ভবঘুরেকথা
স্বামী বিবেকানন্দ

-শংকর

শরীরম্‌ ব্যাধিমন্দিরম্‌! এদেশের কোন মহাপুরুষ কথাটা প্রথম ব্যবহার করেছিলেন তা আমার জানা নেই। স্বামী বিবেকানন্দের অসুখবিসুখ সম্বন্ধে খবরাখবর নিতে গেলেই কথাটা কিন্তু বারবার মনে পড়ে যায়।

আমার পিতৃদেব অকালে মৃত হয়েছিলেন, সেই থেকে পিতৃস্থানীয়দের অকালপ্রয়াণ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর ওই ধরনের দুর্ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আমাকে আজও নাড়া দেয়। এই মানসিকতা থেকেই নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে স্বামী বিবেকানন্দের শরীর-স্বাস্থ্য আমার অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

নরেন্দ্রনাথের পিতৃদেব বিশ্বনাথ দত্তর মৃত্যু হয় ১৮৮৪ সালে, ৫২ বছর বয়সে। তার জ্যেষ্ঠপুত্রের বয়স তখন ২১ বছর।

কর্পোরেশন ডেথ রেজিস্টার অনুযায়ী বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যুর কারণ বহুমূত্ররোগ, দেহাবসানের তারিখ ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৮৮৪। স্বামী গম্ভীরানন্দের বিবরণ সামান্য আলাদা- “১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দের ২৫শে ফেব্রুয়ারি সোমবার অপরাহ্নে তিনি (নরেন্দ্র) বরাহনগরে আগমনপূর্বক সঙ্গীতাদিতে রাত্রি প্রায় এগারটা পর্যন্ত কাটাইয়া শয্যাগ্রহণানান্তে বন্ধুদের সহিত নানাবিধ আলাপে নিযুক্ত আছেন।

প্রমথনাথ বসু তাঁর বইতে বিবেকানন্দ সম্বন্ধে বলেছেন, সুগঠিত অবয়ব, তার মধ্যে সিংহাবয়বের সৌন্দর্য। কিন্তু স্বামীজির শরীরের মাপজোখের জন্য আমাদের শরণাপন্ন হতে হবে রোমাঁ রোলাঁর। সাবধানী ইউরোপীয় ও আমেরিকান লেখকরা যথা সময়ে কলম না ধরলে আমরা অনেক বিবরণ জানতে পারতাম না।

এমন সময় তাহার বন্ধু ‘হেমালী রাত্রি প্রায় দুইটার সময় সেখানে আসিয়া খবর দিলেন, তাঁহার পিতা অকস্মাৎ ইহলোক ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছেন।” বিভিন্ন সূত্র থেকেই হৃদরোগকে বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছে।

পিতৃদেবের স্বাস্থ্যের ইতিহাসটি ভাল নয়। মৃত্যুর একমাস আগেই ডায়াবিটিসের রোগী বিশ্বনাথের হৃদরোগ দেখা দেয় এবং মৃত্যুর দিনে তিনি স্ত্রীকে বলেন,

“তিনি হৃদয়ে বেদনা অনুভব করিতেছেন। অতঃপর রাত্রে আহারের পর বুকে ঔষধ মালিশ করাইয়া তামাক সেবন করিতে করিতে তিনি কিছু লেখাপড়ার কাজে মন দেন; নয়টায় উঠিয়া বমি করেন এবং তারপরেই রাত্রি দশটায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া যায়।”

মধ্যমভ্রাতা মহেন্দ্রনাথের স্মৃতি অনুযায়ী নরেন্দ্রনাথ বরাহনগর থেকে সোজা নিমতলা ঘাটে চলে আসেন। শ্মশানের মিউনিসিপ্যাল ডেথ রেজিস্টারে নরেন্দ্রনাথ তার পুরো নাম ইংরিজিতে লেখেন।

পৈত্রিক দিক থেকে দীর্ঘজীবী হওয়ার তেমন কোনো প্রমাণ স্বামীজির বংশতালিকায় পাওয়া যাচ্ছে না। দশভাইবোনের সংসারেও অনেকেই অকালে দেহরক্ষা করেছেন। তবে তাঁর দিদি স্বর্ণলতা, মেজভাই মহেন্দ্রনাথ এবং ছোটভাই ভূপেন্দ্রনাথ দীর্ঘজীবনের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।

জননী ভুবনেশ্বরী শোকতাপে জর্জরিত হয়েও বাহাত্তর বছর বেঁচেছিলেন, তার মৃত্যুর কারণ যে মেনিনজাইটিস তা আমাদের অজানা নয়। ভুবনেশ্বরী-জননী রঘুমণি দেবী বেঁচেছিলেন ৯০ বছর, তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে মিউনিসিপ্যালিটির খাতায় লেখা আছে ‘বার্ধক্যজনিত দৌর্বল্য’। জীবিতকালে তাঁর শেষ আশ্রয় নিমতলা গঙ্গাযাত্রীনিবাস।

