ভবঘুরেকথা
মা আনন্দময়ী

মা আনন্দময়ীর কথা

সেকালে কন্যা সন্তানের প্রতি পরিবারের তেমন উৎসাহ ছিল না। সকলেই প্রত্যাশা করে থাকতো পুত্র সন্তানের মুখ দেখবার জন্য। কিন্তু ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত খেওড়া গ্রামের বিপিনবিহারী ভট্টাচার্য মহাশয় ছিলেন ভিন্ন চরিত্রের মানুষ। জীবনের সব ভালো-মন্দ যিনি ঈশ্বরের কাছে সঁপে দিয়েছেন, তিনি কি আর কোন বিশেষ ঘটনার প্রতি উৎসাহ বা নিরুৎসাহ হতে পারে?

অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ আর সরল স্বভাবের মানুষ ছিলেন এই বিপিনবিহারী। জগতে এবং জীবনে যা-কিছু ঘটে তা সবই বিধিনির্দিষ্ট, এ বিষয়ে তাঁর বিশ্বাস ছিল যেমন গভীর তেমনি অটল।

১৩০৩ সালের ১৯শে বৈশাখ রজনীর তৃতীয় প্রহর গত হতে না হতেই যখন কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করল তাঁর ঘরে, তখন কোনরূপ বিচলিত হলেন না। পুত্রই হোক বা কন্যাই হোক সব তাঁরই দান। কন্যা নয়, যেন একটি সদ্য ফোটা ফুল।

ধবধবে সাদা বর্ণ, এক মাথা চুল। দেখতে আসা সকলেই মেয়ের রূপ দেখে অবাক হয়ে যায়। কিন্তু বিপিনবিহারী ভাবেন শুধু গুণের কথা। শুধু রূপ হলে চলবে না। গুণ চাই। রূপে ভুবন আলো করতে পারে না, একমাত্র গুণের আলোই অবিদ্যার অন্ধকারকে দূর করে আলোকিত করে জগৎ সংসারকে।

মেয়ের নাম রাখা হল নির্মলা। জ্যোতিষীরা জাতকের জন্মলগ্ন ও রাশিচক্র বিচার করে আশ্চর্য হয়ে অনেকে বললেন, এ মেয়ে রাজরাণী হবে। তবে ধনসম্পদের রাণী নয়, পার্থিব ভূসম্পত্তির রাণী নয়, ইনি হবেন আধ্যাত্মিক জগতের রাণী।

খেলার সাথীদের মধ্যে অল্পদিনেই প্রিয় হয়ে ওঠতে লাগলো নির্মলা। শিশুসুলভ চঞ্চলতা ও দৌরাত্ম্য কোন কিছুই ছিল না তার। তবু পাড়ার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের উপর তার প্রভাব ছিল বড় অদ্ভুত। যাকে যা বলতেন তাই সে তৎক্ষণাৎ শুনত। ছোট থেকেই বড় শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে নির্মলা। এত শান্তশিষ্ট যে গাঁয়ের অনেকে তাকে হাবা-গোবা ভাবতো।

যেমনটি চেয়েছিলেন বিপিনবিহারী ঠিক তেমনটি। ঢাকা জেলার অন্তর্গত বিক্রমপুরের কাছাকাছি আটপাড়া গাঁয়ের বিখ্যাত ভরদ্বাজ বংশের সন্তান। নাম রমণীমোহন চক্রবর্তী। ছেলেকে দেখে ও তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলে খুব খুশি হলেন বিপিনবিহারী।

পিতা-মাতা ভাবতেন হাবা-গোবা হয়েই বেঁচে থাক। কিন্তু অনেকে আবার এই হাবা-গোবা ভাবটাকেই গুণ বলে মনে করত। শান্ত-নম্র ভাবটার মধ্যে আছে তার স্বভাবের এক বিরল মাধুর্য। কালো কালো ভাসা ভাসা চোখ দুটোর মধ্যে ছিল স্থির বুদ্ধির ছটা। অনেকে ভাবত নির্মলা বড় হয়ে রূপেগুণে আলো করা মেয়ে হবে।

কিন্তু ছোট্ট মেয়ে নির্মলার কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে গেল অনেকে। এমনিতেই নির্জনে একা একা থাকতে ভালোবাসে নির্মলা। খেলার সাথীরা তার জন্য পাগল হলেও খেলাধুলার প্রতি তাঁর নিজের তেমন আগ্রহ ছিল না।

অনেকেই খেয়াল করে নির্মলা মাঝমধ্যে একা একা গাছপালার সঙ্গে কথা বলে। গাছপালার সাথে এমনভাবে অন্তরঙ্গতার সাথে কথা বলতো যে দেখে-শুনে সকলেই আশ্চর্য হয়ে যেত।

বাবা-মা এসব কথা শুনে আশ্চর্য হলেন না বরং চিন্তান্বিত হয়ে পড়লেন। মেয়েটা আবার শেষকালে পাগল হয়ে যাবে না তো! মা মোক্ষদা সুন্দরী ধর্মপ্রাণা ও হরিভক্তি পরায়ণা মহিলা ছিলেন। মুখে তাঁর হরিনাম লেগেই থাকত। হরিভক্তি ও ধর্মসাধনার জন্য তাঁদের বংশের খ্যাতি আছে।

এই বংশের একজন সতীসাধ্বী মহিলা হরিনাম করতে করতে স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপ দিয়ে স্বেচ্ছায় সহমৃতা হন। সবকিছু দেখে-শুনে মা মোক্ষদাসুন্দরী একদিন স্বামীকে বললেন, ভবিষ্যতে কে কী হবে তা ভাববার আমরা কে বলতে পারো?

যার ভাবনা তিনিই ভাববেন। হরি যা করেন তাই হবে। তাঁর ওপর মেয়ের ভবিষ্যতের সব ভালো-মন্দ ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাক।

গাঁয়ের অনেকে পরামর্শ দিল, মেয়েকে পরগোত্র করে দাও, অন্য একজনের ভাগ্যের সঙ্গে ওর ভাগ্যকে জুড়ে দিলেই দেখবে ওর ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। তোমাদের চিন্তার কিছু থাকবে না।

তাছাড়া সে সময় অল্প বয়সেই বিয়ে হত। পাত্রের সন্ধান চলতে লাগল। মেয়ের জন্য সৎপাত্র চান বিপিনবিহারী। শাস্ত্রে বলেছে, সৎপাত্রে কন্যাদান। পাত্রের বাড়ির আর্থিক অবস্থা, তাদের ভূসম্পত্তি পরিমাণ দেখতে চান না তিনি। অবশেষে সন্ধান মিলল।

যেমনটি চেয়েছিলেন বিপিনবিহারী ঠিক তেমনটি। ঢাকা জেলার অন্তর্গত বিক্রমপুরের কাছাকাছি আটপাড়া গাঁয়ের বিখ্যাত ভরদ্বাজ বংশের সন্তান। নাম রমণীমোহন চক্রবর্তী। ছেলেকে দেখে ও তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলে খুব খুশি হলেন বিপিনবিহারী।

একজন সিদ্ধযোগীর মত তিনি আসনে বসে ধীরে ধীরে মগ্ন হয়ে যান যোগক্রিয়ায়। পরে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় এক-একদিন তাঁর মুখ হতে বহু দৈববাণী ও অধ্যাত্মসাধনার বহু গূঢ় তত্ত্ব আপনা হতে বেরিয়ে আসে‌‌। তার সব অর্থ সাধারণ লোক ত দূরের কথা, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরাও উদ্ধার করতে পারতেন না।

এমন ধর্মভীরু ও পরোপকারী ছেলে খুব কম পাওয়া যায়। বিয়ের পর নির্মলা কিছুদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। তারপর আসেন বাপের বাড়ি বিদ্যাকূটে। খেওড়াতে জন্ম হলেও আসল বাপের বাড়ি খেওড়া নয়। খেওড়া হচ্ছে তাঁর বাবার মামার বাড়ি এবং সেখানেই বিপিনবিহারীর প্রথম জীবন কাটে। পড়ে বাবার চাকরির জায়গা ময়মনসিংহের অন্তর্গত বাজিতপুরে গিয়েও পাঁচ-ছয় বছর থাকতে হয় নির্মলাকে।

কিন্তু যখন সেখানে যার কাছেই থাকুন না কেন, কোথাও কখনো সংসারের প্রতি বিন্দুমাত্র আসক্তি দেখা যায়নি নির্মলার মধ্যে। সর্বদা এক দিব্যভাবে বিভোর হয়ে আছে যেন তাঁর প্রাণময়। মাঝে মাঝে ঠাকুরের ধ্যান করতে করতে তন্ময় হয়ে যান।

কোন বিষয়েই কোন হুশ থাকে না। বিশেষ করে হরিনাম বা কোন কীর্তনগান কানে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। এক অপূর্ব দিব্যভাবের আবেশে জড়িয়ে ওঠে সারাদেহে।

তাঁর এই অবস্থা দেখে চিন্তায় আকুল হয়ে উঠলেন বাপের ও শ্বশুরবাড়ির অনেকে। বাবা-মা আশঙ্কা করতে লাগলেন, মেয়েটা সন্ন্যাসিনী হয়ে বেরিয়ে যাবে না তো? শ্বশুরবাড়ির অনেকে বলতে লাগল, এমন রূপবতী ও গুণবতী বৌটি শেষকালে পাগল হয়ে যাবে নাকি?

একমাত্র রমণীমোহনই নির্বিকার। কোনরূপ চিন্তা বা শঙ্কাই অনুভব করলেন না তিনি। স্ত্রীকে ভালোবাসেন রমণীমোহন। এবার সেই ভালোবাসার সঙ্গে যুক্ত হলো এক গভীর শ্রদ্ধা। স্ত্রীর প্রতি সেই শ্রদ্ধাবিমিশ্রিত ভালোবাসাটা দিনে দিনে বেড়ে যেতে লাগল তাঁর। সর্ব রকমে সাহায্য করতে লাগলেন স্ত্রীর ধর্মসাধনায়।

একটা কথা ভেবে আশ্চর্য হয়ে যায় সবাই। নির্মলার এখনো গুরুকরণ হয়নি। কারো কাছে পূজার বিধি, দেবদেবীর ধ্যানমন্ত্র বা যোগক্রিয়ার পদ্ধতির বিষয়ে কোন কিছু শিক্ষা করেন নি। তবু এগুলি আপনা হতেই কীভাবে যে আয়ত্ত করে ফেলেছেন তিনি তা কেউ কিছু বুঝতে পারে না।

একজন সিদ্ধযোগীর মত তিনি আসনে বসে ধীরে ধীরে মগ্ন হয়ে যান যোগক্রিয়ায়। পরে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় এক-একদিন তাঁর মুখ হতে বহু দৈববাণী ও অধ্যাত্মসাধনার বহু গূঢ় তত্ত্ব আপনা হতে বেরিয়ে আসে‌‌। তার সব অর্থ সাধারণ লোক ত দূরের কথা, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরাও উদ্ধার করতে পারতেন না।

মার এই মূর্তি দেখার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন মানুষের শোক তাপ মুহূর্তে দূর হয়ে যায়। ত্রিতাপ জ্বালা হতে মুক্ত হয়ে যায় নিমেষের মধ্যে। শিশু যেমন কোন কষ্ট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক নিশ্চিন্ত নির্ভরতায় মার কোলে ঢলে পড়ে এক অপার শান্তি লাভ করে, তেমনি মাকে পেয়েও অসংখ্য ভক্ত অনন্ত ও অনাবিল শান্তি লাভ করে।

ঢাকা শাহবাগে কালীবাড়ি হিন্দুদের একটি প্রসিদ্ধ ধর্মক্ষেত্র। বাজিতপুর থাকার সময়েই এই জায়গাটির কথা মনে হয় নির্মলার। একদিন সিদ্ধেশ্বরীর আসনটি সংস্কারের অভাবে অবহেলিত অবস্থায় জীর্ণ হয়ে পড়ে ছিল।

নির্মলা এসে সেই আসনের সংস্কার করলেন এবং সেখানে এসে মৌনব্রত অবলম্বন করে নতুন উদ্যমে সাধনা শুরু করলেন।

এই সিদ্ধেশ্বরী আসনেই একদিন তাঁকে শ্রীশ্রী মা আনন্দময়ী নামে নামকরণ করেন ভক্তেরা। শাহবাগে আসার পর হতে বহু ভক্তের সমাগম ঘটতে থাকে মার কাছে। এই সময় এখানে যে-সব পূজা কীর্তন ও যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতে থাকে, তাতে দলে দলে অসংখ্য লোক যোগ দেয়‌। তখন তাঁকে ভক্তরা বলত শাহবাগের মা। উপর থেকে মাকে দেখে মনে হয় যেন সৌম্য শান্ত লজ্জাশীলা এক সাধারন কুলবধূ।

কিন্তু কাছে গেলেই দেখা যায় উচ্চতর সাধনলব্ধ দিব্যভাবের এক অলৌকিক বিভূতি ঝরে পড়ছে সর্বাঙ্গে। যে দেখে এক গভীর স্বতঃস্ফূর্ত মাতৃভাবে ভরে যায় তার হৃদয়। সকলেরই মনে হয়, ইনি আমার মা। শুধু আমার মা নন সারা জগতের মা। নির্বিশেষে জগন্মাতা অসংখ্য জীবের মুক্তির জন্য সশরীরে আবির্ভূত হয়েছেন পাপ-তাপ জর্জরিত এই সংসারে।

বেশ ফর্সা এবং উজ্জ্বল রঙ। মৌনব্রত অবলম্বনের জন্য মুখে সবসময় কথা না বললেও মুখে হাসি কিন্তু সর্বদা লেগেই আছে। একখানি সাদা শাড়িতে সর্বাঙ্গ ঢাকা। একরাশ কালো চুল আলুলায়িত হয়ে ছড়িয়ে আছে পিঠের উপর।

মার এই মূর্তি দেখার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন মানুষের শোক তাপ মুহূর্তে দূর হয়ে যায়। ত্রিতাপ জ্বালা হতে মুক্ত হয়ে যায় নিমেষের মধ্যে। শিশু যেমন কোন কষ্ট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক নিশ্চিন্ত নির্ভরতায় মার কোলে ঢলে পড়ে এক অপার শান্তি লাভ করে, তেমনি মাকে পেয়েও অসংখ্য ভক্ত অনন্ত ও অনাবিল শান্তি লাভ করে।

হাসি নয় যেন অমৃত। পরম আনন্দের এক অফুরন্ত অমৃতধারা ঝরে পড়ছে মার হাসিতে। সে হাসির দিব্য ছটায় জগৎ হতে নিঃশেষে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে যত অশান্তি আর পাপের অন্ধকার।

মার শুভ্র বসন বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। তাঁর পরিধেয় বসনের এই শুভ্রতা উপহাস করছে যেন পৃথিবীর সমস্ত রকমের মলিনতাকে। মা আলুলায়িতকুন্তলা। তাঁর মুক্ত কেশপাশ যেন অখণ্ড মুক্তির প্রতীক। মা ভববন্ধন অর্থাৎ লজ্জা, ঘৃণা, ভয়, মোহ, দ্বেষ, শঙ্কা, চৈতন্য ও জগুপ্সা- এই অষ্টপাশ হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়েছেন বলেই এক জগদ্ব্যাপী সত্তায় ছড়িয়ে পড়তে পারেন সব জীবের অন্তরে। মোক্ষের সন্ধান দিতে পারেন অসংখ্য বদ্ধ জীবকে।

লৌকিক জীবনে যেমন মা কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, মাতৃরূপে আদর্শ স্থাপন করেছেন, ভারতের অধ্যাত্মজগতেও তেমনি সাধনার বিচিত্র পথ ও পদ্ধতিতে সিদ্ধিলাভ করে মা এক পরম বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর লৌকিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব কিছুই বিস্ময়কর‌। সাধারণ কার্যকারণ নিয়মের সুতো দিয়ে তা বিশ্লেষণ করা যায় না।

সকল জীবকেই মা সন্তানজ্ঞানে ভালোবাসতেন, জীবরাও যেন বুঝতে পারত তাদের প্রতি মার এই অকুণ্ঠ স্নেহ আর মমতার কথা। দেখা গেছে, মা যখন ধ্যানমৌন অবস্থায় থাকতেন তখন ছাগল কুকুর বিড়াল প্রভৃতি অনেক জীব এক আশ্চর্য শ্রদ্ধাভরে মার প্রতি তাকিয়ে থাকত নিমেষহারা চোখে। হরিনাম শুনত।

