একবার শক্তিমান সাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীজী বারদীর আশ্রমে লোকনাথ বাবাকে প্রথম দর্শন করতে আসেন। তিনি বাবাকে দেখেই চমকে ওঠেন, চিৎকার করে বলে ওঠেন- একি দেখছি। ওঁর দেহে সমস্ত দেব-দেবী বিরাজ করছেন ; ওঁর ঘরে দেব-দেবী রয়েছেন।
একথা শুনে উপস্থিত সকলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে, প্রভুস্পদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী নিজে একজন শক্তিমান সাধক বলেই লোকনাথ বাবার মহিমা ও আধ্যাত্মশক্তি কতখানি, তা বুঝতে পেরেছেন।
কুমিল্লায় নিবারণ রায় নামে একটি লোক খুনের মামালায় অভিযুক্ত হয় আদালতে। বেশ কিছুদিন মামলা চলার পর ফাঁসির হুকুম হয় নিবারণের ; ভাল উকিল থাকা সত্ত্বেও কোনও ফল হয়নি।
জেলাকোর্টে ফাঁসির হুকুম হলে হাইকোর্টে আপিল করা হয়, বড় বড় উকিল দেওয়া হয়। কিন্তু এবারেও কোন ফল হলো না। উকিলরা আশা ছেড়ে দিল। আগামীকাল বার হবে। সবাই বলল- জেলাকোর্টের ফাঁসির রায়ই বহাল থাকবে।
সেদিন কারাগারের রুদ্ধদ্বার ঘরের মধ্যে সারারাত শুধু অবধারিত মৃত্যুর কথাই ভাবতে লাগল নিবারণ। অধৈর্য হয়ে পাগলের মত সারা ঘরময় পায়চারি করতে থাকে সে।
সহসা একসময় তার অন্তরের মধ্যে কে যেন বলে ওঠে- লোকনাথ বাবার চরণে শরণ নে, একমাত্র তিনিই কৃপা করে বাঁচাতে পারেন মৃত্যুর হাত থেকে।
জেল থেকে খালাস পেয়েই বারদীতে বাবার কাছে ছুটে গেল নিবারণ; গিয়েই বাবার চরণে লুটিয়ে পরল। তাঁকে দেখেই বুঝতে পারল এই মহাপুরুষই সেদিন রাতে জেলে ভেতরে তাকে দর্শন দেন ; অবধারিত ফাঁসির হাত থেকে রক্ষা করেন তাকে।
বারদীর ব্রহ্মচারী লোকনাথ বাবার নাম এর আগে শুনেছে নিবারণ, কিন্তু তাঁকে দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত অন্তর দিয়ে একাগ্র মনে লোকনাথ বাবার মহানাম শরণ করতে লাগল নিবারণ। নাম করতে করতে ভক্তিভাবে বিহুল হয়ে তন্ময় হয়ে পরেছিল সে।
সহসা একসময় এক বিদ্যজ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল ঘরখানা। আর সেই জ্যোতির মধ্যে আবির্ভূত হলেন বাবা লোকনাথ। নিবারণ স্পষ্ট দেখল, জটাধারী দিব্য জ্যোর্তিময় এক সন্ন্যাসী কারাঘরের রুদ্ধ লোহার দরজা ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে, তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন।
নিবারণ তাঁর চরণে লুটিয়ে পরতেই সেই সন্ন্যাসী বললেন- তুই যার শরণ নিয়ে নাম করছিলি এতক্ষণ, আমিই সেই বারদীর লোকনাথ ব্রহ্মচারী। আমি তোর মামলার রায় লিখে দিতে এসেছি।
এই বলেই অন্তর্হিত হলেন বাবা, আর সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার হয়ে গেল ঘরখানা। মনে আশা জাগলেও সংশয় যাচ্ছিল না নিবারণের মন থেকে। পরদিন কোর্ট থেকে খবর এল, হাকিমের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছে নিবারণ।
জেল থেকে খালাস পেয়েই বারদীতে বাবার কাছে ছুটে গেল নিবারণ; গিয়েই বাবার চরণে লুটিয়ে পরল। তাঁকে দেখেই বুঝতে পারল এই মহাপুরুষই সেদিন রাতে জেলে ভেতরে তাকে দর্শন দেন ; অবধারিত ফাঁসির হাত থেকে রক্ষা করেন তাকে।
<<লোকনাথ বাবার লীলা : ছয় ।। লোকনাথ বাবার লীলা : আট>>
………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগারো
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা
……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার