ভবঘুরেকথা
স্বামী বিবেকানন্দ

-স্বামী বিবেকানন্দ

[১৮ মার্চ, ১৯০০ খ্রীঃ ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তর্গত আলামেডায় প্রদত্ত।]

আমরা বহু পুস্তক পড়িয়া থাকি, কিন্তু উহা দ্বারা আমাদের জ্ঞানলাভ হয় না। জগতের সমুদয় ‘বাইবেল’ আমরা পড়িয়া শেষ করিতে পারি, কিন্তু তাহাতে আমাদের ধর্মলাভ হইবে না। যে-ধর্ম কেবল কথায় পর্যবসিত, তাহা লাভ করা অতি সহজ, যে-কেহ উহা লাভ করিতে পারে। আমরা চাই কর্মে পরিণত ধর্ম। কর্মে পরিণত ধর্ম সম্বন্ধে খ্রীষ্টানদিগের ধারণা হইতেছে সৎকর্মের অনুষ্ঠান—জগতের হিতসাধন।

হিতসাধনের বা পরপোকারের ফল কি? হিতবাদিগণের দৃষ্টিভঙ্গী দ্বারা বিচার করিলে দেখা যায়, ধর্ম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। বহুসংখ্যক লোক হাসপাতালে আসুক—ইহাই প্রত্যেকটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের আকাঙ্ক্ষা। পরহিতৈষণার অর্থ কি? উহা অত্যাবশ্যক নয়। প্রকৃতপক্ষে পরহিতৈষণার অর্থ জগতের দুঃখে কিঞ্চিৎ সাহায্য করা—দুঃখের উচ্ছেদ সাধন নয়।

সাধারণ লোক নাম-যশের প্রার্থী, এবং নাম-যশোলাভের উদ্দেশ্যেই সে তাহার সমুদয় প্রচেষ্টা পরোপকার ও সৎকর্মের চাকচিক্যময় আবরণে ঢাকিয়া রাখে। অপরের জন্য কাজ করিতেছি, এই ভান করিয়া বস্তুতঃ সে নিজের কাজই গুছাইয়া লয়। প্রত্যেকটি তথাকথিত পরোপকারের উদ্দেশ্য হইতেছে—যে অশুভটি নিবারণ করিতে চাহিতেছ, উহাকেই উৎসাহ দান।

হাসপাতাল বা যে-কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি দাক্ষিণ্য দেখাইবার জন্য স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে মিলিয়া বলনৃত্যে যোগদান করে এবং সারারাত্রি নৃত্যগীতে অতিবাহিত করিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর পশুর ন্যায় আচরণ শুরু করে; ফলে পৃথিবীতে দলে দলে পাষণ্ড ব্যক্তির উৎপত্তি হয় এবং কারাগার, পাগলাগারদ ও হাসপাতাল ঐ-প্রকার ব্যক্তির দ্বারা পূর্ণ হইয়া যায়।

এইরূপই চলিতে থাকে, আর হাসপাতাল-স্থাপন প্রভৃতি সৎ কর্ম বলিয়া অভিহিত হয়। সৎ কর্মের আদর্শ হইতেছে জগতের সমুদয় দুঃখের হ্রাস অথবা উচ্ছেদ-সাধন। যোগী বলেন, মনঃসংযমে ব্যর্থতা হইতেই দুঃখের উৎপত্তি। যোগীর আদর্শ জড়-জগৎ হইতে মুক্তিলাভ। প্রকৃতিকে জয় করাই তাঁহার কর্মের মানদণ্ড। যোগী বলেন, সমুদয় শক্তি আত্মায় বিদ্যমান, এবং শরীর ও মন সংযত করিয়া আত্মশক্তিবলে যে-কেহ প্রকৃতিকে জয় করিতে সমর্থ।

দৈহিক কর্মের জন্য যতটা প্রয়োজন, তদতিরিক্ত মাংসপেশী যে পরিমাণ বেশী জমিবে, সেই পরিমাণে হ্রাস পাইবে। অত্যধিক কঠোর পরিশ্রম করা উচিত নয়, উহা ক্ষতিকর। কঠোর পরিশ্রম না করিলে দীর্ঘজীবী হইবে। অল্প আহার গ্রহণ কর ও অল্প পরিশ্রম কর। মস্তিষ্কের খাদ্য সংগ্রহ কর।

নারীর পক্ষে গৃহকর্মই যথেষ্ট। প্রদীপ তাড়াতাড়ি পুড়াইয়া শেষ করিও না, ধীরে ধীরে পুড়িতে দাও।

যুক্তাহারের অর্থ সাদাসিধা খাদ্য, অত্যধিক মশলাযুক্ত খাদ্য নয়।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!