এমন কি একদিন এক ভক্ত ভয়ে ও বিস্ময়ে অবাক হয়ে দেখে, মা যখন একটি গাছের তলায় বাহ্য জ্ঞানহীন অবস্থায় ধ্যানমগ্ন হয়ে রয়েছেন তখন একটি প্রকাণ্ড বিষধর সাপ তার হিংসা বৃত্তি ভুলে গিয়ে মার পিঠ বেয়ে মাথার উপর ফণা তুলে রয়েছে। অনেকক্ষণ এইভাবে থাকার পর আপনা হতেই সাপটি কোথায় চলে গেল।

আর একদিন ভক্ত নিরঞ্জনের বাড়িতেও মার পিছু পিছু একটি সাপ গিয়েছিল। একবার ঢাকায় কালীপূজার সময় একটি বলির ছাগের উপর মার করুণা দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল সকলে। মার পূজাবিধি ছিল সত্যিই অলৌকিক। তিনি কখনো শাস্ত্রপাঠ করেন নি, পূজা পদ্ধতি কারো কাছে শেখেন নি, অথচ পূজার দৈহিক ও মানসিক ক্রিয়াগুলি আপনা হতেই তিনি করে ফেলতেন সুচারু ভাবে।

সব সাধকেরই গুরু থাকে। গুরু নির্দিষ্ট পথে সাধনা করেই সব সাধক সিদ্ধিলাভ করে থাকেন। কিন্তু মার গুরুকরণ হয় নি। তাঁর অধ্যাত্মসাধনার বিকাশ স্বতস্ফূর্ত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই সাধনার বিকাশের জন্য বাইরের কোন সাহায্যের দরকার হয় নি। ঈশ্বরভক্তি যেন তাঁর অন্তরের একটি সহজাত বৃত্তি।

মার দীক্ষা ও গুরুকরণ সম্বন্ধে একদিন প্রশ্ন করা হলে মা বললেন, শৈশবে বাবা-মা, সংসার জীবনে স্বামী এবং সকল অবস্থায় জগৎ পিতাই আমার গুরু।

লৌকিক জীবনে যেমন মা কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, মাতৃরূপে আদর্শ স্থাপন করেছেন, ভারতের অধ্যাত্মজগতেও তেমনি সাধনার বিচিত্র পথ ও পদ্ধতিতে সিদ্ধিলাভ করে মা এক পরম বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর লৌকিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব কিছুই বিস্ময়কর‌। সাধারণ কার্যকারণ নিয়মের সুতো দিয়ে তা বিশ্লেষণ করা যায় না।

………………………………………
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে:
পুনপ্রচারে বিনীত: প্রণয় সেন

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………..
আরো পড়ুন:
মা সারদা দেবী
প্রজ্ঞাপারমিতা শ্রীশ্রীমা সারদা
বহুরূপিনী বিশ্বজননী সারদামণি
মা মনোমোহিনী
শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে সপ্তসাধিকা
মাতৃময়ী তিনরূপ
মা আনন্দময়ী
আনন্দময়ী মায়ের কথা
ভারত উপাসিকা নিবেদিতা
রাসমণি
নিরাহারা যোগিনী মায়ের সন্ধানে
পূণ্যশীলা মাতা কাশীমণি দেবীর সাক্ষাৎকার
আনন্দময়ী মা
মা মারিয়াম :: পর্ব-১
মা মারিয়াম :: পর্ব-২
মা মারিয়াম :: পর্ব-৩
মা মারিয়াম :: পর্ব-৪
মীরার কথা
অলৌকিক চরিত্র মাদার তেরেসা
মা আনন্দময়ীর কথা
বৈষ্ণব সাধিকা যশোদা মাঈ
আম্মার সঙ্গলাভ
শ্রীশ্রী সাধিকা মাতা
জগৎ জননী ফাতেমা-১
জগৎ জননী ফাতেমা-২
জগৎ জননী ফাতেমা-৩
জগৎ জননী ফাতেমা-৪
জগৎ জননী ফাতেমা-৫
জগৎ জননী ফাতেমা-৬
জগৎ জননী ফাতেমা-৭
জগৎ জননী ফাতেমা-৮
জগৎ জননী ফাতেমা-৯
জগৎ জননী ফাতেমা-১০
জগৎ জননী ফাতেমা-১১
জগৎ জননী ফাতেমা-১২

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!