ভবঘুরেকথা
স্বামী বিবেকানন্দ

-স্বামী বিবেকানন্দ

[ডেট্রয়েট শহরে একটি ভাষণের বিবরণী ১৮৯৪ খ্রীঃ ৫ এপ্রিল তারিখের ‘বোষ্টন ইভনিং ট্রান্সক্রিপ্ট’ নামক সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় মন্তব্য সহ নিম্নে উদ্ধৃত হইতেছেঃ]

সম্প্রতি স্বামী বিবেকানন্দ ডেট্রয়েট শহরে আসিয়া বিপুল প্রভাব বিস্তার করিয়াছেন। সর্বশ্রেণীর নরনারী তাঁহার ভাষণ শুনিতে আসিত, বিশেষতঃ ধর্মযাজকগণ তাঁহার অভিমতের অকাট্য যুক্তিজাল দ্বারা অতিশয় আকৃষ্ট হইতেন। শ্রোতৃবর্গের সংখ্যা এত বেশী হইয়াছিল যে, একমাত্র স্থানীয় নাট্যশালাটিতেই তাহাদের স্থান সঙ্কুলান হইত। তিনি অতি বিশুদ্ধ ইংরেজী বলেন, দেখিতে যেমন সুপুরুষ, তাঁহার, স্বভাবও তেমনই সুন্দর। ডেট্রয়েট শহরের সংবাদপত্রগুলি তাঁহার বক্তৃতার বিবরণী প্রকাশ করিবার জন্য যথেষ্ট স্থান দিয়াছে।

‘ডেট্রয়েট ইভনিং নিউজ’ পত্রিকা একদিনের সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলেনঃ বেশীর ভাগ লোকই মনে করিবেন যে, গত সন্ধ্যায় নাট্যশালায় প্রদত্ত বক্তৃতায় স্বামী বিবেকানন্দ এই নগরে প্রদত্ত অন্য বক্তৃতা অপেক্ষা অনেক অধিক দক্ষতা প্রদর্শন করিয়াছেন। তিনি যথার্থ এবং বিকৃত খ্রীষ্টধর্মের মধ্যে পার্থক্য প্রদর্শন করিয়া শ্রোতৃবর্গকে স্পষ্টভাষায় জানাইয়া দেন, কোন্‌ অর্থে তিনি নিজেকে একজন খ্রীষ্টান বলিয়া মনে করেন এবং কোন্ অর্থে করেন না।

তিনি যথার্থ ও বিকৃত হিন্দুধর্মের মধ্যেও পার্থক্য প্রদর্শন করিয়া বুঝাইয়া দেন। প্রকৃত অর্থেই তিনি নিজেকে ‘হিন্দু’ মনে করেন। তিনি সর্বপ্রকার সমালোচনার সীমা অতিক্রম করিয়াই বলিতে পারিয়াছিলেনঃ

আমরা যীশুর প্রকৃত বার্তাবহদের চাই। তাঁহারা দলে দলে হাজারে হাজারে ভারতে আসুন, যীশুর মহৎ জীবন আমাদের সম্মুখে তুলিয়া ধরুন এবং আমাদের সমাজের গভীরে তাঁহার ভাব অনুস্যূত করিতে সহায়তা করুন। যীশুকে তাঁহারা ভারতের প্রত্যেক গ্রামে-প্রতি প্রান্তে প্রচার করুন।

যখন কোন ব্যক্তি মুখ্য বিষয়ে এতখানি নিশ্চয়, তখন তিনি আর যাহা বলুন না কেন, তাহা গৌণ বিষয়ের বিশদ উল্লেখমাত্র। যাঁহারা এতদিন যাবৎ গ্রীনল্যাণ্ডের তুষারাচ্ছন্ন পার্বত্যদেশে এবং ভারতের প্রবালাকীর্ণ সমুদ্রতটে আধ্যাত্মিক তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করিয়া আসিতেছেন, তাঁহাদের উদ্দেশ্যে আচার ও জীবন-নীতির ব্যাপারে একজন পৌত্তলিক ধর্মযাজকের এই উপদেশ-বর্ষণ এক দারুণ অপমানকর দৃশ্যের অবতারণা করিয়াছিল।