স্বামীজির স্বল্পায়ুকে চেষ্টা করে পুরোপুরি বংশধারার সঙ্গে যুক্ত করাও সুবিবেচনার কাজ হবে না, কারণ দিদি স্বর্ণময়ী বেঁচেছিলেন ৭২ বছর। কর্পোরেশন মৃত্যু-রেজিস্টার অনুযায়ী স্বর্ণময়ীর দেহাবসান ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২, আনুমানিক বয়স ৭০।

মেজভাই মহিম বেঁচেছিলেন ৮৮ বছর এবং ছোট ভূপেন্দ্রনাথ ৮১ বছর। তবু পারিবারিক ব্যাধি ডায়াবিটিস ও হার্ট অ্যাটাকের কথা মনে রেখেই স্বামীজির শরীর ও রোগের মানচিত্র আমাদের আঁকতে হবে।

সেই সঙ্গে সকলকে জানানো দরকার কী-ধরনের শারীরিক জ্বালাযন্ত্রণার মধ্যে তিনি কী সব কাজ এই পৃথিবীতে করে গেলেন। অসম্ভব যেভাবে তার জীবনে সম্ভব হয়েছে তা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হতে পারে।

নরেন্দ্রনাথের শৈশবকাল থেকে ৪ জুলাই ১৯০২ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে শরীর সংক্রান্ত যেসব খবরাখবর ছড়িয়ে রয়েছে তা এবার সাজিয়ে না ফেললে অনেক মূল্যবান ছোটখাট বিবরণ চিরদিনের মতন অনুসন্ধিৎসুদের দৃষ্টির বাইরে চলে যেতে পারে।

ব্যাধির প্রসঙ্গে ঢোকবার আগে স্বামীজির অবয়ব সম্বন্ধে কিছু জানবার আগ্রহ সর্বস্তরেই রয়েছে। কেমন দেখতে ছিলেন মানুষটি? কত ছিল তার উচ্চতা? ওজন কত? গায়ের রঙ কী রকম? পায়ের জুতোর সাইজ কত? এসব বিষয়েও সম্পূর্ণ তথ্য সবসময় আমাদের হাতের গোড়ায় নেই।

সমকালের ভারতীয়দের মস্ত দোষ, তারা একজন স্মরণীয় মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে নানাবিধ মন্তব্য করেন, কেমন দেখতে তাও বলেন, কিন্তু তথ্যভিত্তিক বিবরণ দেন না।

প্রমথনাথ বসু তাঁর বইতে বিবেকানন্দ সম্বন্ধে বলেছেন, সুগঠিত অবয়ব, তার মধ্যে সিংহাবয়বের সৌন্দর্য। কিন্তু স্বামীজির শরীরের মাপজোখের জন্য আমাদের শরণাপন্ন হতে হবে রোমাঁ রোলাঁর। সাবধানী ইউরোপীয় ও আমেরিকান লেখকরা যথা সময়ে কলম না ধরলে আমরা অনেক বিবরণ জানতে পারতাম না।

রোলাঁ তার বিখ্যাত বইয়ের শুরুতেই লিখছেন- “বিবেকানন্দের দেহ ছিল মল্লযোদ্ধার মত সুদৃঢ় ও শক্তিশালী। তাহা রামকৃষ্ণের কোমল ও ক্ষীণদেহের ছিল ঠিক বিপরীত।

বিবেকানন্দের ছিল সুদীর্ঘ দেহ (পাঁচফুট সাড়ে আট ইঞ্চি), প্রশস্ত গ্রীবা, বিস্তৃত বক্ষ, সুদৃঢ় গঠন, কর্মিষ্ঠ পেশল বাহু, শ্যামল চিক্কণ ত্বক, পরিপূর্ণ মুখমণ্ডল, সুবিস্তৃত ললাট, কঠিন চোয়াল, আর অপূর্ব আয়ত পল্লবভারে অবনত ঘনকৃষ্ণ দুটি চক্ষু।”

রসিকচূড়ামণি বিবেকানন্দ তখন প্রায়ই নিজেকে ফ্যাট বা মোটকা মহারাজ বলতেন। আরও কয়েকমাস পরে বিবেকানন্দ যখন প্যারিসে হাজির হলেন তখন তার ওজন হুড়মুড় করে তিরিশ পাউন্ড কমে গিয়েছে। ব্যাপারটা মার্কিনী ভক্তদের সাবধানী নজর এড়ায়নি।

ভারতীয় অপেক্ষা তাতারদের সঙ্গেই তার চোয়ালের সাদৃশ্য ছিল বেশি। বিবেকানন্দর কণ্ঠস্বর ছিল ভায়লিনচেলো বাদ্যযন্ত্রের মতো। তাতে উত্থানপতনের বৈপরীত্য ছিল না, ছিল গাম্ভীর্য, তবে তার ঝঙ্কার সমগ্র সভাকক্ষে সকল শ্রোতার হৃদয়ে।

ফরাসি গায়িকা এমা কালভে বলেন, তিনি ছিলেন চমৎকার ব্যারিটোন, গলার সুর ছিল চীনা গঙের আওয়াজের মতো। রোমাঁ রোলাঁর বর্ণনা অনুযায়ী বিবেকানন্দর ওজন ১৭০ পাউন্ড।

এই ওজন কি মাঝে-মাঝেই ওঠা-নামা করতো? কারণ অন্য এক পরিপ্রেক্ষিতে জনৈক মার্কিনী সাংবাদিক আন্দাজ করেছেন, স্বামীজির ওজন ২২৫ পাউন্ড। আবার কখনও দেখা যাচ্ছে, স্বামীজি নিজেই ওজন কমাবার জন্য কৃতসংকল্প হয়ে উঠেছেন। মনে হয়, ঝপ করেই তার ওজন বাড়তো আবার একটু চেষ্টাতেই আয়ত্তে এসে যেত।

প্রথমবার মার্কিন প্রবাসকালে নিউইয়র্ক থেকেডায়েটিংসম্বন্ধেবিবেকানন্দ লিখেছেন, “আজকাল দুধ, ফল, বাদাম- এই সব আমার আহার। ভাল লাগে, আছিও বেশ। এই গ্রীষ্মের মধ্যেই মনে হয় শরীরের ওজন ৩০৪০ পাউন্ড কমবে, শরীরের আকার অনুসারে ওজন ঠিকই হবে।”

প্রথমবার যখন স্বামীজি আমেরিকায় যান তখন “ফ্রেনলজিক্যাল জার্নাল অব নিউ ইয়র্কে” তাঁর শরীরের মাপ প্রকাশিত হয়।

নিজের ওজন নিয়ে স্বামীজির রসরসিকতার অন্ত ছিল না। আমেরিকায় একবার বক্তৃতার পর জনৈক মুগ্ধ ভক্ত তাঁকে প্রশ্ন করলেন, “স্বামীজি, আপনি কি ভগবানকে দেখেছেন?” স্বামীজির তাৎক্ষণিক উত্তর- “বলেন কি? আমাকে আমার মতন একজন মোটা লোককে দেখে কি তাই মনে হয়?”

কারও শারীরিক ওজনের উত্থান-পতনের গ্রাফের দিকে সাবধানী নজর রাখা দেহান্তের এতোদিন পরে সহজ কাজ নয়। আমাদের কাছে উপাদানের মধ্যে তখনকার মানুষের কিছু স্মৃতিকথা, ইংরিজি, বাংলা, সংস্কৃত ও ফরাসিতে লেখা তাঁর চিঠিপত্র এবং বিভিন্ন সময়ে তোলা কিছু ফটো।

যা দেখলে সহজেই বোঝা যায় কোনো অজ্ঞাত কারণে তার ওজন সব সময় স্থির থাকছে না। এর পিছনে অদৃশ্য ডায়াবিটিস এবং কিডনির ব্যাধি কতটুকু কাজ করেছে তা নিয়ে ডাক্তারি অনুধ্যান করলে মন্দ হয় না।

১৮৯৯ সালে দ্বিতীয়বার বিদেশ যাবার সময় কলকাতায় তোলা ফটোগ্রাফে স্বামীজিকে উদ্বেগজনকভাবে শীর্ণ দেখাচ্ছে। কিন্তু লন্ডন হয়ে কয়েকমাস পরেই যখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় উপস্থিত হলেন, তখন ওজন আবার বেশ বেড়ে গিয়েছে।

রসিকচূড়ামণি বিবেকানন্দ তখন প্রায়ই নিজেকে ফ্যাট বা মোটকা মহারাজ বলতেন। আরও কয়েকমাস পরে বিবেকানন্দ যখন প্যারিসে হাজির হলেন তখন তার ওজন হুড়মুড় করে তিরিশ পাউন্ড কমে গিয়েছে। ব্যাপারটা মার্কিনী ভক্তদের সাবধানী নজর এড়ায়নি।

প্যারিস থেকে মিস জোসেফিন ম্যাকলাউড তার বান্ধবী সারা বুলকে লিখছেন, “ওজন কমে যাওয়ায়, স্বামীজিকে বালকের মতন দেখাচ্ছে।”

