ভবঘুরেকথা
স্বামী বিবেকানন্দ

-শংকর

এইসব চিকিৎসা ব্যবস্থায় ক্লান্ত হয়েই বোধ হয় অন্তিমপর্বে রোগের উপশম সম্পর্কে স্বামীজি বলেছেন (জুন ১৯০১), “উপকার অপকার জানিনে। গুরুভাইদের আজ্ঞাপালন করে যাচ্ছি।”

শিষ্যের মন্তব্য- “দেশী কবিরাজী ঔষধ বোধ হয় আমাদের শরীরের পক্ষে সমধিক উপযোগী।”

স্বামীজির ঐতিহাসিক উত্তর- “আমার মত কিন্তু একজন সায়ান্টিফিক চিকিৎসকের হাতে মরাও ভাল; হাতুড়ে যারা বর্তমান বিজ্ঞানের কিছুই জানে না, কেবল সেকেলে পাঁজিপুঁথির দোহাই দিয়ে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ছে, তারা যদি দু-চারটে রোগী আরাম করেও থাকে, তবু তাদের হাতে আরোগ্যলাভ আশা করা কিছু নয়।”

রোগের আরও খবরাখবর নেওয়ার আগে বিবেকানন্দ-অবয়বের আরও কিছু বর্ণনা যা আমরা মেজভাই মহেন্দ্রনাথ দত্তর স্মৃতি থেকে পাই, তা এইখানে লিপিবদ্ধ করে রাখলে মন্দ হয় না।

স্বামীজির পায়ের তলার সামনেটা ও পিছনটা মাটিতে ঠেকতো, একে খড়ম-পা বলে। তার পা পাতলা, সরু এবং অপেক্ষাকৃত লম্বা। হাতের আঙুল- সরু, লম্বা ও অগ্রভাগ ছুঁচলো। নখ- মুক্তার মত উজ্জ্বল ও কিঞ্চিৎ রক্তাভ। মুখ- গোল ও পুরুষ্টু। ঠোঁট- পাতলা, ইচ্ছামত দৃঢ় করতে পারতেন। নাসিকা- উন্নত- সিঙ্গি নাক। হাত- সুডৌল, সরু ও লম্বা। মাথার পিছন- চ্যাপ্টা, মাথার সামনের দিক এবং ব্রহ্মতালু; উঁচু।

মন্মথনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের আন্দাজ, বিবেকানন্দের উচ্চতা পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি। আরও যা বিবরণ তিনি দিয়েছেন- “বলিষ্ঠ গঠন, চওড়া ছাতি, কিন্তু হাতপা খুবনরম। …তার হাড় চওড়া ছিল- হাতের কব্জি এতখানি বুকও এতখানি। …পায়ের থেকে কোমরের ভাগ দীর্ঘ ছিল। হাতদুটো লম্বা আজানুলম্বিত।”

ডাক্তারদের কাছে লেখা স্বামীজির চিঠি আমাদের হাতে বেশি নেই। এরমধ্যে তার শরীরের দীর্ঘ ইতিহাস দিয়ে শশী ডাক্তারকে আলমোড়া থেকে লেখা (২৯ মে ১৮৯৭) চিঠিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্বামীজির ছেলেবেলায় স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা এই চিঠি থেকে সহজেই করা যায়। “ছেলেবেলায় যখন কুস্তি করতাম, আমার তখন সত্যই বোধ হত যে শরীর থাকা একটা আনন্দের বিষয়। তখন শরীরের প্রতি ক্রিয়াতে আমি শক্তির পরিচয় পেতাম এবং প্রত্যেক পেশীর নড়াচড়াই আনন্দ দিত।”

সেই উৎফুল্লভাব যে আলমোড়ায় কমে গিয়েছে তা ডাক্তারকে জানিয়েছেন বিবেকানন্দ। “তবু আমি নিজেকে বেশ শক্তিমান বোধ করি।” এই চিঠির ক্ষেত্রেই বিবেকানন্দ লিখেছেন মৃত্যুহীন প্রাণের কথা।

“ডাক্তার, আমি যখন আজকাল তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গের সম্মুখে ধ্যানে বসে উপনিষদ থেকে আবৃত্তি করিন তস্য রোগোন জরান মৃত্যু: প্রাপ্তস্য যোগাগ্নিময়ং শরীর’- সেই সময় যদি তুমি আমায় একবার দেখতে!” উপনিষদের এই মন্ত্রটির অর্থ- যে যোগাগ্নিময় দেহ লাভ করেছে, তার রোগ জরা মৃত্যু কিছুই নেই।

“আমার অভিজ্ঞতা দেখে শেখ। অত কষ্ট করে শরীরটাকে মাটি করিস না। আমরা শরীরটাকে বেজায় কষ্ট দিয়েছি। তার ফল হয়েছে কি?- না জীবনের যেটা সবচেয়ে ভাল সময়, সেখানটায় শরীর গেল ভেঙে। আর আজ পর্যন্ত তার ঠেলা সামলাচ্ছি।”

সময়ের সিঁড়ি ধরে এবার একটু পিছিয়ে আসা প্রয়োজন। কমবয়সে নরেন্দ্রনাথের শরীর ও স্বাস্থ্য যে বেশ ভালই ছিল তা বাল্যবয়সের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বুঝতে কষ্ট হয় না। আমরা শুধু একটি দুর্ঘটনার খবর পাই, যার ফলে তাকে চোখের ওপরে একটা কাটা দাগ সারাজীবন ধরে বহন করতে হয়।

আর একটি ইস্কুলের মাস্টারের কাছে অকারণ নিগ্রহ, যার ফলে তার কান দিয়ে বেশ রক্তপাত হয়। এতো রক্ত বেরোয় যে ইস্কুলের ড্রেশ ভিজে গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে এই আঘাতের ফল সুদূরপ্রসারী হয়নি। প্রাণবন্ত নরেন্দ্রনাথ খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যচর্চায় নিজেকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রেখে হৈ-হৈ করে বেড়ে ওঠেন।

প্রথম জীবনের সুস্বাস্থ্যের কথা নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত বিবেকানন্দ পরবর্তীকালে প্রসন্ন মনে স্মরণ করেছেন। মনে রাখতে হবে, সেকালের অস্বাস্থ্যকর কলকাতায় ছিল কলেরা-টাইফয়েডের প্রবল দাপট। বিবেকানন্দ-জননী ভুবনেশ্বরী দেবী তার কনিষ্ঠপুত্র ভূপেন্দ্রনাথকে একবার বলেন, কলকাতায় কলের জল আসবার আগে প্রতি গরমে কলেরা হত, এসময় প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই দু’একজন মারা যেত।

দাহকার্যে সহায়তা করা তরুণ নরেনের প্রিয় কর্তব্য ছিল। মেজভাই মহেন্দ্রনাথ স্মরণ করেছেন, “নরেন তিরিশ পঁয়ত্রিশটা মড়া ফেলেছে… বিকেলে এসে ওই কাজ ছিল, বাবা রাগ করতেন। দারুণ স্বাস্থ্য না থাকলে, এইভাবে শ্মশানযাত্রীর কাজ সম্ভব নয়।”

তবু আদিপর্বে নরেন্দ্রনাথের শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে পারিবারিক সূত্র থেকে। পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পরে বিধ্বস্ত নরেন্দ্রনাথ সারাক্ষণ কঠিন শিরঃপীড়ায় কাবু- যন্ত্রণামুক্তির জন্য তিনি ঘনঘন কর্পূরের ন্যাস নিচ্ছেন। এই শিরঃপীড়া উচ্চ রক্তচাপের আদি লক্ষণ কি না তা এতদিন পরে কে বলতে পারে?

নরেন্দ্রনাথের পিতৃবিয়োগের পর থেকে মহাসমাধি পর্যন্ত প্রায় দু’দশক বিভিন্ন রোগভোগের খবর বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করা যাক। শেষ দিকে প্রিয় শিষ্য স্বামী বিরজানন্দকে মায়াবতীতে স্বামীজি বলেছিলেন-

“আমার অভিজ্ঞতা দেখে শেখ। অত কষ্ট করে শরীরটাকে মাটি করিস না। আমরা শরীরটাকে বেজায় কষ্ট দিয়েছি। তার ফল হয়েছে কি?- না জীবনের যেটা সবচেয়ে ভাল সময়, সেখানটায় শরীর গেল ভেঙে। আর আজ পর্যন্ত তার ঠেলা সামলাচ্ছি।”

যে অসুখটি প্রায় সারাজীবন স্বামীজিকে যথেষ্ট বিব্রত করেছে তার গেরস্ত নাম পেটের অসুখ। এই অসুখের শুরু শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পর বরানগরের সন্ন্যাসজীবনে। এই সময়ে আজীবন সযত্নে লালিত নরেন্দ্রনাথের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন হয় এবং সেই সুযোগে নানা রকমের ব্যাধি তাকে আক্রমণ শুরু করে। কখনও রাজকীয় সুখ এবং কখনও চরম দারিদ্র্য- এই বিরতিহীন ওঠানামা বিবেকানন্দর নজর এড়ায়নি।

কলম্বো থেকে প্রথম প্রবাস সম্পূর্ণ করে মাদ্রাজে ফিরে এলেন বিবেকানন্দ, সেখান থেকে জাহাজে চড়লেন কলকাতার উদ্দেশে। শরীর তখন ভাঙতে শুরু করেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৭ তিনি নিজেই লিখছেন, “আমি এখন মৃতপ্রায়… আমি ক্লান্ত- এতই ক্লান্ত যে যদি বিশ্রাম না পাই, তবে আর ছ’মাসও বাঁচব কি না সন্দেহ।”

বলাবাহুল্য এই সময়েই তার ডায়াবিটিস ধরা পড়ে। স্বামীজির সন্ন্যাসী শিষ্য কৃষ্ণলাল মহারাজের স্মৃতিচিত্র থেকে আমরা জানতে পারি স্বামীজির ডায়াবিটিস সায়েবডাক্তারদের চোখ এড়িয়ে গেলেও প্রথম ধরা পড়ে কলম্বোয়। তখনও ডায়াবিটিসের ইনসুলিন আবিষ্কার হয়নি। ডাক্তারদের পরামর্শ- প্রতিকার চাইলে নিয়মিত খাওয়াদাওয়া এবং গভীর চিন্তা থেকে বিরতি প্রয়োজন।

বিভিন্ন সময়ে স্বামীজি যেসব অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলেন তার একটা তালিকা তৈরি করলে একনজরে এইরকম দাঁড়ায়-

• শিরঃপীড়া
• টনসিল
• সর্দিকাশি
• হাঁপানি
• টাইফয়েড
• ম্যালেরিয়া
• নানাবিধ জ্বর
• লিভার সংক্রান্ত ব্যাধি
• বদহজম ও অন্যান্য পেটের গোলমাল
• উদরী বা পেটে জল হওয়া
• ডায়ারিয়া
• ডিসপেপসিয়া
• পাথুরি
• লাম্বেগো বা কোমরের ব্যথা
• ঘাড়ে ব্যথা।
• ব্রাইটস ডিজিজ
• কিডনির গোলযোগ
• ড্রপসি- শোথ বা পা ফোলা
• অ্যালবুমিনিউরিয়া
• রক্তাক্ত চক্ষু
• একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা
• নিদ্রাহীনতা
• অকালে চুল দাড়ি সাদা হয়ে যাওয়া
• স্নায়ু রোগ- নিউরোসথেনিয়া
• রাত্রে খাবার পর প্রচণ্ড গরম অনুভব করা
• গরম সহ্য করতে না পারা
• অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
• সমুদ্রযাত্রা ব্যাধি বা সি-সিকনেস
• সান স্ট্রোক
• ডায়াবিটিস
• হৃদরোগ।

বিভিন্ন চিঠিপত্রে এবং স্মৃতিকথায় এইসব রোগের যৎসামান্য অথবা বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে এতো শারীরিক যন্ত্রণা নিয়েও তিনি কেমনভাবে প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় এতো অল্পসময়ের মধ্যে এমন সব অবিশ্বাস্য কাজ করে গেলেন যা বহুযুগ ধরে মানুষের মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করবে। যাঁরা সামান্য শারীরিক যন্ত্রণায় ব্যাকুল হয়ে কর্মবিরতির আবেদন জানান, তাঁদের কাছে স্বামীজির শরীর ও ধৈর্য এক দুয়ে রহস্য।

ব্যাধি যত মারাত্মকই হোক, অসামান্য মনোবলের অধিকারী বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন, রোগকে প্রশ্রয় দিলে তার আরদ্ধ কাজগুলো কোনোদিন সম্পূর্ণ হবে না। কিন্তু তাকে নিয়ে প্রিয় সন্ন্যাসীভ্রাতাদের সারাক্ষণের দুশ্চিন্তা।

১৮৯৭ সালে ২০ মে স্বামী ব্রহ্মানন্দকে আলমোড়া থেকে বিবেকানন্দ যা লেখেন তা আমাদের চোখ খুলে দেয়। বুঝতে পারা যায় এই পৃথিবীতে মৃত্যুঞ্জয়ী হতে গেলে কী ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন।

স্বামীজি তার প্রিয় গুরুভ্রাতাকে লিখছেন- “তুমি ভয় পাও কেন? ঝট করে কি দানা মরে? এই তত বাতি জ্বলল, এখনও সারারাত্রি গাওনা আছে। আজকাল মেজাজটাও বড় খিটখিটে নাই, জ্বরভাবগুলো সব ওই লিভার- আমি বেশ দেখছি। আচ্ছা, ওকেও দুরস্ত বানাচ্ছি- ভয় কি?”

দু’মাস পরে স্বামী অখণ্ডানন্দকে স্বামীজি আবার লিখছেন, “আমিও ‘ফের লেগে যা’ আরম্ভ করেছি। শরীর তো যাবেই, কুঁড়েমিতে কেন যায়? মরচে পড়ে মরার চেয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে মরা ঢের ভাল। মরে গেলেও হাড়ে ভেল্কি খেলবে। তার ভাবনা কি?”

যে অসুখটি প্রায় সারাজীবন স্বামীজিকে যথেষ্ট বিব্রত করেছে তার গেরস্ত নাম পেটের অসুখ। এই অসুখের শুরু শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পর বরানগরের সন্ন্যাসজীবনে। এই সময়ে আজীবন সযত্নে লালিত নরেন্দ্রনাথের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন হয় এবং সেই সুযোগে নানা রকমের ব্যাধি তাকে আক্রমণ শুরু করে। কখনও রাজকীয় সুখ এবং কখনও চরম দারিদ্র্য- এই বিরতিহীন ওঠানামা বিবেকানন্দর নজর এড়ায়নি।

দ্বিতীয়বার বিদেশযাত্রার সময় মানসকন্যা নিবেদিতাকে তিনি জাহাজে বলেছিলেন, “আমার মতো মানুষেরা চরমের সমষ্টি। আমি প্রচুতম খেতে পারি, একেবারে না খেয়ে থাকতে পারি; অবিরাম ধূমপান করি, আবার তাতে সম্পূর্ণ বিরত থাকি! ইন্দ্রিয়দমনে আমার এত ক্ষমতা, অথচ ইন্দ্রিয়ানুভূতির মধ্যেও থাকি; নচেৎ দমনের মূল্য কোথায়!”

এই বৈপরীত্য সম্বন্ধে স্বামীজি আরও একবার নিবেদিতাকে চিঠি লিখেছিলেন নিউইয়র্ক থেকে- “এ জাতীয় স্নায়ুপ্রধান শরীর কখনও বা মহাসঙ্গীতসৃষ্টির উপযোগী যন্ত্রস্বরূপ হয়, আবার কখনও বা অন্ধকারে কেঁদে মরে।”

বরানগরে নরেন্দ্রর তৃতীয় অসুখ পেটে। “কিছুই হজম হয় না, অনবরত পেট নামাইতেছে।” স্বামী সারদানন্দ তার বাবার ওষুধের দোকান থেকে এক শিশি ‘Fellows Syrup’ নরেনের দিদিমার বাড়িতে দিয়ে গেলেন। বৈকুণ্ঠ সান্যাল মশায় এনেছিলেন নতুন বাজার থেকে এক হাঁড়ি মাগুরমাছ।

জ্বর ও পেটের গোলমালের ইতিবৃত্ত লিখতে গেলে সব দায়ই বরানগর মঠকে দেওয়া বোধ হয় যুক্তিযুক্ত হবে না।

স্বামী গম্ভীরানন্দ তার যুগনায়ক বিবেকানন্দ বইতে স্পষ্ট বলেছেন, এফ এ পড়ার সময় প্রথম বর্ষের শেষে ছাত্র নরেন্দ্রনাথ “ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হইয়া যথানিয়মে কলেজে আসিতে পারিতেন না; কাজেই নিয়মানুসারে বৎসরে যতদিন উপস্থিত থাকা আবশ্যক, তাহা সম্ভব হইল না এবং যথাকালে এফ এ পরীক্ষার অনুমতিপ্রাপ্তির বিষয়ে গোল বাধার সম্ভাবনা দেখা গেল।”

এর কিছুদিন পরেই ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ প্রিয় নরেনের শরীরের লক্ষণ পরীক্ষা করে বলেছিলেন, “তোর শরীরের সকল স্থানই সুলক্ষণাক্রান্ত, কেবল দোষের মধ্যে নিদ্রা যাইবার কালে নিঃশ্বাসটা কিছু জোরে পড়ে। যোগীরা বলেন, অত জোরে নিশ্বাস পড়িলে অল্পায়ু হয়।”

বরানগরের কঠিন কঠোর দৃশ্যগুলি ভাবীকালের জন্য অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আঁকা রয়েছে। দুর্ভাবনা ও অনাহারের ফলে, ১৮৮৭ সালের গ্রীষ্মের প্রারম্ভে, নরেন্দ্রনাথের এক উৎকট পীড়া হইল। জ্বর-বিকার বড় ভয়ের কারণ হইয়া উঠিল। ভিতরকার বড় ঘরটিতে একটি বিছানায় তাহাকে রাখা হইয়াছে; শুইয়া আছেন।

চন্দ্র ডাক্তার আসিয়া ঔষধ দিয়া যাইতেছেন।…বলরামবাবু নরেন্দ্রনাথের মাতাকে সংবাদ দেওয়ায় তিনি নরেন্দ্রনাথের এক ভ্রাতাকে সঙ্গে লইয়া তথায় উপস্থিত হইলেন। নরেন্দ্রনাথের কিছু জ্ঞান আছে কখনও নিস্তব্ধ- অর্ধ-অজ্ঞান অবস্থায় বলিতেছেন, এখানে কেন স্ত্রীলোক ঢুকিতে দিলে?