অধিকাংশ সংশোধনের পক্ষে অবমাননা-বোধ অপরিহার্য। খ্রীষ্টধর্মের প্রবর্তকের মহিমান্বিত জীবন-সম্পর্কে আলোচনার পর-সুদূর বিদেশী জাতিগুলির সম্মুখে যাঁহারা খ্রীষ্ট-জীবনের প্রতিনিধিত্ব করেন বলিয়া নিজেদের ঘোষণা করেন, তাঁহাদের নিকট ঐরূপ উপদেশ দিবার অধিকার তাঁহার জন্মিয়াছিল; এবং তাঁহার উপদেশ অনেকাংশে সেই নাজারেথবাসী যীশুখ্রীষ্টের উক্তির মতই শোনাইতেছিলঃ

‘তোমার অর্থপেটিকায় স্বর্ণ রৌপ্য বা তাম্র সংগ্রহ করিও না, পরিধানের নিমিত্ত পোশাক ও জুতার সংখ্যা বৃদ্ধি করিও না, এমন কি নিজের নিমিত্ত একখানি ভ্রমণ-যষ্টিও সংগ্রহ করিও না; কারণ প্রত্যেক শ্রমিকই তাহার আহার্য পাইবার অধিকারী।’

যাঁহারা বিবেকানন্দের আবির্ভাবের পূর্বেই ভারতীয় ধর্ম-সাহিত্যের সহিত কিছুমাত্র পরিচিত হইয়াছিলেন, তাঁহারা প্রতীচ্য-দেশীয়গণের সকল প্রকার কর্মানুষ্ঠানের মধ্যে, এমন কি ধর্মাচরণের ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ের মনোভাব-যাহাকে বিবেকানন্দ ‘দোকানদারি মনোবৃত্তি’ আখ্যা দিয়াছেন, তাহার প্রতি প্রাচ্য-দেশীয়গণের ঘৃণার কারণ বুঝিতে পারিবেন।

বিষয়টি ধর্মপ্রচারকদের পক্ষে আদৌ উপেক্ষণীয় নয়। যাঁহারা পৌত্তলিক প্রাচ্য জগৎকে ধর্মান্তরিত করিতে চান, পার্থিব জগতের সাম্রাজ্য এবং বৈভবকে ঘৃণাসহকারে পরিহারপূর্বক তাঁহাদিগকে নিজ-প্রচারিত ধর্মানুযায়ী জীবন যাপন করিতে হইবে।

ভ্রাতা বিবেকানন্দ নৈতিক দিক্‌ হইতে ভারতকে সর্বাপেক্ষা উন্নত দেশ বলিয়া মনে করেন। পরাধীনতা সত্ত্বেও ভারতের আধ্যাত্মিকতা অক্ষুণ্ণ রহিয়াছে। ডেট্রয়েটে প্রদত্ত তাঁহার বক্তৃতা-সম্পর্কে প্রকাশিত কয়েকটি বিবরণীর অংশবিশেষ এখানে প্রদত্ত হইলঃ

ক্ষুধার্ত অতিথির আবেদন পূর্ণ করিবার পর হিন্দু স্বয়ং অন্নগ্রহণে প্রবৃত্ত হন। এই মনোভাব দেশের সর্বত্র প্রকট। যে-কোন ব্যক্তি গৃহস্থের নিকট আসিয়া আহার ও আশ্রয় প্রার্থনা করিতে পারে এবং সকল গৃহের দ্বারই তাহার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

নিরহঙ্কার-ভাবই পুণ্য এবং সকল প্রকার অহং-ভাবই পাপ-এই মর্মে ভারতীয়দের যে-বিশ্বাস বর্তমান, এইখানে তাহা উল্লেখ করিয়া বক্তা তাঁহার আলোচনার মূল নৈতিক সুরটি ধ্বনিত করেন। গত সন্ধায় বক্তৃতায় উক্ত ভাবেরই প্রাধান্য অনুভূত হয় এবং ইহাকেই তাঁহার বক্তৃতার সারমর্ম বলা যাইতে পারে।

হিন্দু বলেন, নিজের জন্য গৃহ নির্মাণ করা স্বার্থপরতার কাজ, সেই জন্য উহা ঈশ্বরের পূজা ও অতিথিসেবার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেন। নিজের উদরপূর্তির জন্য আহার্য প্রস্তুত করা স্বার্থপরতার কাজ, সুতরাং দরিদ্রনারায়ণ-সেবার জন্য আহার্য প্রস্তুত করা হয়। ক্ষুধার্ত অতিথির আবেদন পূর্ণ করিবার পর হিন্দু স্বয়ং অন্নগ্রহণে প্রবৃত্ত হন। এই মনোভাব দেশের সর্বত্র প্রকট। যে-কোন ব্যক্তি গৃহস্থের নিকট আসিয়া আহার ও আশ্রয় প্রার্থনা করিতে পারে এবং সকল গৃহের দ্বারই তাহার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

জাতিভেদ-প্রথার সহিত ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই। কোন ব্যক্তি তাহার বৃত্তি প্রাপ্ত হয়-উত্তরাধিকারসূত্রে; সূত্রধর সূত্রধর-রূপেই জন্মগ্রহণ করে, স্বর্ণকার স্বর্ণকার-রূপেই, শ্রমিক শ্রমিক-রূপেই এবং পুরোহিত পুরোহিত-রূপেই।

দুই প্রকার দান বিশেষ প্রশংসার্হ, বিদ্যাদান আর প্রাণদান। বিদ্যাদানের স্থান সর্বাগ্রে। অপরের জীবন রক্ষা করা উত্তম কর্ম, বিদ্যাদান অধিকতর উত্তম কর্ম। অর্থের বিনিময়ে শিক্ষাদান পাপ, পণ্যের ন্যায় অর্থের বিনিময়ে যিনি বিদ্যা বিক্রয় করেন, তিনি নিন্দার্হ। সরকার মধ্যে মধ্যে এই-সকল শিক্ষাদাতাকে সাহায্য প্রদান করেন এবং তাহার নৈতিক ফল তথাকথিত কোন কোন সুসভ্য দেশে যে-ব্যবস্থা বর্তমান, তাহা অপেক্ষা উত্তম।

বক্তা এ-দেশের সর্বত্র সভ্যতার সংজ্ঞা-সম্পর্কে প্রশ্ন করিয়াছেন। এ প্রশ্ন তিনি অন্যান্য দেশেও করিয়াছেন। অনেক সময় উত্তরের মর্ম হইতঃ আমরা যাহা, তাহাই সভ্যতা। তিনি উক্ত সংজ্ঞা মানিয়া লইতে পারেন নাই।

তাঁহার মতেঃ কোন জাতি জলে স্থলে এমন কি সমস্ত পঞ্চভূতের উপর আধিপত্য লাভ করিতে পারে এবং জীবনের উপযোগিতা-বিষয়ক সমস্যাগুলির আপাত-সমাধান করিতে পারে, তথাপি সভ্যতা ব্যক্তি-জীবনের বাস্তব হইয়া উঠে না। যে আপন আত্মাকে জয় করিতে পারিয়াছে, সভ্যতার পরাকাষ্ঠা তাহারই মধ্যে পরিস্ফুট। জগতে অন্য দেশ অপেক্ষা ভারতেই এইরূপ অবস্থা অধিক দৃষ্ট হয়-কারণ সেখানে ঐহিক বিষয় গৌণ, আধ্যাত্মিকতার সহায়কমাত্র।

ভারতীয়গণ প্রাণসত্তায় উজ্জীবিত সকল বস্তুর মধ্যে আত্মার বিকাশ দর্শন করেন, এবং প্রকৃতি-সম্বন্ধে জ্ঞান তাঁহারা এই দৃষ্টিকোণ হইতেই অর্জন করেন। সুতরাং অদম্য ধৈর্যেরস হিত কঠিনতম দুর্ভাগ্য সহ্য করিবার মত ধীর প্রকৃতি এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য দেশবাসী অপেক্ষা অধিকতর শক্তি ও জ্ঞান সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা ভারতে রহিয়াছে। সেইজন্য সেখানে এমন একটি জাতি আছে, যাহাদের নিরবচ্ছিন্ন জীবনধারা দূরদূরান্তের চিন্তানায়কদের আকৃষ্ট করিয়াছে এবং তাহাদের স্কন্ধ হইতে পীড়াদায়ক সাংসারিক বোঝা লাঘব করিতে আহ্বান জানাইয়াছে।

