ভবঘুরেকথা
শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

এমনি একজন মিথ্যাবাদী একসময় মিথ্যা জাল করার অপরাধে ধরা পরে। কিন্তু কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অপরাধ অস্বীকার করে মিথ্যা বলে। মনে মনে সে তার কর্মফলের কথা ভেবে ভীত হয়ে পরে, তার মনে পড়ে যায় বারদীর বাবা লোকনাথের কথা। লোকের মুখে মুখে এই নাম সে অনেক শুনেছে ; তাই সে ভাবল, এই মহাপুরুষের মুখে থেকে যদি একবার অভয় বাণী পাওয়া যায়, তবে সে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যাবে।

লোকটি বারদীতে এসে লোকনাথ বাবার শরণাগতি প্রার্থনা করল। কিন্তু বাবার সামনে নিজের অপরাধ অস্বীকার করে সেখানেও সে মিথ্যা কথা বলতে দ্বিধা বোধ করল না। তবু পরম করুণাময় বাবার মুখ থেকে অভয়বাণী নি:সৃত হল- তুই মুক্তি পাবি।

ভক্তবৎসল বাবা লোকনাথ শরণাগতের অভীষ্ট পূরণেল জন্যই তো প্রকৃতির ধ্যানমৌন হিমালয়ের কোল থেকে নেমে এসেছেন, পাপ-তাপক্লিষ্ট আর্ত মানুষের নূতন আলোর পথের সন্ধান দিতে। তাই আমি বললেন- যদি তুই সত্যি আমার শরণাগত হয়ে থাকিস তবে আমি যা আদেশ করব, তোকে তাই করতে হবে।

বাবার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে আনন্দে-উল্লাসে পথে পা দেবার সঙ্গে সঙ্গে মুখোমুখি হল ওই আশ্রমেরই এক সেবকের সঙ্গে। সেবকটির কেমন যেন সন্দেহ হয়েছিল লোকটির ওপর। সে জানতে পেরেছিল, লোকটির বিরুদ্ধে কোর্টে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা মিথ্যা নয়- সত্য। শুধু তাই নয়, সে লোকনাথ বাবার কাছেও নিজের অপরাধ লুকিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে।

তাই সেবকটি লোকটিকে ভর্ৎসনা করে বললে- বাবার কাছে এসে মিথ্যা বলতে আপনার বিবেকে একবারও বাধল না? বাবা লোকনাথ সাক্ষাৎ পরম করুণাময় ভগবান, তিনি সবার অপরাধই ক্ষমা করেন। আপনার অপরাধ আপনিা ভাল করেই জানেন ; জেনে শুনে একজন ব্রহ্মজ্ঞ সত্যদ্রষ্টা মহাপুরুষের কাছে মিথ্যা বলার জন্য তাঁর মুখ নি:সৃত অভয়বাণীও যে মিথ্যে হয়ে যেতে পারে তা কি ভেবে দেখেছেন?

আগুনে যেন ঘৃতাহুতি পড়ল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে লোকটির অন্ত:করণে অনুশোচনার আগুনে দাউ দাউ করে দগ্ধ হতে লাগল। বাবা লোকনাথই যেন এই সেবকটির মধ্য দিয়ে তাকে ভর্ৎসনা করলেন। সে ছুটে গেল বাবার কাছে, অকপটে সে খুলে বলল সব কথা এবং মিথ্যা বলার পাপের জন্য বাবার কাছে বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করল। সে বলল- বাবা আজ থেকে আমি আপনার শরণাগত হলাম, আপনি আমায় রক্ষা করুন।

ভক্তবৎসল বাবা লোকনাথ শরণাগতের অভীষ্ট পূরণেল জন্যই তো প্রকৃতির ধ্যানমৌন হিমালয়ের কোল থেকে নেমে এসেছেন, পাপ-তাপক্লিষ্ট আর্ত মানুষের নূতন আলোর পথের সন্ধান দিতে। তাই আমি বললেন- যদি তুই সত্যি আমার শরণাগত হয়ে থাকিস তবে আমি যা আদেশ করব, তোকে তাই করতে হবে।

আদেশ করার সঙ্গে সঙ্গে যেন আদেশ পালনের শক্তিও সঞ্চারিত হল লোকটির মধ্যে। আত্মবিশ্বাসে ভর করে সে বলল- আপনি আমায় যা আদেশ করবেন, আমি তাই পালন করব বাবা, বলুন আমায় কি করতে হবে?

এইবার লোকটি বুঝতে পারে, সত্যের আনন্দ কি? যদি কেউ সত্যকে স্বীকার করে, তবে সেই সত্যকে কেমন করে সম্মান জানাতে হয়, সব জুরি এবং বিচারকদের মধ্যে বসে বসে সত্যদ্রষ্টা বাবাই তা দেখিয়ে দিলেন। বাবা লোকনাথের এই অভূতপূর্ব লীলাটি সত্যনিষ্ঠার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বাবা আদেশ করলেন- তুই কোর্টে গিয়ে সবার সামনে নিজের অপরাধ স্বীকার করে তোর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত কর। আর আমি যখন বলেছি, তুই মুক্তি পাবি, সে কথা কখনো মিথ্যা হবে না।

বাবার কথায় লোকটির মনে দৃঢ়বিশ্বাস ফিরে এলো। সত্যকে স্বীকার করার এক মহাশক্তি সঞ্চারিত হল তার অন্তরের অন্ত:স্থলে কোর্টে দাঁড়িয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নির্ভয়ে সে তার দোষ স্বীকার করল। তার এই অকপট স্বীকারোক্তিতে ম্যাজিস্ট্রেট ভাবলেন, লোকটিকে হয়ত দোষ স্বীকার করার জন্য কোনোভাবে চাপ সৃষ্ট করা হয়েছে। তাই তিনি মামলাটি উচ্চ বিচারালয়ে পাঠিয়ে দিলেন ; সেখানেও সে একই কথাই ব্যক্ত করল।

অভিযুক্ত লোকটিকে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে পাঠানো হল। সেখানেও সর্ব্ব সমক্ষে সে নিজের দোষ কবুল করল। হাইকোর্টের বিচারে লোকটি নির্দোষ প্রমাণিত হল। মুক্তির আনন্দ লাভ করে বারদীতে ছুটে এসে বাবার চরণ বন্দনা করতে থাকে সে।

এইবার লোকটি বুঝতে পারে, সত্যের আনন্দ কি? যদি কেউ সত্যকে স্বীকার করে, তবে সেই সত্যকে কেমন করে সম্মান জানাতে হয়, সব জুরি এবং বিচারকদের মধ্যে বসে বসে সত্যদ্রষ্টা বাবাই তা দেখিয়ে দিলেন। বাবা লোকনাথের এই অভূতপূর্ব লীলাটি সত্যনিষ্ঠার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

<<লোকনাথ বাবার লীলা : আট ।। লোকনাথ বাবার লীলা : দশ>>

………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগারো
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা

……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!