন্তত এটুকু অনুমান করতে পারি যে, আদিতে সাংখ্য শুধুমাত্র নিরীশ্বরবাদই ছিলো না, বস্তুবাদ বা জড়বাদও ছিলো।

আধুনিক পরিভাষায় শুধুমাত্র atheism নয়, materialism-ও। তাই উত্তরকালে সাংখ্য-প্রসঙ্গে আমরা যে-সব অধ্যাত্মবাদী ও ভাববাদী চিন্তার পরিচয় পাই, আদি-সাংখ্যের দিক থেকে সেগুলিকে অর্বাচীন ও প্রক্ষিপ্ত ধ্যানধারণার নমুনা বলেই অভিহিত করা প্রয়োজন।

এইখানে আমাদের মন্তব্যটি আরো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। আমরা নিরীশ্বরবাদ ও বস্তুবাদের কথা একই সঙ্গে উল্লেখ করলাম, কেননা এ-দুয়ের মধ্যে একটা তত্ত্বগত যোগাযোগ আছে, যেমন তত্ত্বগত যোগাযোগ আছে অধ্যাত্মবাদ ও ভাববাদের মধ্যে।

সাংখ্য যে আদিতে নিরীশ্বরবাদই ছিলো এবং পরে তার উপর জোর করে ঈশ্বরতত্ত্ব চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছিলো, এ-বিষয়ে আধুনিক বিদ্বানেরা বড়ো বেশি দ্বিমত হবেন না। এমন কি, আমাদের সনাতনপন্থী বিদ্বানেরাও তা স্পষ্টভাবেই স্বীকার করছেন।

কিন্তু সাংখ্যে যে আদিতে সুস্পষ্ট জড়বাদও ছিলো এবং উত্তরযুগে সাংখ্যকারিকা ও সাংখ্য-সূত্রের মতো গ্রন্থেও ভাববাদী ও অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারার যে-পরিচয় পাওয়া যায় তাও যে বিজাতীয় ও প্রক্ষিপ্ত ধ্যানধারণারই নমুনা মাত্র- এ-বিষয়ে আধুনিক বিদ্বানের সম্যকভাবে সচেতন নন। এর কারণ কী এবং কী ভাবে এই কারণেই তারা উপনিষদের মধ্যেও সাংখ্য-দর্শনের বীজ আবিষ্কার করবার চেষ্টা করেছেন, তার আলোচনা তোলা প্রয়োজন।

প্রথমত, সাংখ্যে ঈশ্বরের স্থান আছে কী? পণ্ডিত কালিবর বেদান্তবাগীশ[৭৩৫] লিখছেন-

…মহাভারত, ভাগবত ও পুরাণ, এই সকল গ্রন্থে কপিল সম্বন্ধে যেরূপ ইতিহাস প্রকটত আছে তাহা দেখিলে কপিল ঈশ্বরনাস্তিক ছিলেন বলা দূরে থাকুক, তিনি সম্পূর্ণ আস্তিক, ঈশ্বরের প্রধান ভক্ত বা অবতার না বলিয়া থাকা যায় না। কিন্তু তাহার গ্রন্থ দেখিলে অনুভব হয়, তিনি একজন ঈশ্বরনাস্তিকের অগ্রগণ্য।…প্রথম অধ্যায়ের ৯২ সূত্র “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ”।

…ভাষ্যকার বিজ্ঞানভিক্ষু আভাস দিয়াছেন যে, এ-স্থলে ঈশ্বরাপলাপ করা কপিলের উদ্দেশ্য নহে; বাদীর মুখস্তম্ভ করাই তাহার উদ্দেশ্য। ঈশ্বর নাই বলিবার অভিপ্রায় থাকিলে “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ” এরূপ না বলিয়া “ঈশ্বরাভাবাৎ” এইরূপ বিস্পষ্ট উক্তি করিতেন। ভাষ্যকার যাহাই বলুন, আমরা বুঝি “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ”, “ঈশ্বরাভাবাৎ” ফলকল্পে তুল্য।

বেদান্তবাগীশ মহাশয় এখানে কপিলের গ্রন্থ বলতে সাংখ্য-সূত্রেরই উল্লেখ করছেন। এবং এই গ্রন্থে যে যে স্থানে “যে যে ভাবের ঈশ্বর সম্বন্ধীয় কথা আছে তাহা একত্রিত করিয়া” বিচার করবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মুস্কিল এই যে, তার উপরোক্ত মন্তব্যের সঙ্গে সাংখ্য-সূত্রের ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় অন্যান্য উক্তিগুলির সহজ সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং এই কারণেই বেদান্তবাগীশ মহাশয়কে শেষ পর্যন্ত উপরোক্ত উক্তিকে শুধরে বলতে হয়েছে যে, সাংখ্যের প্রকৃত কথাটা হলো, “নিত্য-ঈশ্বর নাই, কিন্তু জন্য-ঈশ্বর আছেন।”

তাহলে এই সাংখ্য-সূত্র বলে পুঁথিটি নামে সাংখ্য হলেও বিজাতীয়,- অর্থাৎ বৈদান্তিক,- চিন্তাধারায় ভরপুর। এবং সাংখ্য সূত্রেরই যদি এই দশা হয়, তাহলে বিজ্ঞানভিক্ষুর ভাষ্য যে এ-বিষয়ে আরো অনেক চূড়ান্ত আপোসের পরিচয় দেবে সে-বিষয়ে আর বিস্ময়ের অবকাশ কোথায়? স্বভাবতই আদিসাংখ্যের নিরীশ্বরতাকে উড়িয়ে দেবার আশায় তাকে নানা রকম অত্যদ্ভুত যুক্তির অবতারণা করতে হয়েছে; অধ্যাপক গার্বে এই বিস্ময়কর যুক্তিগুলির তালিকা করে দিয়েছেন।

এদিক থেকে অধ্যাপক গার্বের[৭৩৬] মন্তব্য আরো সংস্কারমুক্ত। তিনি দেখাচ্ছেন, প্রথমত সাংখ্য-সূত্র নামের গ্রন্থটিকে কপিলের রচনা বলে কল্পনা করবার কোনো কারণ নেই; এ-গ্রন্থের রচনাকাল চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাব্দী। বিজ্ঞানভিক্ষুর ভাষ্য আরো শ’ দেড়েক বছর পরের রচনা। এবং ওই সাংখ্য-সূত্রের মধ্যেও সাংখ্য-দর্শনের আদি অকৃত্রিম রূপটিকে দেখতে পাওয়া যায় না।

কেননা, এই গ্রন্থের একটি মূল চেষ্টা হলো, সাংখ্য এবং উপনিষদের চিন্তাধারার মধ্যে মৌলিক প্রভেদকে অস্বীকার করা। গার্বে বলছেন, সাংখ্য-তত্ত্বের সঙ্গে ঈশ্বর এবং উপনিষদের ব্রহ্মের তত্ত্বের কোনো গরমিল নেই, কিংবা সাংখ্যের দিক থেকে স্বর্গলাভমুলক পুরুষার্থের কথায় অসঙ্গতি নেই- এর চেয়ে অসম্ভব অনুমান আর কিছুই হতে পারে না; অথচ, সাংখ্য-সূত্রকার সেই কথাটি প্রচার করবার জন্যেই বিস্তর অধ্যবসায়ের পরিচয় দিয়েছেন।

বস্তুত, ওই সাংখ্য-সূত্রের মধ্যে বৈদান্তিক প্রভাব যে কতো প্রকট তার পক্ষে চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গার্বে নিম্নোক্ত সূত্রটির উল্লেখ করেছেন-

আবৃত্তিরসকৃদুপদেশাৎ।। সাংখ্যসূত্র- ৪,৩।।

অর্থাৎ, “যদি সকৃৎ শ্রবণে বিবেকজ্ঞান না হয় তবে তাহা বার বার শ্রবণ করিবে। (শ্বেতকেতু সাত বার শ্রবণের পর বিবেকজ্ঞান পাইয়াছিলেন)”। সাংখ্য-সূত্রের এই সূত্রটি যে একেবারে হুবহু ব্রহ্মসূত্রের (৪৷১।১) পুনরুক্তিমাত্র, সে-বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকতে পারে না। কিংবা, সাংখ্যসূত্রের পঞ্চম অধ্যায়ের ১১৬ সূত্র হলো-

সমাধিসুষুপ্তিমোক্ষেয়ু ব্রহ্মরূপতা।।

এ-তত্ত্ব যে খাঁটি বৈদান্তিক তত্ত্ব এবং এমন কি ‘ব্রহ্মরূপতা’ বলে পরিভাষাটিও যে অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই বেদান্ত-দর্শন থেকে গৃহীত হয়েছে, সেবিষয়েই বা সন্দেহের অবকাশ কোথায়? বলাই বাহুল্য, এ-জাতীয় কথা যদি সত্যিই সাংখ্য-দর্শনেরই প্রতিপাদ্য হতো তাহলে বাদরায়ণের পক্ষে বেদান্তদর্শনের প্রধানতম প্রতিপক্ষ হিসেবে সাংখ্যকেই খণ্ডন করবার অমন তাগিদ থাকতো না।

তাহলে এই সাংখ্য-সূত্র বলে পুঁথিটি নামে সাংখ্য হলেও বিজাতীয়,- অর্থাৎ বৈদান্তিক,- চিন্তাধারায় ভরপুর। এবং সাংখ্য সূত্রেরই যদি এই দশা হয়, তাহলে বিজ্ঞানভিক্ষুর ভাষ্য যে এ-বিষয়ে আরো অনেক চূড়ান্ত আপোসের পরিচয় দেবে সে-বিষয়ে আর বিস্ময়ের অবকাশ কোথায়? স্বভাবতই আদিসাংখ্যের নিরীশ্বরতাকে উড়িয়ে দেবার আশায় তাকে নানা রকম অত্যদ্ভুত যুক্তির অবতারণা করতে হয়েছে; অধ্যাপক গার্বে এই বিস্ময়কর যুক্তিগুলির তালিকা করে দিয়েছেন।

সাংখ্য যে আদিতে এই রকম নিরীশ্বরবাদই ছিলো,- অতএব আজকাল সাংখ্য-দর্শনের মধ্যে আমরা যে-সব আধ্যাত্মিক প্রসঙ্গের পরিচয় পাই, সেগুলি যে উত্তরকালে সাংখ্যের উপর প্রক্ষিপ্ত ধ্যানধারণা মাত্র- এ-বিষয়ে স্পষ্টভাবে সচেতন হলেও আধুনিক বিদ্বানেরা আর একটি বিষয় সম্বন্ধে সম্যকভাবে সচেতন হননি।

(চলবে…)

<<সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি চতুর্থ ।। সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি ষষ্ঠ>>

……………………….
আরও পড়ুন-
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি প্রথম
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি দ্বিতীয়
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি তৃতীয়
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি চতুর্থ
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি পঞ্চম
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি ষষ্ঠ
সাংখ্য-দর্শনের উৎস : কিস্তি সপ্তম

………………….
লোকায়ত দর্শন (২ম খণ্ড- বস্তুবাদ)- দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………..
৬৯৪. সাংখ্যকারিকা ২১, গৌড়পাদভাষ্য।
৬৯৫. বিশ্বকোষ ৭:৫০৭।
৬৯৬. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- বৌদ্ধধর্ম ৩৭ ৷
৬৯৭. H. Zimmer PI 282–সাংখ্যকারিকাকে লেখক আরো পরে (পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি ) রচিত বলে বিবেচনা করেন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও (বৌদ্ধধর্ম ৩৮) একই মত পোষণ করেন।
৬৯৮. সাংখ্যকারিকা ৭০।
৬৯৯. ঐ ৭১।
৭০০. শঙ্করাচার্য- ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২.৪.৯।
৭০১. S. N. Dasgupta HIP 1:213.
৭০২. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade HIP 2:412.
৭০৩. Ibid. 2:413f.
৭০৪. H. H. Wilson SK 160.
৭০৫. P. B. Chakravarti ODSST দ্রষ্টব্য I
৭০৬. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- রচনাবলী (সাহিত্য-সংসদ ) ২:২২২।
৭০৭. মণীন্দ্রমোহন বস্তু- সহজিয়া সাহিত্য ৫২ ৷
৭০৮. উমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য- ভারতদর্শনসার ১৪৯-৫০।
৭০৯. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op. cit. 2:428.
৭১০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২.২.৭। নিয়োস্থত তৰ্জমা কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১৪০।
৭১১. ERE 11:191.
৭১২. P. R. T. Gurdon K xix-xx.
৭১৩. G. Thomson SAGS 153.
৭১৪. K. Marx. & F. Engels C 210.
৭১৫. ERE 6:706.
৭১৬. R. Garbe SPB Preface ix.
৭১৭. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী- বৌদ্ধধর্ম ৩৭।
৭১৮. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op cit. 2:415.
৭১৯. S.N. Dasgupta op. cit. 1:213.
৭২০. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op. cit. 2:418f.
৭২১. Ibid. 2:420f.
৭২২. Ibid. 2:426f.
৭২৩. E. H. Johnston Es.
৭২৪. S. K. Belvalkar & R. D. Ranade op cit. 2:416.
৭২৫. ব্রহ্মসূত্রভাষ ২. ১, ১২। তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:৪৭।
৭২৬. ঐ ২, ১, ১। তৰ্জমা- কালীবর বেদাস্তবাগীশ ২৮।
৭২৭. ঐ। কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১০।
৭২৮. R. Garbe IACOPVMCSS Preface xx-xxi.
৭২৯. H. Zimmer PI 281.
৭৩০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ১. ৪.১। তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ১:৪৯৭।
৭৩১. P. B. Chakravarti ODSST 4.
৭৩২. Ibid.
৭৩৩. তর্জমা- কালীবর বেদাস্তবাগীশ ২:১২৩-৪।
৭৩৪. তর্জমা- কালীবর বেদান্তবাগীশ ২:১২৮।
৭৩৫. কালীবর বেদান্তবাগীশ- সাংখ্য-দর্শনম্ ২২১-২।
৭৩৬. R. Garbe SPB Preface দ্রষ্টব্য।
৭৩৭. S. N. Dasguta op. cit. 1:213.
৭৩৮. R. Hume TPU.
৭৩৯. বরং আমরা দেখাবার চেষ্টা করেছি (পৃ. ৫৩৬ ), গীতা-বর্ণিত অসুরমতের সঙ্গেই সাংখ্যের আদিরূপের সংযোগ অনুমান করা যায়। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মতটিই যদি আদি-অকৃত্রিম সাংখ্য হতো তাহলে অবশ্যই বাদরায়ণ সাংখ্য-খণ্ডনের জন্য অতো আয়োজন করতেন না।
৭৪০. ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২. ১. ২.।
৭৪১. R. Garbe IACOPVMCSS Preface xii.
৭৪২. F. Engels LF 19.
৭৪৩. R. Garbe op. cit. Preface xix.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!