মার্কিনী ভক্তরা স্বামীজির বিভিন্ন ফটো দেখে আরও কিছু বিশ্লেষণ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় ভোলা ছবিগুলোতে তাকে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর দেখাচ্ছে। “উল্লেখযোগ্যভাবে হ্যাঁন্ডসাম”, এই শব্দটি তার সম্পর্কে ব্যবহার করা হয়েছে।

আমরা জানি বেলুড়মঠে তিনি প্রতি মাসে মস্তক মুণ্ডন করতেন। বেলুড় মঠে মাথা কামাচ্ছেন, যখন নাপিত চুলগুলো তাল পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে, তখন তিনি সহাস্য মন্তব্য করলেন, “ওরে দেখছিস কি! এরপরে বিবেকানন্দর একগোছা চুলের জন্য ওয়ার্লডে ‘ক্ল্যামার’ পড়ে যাবে।”

এ-বিষয়ে আরও আলোচনার আগে, বিবেকানন্দর ওজন ও অবয়ব নিয়ে আরও এক সরল মন্তব্যের আনন্দ উপভোগ করা যেতে পারে। প্রথমবার আমেরিকা থেকে ফিরে স্বামীজি অসুস্থ অবস্থায় কিছুদিন আলমোড়ায় ছিলেন। সেখান থেকে মেরি হেলবয়েস্টারকে তিনি লিখছেন-

“…চিকিৎসকের ব্যবস্থামতো আমাকে যথেষ্ট পরিমাণে সরলোলা দুধ খেতে হয়েছিল, আর তার ফলেই আমি পিছনের চেয়ে সামনের দিকে বেশি এগিয়ে গিয়েছি। যদিও আমি সবসময়ই আগুয়ান- কিন্তু এখনই এতোটা অগ্রগতি চাই না, তাই দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।”

স্বামীজির বিদেশি জীবনীকাররা মোটামুটি একমত যে তাঁর ওজনের ওঠানামা কখনই আয়ত্তে আনা যায়নি, যদিও মাঝে মাঝে তিনি খাওয়া দাওয়া বিপজ্জনকভাবে কমিয়ে দিতেন। তথ্যাভিজ্ঞদের মতে, ঐতিহাসিক শিকাগো বক্তৃতার সময় (১৮৯৩) তার ওজন মোটেই বাড়তির দিকে ছিল না, কিন্তু সম্ভবত তার পরেই ওজন স্বামীজির বাড়তে থাকে।

এর কিছুদিন পরেই মিস্টার হেলের বাড়িতে একটা ঘরে তোলা ছবিতে স্বামীজিকে বেশ মোটাসোটা দেখাচ্ছে, যদিও ক্যামেরা অনেকসময় দৃষ্টিবিভ্রম ঘটিয়ে মোটাকে রোগা এবং রোগাকে মোটা দেখাতে পারে। তবে এই সময় বল্টিমোরের এক সাংবাদিক তাঁর লেখায় ইঙ্গিত করেন, স্বামীজির ওজন ২২৫ পাউন্ড হবে।

কেমন ছিল স্বামীজির গায়ের রঙ? রোমাঁ রোলার বর্ণনা অনুযায়ী অলিভ। মনে হয় উজ্জ্বল গৌর বলতে পশ্চিমীরা যা বোঝেন তা তাকে বলা চলে না। এবিষয়ে স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ একটি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। স্বামীজির দেহের রঙের পরিবর্তন ঘটতো- কোনদিন মনে হত একটু ময়লা, কোনদিন আরও ফরসা, কিন্তু সবসময় তাতে একটু আভা দেখা যেত যাকে সোনালি বলা চলে।

স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ আরও জানিয়েছেন, তার “হস্তদ্বয় যে কোন নারীর হস্তের তুলনায় সুন্দর ছিল।”

বিবেকানন্দের শরীরের রঙ সম্বন্ধে নানা মুনির নানা মত- “কালোও নন প্রচণ্ড ফর্সাও নন”, “অলিভ”, “বেশ চাপা”, “লাইট”, ‘মুখে স্বাভা” ইত্যাদি, যা এতোদিন পরে ঠিকমতন আন্দাজ করা বোধ হয় সম্ভব নয়। তবে স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন তা বেশ নির্ভরযোগ্য।

স্বামীজির মুখের আকার সম্বন্ধে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তোলা বিভিন্ন ফটোগ্রাফ কিছুটা দৃষ্টিবিভ্রম ঘটায়- বোঝা যায় কেন অনেকে তাঁর পরিপুষ্ট গোল মুখের কথা বলেছেন। আবার কারও নজর কেড়ে নিয়েছে তার শক্তিময় চিবুক।

স্বামীজির ঘন চুলের ঐশ্বর্য সম্পর্কে কিছু ধারণা কয়েকটা ছবি থেকে আমরা পাই। কোকড়া নয়, ঢেউ খেলানো বাবরি চুলের অরণ্য। এই ঘন কালো চুলের সামান্য একটু অংশ আচমকা মিস্ জোসেফিন ম্যাকলাউড একবার কেটে নিয়ে তার অস্বস্তির সৃষ্টি করেছিলেন।

সেই চুলের অংশটুকু স্বর্ণালঙ্কারে ঢুকিয়ে মিস্ ম্যাকলাউড় সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখতেন। দেশে ফিরে এসে বেলুড়মঠে মস্তক মুণ্ডনের সময়েও স্বামীজি নিজের চুল নিয়ে রসিকতা করেছেন। অমন সুন্দর চুল যা বিদেশে বক্তৃতাকালে কপাল পেরিয়ে প্রায় চোখের ওপর এসে পড়তো তা স্বদেশে ফিরে এসেই তিনি ফেলে দিলেন।

আমরা জানি বেলুড়মঠে তিনি প্রতি মাসে মস্তক মুণ্ডন করতেন। বেলুড় মঠে মাথা কামাচ্ছেন, যখন নাপিত চুলগুলো তাল পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে, তখন তিনি সহাস্য মন্তব্য করলেন, “ওরে দেখছিস কি! এরপরে বিবেকানন্দর একগোছা চুলের জন্য ওয়ার্লডে ‘ক্ল্যামার’ পড়ে যাবে।”

এই ঘুমের ব্যাপারে কলকাতার শশী ডাক্তারকে (ঘোষ) আলমোড়া থেকে ১৮৯৭ সালে স্বামীজি লিখেছিলেন, “জীবনে কখনও শোবার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘুমুতে পারি না; অন্তত দু’ঘণ্টা এপাশ-ওপাশ করতে হয়। কেবলমাত্র মাদ্রাজ থেকে দার্জিলিং-এর প্রথম মাস পর্যন্ত বালিশে মাথা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম আসত।

নরেন্দ্র-অবয়ব সম্বন্ধে যখন নানা তথ্য একত্রিত করছি তখন বলে রাখি তাঁর ছিল ‘ট্যাপারিং ফিঙ্গার’, বাংলায় মহেন্দ্রনাথ দত্ত যাকে চাপারকলি আঙুল বলেছেন। এই ধরনের আঙুল দ্বিধাশূন্য নিশ্চয়াত্মিক মানসিকতার ইঙ্গিত দেয়। তার নখ ছিল ঈষৎ রক্তবর্ণাভ এবং নখের মাথাটি ছিল ঈষৎ অর্ধচন্দ্রাকার। সংস্কৃতে এই দুর্লভ নখকে নখমণি’ বলে।

মহেন্দ্রনাথতার দাদার পদবিক্ষেপ সম্বন্ধেও ইঙ্গিত রেখে গিয়েছে- অতি দ্রুত বা অতি শ্লথ ছিল না, যেন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন থেকে বিজয়াকাঙ্ক্ষায় অতি দৃঢ় সুনিশ্চিতভাবে ভূপৃষ্ঠে পদবিক্ষেপ করে চলতেন।

বক্তৃতা দেবার সময়ে বিবেকানন্দ ডান হাতের আঙুল প্রথমে সংযত করে হঠাৎ ছড়িয়ে দিতেন। মনে যেমন যেমন ভাব উঠতে “অঙ্গুলি সঞ্চালনও তদনুরূপ হইত।”

অবয়বের যে অংশ নিয়ে দেশে বিদেশে ভক্তদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই তা হলো স্বামীজির চোখ। যাঁরাই তার কাছে এসেছেন তারা এই সম্মোহিনী আঁখিপদ্মের জয়গানে মুখর হয়েছে।

“ভেরি লার্জ অ্যান্ড ব্রিলিয়ান্ট” এই কথাটি বারবার এসে পড়েছে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ও বিভিন্ন স্মৃতিকথায়। আরও কয়েকটি দুর্লভ ইংরিজি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে- “ফ্লোয়িং, গ্রেসফুল, ব্রাইট, রেডিয়ান্ট, ফাইন, ফুল অফ ফ্ল্যাশিং লাইট।”

নিন্দুকরাও প্রকারান্তরে তার চরিত্রহননের ব্যর্থচেষ্টা করে আমেরিকায় গুজব ছড়িয়েছেন- মার্কিনী মহিলারা তার আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে পতঙ্গের মতন ছুটে আসছেন না, তাঁরা আসছেন তার আঁখিপদ্মের চৌম্বকশক্তিতে।

রোমাঁ রোলাঁও স্বামীজির পদ্মপলাশলোচনের রাজকীয় মহিমা বর্ণনার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।”বুদ্ধিতে, ব্যঞ্জনায়, পরিহাসে, করুণায় দৃপ্ত প্রখর ছিল সে চোখ, ভাবাবেগে ছিল তন্ময়, চেতনার গভীরে তা অবলীলায় অবগাহন করতো, রোষে হয়ে উঠতো অগ্নিবর্ষী, সে দৃষ্টির ইন্দ্রজাল থেকে কারও অব্যাহতি ছিল না।”

স্বামীজির চোখের বর্ণনায় ভারতীয়রাও তেমন পিছিয়ে থাকেননি। শুনুন স্বামী নির্লেপানন্দের মন্তব্য- “সে আঁখির তুলনা হয় না। স্বামী সারদানন্দ একদিন মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, সে যে কি চোখ- কি আর বলবো!

…একজন বলেন, তিনি যখন বলরামবাবুর হলঘরে ঘুমিয়ে থাকতেন, দেখেছি, তখনও চোখ সবটা বুজতো না। পাতায় পাতায় কখনও জোড়া লেগে মুড়তো না। শিবনেত্র- সত্য সত্য।”

এই শিবনেত্রের জয়গান বিশ্বভুবনের প্রান্তে প্রান্তে। এই নেত্রবহ্নি যেমন সময়ে অসময়ে সমস্ত মায়ালোককে দগ্ধ করেছে, তেমন মুগ্ধ করেছে। সত্যানুসন্ধানী ভক্তজনকে। কিন্তু এই চোখে যে ঘুম আসতো না সেই বেদনাদায়ক সত্যটুকুর সঙ্গেও আমাদের পরিচয় প্রয়োজন।

এই ঘুমের ব্যাপারে কলকাতার শশী ডাক্তারকে (ঘোষ) আলমোড়া থেকে ১৮৯৭ সালে স্বামীজি লিখেছিলেন, “জীবনে কখনও শোবার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘুমুতে পারি না; অন্তত দু’ঘণ্টা এপাশ-ওপাশ করতে হয়। কেবলমাত্র মাদ্রাজ থেকে দার্জিলিং-এর প্রথম মাস পর্যন্ত বালিশে মাথা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম আসত।

সেই সুলভ নিদ্রার ভাব এখন একেবারে চলে গেছে। আর আমার সেই পুরানো এপাশ ওপাশ করার ধাত এবং রাত্রে আহারের পর. গরম বোধ করার ভাব আবার ফিরে এসেছে।”

১৮৯৮ সালে বলরাম বসুর বাড়িতে বিনিদ্রাবেদনায় জর্জরিত স্বামীজির আরও একটা মর্মস্পর্শী ছবি পাওয়া যায়। সে সময় তাঁর খুবই ইচ্ছা হতো যে একটু ঘুম হোক, শরীরের ক্লান্তি একটু দূর হোক, মস্তিষ্ক একটু বিশ্রাম লাভ করুক।

অথচ স্বামীজি যে চিরকাল বিনিদ্র থাকতেন না তার প্রমাণ তিনি নিজেই রেখে গিয়েছেন।

ছাত্রাবস্থায় কীভাবে রাত জেগে পড়াশোনা করতেন তার চমৎকার বর্ণনা স্বামীজি নিজেই দিয়েছেন- “আমি ঘরের ভিতর বই নিয়ে বসতাম, আর পাশেই রাত্রে গরম চা বা কফি থাকতো; ঘুম পেলেই পায়ে একটি দড়ি বাঁধতাম, তারপর ঘুমে বেহুশ হয়ে পড়লে যেই পায়ের দড়িতে টান পড়তো অমনি জেগে উঠতুম।”

এই বিবেকানন্দই পরবর্তীকালে তাঁর কনিষ্ঠতম সন্ন্যাসীশিষ্য স্বামী অচলানন্দকে করুণভাবে বলেছিলেন, “বেশ, তুই আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারিস? তুই যা চাস তোকে আমি তাই দেব।”

অচলানন্দ আমাদের জানিয়েছেন, “তার তখন নিদ্রা বেশি হতো না। শারীরিক কষ্ট ছিল যথেষ্ট, তিনি আমাকে বললেন, জ্ঞান হওয়ার পর হতে আমি জীবনে কখনও চারঘণ্টার বেশি ঘুমোইনি। ইদানিং তো তার একেবারেই ঘুম হতো না।”

নিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা সম্পর্কে লিখতে গেলেই বালক নরেন্দ্রনাথের নিদ্রাভ্যাস সম্বন্ধে যা প্রচলিত আছে তা মনে করিয়ে দেওয়া মন্দ নয়। তার অভ্যাস ছিল উপুড় হয়ে শোওয়া। বালিশে মাথা রাখলেই তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন না। নিদ্রার জন্য চোখ বন্ধ করলেই তিনি মধ্যে এক জ্যোতির্বিন্দু দেখতে পেতেন।

পরবর্তীকালে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ এই জ্যোতি দেখার কথা শুনে বলেছিলেন, ধ্যানসিদ্ধরা এই রকম জ্যোতি দেখতে পায়। এ বিষয়ে আধুনিক চিকিৎসকদের কোনো মতামত আছে কি না তা জানবার কৌতূহল হয়।

স্বদেশে এবং বিদেশে পরিভ্রমণরত বিবেকানন্দ যে কতবার অসহায়ভাবে কিছুক্ষণের নিদ্রার জন্য অপেক্ষা করছেন নানা চিঠিপত্রে তার উল্লেখ রয়েছে। পুরো বিবরণ দিতে গেলে লেখার আকার বড় বড় হয়ে যায়। যখন কোথাও কোনদিন দুদণ্ডের ঘুম হলো তা নিয়ে স্বামীজির কত না আনন্দ।

আসলে জীবনের কোনদিন কখন তিনি ঘুমোতে সফল হয়েছেন তা তাঁর স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকতো। যেমন মহাপ্রয়াণের আগের বছর মে মাসে (১৯০১) তিনি প্রিয়ভক্ত স্বামী-শিষ্য সংবাদের লেখক শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেছেন, ঢাকায় নাগমশায়ের বাড়িতে যাবার কথা।

“বাড়িখানি কি মনোরম- যেন শান্তি-আশ্রয়। ওখানে গিয়ে পুকুরে সাঁতার কেটে নিয়েছিলুম। তারপর, এসে এমন নিদ্রা দিলুম যে বেলা আড়াইটা। আমার জীবনে যে কয়দিন সুনিদ্রা হয়েছে, নাগ-মহাশয়ের বাড়িতে নিদ্রা তার মধ্যে একদিন।”

ভক্ত নাগ মহাশয়ের সঙ্গে ১৮৯৯ সালের প্রারম্ভে বেলুড় মঠে বিবেকানন্দর দেখা হয়েছিল। স্বামীজি- “কাজ করতে মজবুত শরীর চাই; এই দেখুন, এদেশে এসে অবধি শরীর ভাল নয়; ওদেশে বেশ ছিলুম।”

নাগমশায় উত্তর দিলেন, “শরীর ধারণ করলেই ঠাকুর বলতেন- ঘরের টেক্স দিতে হয়। রোগশোক সেই টেক্স। আপনি যে মোহরের বাক্স; ঐ বাক্সের খুব যত্ন চাই। কে করবে? কে বুঝবে? ঠাকুরই একমাত্র বুঝেছিলেন।”

শরীর খারাপ, কিন্তু শরীরচর্চায় এই সময়েও বিশ্বাস হারাননি বিবেকানন্দ। ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি প্রিয় শিষ্যকে বলছেন, “এখনও রোজ আমি ডামবেল কষি।” দেহ ও মন সমানভাবে চলা যে। বিশেষ প্রয়োজন তা বিবেকানন্দ তার প্রিয়জনদের বারবার বলেছেন।

১৮৯৮ সালে বলরাম বসুর বাড়িতে বিনিদ্রাবেদনায় জর্জরিত স্বামীজির আরও একটা মর্মস্পর্শী ছবি পাওয়া যায়। সে সময় তাঁর খুবই ইচ্ছা হতো যে একটু ঘুম হোক, শরীরের ক্লান্তি একটু দূর হোক, মস্তিষ্ক একটু বিশ্রাম লাভ করুক।

আমরা শুধু জানি, তার পারিবারিক রোগ মধুমেহ বা ডায়াবিটিসের কথা এবং আরও জানি তার জীবিতকালে ডায়াবিটিসের তেমন কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এর ফলে অ্যালোপ্যাথ, হোমিওপ্যাথ, কবিরাজ ছাড়াও বারবার দেশবিদেশের হাতুড়ে ডাক্তারদের দ্বারস্থ হয়েছেন বিবেকানন্দ, নানা আজব পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে তাঁর শরীরের ওপরে।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে, চারদিকে শাঁখ বেজে উঠলো এবং স্ত্রীকণ্ঠের উলুধ্বনি শোনা গেল। “স্বামীজি বলিলেন, ‘ওরে গেরন লেগেছে- আমি ঘুমোই, তুই আমার পা টিপে দে।’ এই বলিয়া একটুকু তন্দ্রা অনুভব করিতে লাগিলেন…গ্রহণে সর্বগ্রাস হইয়া ক্রমে চারিদিকে সন্ধ্যাকালের মতো তমসাচ্ছন্ন হইয়া গেল।

গ্রহণ ছাড়িয়া যাইতে যখন ১৫।২০ মিনিট বাকি আছে, তখন স্বামীজি উঠিয়া…শিষ্যকে পরিহাস করিয়া বলিতে লাগিলেন-

‘লোকে বলে, গেরনের সময় যে যা করে, সে নাকি তাই কোটিগুণে পায়; তাই ভাবলুম মহামায়া এ শরীরে সুনিদ্রা দেননি, যদি এই সময় একটু ঘুমুতে পারি তো এর পর বেশ ঘুম হবে, কিন্তু তা হ’ল না; জোর ১৫ মিনিট ঘুম হয়েছে।”

গেরনে ঘুমিয়ে সত্যিই যে স্বামীজির কিছু লাভ হয়নি তার সাক্ষী শিষ্য শরচ্চন্দ্র নিজেই। কয়েক বছর পরেও (১৯০২) বেলুড় মঠের ছবি আঁকতে আঁকতে তিনি লিখছেন, স্বামীজির ঘুম নেই বললেই চলে। রাত্রি তিনটে থেকে শয্যাত্যাগ করে উঠে বসে থাকেন।

আরও এক রাতের বর্ণনা আমাদের কাছে আছে। স্থান- বলরাম বসুর বাড়ি। সময়: ভোর সাড়ে চারটে। বিনিদ্র স্বামীজি অধৈর্য হয়ে বললেন, খিদে পেয়েছে। ভক্তিময়ী সরোজিনী সেই খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে লুচি, হালুয়া, কি কি ভাজা সেই ভোররাতে তৈরি করে ফেললেন।

স্বামীজি হাসতে হাসতে তুলসী মহারাজকে বললেন, “দেখছিস আমার কেমন শিষ্য?”

অসুস্থ অবস্থায় পরিবেশ যাতে স্বামীজির ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটায় তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অনুরাগী ও শিষ্যদের সে কি ব্যাকুলতা। আলমোড়ায় একসময় (১৮৯৭) যে বাড়িতে ছিলেন সেখান থেকে মেরি হেলবয়েস্টারকে স্বামীজি লিখছেন-

“আমার শরীর খুবই খারাপ …আশা করি খুব শীঘ্রই সেরে উঠবো। …আলমোড়ার কোন ব্যবসায়ীর একটি চমৎকার বাগানে আছি- এর চারদিকে বহুক্রোশ পর্যন্ত পর্বত ও অরণ্য। …রোজ রাত্রে কুকুরগুলিকে বেশ কিছুটা দূরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে, যাতে তাদের চেঁচামেচিতে আমার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।

আহা! ঘুম নিয়ে কি হাহাকার। আলমোড়ার চিঠির কয়েক মাস আগে (১৮৯৬) নিউইয়র্কে বিনিদ্র রজনীতে ক্ষতবিক্ষত বিবেকানন্দ তাঁর ধীরামাতা মিসেস সারা বুলকে লিখেছেন- “আমার শরীর প্রায় ভেঙে পড়েছে। এখানে আসা পর্যন্ত আমি এবছরে একদিনও ভালভাবে ঘুমোইনি…আমার ইচ্ছে হয় মহাসমুদ্রের গভীরে গিয়ে মনের সাধে লম্বা একটা ঘুম দিই।”

প্রায় একই সময়ে বিনিদ্র বিবেকানন্দ একই কথা লিখেছেন মেরি হেলকে- “এবারের শীতে আমি একটা রাত্রিও ঘুমোতে পারিনি।”

পদ্মপলাশলোচনের কথা বলতে গিয়ে আমরা যে-চোখে ঘুম আসতে না তার আলোচনায় চলে গিয়েছিলাম। এই ঘুম না আসার রোগ ইনসোমনিয়া, চিকিৎসা মাঝে মাঝে হয়েছে, কিন্তু রোগী যে কখনও তেমন সুফল লাভ করেননি তা শতবর্ষের দূরত্ব থেকেও আমরা সহজে বলতে পারি।

স্বামীজির রোগজর্জরিত শরীর সম্বন্ধে আমরা নানা কথা নানা জায়গায় পড়ে থাকি, কিন্তু এ-সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা এখনও গড়ে ওঠেনি। সাধারণ পাঠকদের মনে।

আমরা শুধু জানি, তার পারিবারিক রোগ মধুমেহ বা ডায়াবিটিসের কথা এবং আরও জানি তার জীবিতকালে ডায়াবিটিসের তেমন কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এর ফলে অ্যালোপ্যাথ, হোমিওপ্যাথ, কবিরাজ ছাড়াও বারবার দেশবিদেশের হাতুড়ে ডাক্তারদের দ্বারস্থ হয়েছেন বিবেকানন্দ, নানা আজব পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে তাঁর শরীরের ওপরে।

…………………….
অচেনা অজানা বিবেকানন্দ- শংকর।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………….
আরও পড়ুন-
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি এক
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি দুই
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি তিন
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি চার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!