শ্রীযুতের জীবনী
এই মহাত্মার মাত্র সপ্তম বর্ষ বয়সের সময়ে পিতৃহীন হয়েন এবং ইহার পিতা ইহাকে এই অল্প বয়সেই সত্য ধর্ম্ম প্রদান বন্দোবস্ত ও ভারার্পন করিয়াছিলেন। কিন্তু সে সময় একমাত্র ফকির ধর্ম্ম ব্যতীত তাহার অন্য কোন ক্রিয়ারই উপলব্ধি হয় নাই।
যখন তাহার একদশ বয়:ত্রম সেইকালে একনিশিতে স্বপ্নযোগে তিনি বহুলীলা সন্দর্শন করেন। অনন্তর ত্রয়োদশবর্ষ বয়:ক্রমের সময় ইহার সংসারধর্ম্ম হয় ও ইহার পর বৎসর অর্থাৎ চতুরদশ বৎসর বয়সে পিতৃপ্রদত্ত সত্য ধর্ম্মে ইহার অবলম্ব হইয়াছিল।
ইহার কিছুদিন পরে শ্রীযুত একদিন গোপীনাথের মহোৎসব দর্শন মানষে গমন করেন। তথায় পৌঁছিয়াই বহু মহৎ সমাগম দেখিয়া তাহার চিত্ত উদাস হইল-
“একদিন অগ্রদ্বীপের মহোৎসবে দেখতে পেলাম একা,
আখড়াধারী কত পুরুষ নারী, হয় না লেখা জোখা।
হলো দেখতে গিয়ে বারেক চেয়ে আপনাতে ভুল,
বলবো কি ভুল হয়ে দেখি, আজ বুঝি বাধলো আরস্থুল
যা হারিয়ে ছিলামবর্তে গেলাম দেখতে পেলাম দপর্ণে।।”
(প্রমাণ ভবের গীত)
আলেকস্বাঁ নামে এক মহাত্মা এই স্থানে তাঁহাকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। তিনিও তাঁহাকে পরিচয় দেন। তাহাতে সেই মহাত্মা শ্রীযুতকে কহেন, দেখিতেছি ঈশ্বরের চক্রে পতিত হইয়াছ। উহাতে সিদ্ধ হইলে মোক্ষপ্রাপ্তি। ভবসংসার পার হইতে পারিবে না কেবল আসা যাওয়া মাত্র।
এখনও তোমার বিকার ঘোচে নাই। তোমার পূর্ব্বপুরুষেরা অষ্টসিদ্ধির মাধ্যমে স্বর্গবাসী হইলেন। ভোগগুনে আবার কিন্তু জন্মগ্রহণ করিতে হইবে। আলেকস্বার এই কথাতেই তার চৈতন্যের উদয়। আলেকস্বার সহিত তার অনেক বিচার হইয়াছিল। তিনি এই মহাত্মাকে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়ের কথা জিজ্ঞাসা করেন।
কিন্তু ভোগপূর্ণে আবার তাহাকে ইহজগতে জন্মগ্রহণ করিতে হইবে। অতএব তিনি তদবধি কামনাকে হৃদয় হইতে এককালে দূর করিয়া সম্পূর্ণ নিষ্কাম হওত নিষ্কাম ভাবে নিজ ধর্ম্ম যাজনা করিতে থাকিলেন। এইরূপে সত্যধর্ম্ম যাহাতে সকলে গ্রহণ করিতে পারেন ও সেই ধর্ম্মের প্রচার যাহাতে অবাধে হইতে পারে, বিশেষত কোনরূপ গরল গরজ ভবিষ্যতে না উঠে, সে বিষয়ে তিনি বহু চেষ্টা ও যত্ন করেন।
তাহাতে মহাত্মা তাহাকে এক আপন ভাবেব লোকের নিকটে দেখাইয়া দিলেন। সেই লোকটির নাম ঠাকুর মনি। তিনিই শ্রীযুতের জ্ঞান চক্ষু প্রদান করেন। তাহার নিকট হইতে তিনি যখন বাটী অভিমুখে আসিতেছেন পথিমধ্যে একআম্র বৃক্ষের তলে এক স্বর্ণকান্তি বসিয়া আছেন দেখিতে পাইলেন। তাঁহাকে দেখিবা মাত্রই শ্রীযুতের হৃদয় কম্পিত হইল এবং তিনি করজোড়ে সেই মহাত্মার নিকট দণ্ডায়মান হইলেন।
মহাত্মার এই সময়ে তাঁহার প্রতি বিলক্ষণ শক্তির সঞ্চার করাাইয়াছিলেন। এই কৃপাতে এক পাগলও তাঁহাকে কৃপা করেন এবং তিনি মার্ধুয্য সাধ্য সাধন করিতে করিতে ক্রমে নিষ্কাম ধর্ম্মপ্রাপ্ত হয়েন। পূর্বাপর সমুদয়ই ক্রমে ক্রমে তাহার দৃষ্ট হতে থাকে।
আত্মতত্ত্ব ঈশ্বরতত্ত্ব ও মনুষ্যতত্ত্ব এতদসমূহ একে একে গোচর হইল। তিনি এইবার বিলক্ষণ বুঝিতে পারিলেন যে প্রকৃতি ভিন্ন মাধুর্য্যভাব কোন ক্রমেই প্রাপ্ত হওয়া যায় না। পাগল যে সময়ে তাহাকে কৃপা করিয়াছিলেন সেই সময় যাবতীয় আউলিয়া পূর্বফকির আসিয়া মিলিত হইয়াছিল।
তাঁহার পূর্বধর্ম্ম যদিও আশ্রয় হইয়াছিল কিন্তু তাহার আচার-বিচার সম্পূর্ণ পৃথক রাখিয়া তিনি নিজ ধর্মেরই যাজনা করিতে লাগিলেন। তাঁহার পিতৃধর্ম্ম ঐশ্বর্য্য মুক্ত তাহা শিরোপরি রক্ষাপূর্ব্বক লোকরঞ্জনের নিমিত্তে প্রকাশ রাখিলেন।
অর্থাৎ তাহার পিতা রামশরণ পাল মহাশয় তাহাকে যে সত্য ধর্ম্মে দীক্ষিত করেন সে ধর্ম্ম তিনি আশ্রয় করিয়াছিলেন। কিন্তু আলেকস্বা প্রভৃতি মহাত্মাগণ তাহাকে যে দিব্য জ্ঞান দিয়াছিলেন তাহাতে তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন, যে পথে তিনি অক্ষুণে চালিত হইতেছেন, সেই পথে যদি এইভাবে আরও অধিক গমন করেন তাহলে কামনা থাকার কারণে ভবিষ্যতে তাঁহার স্বর্গপ্রাপ্তি বা মোক্ষ হইতে পারিবে।
কিন্তু ভোগপূর্ণে আবার তাহাকে ইহজগতে জন্মগ্রহণ করিতে হইবে। অতএব তিনি তদবধি কামনাকে হৃদয় হইতে এককালে দূর করিয়া সম্পূর্ণ নিষ্কাম হওত নিষ্কাম ভাবে নিজ ধর্ম্ম যাজনা করিতে থাকিলেন। এইরূপে সত্যধর্ম্ম যাহাতে সকলে গ্রহণ করিতে পারেন ও সেই ধর্ম্মের প্রচার যাহাতে অবাধে হইতে পারে, বিশেষত কোনরূপ গরল গরজ ভবিষ্যতে না উঠে, সে বিষয়ে তিনি বহু চেষ্টা ও যত্ন করেন।
সেই প্রসবিনী সেই শিশুটি সতীমার চরণে সমর্পণ করিয়া চলিয়া যান এবং যাওয়া কালে বলেন মা ও শিশু তোমাকে দিয়ে গেলাম। সেই হতে বাঁকা চাঁদ সতীমায়ের পালিত পুত্র। সতীমার দুইটি গাভী ছিল। মাতৃ আদেশে বাঁকা সেই গাভী দুইটির রক্ষণাবেক্ষণ করিত।
মনোমধ্যে অন্য যা কিছু এতদ্ সমস্তই মিথ্যা। এই মাধুর্য্য কৃপা সঞ্চারে তাঁহার যাবতীয় গীতাদির উদয়। তিনি সর্বসাধারণেল আনন্দের নিমিত্তে এই গীত সকল রচনা করেন।
গোস্বামীগণ যে প্রকার নামগান করিয়া ভজন করেন শ্রীযুত সেই প্রকারে সেই পথালম্বী হইয়া কৃষ্ণলীলা, গৌরলীলা দানমান বিরহ ব্রহ্মতত্ত্ব মাধুর্য্য নির্গুণ মনুষ্যতত্ত্ব প্রকাশ করেন। তাহার পূর্বে বন্দোবস্তের গীতগুলিতে দুই কথার ভাবে যে কিছু স্রোত আছে সেজন্য ও মাখামাখির জন্য তাহা শীঘ্র ভেদ হয় না।
ইহার পিতা মহাশয় অর্থাৎ কর্ত্তা মহাশয় ইহার নাম রাখেন শশীলাল, কিন্তু ইহা দুলাল ও শ্রীযুত নামেও পরিচিত। সাধ্যসাধনে সাধু আলেক মহাশয় দুলাল বলিয়া নাম রাখেন। গীতাদিতে ইহার বিহিত যত বিস্তার আছ্ কাহার কাহার মতে লালশশী দুলাল চাঁদেরই অপভ্রংশ। দুলাল (দু + লাল + চাঁদ + শশী) ইহার চারি সংসার এবং সর্বসমেত পাঁচটি সন্তান – তাহা পরে কহিব।
ভাবী জানে ভাব, কামী জানে কাম এবং প্রেমী জানে প্রেম ইহার পূর্ব্ব ধর্ম্ম যাহা প্রচার হয় তাহা গৃহস্থলোকের পক্ষে এক প্রকার ভালো, যদি চলিতে পারে, নচেৎ মন্দের ত্রুটি নাই। একদিকে ব্রহ্মার সৃষ্টি আর একদিকে প্রেম ব্রহ্মজ্ঞান এইমাত্র, এবং এই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করিতে যে পারে সেই প্রকৃত মনুষ্য।
এইরূপে কিছুকাল অতুল আনন্দের সঞ্চার করিয়া শ্রীযুত মহাশয় সন ১২৬৯ সালে চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে বারুনী যোগে তাঁহার মাতা ঠাকুরাণীনকে দু:খিনী করিয়া ইহলীলা সম্বরণ করেন।
ইহার লীলা সম্বরণের পরে কর্ত্তামাতা বহুকাল বর্তমান ছিলেন। অতি অল্পকাল হইল, তিনিও ইচ্ছাপূর্ব্বক দেহরক্ষা করিয়াছেন। জন্ম- ১১৮২ সালে বাংলা আষাঢ় মাসে, মৃত্যু – ১২৬৯ সালে চৈত্র মাস।
বাঁকা নামক এক ব্যক্তি কর্ত্তামায়ের আজ্ঞাকারী ভক্ত ছিলেন। ইহার পূর্ববাস কাঁঠাল বেড়িয়া গ্রামে ছিল। যতদূর সম্ভব জানা যায় যে এক গর্ভবতী মহিলা পুত্র সন্তান প্রসব করিলে সেটি একটি মাংসপিণ্ড মত অস্থিহীন অলাবুর আকৃতি-মনুষ্যের ন্যায় বটে।
সেই প্রসবিনী সেই শিশুটি সতীমার চরণে সমর্পণ করিয়া চলিয়া যান এবং যাওয়া কালে বলেন মা ও শিশু তোমাকে দিয়ে গেলাম। সেই হতে বাঁকা চাঁদ সতীমায়ের পালিত পুত্র। সতীমার দুইটি গাভী ছিল। মাতৃ আদেশে বাঁকা সেই গাভী দুইটির রক্ষণাবেক্ষণ করিত।
(আদি বৃত্তান্ত সমাপ্ত)
……………….
কর্তাভজন ধর্মের আদিবৃত্তান্ত ও আত্মদর্শন
সম্পাদনা: গিরীন্দ্র নাথ গায়েন।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………..
আরও পড়ুন-
কর্তাভজা সত্যধর্মের ৩০ ধারা
রামশরণ ও সতীমার দীক্ষাগ্রহণ
সতী মা
কর্তাভজা সত্যধর্ম
কর্তাভজার দশ আজ্ঞা
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব
ডালিম তলার মাহাত্ম্য
বাইশ ফকিরের নাম
কর্তা
দুলালচাঁদ
কর্তাভজা সত্যধর্মের পাঁচ স্তম্ভ
সাধন-ভজন ও তার রীতি নীতি
ভাবেরগীত এর মাহাত্ম্য
কর্তাভজা সত্যধর্মের আদর্শ ও উদ্দেশ্য
শ্রীযুতের জীবনী