এই বক্তৃতার মুখবন্ধে বলা হয় যে, বক্তাকে বহু প্রশ্ন করা হইয়াছে, তন্মধ্যে কতকগুলির উত্তর তিনি ব্যক্তিগতভাবে দিতে ইচ্ছা করেন। কিন্তু তিনটি প্রশ্নের উত্তর তিনি বক্তৃতামঞ্চ হইতেই দিলেন। এই তিনটিকে নির্বাচন করিবার কারণ ক্রমশঃ জানা যাইবে। এই তিনটি প্রশ্ন হইল-

১. ভারতবাসীরা কি তাহাদের সন্তানদের কুমিরের মুখে সমর্পণ করে?

২. তাহারা কি নিজেদের জগন্নাথের রথচক্রের নিম্নে নিক্ষেপ করে?

৩. তাহারা কি বিধবাদিগকে মৃত স্বামীর সহিত একত্র অগ্নিদগ্ধ করিয়া হত্যা করে?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর তিনি সেই সুরেই দিলেন, যে-সুরে একজন আমেরিকাবাসী বিদেশে ভ্রমণকালে-নিউ ইয়র্কের রাস্তায় রাস্তায় রেড-ইণ্ডিয়ানরা যথেচ্ছ ঘুরিয়া বেড়ায় কিনা, অথবা ইওরোপে আজও অনেকে বিশ্বাস করেন-এরূপ উপকথা-সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেন! স্বামী বিবেকানন্দের নিকট উক্ত প্রথম প্রশ্নটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং উত্তর-দানের অযোগ্য বলিয়াই মনে হইয়াছে।

যখন কতিপয় সদাশয় অথচ অজ্ঞ ব্যক্তির নিকট হইতে তিনি এই প্রশ্নের সম্মুখীন হন, ‘কি কারণে কেবল বালিকাদেরই কুমিরের মুখে সমর্পণ করা হয়?’-তখন তিনি বিদ্রূপ করিয়া উত্তর দেন, ‘বোধ হয় তাহারা অধিকতর নরম ও কোমল বলিয়া, এবং সেই তমসাচ্ছন্ন দেশের জলাশয়সমূহের অধিবাসিগণ দন্তদ্বারা সহজেই তাহাদের চর্বণ করিতে পারিবে বলিয়া এইরূপ করা হয়।’

জগন্নাথ-সম্পর্কিত গল্প সম্বন্ধে বক্তা পবিত্র নগরের-পুরীর প্রাচীন রথযাত্রা-উৎসব বর্ণনা করিয়া এই মন্তব্য করেন যে, সম্ভবতঃ রথের রজ্জু ধরিবার ও টানিবার আগ্রহাতিশয্যে কিছুসংখ্যক পুণ্যকামী ব্যক্তি পা পিছলাইয়া পড়িয়া গিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইয়া থাকিবে। এই ধরনের কিছু দুর্ঘটনা অতিরঞ্জিত হইয়া এমন বিকৃত আকার ধারণ করিয়াছে যে, অন্যান্য দেশের সহৃদয় ব্যক্তিগণ তাহা শ্রবণ করিয়া আতঙ্কে শিহরিয়া উঠেন।

বিধবাদের অগ্নিদগ্ধ করিয়া হত্যা করিবার কথা বিবেকানন্দ অস্বীকার করেন, এবং সত্য তথ্য উদ্ঘাটিত করিয়া বলেন, হিন্দু বিধবাগণ অগ্নিতে আত্মাহুতি দিতেন স্বেচ্ছায়।

এরূপ ক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল দেশেই কিছু নারী প্রাণবিসর্জন করিয়াছে। যে-কোন দেশেই এই ধরনের আবেগ বিরল, এবং ভারতবর্ষেও ইহা অন্যান্য দেশের মতই নিত্যকার সাধারণ ব্যাপার নয়।

