ভবঘুরেকথা

তরিকায় নামাজ রোজা

-আবুতালেব পলাশ আল্লী

নবীজী বলেছেন, ‘আল কাউফ অকে মুল সলাত, আত জালাম নাউ সলাতিল, ওয়াকতি। লা সলাকা ইল্লা বে হুজুরি কাল্ব।’

অর্থাৎ ‘ধ্যান যোগে দেলের নামাজ, যা ওয়াক্ত নামাজের থেকে শ্রেষ্ঠতম।’

এর দ্বারা প্রমাণ হয়, পাঞ্জেগানার নামাজ ছাড়াও নামাজ আছে। যে নামাজে রাসুলের ও আল্লাহর দেখা পাওয়া যায়। তা হলো কলবের নামাজ।

হাদিসে নবীজী বলেছেন, ‘লা সালাতি ইল্লা বি হুজুরী কলব।’

অর্থাৎ ‘হুজুরী কবল ব্যতিত নামাজ হয় না।’

নামাজের সুরত হল আহমদি সুরত, নামাজের প্রকাশ আমার নুর নবী হজরতের নুরের ঘাম থেকে সৃষ্টির আদিতে, সেই ঘামের রূপ হরফ হল নুর।

হুজুর শব্দের অর্থ হলো- হাজির। মাবুদের হাজির ও নাজির। কলব শব্দের অর্থ হলো দেল বা হৃদয়। হাকিকত হল হৃদয়ে মাবুদকে হাজির রেখে নামাজ শুরু করা।

নামাজ শুরুতে বলা হয়- ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ্ সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।’

অর্থাৎ ‘যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃজন করেছেন। আমি সকল দিক থেকে নিজেকে বিছিন্ন করে, একমাত্র তাঁর দিকে মনোনিবেশ করলাম। আমি আর মুশরিকদের দলভুক্ত নই।’

এই হাদিসে হুজুরী কলবের কথা আর মাবুদের দিকে মনোনিবেশ করা দুইটার হাকিকত এক ও অভিন্ন। তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বলা হয়, যদি কেউ নামাজে হুজুরী কলবে নামাজ না পড়তে পারে, তবে সে নিশ্চই মুশরিক।

আহমদ হল চরম ও পরম প্রশংসাকারী যার সমতুল্য আর কিছুই নাই। সেই আহমদি সুরত ধরেই নামাজে দাঁড়াতে হয়। অর্থাৎ চরম ও পরম প্রশংসা দ্বারা মাবুদকে নিজ হৃদয়ে হাজির করা।

নামাজের ভঙ্গিমা হল- আলিফ রূপে দাঁড়ানো। হা রূপে রুকু করা। মীম রূপে সেজদা করা এবং দাল রূপে আসন করা।

নামাজ কোনো সাধারণ ইবাদত নয়। নামাজ হল মমিনের মেরাজ। নিজ কলবের মাঝে মাবুদকে হাজির করে তার রূপ দর্শন করে আহমদি সুরতে মাবুদের চরম ও পরম প্রশংসা করাই নামাজ।

তাই নামাজকে সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা বলা হয়। আর সাধু, দরবেশ, সাধকরা নামাজের গূঢ় তত্ত্ব জেনে তা কায়েম করে থাকে। গানে বলা হয়-

একটা নামাজ একটা রোজা
পাগল পুরে শোনা যায়,
কোনটা নামাজ কোনটা রোজা
আদায় করি কোন কায়দায়!!

শুনো সেই নামাজের ধারা
রুকু সেজদা তাশাহুদ ছাড়া,
পাছ আনফাছ জিকির করা
হর দম থাকে মোরাকাবায়।।

মাওলার প্রেমে হয়ে ফানা
হারিয়ে যায় সব ভাবনা,
তার জন্য নয় পাঞ্জেগানা
সেতো আছে এক সেজদায়।।

যার জীবনে নাই রতি ক্ষয়
তার পরিপূর্ণ রোজা হয়,
ইন্দ্রপুরী করেছে জয়
আত্নসংযম সাধনায়।।

এই নামাজ এই রোজাধারী
ষড়রিপুর নয় পূজারী,
ছেড়ে দিয়ে বিষয় বাড়ি
প্রেম সাগরে লাই খেলারী।।

একটি নামাজ একটি রোজা
এতো নয় সহজ কাজ,
তাইতো পাঞ্জেগানায় আছে সমাজ
পাগল আছে এক কোঠায়।।

২১হাজার ৬শত বার
এই নামাজের চলছে কারবার,
ধরলে নামাজ খোদা মিলে
না মানলে কাফের হয়।।

নামাজে বসে দেখ ঐ নামাজে
কথা কয় বসিয় তাল আসনে
তাকাইয়া মক্কার পানে
আহমাদ্দি অজু দানে নজর দিও ফাতেহায়।।

মিলবে খোদা তোমার সনে
যেমন মিলছে কলেমায়,
যেখানে সিজদা দিলে
সহজে খোদা মিলে।।

সেখানে খুঁজলে পাবে
কোরানের ১৩ পারায়,
পীর আউলিয়া দেখছে খোদা
তারা সিজদা দেয় ওই জায়গায়।।

যেখানে সিজদা দিলে
সহজে খোদা মিলে,
নাউজুবিল্লা বলে
কিছু কিছু কাঠমোল্লায়।।

হাসানে কয় খাঁটি আলেম
দেইখা তারা খুসি হয়,
মা শাহে সেতারা কয় মেরাজ হয়
জায়গা বুঝে কর সেজদা।।

ওই নামাজে রাইখো রোজা
নইলে নামাজ হইবে না সোজা,
চৌদ্দতলা ফুল কুঠুরী
তাওয়াফ কর একএক করি।।

তাওয়াফ বীনে সেজদায় কেউ যাইও না
ওই নামাজের এমনি ধারা,
মীমের নিশান ঠিক রাখল যারা
পরশ পাথর পাইল তারা।।

ওই পাথর তাওয়াফের আগে
যাকাত দাও ওই না ঘাটে,
সেজদা কর তাহার পরে
যাকাত বীনে ওই দেশে কেউ যাইও না।।

রানা আল চিশতী বলে
কেতাবে ছাবুত,
হয় না নামাজ
যাকাত ছাড়া।।

মুরশেদ রূপে ফানা হও মন
ঐ নাম বিনে গতি নাই।।

আদমো সুরাতের মাঝে
মুরশেদ রূপে খেলছেন সাঁই,
নয় লাখ বছর ইবাদতে
মকরুমে লানোতি পায়।।

আদম সিজদা না করিয়া
তার নামাজ বিফলে যায়,
আশেক যদি পড়বি নামাজ
সিজদা দাও মুরশেদের পায়।।

আরশে আজিম, কুলভে মুমান
ঐ সিজদাটা আল্লায় পায়,
আশেক তুমি রোজা রাখ
যেই রোজায় তোমার মাশুক মিলে।।

পীরে যাহা নিষেধ করে
খাইয়োনা, তা জীবন গেলে,
যিনি মুরশেদ, তিনি খোদা
হুকুম পালন করো তার।।

পল সুরাত আর হাসর মিজান
এক পলকে হইবা পার,
আশেক তুমি ধনি হইছো
মুরশেদেরি ধন পাইয়া।।

হজ তোমারি করতে হবে
সামনে কাবা রাখিয়া,
কাবা অর্থ সুন্দর বস্তু
কেবলা অর্থ সামনে তোর।।

মুরশেদ কেবলা সামনে রাইখা
লাব্বাইক বল একবার,
আর যাকাত দিয়া
আশেক তুমি বেঁচে থাকো।।

ঋণের দায়, আমিরত্ব সোপে দিও
দয়ালো মুরশেদের পায়।
হযরত খাজা ইসরাইল শাহ কয়
হাসান তোমার বুদ্ধি নাই।

মা সাহে সেতারা কয়
পলাশ তুমি গোলামি করো নাই,
কলেমার ভেদ জেনে রেখো
এ ছাড়া তোর উপায় নাই মাফ নাই।

তরিকায় জাকাত>>

……………………………
পুনপ্রচারে বিনীত: আবুতালেব পলাশ আল্লী
মা শাহে সেতারার রওজা বা দরবার শরিফ
খুলনা, বাংলাদেশ।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………
আরও পড়ুন-
দোজখ
নফসের সংযম
স্রষ্টা থেকে সৃষ্টির আবির্ভাব
মোরাকাবা-মোশাহেদা
নফসের পঞ্চস্তর
তরিকায় নামাজ রোজা
তরিকায় জাকাত
দেহতত্ত্বে লতিফা ও চক্র ভেদ
সাধনার ধারা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!