আহার নিদ্রা ভয় মৈথুনঞ্চ সামান্য মেতৎ।
পশুবন্নরানাং জ্ঞানং নরা নামাধিকো।
বিশেষ জ্ঞানৈবিহীনা পশুভি সমানা:।।
আহার মৈথুন নিদ্রা ভয় পশুদেহে।
তেমনি এসব বৃত্তি মানবেতে রহে।।
জ্ঞানহীন পশু হতে আত্মজ্ঞান বলে।
শ্রেষ্ঠত্ব মানব জাতি জানিহ সকলে।।
মানব হইয়া আত্মজ্ঞান নাহি রয়।
নরপশু বলি তারে সকলে বলয়।।
জলের সঙ্গেতে জল মিশয়ে আপনা।
তেলে জলে মিশাইলে কভু তো মিশে না।
শ্রীকৃষ্ণ শরীর যখন নিত্য শুদ্ধ রয়।
জীবদেহ নিত্য হলে কৃষ্ণপ্রাপ্তি হয়।।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে আছয়ে লিখন।
কৃষ্ণগুণা হয়ে করে কৃষ্ণের ভজন।।
বর্ত্তিবে কিরূপে জীবদেহে কৃষ্ণ গুণ।
সেই হেতু আত্মজ্ঞানে হও সুনিপুণ।।
জাতি বিদ্যা মহত্ত্বতা রূপ ও যৌবন।
এ পঞ্চ কণ্টক বলি আছে নিরুপণ।।
ঘৃণা লজ্জা ভয় আর জিগুপ্সা অসুয়া।
অষ্টপাশ হয় কুলশীলজাতি নিয়া।।
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য।
এই ছয়জনা হয় ষড়রিপু ধার্য্য।।
ঐ পাঁচ কন্টক আর অষ্টপাশ সহ।
ষড়রিপু যোগে তাই উনিশ ধরহ।।
মায়াভ্রান্তি এক ধরি বিশেতে গণন।
এই বিশ-বিষে দেহ হয় জ্বালাতন।।
আত্মজ্ঞানামৃত বিষ করহ শোধন।
তবে কৃষ্ণপ্রাপ্তি কেবা করিবে বারণ।।
জীবদেহে কৃষ্ণপ্রাপ্তি কোন কালে নাই।
কৃষ্ণপ্রাপ্তি লাগি হয় অস্থির সবাই।।
জীবন্ত স্বভাব যবে হয়ে যাবে দূর।
তখন বৈরাগ্য ভাবে হবে ভরপুর।।
শুদ্ধ বৈরাগ্যতে হয় ভক্তির উদয়।
ভক্তি যোগে কৃষ্ণ গুণ দেহে সঞ্চারয়।।
কৃষ্ণ শরীরেতে হয় অনন্ত যে গুণ।
সর্ব্বগুণ আকর্ষিতে কেবা সুনিপুণ।।
যেসব গুণেতে কৃষ্ণ ভকত বৎসর।
সেই সব গুণে লয় ভকত সকল।
ভক্তগণ সেই গুণ গ্রহণ করিতে।
আত্মজ্ঞান সুনিশ্চিত হইবেক লভিতে।।
বিশেষ কৃষ্ণের একগুণ বর্ত্তমান।
জগতের সব প্রাণী দেখেন সমান।।
উচ্চ নীচ ছোট বড় জাতিভেদ আদি।
ব্রাহ্মণ, চান্ডাল আর শুদ্র কি বৈশ্যাদি।।
স্থাবর জঙ্গম কিংবা দেবতা মানব।।
একই সমান কৃষ্ণ নিকটেতে সব।।
বহু পুরাণেতে তার দৃষ্টান্ত প্রমাণ।।
মহাভারতেতে তার আছয়ে আখ্যান।
আত্মরূপে সর্ব্বঘটে কৃষ্ণ করে বাস।
তাই তার এক নাম হয় শ্রীনিবাস।।
শ্রীকৃষ্ণ চরণে মোর এই অভিলাষ।
বাঞ্ছামনে শ্রীচরণে রাখ শ্রীনিবাস।।
……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস