ভবঘুরেকথা
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব

শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ষোল

কিসে আমি খুশী হই

একটি যুবক আশীর্ব্বাদ প্রার্থনা করিল। লাজবিনম্র মৃদুকণ্ঠে বলিল,-ঠাকুর, আপনাকে যেন আমি খুশী কত্তে পারি।
শ্রী শ্রী বাবামণি জিজ্ঞাসা করিলেন,-তুমি কে হে? তোমাকে ত’ আগে দেখেছি ব’লে মনে হয় না। তুমি আমার পরিচয় পেলে কি করে?

যুবকটী বলিল,-আমার বাড়ী এখান থেকে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ মাইল দূরে পল্লীগ্রামে। সহরে একটা কাজে এসেছিলাম। শুন্ লাম, কার নাকি বক্তৃতা হবে। সভাস্থলে তৃণাসনে বসে গেলাম। আপনার বক্তৃতা শুনে মনে বড় উৎসাহ জাগল। ভাবলাম, মহাপুরুষের আশীর্ব্বাদ নিয়ে যাই।

শ্রীশ্রীবাবামণি হাসিয়া বলিলেন,-

আমাকে খুশী করা ত? শিব ঠাকুরকে যেমন অল্পে খুশী করা যায় ব’লে প্রবাদ আছে, আমার সম্পর্কেও তেমন জানবে। তুমি যদি সদ্ ভাবে চ’লে নিশ্চিন্তে নিরুদ্বেগে দুবেলা পেট ভ’রে আহার কত্তে পার, তা হ’লেই আমি খুশী। তোমার ঐ পবিত্র অন্ন থেকে এক মুঠি তুলে নিয়ে যদি তোমার গরীব প্রতিবেশীকে দিতে পার, তাহ’লে আমি আরও খুশী।

তোমার পরিচিত প্রত্যেকটী লোকের প্রাণে যদি সদুপায়ে জীবিকার্জ্জনের এবং সাধ্যমত কিছু কিছু পরার্থে নিয়োজন করার আগ্রহ জন্মাতে পার, তবে তিন জগতে আমার মত খুশী আর কেউ নেই, জান্ বে। নিজে পেটটা ভরে খাওয়া আর দু’দশ জনকে খাওয়ান, একটা স্থূল খুশীর কথা।

নিজে নিঃস্বার্থ হ’য়ে চলবার মত জ্ঞানার্জ্জন করা এবং অন্যকে সেরূপ জ্ঞানে বিভূষিত করা, তার চেয়েও বড় কথা। নিজে সর্ব্বজীবের সুখধ্যানে নিমজ্জিত হ’য়ে যাওয়া এবং অন্যকেও তেমনটী হ’তে সহায়তা করা আর পরসুখধ্যানী মনটী নিয়ে ঝড়ের বেগে নিরলস কর্ম্ম ক’রে যাওয়া সব চেয়ে বড় কথা। এ কাজ যে কত্তে পারে, সে-ই আমাকে খুশী করে।

অখণ্ড-সংহিতা ষোড়শ খণ্ড

সর্ব্বত্রই ওঙ্কারেরই উপাসনা হইতেছে

১০ই ফাল্গুন প্রাতে ৮ ঘটিকায় শ্রীশ্রীবাবামণির পরিচালনে মণিঅন্ধের সমবেত উপাসনা অনুষ্ঠিত হইল। আজও সর্ব্বজনীন উপাসনারই একটী দিন। উপাসনা চমৎকার জমিল। অদ্যকার সমবেত উপাসনাতে নিকটবর্ত্তী স্থানগুলির কোনও কোনও বিশেষ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা আগমন করিলেন।

তাঁহাদের মধ্যে কোনও নির্দ্দিষ্ট একটী ধর্ম্মমতাশ্রয়ী ব্যক্তিরা ওঙ্কার-বিগ্রহকে প্রণাম করিলেন না বা যেই সময়ে উপাসনা হইতেছিল, সেই সময়ে অন্যান্য লোকের প্রণামকালে মস্তক নত করিলেন না।

একজন এই সংবাদটী শ্রীশ্রীবাবামণির নিকটে বলিয়া মনের ব্যাথা প্রকাশ করিলেন। শ্রীশ্রীবাবামণি হাসিয়া বলিলেন,-তাঁরা যে তোমাদের উপাসনাকালে হট্টগোল করেন নাই, কিম্বা তর্কবিতর্ক ক’রে অবাঞ্ছিত অবস্থার সৃষ্টি করেন নাই, এর জন্যও ত তোমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাক্ তে পার।

তোমার আপন গুরুভাই গুরুবোন্ কত স্থানে উপাসনার সময়ে ফিস্ ফিস্ ক’রে কথা কয়, এঁরা তার চেয়ে ত ভদ্র ছিলেন। যাঁরা তোমাদের উপাসনার সময়ে ওঙ্কার-বিগ্রহকে প্রণাম করেন নি, তাঁরা নিজ গৃহে গিয়ে বা নিজ সম্প্রদায় নিয়ে উপাসনা করার কালে কোনও কিছু বিগ্রহকে ত নিশ্চয়ই প্রণাম করেন।

তাতেই তোমার ওঙ্কার-বিগ্রহকে প্রণাম করা হয়ে যায়। সকল বিগ্রহেই ওঙ্কার ওতপ্রোতভাবে বিরাজমান। তাঁরা যে নিজ গৃহে ব’সে নিজ নিজ ইষ্টনাম জপ করেন, তাতেই ওঙ্কার জপ হয়ে যায়। সকল নামেই ওঙ্কার ওতপ্রোতভাবে বিরাজমান।

