-নূর মোহাম্মদ মিলু
নবী জগতের এক উজ্জ্বল নাম হল নবী হযরত আইউব আঃ। ধনে-সম্পদে-সন্তান সন্ততিতে কোন প্রকার অভাব ছিল না আইউব নবীর। দুনিয়াবি শান্তির সকল প্রকার বিষয় আল্লাহ দান করেছিলেন হযরত আইউব নবীকে।
শয়তান হাজারভাবে চেষ্টা করে নবী হযরত আইউব আ: কে ধোঁকায় ফেলতে না পেরে মহান আল্লাহকে বললেন, “আইউব (আঃ) এর কোন অভাব নাই, তাঁর পুত্র কন্যা সম্পদ সবই আছে। আরামের জন্য তাকে তুমি অগণিত সম্পদ দিয়েছ; তাইতো সে তোমার ভক্ত। না হয় তোমার ইবাদত করতো না।”
আল্লাহ বলেছিলেন, “আমার প্রকৃত ঈমানদার বান্দাকে তুমি কখনও পথভ্রষ্ট করতে পারবে না।”
ধীরে ধীরে আইউব (আঃ) এর সমস্ত ধন-সম্পদ বিনষ্ট হতে শুরু করলো, একে একে সকল সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পরল। চারদিক থেকে মসিবতের পাহাড় আসতে শুরু করল নবী আইউব (আঃ) এর কাছে। এক পর্যায়ে শরীরে এক আজব রোগের লক্ষণ দেখা দিল, যার ফলে ধীরে ধীরে শরীরে পচন আরম্ভ হতে লাগল। চোখের দৃষ্টি চলে গিয়ে অন্ধ হয়ে গেল আইউব নবী।
দেখতে দেখতে অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর শান্তির জীবন ভয়ানক রূপ ধারণ করল। তাঁর দেহের পঁচন এতো বাড়তে লাগলো যে একপর্যায়ে সারা দেহে ছোট ছোট পোকা দেখা দিতে লাগল। তাঁর জীবনের এই চরম বিপর্যয়ের সময় আশপাশের সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী আত্মীয়স্বজনরা আইউব নবীর কাছ থেকে দুরে সরে যেতে লাগলো। তিনি হয়ে পরতে লাগলেন একা।
সকলে তাঁকে ছেড়ে চলে গেলও কেবলমাত্র নবী আইউব (আঃ) এর স্ত্রী উনার পাশে থেকে গেলেন এবং সেবাযত্ন করতে লাগলেন। কিন্তু অর্থবিত্ত না থাকায় খাবারেরও চরম সংঙ্কট দেখা দিলো কিছুদিনের মধ্যেই। এমন অবস্থায় অবস্থাপন্য ঘরের নারী আইউব নবীর স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন খাবার সংগ্রহের জন্য।
তবে এই বিবেষিকাময় কঠিন সময়ের মাঝেও আইউব নবী প্রতিনিয়ত মহান প্রতিপালক আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতেন প্রতিনিয়ত।
একদিন নবীর স্ত্রী নবীকে বললেন, আপনি তো আল্লাহর নবী আপনি দোয়া করলেই তো আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিবেন, আপনি তাহলে দোয়া করছেন না কেন?
উত্তরে হযরত আইউব নবী বললেন, আচ্ছা বলতো, আল্লাহ আমাদের কত বছর সুখে রেখেছেন?
স্ত্রী বলেন, তা প্রায় ৮০ বছর।
এইবার নবী বলেন, তাহলে তুমিই বলো, আমি কোন মুখে সেই রহমতের দরবারে দোয়া করি যিনি না চাইতেই এত বছর আমাদের সুখে শান্তিতে রেখেছিলেন। এইভাবে কেটে যায় দীর্ঘ প্রায় ১২ কিংবা ১৮ বছর। চারদিক থেকে আসা এই কঠিন কষ্টের জীবনের মাঝে শয়তান বিভিন্নভাবে আইউব নবীকে আল্লাহর ধ্যান পথ থেকে সরানোর প্রয়াস চালালেও তিনি বারবারই ব্যর্থ হতে থাকেন। আইউব নবী ছিলেন আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে নিজেকে মশগুল রাখতেন। শযতানের কোনো ফন্দিই কাজে লগতো না সৃষ্টিকর্তার প্রতি এই নিবেদিত প্রাণ নবীর উপর।
একদিন আল্লাহ পাক বললেন, তোমার পা দিয়ে জমিনে আঘাত কর, এইখান থেকে নির্গত হবে শীতল পানি; যা গোসল এবং পান করার জন্য। (সূরা সোয়াদ)
আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তিনি যমীনে আঘাত করলেন। তৎক্ষনাৎ সেখান হতে পানির ঝর্ণাধারা বের হল। তিনি সে পানি পান ও গোসল করলেন। এতে আইউব নবী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন।
হাজারো কঠিন পরিস্থিতির মাঝে ও নিজেকে এক মূহুর্তের জন্য আল্লাহর রাস্তা থেকে সরিয়ে আনেননি, হাজারো কঠিন যন্ত্রণা হাসি মুখে মেনে নিয়েছেন, শুধু মাত্র আল্লাহর খুখির জন্য। যে বান্দা চরম বিপদেও তার শ্রষ্টাকে-শ্রষ্টার নামকে স্মরণে রাখে স্রষ্টা তাকে ফিরিয়ে দেন না। স্রষ্টার সকল সময় তাঁর পাশেই থাকেন।