যে অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটিতেছে, সেখানে মহাপ্রাণ ব্যক্তিরা, যাঁহারা সর্বকালে আত্মহত্যার বিরোধী, তাঁহারা বিধবাদের উক্ত কার্য হইতে বিরত হইবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করিয়াছেন; এবং যে-সকল ক্ষেত্রে স্বাধ্বী বিধবাগণ লোকান্তরে স্বামীর সহগামী হইবার জন্য ঐকান্তিক আগ্রহ প্রকাশ করিয়াছেন, তাঁহাদেরই এই অগ্নিপরিক্ষা দিতে অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। অর্থাৎ যদি তাঁহারা হস্ত-দুইখানি অগ্নিতে সমর্পণ করিয়া দগ্ধ করিতে পারিতেন, তাহা হইলে তাঁহাদের ঐকান্তিক বাসনা পূরণে আর কোন বাধা দেওয়া হইত না।

কিন্তু ভারতই একমাত্র দেশ নয়, যেখানে নারী প্রেমবশতঃ স্বামীর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁহার অনুগমন করিয়া অমরলোকে গমন করিয়াছেন। এরূপ ক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল দেশেই কিছু নারী প্রাণবিসর্জন করিয়াছে। যে-কোন দেশেই এই ধরনের আবেগ বিরল, এবং ভারতবর্ষেও ইহা অন্যান্য দেশের মতই নিত্যকার সাধারণ ব্যাপার নয়।

বক্তা পুনরাবৃত্তি করিয়া বলেন, ভারতবাসীরা নারীগণকে অগ্নিদগ্ধ করিয়া হত্যা করেন না, এবং তাঁহারা কখনও ‘ডাইনী’ হত্যা করেন নাই।

বক্তার শেষোক্ত শ্লেষটি অতি তীব্র। এই হিন্দু সন্ন্যাসীর দার্শনিক মতবাদ বিশ্লেষণের কোন প্রয়োজন এখানে নাই, শুধু এইটুকু বলিলেই হইবে যে, ইহার সাধারণ ভিত্তি হইল-অনন্তের উপলব্ধির জন্য আত্মার যে-প্রয়াস তাহারই উপর। একজন পণ্ডিত হিন্দু এই বৎসর লাওয়েল ইনস্টিট্যুটের পাঠক্রমের উদ্বোধন করেন। শ্রীযুক্ত মজুমদার যাহার সূচনা করিয়া- ছিলেন, ভ্রাতা বিবেকানন্দ যোগ্যতার সহিত তাহারই উপসংহার করিলেন।

চার সহস্র নরনারী অসহ্য গরমে পাখা ব্যজন করিতে করিতে স্মিতমুখে ও সাগ্রহে বিবেকানন্দের পনর মিনিট বক্তৃতা শুনিবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপর বক্তাদের বক্তৃতাকালে অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিতেন। সভাপতি সর্বাপেক্ষা উত্তম বস্তুটিকে শেষে পরিবেশন করিবার পুরাতন রীতি সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ছিলেন।

এই নূতন পর্যটকের ব্যক্তিত্ব অধিকতর আকর্ষণীয়, যদিও হিন্দু দর্শনের মতানুয়ায়ী ব্যক্তিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়। ধর্ম-মহাসম্মেলনের উদ্যোক্তাগণ বিবেকানন্দকে কার্যসূচীর শেষের দিকে রাখিতেন, যাহাতে শ্রোতাগণ তাঁহার ভাষণ শুনিবার জন্য অধিবেশনের শেষ পর্যন্ত বসিয়া থাকেন। বিশেষ করিয়া কোন গরম দিনে যখন কোন বক্তা দীর্ঘ নীরস বক্তৃতা আরম্ভ করিতেন, এবং শ্রোতাগণ দলে দলে সভাস্থল পরিত্যাগ করিয়া যাইতেন, তখন সম্মেলনের সভাপতি উঠিয়া ঘোষণা করিয়া দিতেন, সমাপ্তিসূচক স্বস্তিবাচনের পূর্বে স্বামী বিবেকানন্দ সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিবেন;

তখনই শ্রোতারা শান্ত হইত। চার সহস্র নরনারী অসহ্য গরমে পাখা ব্যজন করিতে করিতে স্মিতমুখে ও সাগ্রহে বিবেকানন্দের পনর মিনিট বক্তৃতা শুনিবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপর বক্তাদের বক্তৃতাকালে অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিতেন। সভাপতি সর্বাপেক্ষা উত্তম বস্তুটিকে শেষে পরিবেশন করিবার পুরাতন রীতি সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ছিলেন।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!