যে যেভাবে যেখানেই ভগবানের উপাসনা করুন না, তিনি সেখানে সেভাবে তোমারই ইষ্টনাম জপে যাচ্ছেন। কেউ হয়ত তা জানেন, কেউ হয়ত তা জানেন না। পার্থক্য মাত্র এইখানে। নিখিল বিশ্বে একমাত্র ওঙ্কারেরই ভজনা হচ্ছে, তোমরা দেখ্ তে পাচ্ছ না বলে বৃথা আফশোষ কচ্ছ।

শান্তির বারতা তৃতীয় খণ্ড
(পৃষ্ঠা নং ৭০-৭১)

যাহারা আমার করিছে বিরোধ

সন্ধ্যা সাত ঘটিকায় শ্রীশ্রী বাবামণি শিলচর পৌছিলেন। ষ্টেশানে পৌছিয়াই প্রথম যে উল্লেখযোগ্য সংবাদ শুনা গেল, তাহা এই যে, স্থানীয় আদালতের ভিতর দিয়া শ্রীশ্রী বাবামণির বক্তৃতা দানের সংবাদ-সম্বলিত বিজ্ঞাপন বিতরণ-কালে জনৈক প্রসিদ্ধ উকিলের নির্দ্দেশে বিতরণ-কারীর হস্ত হইতে কিছু বিজ্ঞাপন কাড়িয়া নেওয়া হয়

এবং সেইগুলি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করিয়া ইতস্ততঃ ছড়াইয়া দেওয়া হয়। শ্রীশ্রী বাবামণি হাসিয়া বলিলেন,- ভালই হ’ল, যাঁরা কিছুতেই আমার সভায় বক্তৃতা শুনতে হয়ত আস্ তেন না, লক্ষণে মনে হচ্ছে তাঁরাও আসবেন।

শ্রীশ্রী বাবামণিকে জানান হইল, যে সকল পোষ্টার শহরের নানা স্থানে লাগান হইয়াছিল, তাহার অধিকাংশ কে বা কাহারা তুলিয়া নিয়াছে বা ছিঁড়িয়া ফেলিয়াছে।

শ্রীশ্রীবাবামণি হাসিয়া বলিলেন,-

যাহারা আমার করিছে বিরোধ
তাহারা শত্রু নয়,

শত্রুর বেশে মিত্র তাহারা,
কেন রে করিব ভয়?
আচরণে আর বচনে যে যাই হোক
ভবিষ্যতের ফলটুকু শুধু

দেখিবে আমার চোখ্ ;
যার যা বলার, যার যা করার,
বলুক, করুক,-সবই উপহার,
দীর্ঘ আমার যাত্রা-পথের

পাথেয় সুনিশ্চয়,
গ্রহণ করিব আনন্দ-ভরে
অবাক্ সবিস্ময়।।
অমৃতের সাথে মৃত্যুর কভু

কলহ হ’তে কি পারে?
মৃত্যু অমৃত হ’য়ে যায় বারে বারে।
যত বিদ্বেষ সব হয় শেষ,
শুধুই অমৃত অপার অশেষ,

ধ্বংসের যত তাণ্ডব-লীলা
সৃষ্টিতে পায় লয়,
বাধা ও বিঘ্ন করি’ কলরব
গাহে সত্যের জয়।।

অখণ্ড-সংহিতা ষোড়শ খণ্ড

শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সতেরো>>

……………..
আরও পড়ুন-
স্বামী স্বরূপানন্দের বাণী
স্বামী স্বরূপানন্দ : গুরু-শিষ্য 
স্বামী স্বরূপানন্দ : সরল ব্রহ্মচর্য্য
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : চিঠিপত্র
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ : উপাসনা
স্বামী স্বরূপানন্দ : কবিতা/গান
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ
স্বামী স্বরূপানন্দ : উপদেশ  দুই

শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এক
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দুই
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তিন
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চার
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পাঁচ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ছয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সাত
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আট
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : নয়
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : দশ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : এগারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : বারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : তেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : চোদ্দ
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : পনেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : ষোল
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : সতেরো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : আঠারো
শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বাণী : উনিশ

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………….
আরও পড়ুন-
মহানবীর বাণী: এক
মহানবীর বাণী: দুই
মহানবীর বাণী: তিন
মহানবীর বাণী: চার
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: এক
ইমাম গাজ্জালীর বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: এক
গৌতম বুদ্ধের বাণী: দুই
গৌতম বুদ্ধের বাণী: তিন
গৌতম বুদ্ধের বাণী: চার

গুরু নানকের বাণী: এক
গুরু নানকের বাণী: দুই
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী
কনফুসিয়াসের বাণী: এক
কনফুসিয়াসের বাণী: দুই
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: এক
জগদ্বন্ধু সুন্দরের বাণী: দুই
শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম সম্পর্কে
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বাণী
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ১ম খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ২য় খন্ড
শ্রী শ্রী রামঠাকুরের বেদবাণী : ৩য় খন্ড
স্বামী পরমানন্দের বাণী: এক
স্বামী পরমানন্দের বাণী: দুই
স্বামী পরমানন্দের বাণী: তিন
স্বামী পরমানন্দের বাণী: চার
স্বামী পরমানন্দের বাণী: পাঁচ
স্বামী পরমানন্দের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: এক
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: দুই
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: তিন
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: চার
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: পাঁচ
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: ছয়
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: সাত
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: আট
সীতারাম ওঙ্কারনাথের বাণী: নয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!