আমিই নিয়ম করলুম, আর আমার বেলায়ই নিয়ম রদ হল? বড্ড গায়ের জ্বালা, রাত্রে ব্যামো বৃদ্ধি হইল, নরেন্দ্রনাথের নাড়ীও একটু খারাপ হইল, বাবুরাম মহারাজ আর চুপ করিয়া না থাকিতে পারিয়া উচ্চৈস্বরে কাঁদিয়া উঠিলেন।

নরেন্দ্রনাথ জোর করে…অস্পষ্টস্বরে বলিতে লাগিলেন… “কাঁদিস না, আমি এখন মরব না। তুই ভয় করিসনি। আমায় ঢের কাজ করতে হবে, আমি কাজগুলো যেন চোখে দেখতে পাচ্ছি, মরবার সময় নেই।”

এই বরানগরপর্বেই নরেন্দ্রনাথের ‘গ্রেভেল স্টোন বা পাথুরির ব্যারাম ধরা পড়ে, তিনি কিছুদিন মাতুলালয়ে এসে থাকতে বাধ্য হলেন। চিকিৎসা করতে এলেন ডাঃ রাজেন্দ্রলাল দত্ত। অবিশ্বাস্য হলেও জেনে রাখুন এই। বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ রোগী দেখতে যাবার সময় উপহার হিসেবে কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যেতেন। নরেনের জন্যে তিনি নতুন বাজার থেকে মস্ত একটা বেল নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় নরেন্দ্রনাথ যন্ত্রণামুক্ত হন।

বরানগরে নরেন্দ্রর তৃতীয় অসুখ পেটে। “কিছুই হজম হয় না, অনবরত পেট নামাইতেছে।” স্বামী সারদানন্দ তার বাবার ওষুধের দোকান থেকে এক শিশি ‘Fellows Syrup’ নরেনের দিদিমার বাড়িতে দিয়ে গেলেন। বৈকুণ্ঠ সান্যাল মশায় এনেছিলেন নতুন বাজার থেকে এক হাঁড়ি মাগুরমাছ।

“গুরুদেবের উক্ত গ্রামে যাইবার পথে অত্যন্ত জ্বর হইল ও তৎপরে কলেরার ন্যায় ভেদবমি হইয়াছিল। তিন চারিদিনের পর পুনরায় জ্বর হইয়াছে; এক্ষণে শরীর এ প্রকার দুর্বল যে দুই কদম চলিবার সামর্থ্যও নাই…আমার শরীর এপথের নিতান্ত অনুপযুক্ত।”

১৮৮৭ সালের মে-জুন মাসে নরেন্দ্রনাথের আর এক রোগের খবর পাওয়া যাচ্ছেটাইফয়েড ব্যামো।

মহেন্দ্রনাথ দত্ত বরানগরে নরেনের উদরাময় রোগের কারণ হিসেবে বলেছেন, তার মাংস খাওয়ার অভ্যাস ছিল, কিন্তু সাধু হয়ে মুষ্টিভিক্ষার অন্ন এবং অনিশ্চিত অন্ন আহারে শরীর ভেঙে পড়ে।

ভক্ত বলরাম বসু এই সময় নরেনকে দু-একদিন নিজের বাড়িতে এনে রাখেন। রোগীর পথ্য মোটেই পছন্দ নয় নরেন্দ্রনাথের, তিনি ভাবিনী নামে কাজের মহিলাটিকে গোপনে রুটি ও কুমড়োর ছক্কা তৈরি করতে অনুরোধ করেন। “আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভক্তিমতী ভাবিনীর রুটি খাইয়া তাহার উদরাময় রোগ তখনকার মত ভাল হইয়াছিল।”

এই পর্বের আরও দুটি অসুস্থতা সংবাদ আমরা পাই নরেন্দ্রনাথের রচনা থেকে। গিরিশচন্দ্র ঘোষের ভাই অতুলবাবুর বাড়িতে বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ ডাক্তার সালজার এসেছিলেন।

“নরেন্দ্রনাথের তখন গলার আলজিভ ফুলিয়াছিল এবং এই ব্যাধিটি তাহার আত্মীয়দের সকলেরই আছে।…ডাক্তার সালজার বলিলেন, ‘ঔষধের কোন আবশ্যক নাই, ঠাণ্ডা জল দিয়া কুলকুচি করিবে এবং গলায় ঠাণ্ডা জল লাগাইবে।

নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে শাস্ত্র আলোচনায় ডাক্তার এতোই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে কাজকর্ম ভুলে তিন-চারঘণ্টা সময় ব্যয় করেছিলেন। বলাবাহুল্য টনসিলসমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে পরিব্রাজক জীবনে উত্তর ভারতের বিখ্যাত ডাক্তার দিল্লির হেমচন্দ্র সেনকে একই বিষয়ে চিকিৎসা করতে হয়েছিল।

বরাহনগর-পর্বে পেটের অসুখের সমস্যা যে চিন্তার কারণ হয়েছিল তার প্রমাণ, কেউ কেউ রোগ আয়ত্তে আনবার জন্য নরেন্দ্রনাথকে অল্প পরিমাণে অফিম খেতে বললো।

“তাহাতে শরীরের বড় যন্ত্রণা হয়। অতুলবাবু আফিমের কথা শুনিয়া অত্যন্ত চঞ্চল হইয়া পড়িলেন এবং কয়েকদিন ধরিয়া বলিতে লাগিলেন, এরা কি কচ্ছে, নরেন্দ্রনাথকে আফিম খাওয়ান শেখাচ্ছে? এমন তীক্ষ্ণবুদ্ধি লোকটাকে নষ্ট করবে।”

পত্রাবলীর প্রথম দিকে স্বামীজি তার বিভিন্ন চিঠিতে যেসব শারীরিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে জ্বর ও পেটের গোলমালই প্রধান।

নতুন একটি উপসর্গ কোমরের ব্যথা। ১৮৮৯-এর গোড়ায় বরাহনগর থেকে বারাণসীতে প্রমাদাস মিত্রের কাছে লেখা চিঠি থেকে আমরা কামারপুকুর যাবার পথে বিবেকানন্দর অসুস্থতার ইঙ্গিত পাই।

“গুরুদেবের উক্ত গ্রামে যাইবার পথে অত্যন্ত জ্বর হইল ও তৎপরে কলেরার ন্যায় ভেদবমি হইয়াছিল। তিন চারিদিনের পর পুনরায় জ্বর হইয়াছে; এক্ষণে শরীর এ প্রকার দুর্বল যে দুই কদম চলিবার সামর্থ্যও নাই…আমার শরীর এপথের নিতান্ত অনুপযুক্ত।”

স্বামীজি বললেন, “শরীরটা ভগ্ন, বড় কষ্ট পাচ্ছি।” কালিদাসবাবুর প্রশ্নের উত্তরে স্বামীজি আরও বললেন, “কি ব্যারাম তা বলতে পারি না। প্যারিসে ও আমেরিকায় অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, তারা রোগ নির্ণয় করতে পারেন নি, ব্যাধিরও প্রতিকার বা উপশম করতে পারেননি।”

প্রমদাদাসবাবুকে লেখা পরের চিঠিতে (মার্চ ১৮৮৯) জানা যাচ্ছে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা চলছে, কিন্তু “শরীর এক্ষণে অত্যন্ত অসুস্থ, মধ্যে মধ্যে জ্বর হয়, কিন্তু প্লীহাদি কোন উপসর্গ নাই।”

কয়েকমাস পরে (আগস্ট ১৮৮৯) প্রমদাবাবুকে স্বামীজি আবার চিঠি লিখলেন…”পুনরায় জ্বর হওয়ায় উত্তরদানে অসমর্থ ছিলাম…মধ্যে মাস দেড়েক ভাল ছিলাম, কিন্তু পুনরায় ১০/১২ দিন জ্বর হইয়াছিল, এক্ষণে ভাল আছি।” চারমাস পরে (ডিসেম্বর ১৮৮৯) বৈদ্যনাথ থেকে চিঠি: “শরীর বড় ভাল নহে- বোধহয় লৌহাধিক্যের জন্য।”

পরিব্রাজকরূপে গাজীপুরে এসে পরের বছরের জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্যের ভাল রিপোের্ট। “…যে কয়টি স্থান দেখিয়া আসিয়াছি, তন্মধ্যে এইটি স্বাস্থ্যকর। বৈদ্যনাথের জল বড় খারাপ, হজম হয় না…কাশীতে যে ক’দিন ছিলাম দিনরাত জ্বর হইয়া থাকিত- এত ম্যালেরিয়া।”

কিন্তু পরের মাসেই (ফেব্রুয়ারি ১৮৯০) স্বামীজির নতুন শারীরিক উপসর্গ। “লাম্বেগো (কোমরের ব্যথা) বড়ই ভোগাইতেছে, নহিলে ইতিপূর্বেই যাইবার চেষ্টা দেখিতাম।”

