কলকাতার এক বিশিষ্ট ধনী সীতানাথ দাস মহাশয় দীর্ঘদিন যাবৎ বাত-রোগে কষ্ট ভোগ করছিলেন। তখনকার বহুবিশিষ্ট চিকিৎসা বিশারদকে দিয়ে চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয় না, বরং উত্তরোত্তর রোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবস্থা এমন চরমে ওঠে যে, প্রায় তিনি পঙ্গু হয়ে পরেন।
এই সময় তিনি লোকমুখে শোনেন বারদীর লোকনাথ ব্রহ্মচারীর কথা, তাঁর অত্যাশ্চর্য যোগবিভূতির কথা। মনে জাগল তাঁর প্রতি গভীর বিশ্বাস; ভাবলেন, তাঁর কাছে একবার পৌঁছাতে পারলে এতদিনের দুর্ভোগের শেষ হবে। অটুট বিশ্বাস এবং ভক্তি নিয়ে পরিবারের কয়েকজনকে সঙ্গে করে নৌকায় চেপে একদিন সীতানাথবাবু বারদীর আশ্রমে এসে হাজির হলেন।
আশ্রমে এসেই তাঁর মনের মধ্যে এক অপূর্ব ভাবের সঞ্চার হয়। তিনি মনে মনে স্থির করেন, এত কষ্ট স্বীকার করেই যখন বাবার কাছে এসেছেন, তখন নৌকোয় শুয়ে দাস-দাসীদের সেবা ভোগ করার চেয়ে আবার আশ্রমের আঙিনায় রোদ-জলে পরে থেকে তাঁর করুণা ভিক্ষা করাই উপযুক্ত কাজ হবে। মৃত্যুই যদি তাঁর ললাট-লিখন হয়, তবে এমন মহাপুরুষের সান্নিধ্যে এমন পূণ্য মহাতীর্থেই হোক। আশ্রমের আঙিনায় একটা খাটিয়ার ওপর শয্যাগত হয়ে রইলেন সীতানাথ।
দুটো দিন কেটে গেল। এই দু’দিনে তাঁর রোগক্লিষ্ট শরীরের ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি, রোগ পার হয়ে গেল, তবু তিনি পরে রইলেন সেখানে। শরীরে তাঁর কষ্ট থাকলেও মনের মধ্যে তিনি অনুভব করেন চরম বিশ্বাস আর নির্ভরতা। তাই তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত অটল হয়ে রইলেন- মৃত্যু যদি হয়, তবে নবরূপী এই সাক্ষাৎ শিবের সামনেই যেন হয়।
ভক্তের ভক্তিতে প্রসন্ন হন বাবা লোকনাথ, তিনি বলেন- আমার এখানে রোদে, জলে, ঝড়ে অনেক কষ্ট পেয়েছিস, তোর এই কষ্টে আমিও অনেক কেঁদেছি ; তুই আমার আশির্বাদে সম্পূর্ণ সুস্থ। তোর যথাসর্ব্বস্ব যা আমাকে দিয়েছিস, তা আমারই থাকল; তোকে কেবল আমি ভোগ করার অধিকার দিলাম। এখন থেকে তোর সব দায়িত্ব আমার, তুই এখন নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরে যা।
তৃতীয় দিন। ভক্তি আর বিশ্বাসের পরীক্ষার শেষ হয়। এই দু’দিন রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের মধ্যে পরে থাকা ভক্তের এক অদ্ভুত সাধনায় ভগবানের আসন টলে উঠল। তিনদিনের দিন ভোরবেলায় বাবা লোকনাথ আশ্রম কুটিরের দরজা খুলে কৃপাপ্রার্থী ভক্ত সীতারাথ দাসের সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন- তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, এবার ওঠ।
বাবা এই কথা কয়টার মধ্যে দিন যেন অমৃত বর্ষণ করেন। সীতানাথ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেন, যেন তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহেশ্বর। সারা শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে তাঁর। মনুষ্য শরীরে এমন দিব্য জ্যোতির্ময় ভাব দর্শন, এ যেন তাঁর কাছে স্বপ্নবৎ।
বাবা লোকনাথ তাঁর কৃপাহন্ত প্রসারিত করে কৃপাপ্রাথী ভক্তের সমস্ত রোগ-ব্যাধি মুহুর্তমধ্যে হরণ করে নেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত খাটের ওপর উঠে বসেন সীতানাথ। দু’চোখ বেয়ে ঝরে পরতে থাকে এক অনাবিল আনন্দের অশ্রুধারা। ভগবানের শ্রীচরণে তিনি সর্বতোভাবে নিজের দেহ-মন-প্রাণ সমর্পণ করেন।
ভক্তের ভক্তিতে প্রসন্ন হন বাবা লোকনাথ, তিনি বলেন- আমার এখানে রোদে, জলে, ঝড়ে অনেক কষ্ট পেয়েছিস, তোর এই কষ্টে আমিও অনেক কেঁদেছি ; তুই আমার আশির্বাদে সম্পূর্ণ সুস্থ। তোর যথাসর্ব্বস্ব যা আমাকে দিয়েছিস, তা আমারই থাকল; তোকে কেবল আমি ভোগ করার অধিকার দিলাম। এখন থেকে তোর সব দায়িত্ব আমার, তুই এখন নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরে যা।
এই ঘটনার মাধ্যমে ভগবানের এই সত্যটিই প্রকটিত হয় যে, কেবল ভক্তই ভগবানের কৃপা লাভের জন্য অশ্রু বিসর্জন করে না। ভগবানও ভক্তের দু:খ-কষ্টের জন্য সমানভাবে ব্যথিত হন, তিনি তাঁর ভক্তের জন্য অশ্রু বিসর্জন করেন।
<<লোকনাথ বাবার লীলা : দশ ।। লোকনাথ বাবার লীলা : বারো>>
………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগার
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা
……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার