ভবঘুরেকথা
শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

লোকনাথ বাবার অলৌকিক যোগশক্তির কথা লোকমুখে সর্বত্র প্রচারিত হতে থাকে। ফলে, তাঁর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বেড়ে যেতে থাকে। পূর্ববাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে ত্রিতাপ-জ্বালাগ্রস্ত অসংখ্য নরনারী শান্তির আশায় বারদীর আশ্রমে লুটিয়ে পরতে থাকে বাবার চরণে।

এদিকে লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রভাব ধর্মজগতে যতই বেড়ে যেতে থাকে, ততই ঢাকার ব্রাহ্মসমাজের প্রভাব কমতে থাকে। সাধারণ মানুষ ব্রাহ্মধর্মে আস্থা হারিয়ে ফেলে। লোকনাথ বাবার প্রভাবকে খণ্ডন করার মত শক্তি ব্রাহ্মসমাজের ছিল না।

ফলে ঢাকার ব্রাহ্মসমাজের লোকেরা রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বারদীর লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার উপরে। তারা দেখল, বারদী গ্রাম ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলের ছোট-বড়, উচ্চ-নীচ সব মানুষ লোকনাথ বাবার একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই তাঁকে আশ্রম থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব নয়। ফলে, ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজের লোকেরা অবশেষে ষড়যন্ত্র করে দু’জন ব্রাহ্ম যুবককে লোকনাথ বাবাকে গোপনে মেরে তাড়িয়ে দেবার কাজে নিযুক্ত করে।

এই যুবক দু’টি ঠিক করল, গভীর রাতে চুপি চুপি আশ্রমে ঢুকে এই কাজ করবে। এই ভেবে একদিন গভীর রাতে তারা লাঠি হাতে আশ্রমের উঠোনে গিয়ে এক জায়গায় লুকিয়ে রইল। তারা ঠিক করল, লোকনাথ ব্রহ্মচারী ঘর থেকে একবার বার হলেই এমনভাবে লাঠিপেটা করবে, যাতে তিনি আশ্রম থেকে চিরদিনের মত চলে যান।

তখন নিশুতি রাত। আশ্রমের সব লোক ঘুমিয়ে পরেছে। যুবক দু’টি বাবার ঘরের দিকে ঘন ঘন লক্ষ্য করতে লাগল। এমন সময় এক অদ্ভুদ ঘটনা ঘটল। হঠাৎ কোথা থেকে এক বাঘিনী গর্জন করতে করতে যুবক দুটির দিকে ছুটে এল, যুবক দু’টি তখন ভয়ে চিৎকার করতে করতে আশ্রমের একটি ঘরে ঢুকে পরল। এই সময় লোকনাথবাবা ঘর থেকে বেড়িলে এলেন।

যে যতই অপরাধ করুক, সে অনুতপ্ত হয়ে দোষ স্বীকার করলে, আবার বিগলিত হত লোকনাথবাবা ; তিনি তাকে ক্ষমা না করে পারতেন না। লোকনাথবাবা যুবক দু’টিকে ক্ষমা করে বললেন- তোরা বাড়ি ফিরে যা, তোদের চৈতন্য হোক। এমন কাজ আর কখনো করতে যাস্ না।

যুবক দু’টি ভাবল, ভালই হলো। তাদের মেরে তাড়াতে হবে না, বাথই লোকনাথবাবাকে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু তারা ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে দেখল, সেই বাঘ লোকনাথ বাবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে তার ক্রদ্ধ গর্জন থামিয়ে, শান্ত পোষা বিড়ালের মত লুটিয়ে পড়ল লোকনাথবাবার চরণে। লোকনাথ বাবা তখন সেই বাঘিনীর মাথায় ও গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন- মাগো, তোমার এ সময়ে আশ্রমে আসা ঠিক হয়নি।

দেখছে না, তোমার ভয়ে বেচারা যুবক দু’টির কত কষ্ট হচ্ছে, তারা আমার কাছে আসতে পারছে না। লোকনাথবাবার এই কথা শূনে বাঘিনী শান্তভাবে উঠে দাঁড়াল, তারপর তাঁর মুখপানে একবার তাকিয়ে একলাফে চলে গেল আশ্রম থেকে।

এই দৃশ্য দেখে যুবক দু’টি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারল, যাঁকে তারা তাড়াতে এসেছিল, তিনি সাধারণ সাধক বা ভণ্ড সন্ন্যাসী নন ; এক অসাধারণ যোগশক্তির অধিকারী। সে মহাযোগী মহাপুরুষের কথা বা উপদেশ বনের বাঘও শোনে, তারা হিংসাবৃত্তি ভুলে যায়, তাঁকে আঘাত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা তাই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে লোকনাথবাবার পায়ে পরে ক্ষমা চাইল। চোখের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল তাদের।

যে যতই অপরাধ করুক, সে অনুতপ্ত হয়ে দোষ স্বীকার করলে, আবার বিগলিত হত লোকনাথবাবা ; তিনি তাকে ক্ষমা না করে পারতেন না। লোকনাথবাবা যুবক দু’টিকে ক্ষমা করে বললেন- তোরা বাড়ি ফিরে যা, তোদের চৈতন্য হোক। এমন কাজ আর কখনো করতে যাস্ না।

………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগারো
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা

……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!