এপ্রিল-এর শুরুতেই (১৮৯০) পরিস্থিতি যে ভাল নয় তার ইঙ্গিত গাজীপুর থেকে অভেদানন্দকে লেখা স্বামীজির চিঠিতে- ‘কোমরের বেদনাটা কিছুতেই সারে নাক্যাডাভারাস (জঘন্য)।”

মে মাসে স্বামীজি বরানগরে ফিরে এসেছেন। কাশীতে প্রমাদাসবাবুকে চিঠি, “পুনরায় জ্বর হওয়ায় আপনাকে পত্র লিখিতে পারি নাই।”

এই প্রমদাদাস মিত্র ছিলেন স্বামীজির খুব কাছের লোক। স্বামীজির পারিবারিক অবস্থার কথা জেনে তিনি সবিনয়ে সামান্য অর্থ সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।

স্বামীজির উত্তর- “আপনি ২০ টাকার এককেতা নোট পাঠাইয়াছিলেন। আপনি অতি মহৎ; কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, মহাশয়ের প্রথমোদ্দেশ্য পালনে আমার মাতা ভ্রাতাদির সাংসারিক অহংকার প্রতিবন্ধক হইল; কিন্তু দ্বিতীয় উদ্দেশ্য আমি আমার কাশী যাইবার জন্য ব্যবহার করিয়া চরিতার্থ হইব।”

বহু বছর পরে শেষবার কাশীধাম পরিদর্শনের সময় প্রমদাদাস মিত্রর পুত্র কালিদাস মিত্র এসেছিলেন বিবেকানন্দকে দেখতে। সেই সাক্ষাৎকারটি মর্মস্পর্শী। স্বামীজি বেশ অসুস্থ, ডায়াবিটিসে কষ্ট পাচ্ছেন। তার গায়ে একটা সোয়েটার ও পায়ে একজোড়া গরম মোজা। তিনি সামনের তাকিয়ায় হাত রেখে বাঁকাভাবে বসে আছেন এবং অতি কষ্টে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।

স্বামীজি বললেন, “শরীরটা ভগ্ন, বড় কষ্ট পাচ্ছি।” কালিদাসবাবুর প্রশ্নের উত্তরে স্বামীজি আরও বললেন, “কি ব্যারাম তা বলতে পারি না। প্যারিসে ও আমেরিকায় অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, তারা রোগ নির্ণয় করতে পারেন নি, ব্যাধিরও প্রতিকার বা উপশম করতে পারেননি।”

স্বামীজি যখন জ্বর ও ডিসপেপসিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে প্রবলবিক্রমে নিজের অসম্পূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন তখন একবার রসিকতা করেছিলেন-

“আমার অধিকাংশ রোগ পেটে। পেটের রোগগ্রস্ত লোকরা কি প্রায় নিরুৎসাহ ও বৈরাগ্যবান হয়?” সন্দেহটা যে সব সময় সত্য নয় তার চলমান প্রমাণ তিনি নিজেই। শরীর, বিশেষ করে পেটকে নো তোয়াক্কা করেই তিনি টোটো করে সমস্ত ভারত চষে বেড়িয়েছে।

পরিব্রাজক স্বামীজির পরবর্তী রোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে হৃষীকেশে। ওই জায়গাটি তখন ছিল ম্যালেরিয়ার অবাধ বিচরণ ভূমি। কাছাকাছি কোনো ডাক্তারও ছিলনা। স্বামীজি জ্বরে পড়লেন এবংযথাসময়ে তাবিকারে পরিণত হয়। চিকিৎসার অভাবে জীবনসংশয়।

আরও আশ্চর্য ব্যাপার যে মানুষ পেটের রোগকে কিছুতেই আয়ত্তে আনতে পারছেন না এবং শরীরের এই অবস্থা মনে রেখে খেতড়ির মহারাজা যাঁকে আমেরিকা যাবার সময় উচ্চ শ্রেণীর টিকিট কিনে দিলেন, তিনিই জাহাজ থেকে খেতড়িকে চিঠি লিখেছিলেন-

“আগে দিনে লোটা হাতে করে ২৫ বার পায়খানা যেতে হত, কিন্তু জাহাজে আসা অবধি পেটটা বেশ ভাল হয়ে গেছে, অতবার আর পায়খানায় যেতে হয় না।” প্রসঙ্গত বলে রাখা যাক, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণেরও পেটের ব্যারাম ছিল, ভুগে ভুগে একসময় দু’খানা হাড় হয়ে গিয়েছিলেন।

জাতীয় স্বাস্থ্যের ওপর ডিসপেপসিয়া রোগের প্রতিক্রিয়া নিয়ে স্বামীজির বিরামহীন ভাবনাচিন্তা ছিল।

শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন পূর্ববঙ্গের মানুষ। তাঁকে স্বামীজি বলেছিলেন, “শুনেছি, পূর্ববাংলার পাড়াগেঁয়ে লোকে অম্বলের ব্যারাম কাকে বলে তা বুঝতেই পারে না।” শিষ্য- “আজ্ঞে হ্যাঁ, আমাদের দেশে অম্বলের ব্যারাম বলিয়া কোন ব্যারাম নাই। এদেশে এসে এই ব্যারামের নাম শুনিয়াছি। দেশে দু’বেলাই মাছ ভাত খাইয়া থাকি।”

স্বামীজি; “তা খুব খাবি। ঘাসপাতা খেয়ে যত পেটরোগা বাবাজীর দলে দেশ ছেয়ে ফেলেছে।…ওসব মহাতমোগুণের…। তমোগুণের লক্ষণ- হচ্ছে আলস্য, জড়তা, মোহ, নিদ্রা এইসব।”

আর একবার একটি রোগা ছেলেকে প্রশ্ন করে স্বামীজি জানলেন সে ক্রনিক ডিসপেপসিয়ায় ভুগছে। স্বামীজির মন্তব্য- “আমাদের বাংলা দেশটা বড় সেন্টিমেন্টাল কিনা, তাই এখানে এত ডিসপেপসিয়া।”

মার্কিন মুলুক থেকে ফেরার পরে আবার যে পেটের রোগ ফিরে এসেছিল তার যথেষ্ট ইঙ্গিত স্বামীজির বিভিন্ন চিঠিতে রয়েছে। একবার আলমোড়া থেকে (মে ১৮৯৮) স্বামী ব্রহ্মানন্দকে তিনি লিখেছিলেন, “আমার শরীর অপেক্ষাকৃত অনেক ভাল, কিন্তু ডিসপেপসিয়া যায় নাই এবং পুনর্বার অনিদ্রা আসিয়াছে। তুমি যদি কবিরাজী একটা ভাল ডিসপেপসিয়ার ওষুধ পাঠাও তত ভাল হয়।”

পরিব্রাজক জীবনের অন্যান্য অসুখবিসুখগুলোর কথা এবার ঝটপট সেরে নেওয়া যেতে পারে।

কামারপুকুরে যাবার পথে স্বামীজির জ্বর ও ভেদবমির কথা আমরা জানি। ফিরে এসে বরানগরে তার প্রায়ই জ্বর আসত। তখন শিমুলতলায় যান, সেখানে গ্রীষ্মের আতিশয্যে উদরাময় হয়।

এরপরে ১৮৯০ সালে স্বামীজি গাজীপুরে যান পওহারী বাবার সন্ধানে। ইনি থাকতেন গঙ্গার ধারে এক দীর্ঘ সুড়ঙ্গের মধ্যে, আহার করতেন একমুঠো নিমপাতা অথবা গোটা কয়েক লঙ্কা। এইসময় দুমাস ধরে স্বামীজি কোমরের ব্যথায় ভোগেন। একই সঙ্গে তিনি যে পেটের অসুখে কষ্ট পাচ্ছেন তা কারও অজানানয়।ভিক্ষালব্ধ খাদ্য তাঁর বোধহয় সহ্য হতোনা। তবে বাসস্থানে প্রচুর লেবু গাছ থাকায় তিনি যথেষ্ট লেবু খেতেন।

আলমোড়া থেকে বদরীনারায়ণের পথে, সলড়কাড় চটিতে স্বামীজি ও তার সহযাত্রী অখণ্ডানন্দ একই সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীজির জ্বর এবং অখণ্ডানন্দের কাশি। সেবার তার যাত্রাসঙ্গী ছিলেন সারদানন্দ অখণ্ডানন্দ, কৃপানন্দ ও একজন মালবাহক।

পরিব্রাজক স্বামীজির পরবর্তী রোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে হৃষীকেশে। ওই জায়গাটি তখন ছিল ম্যালেরিয়ার অবাধ বিচরণ ভূমি। কাছাকাছি কোনো ডাক্তারও ছিলনা। স্বামীজি জ্বরে পড়লেন এবংযথাসময়ে তাবিকারে পরিণত হয়। চিকিৎসার অভাবে জীবনসংশয়।

…………………….
অচেনা অজানা বিবেকানন্দ- শংকর।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………….
আরও পড়ুন-
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি এক
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি দুই
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি তিন
সন্ন্যাসীর শরীর : কিস্তি চার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!