ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

রাউৎখামার গ্রামে প্রভুত্ব প্রকাশ ও ভক্তসঙ্গে নিজালয় গমন।
পয়ার

আত্মা সমর্পিয়া ভক্তি করে রামচাঁদ।
ভক্তিতে হ’লেন বাধ্য প্রভু হরিচাঁদ।।
শ্রীবংশীবদন আর শ্রীরাম সুন্দর।
বাঁশীরাম কাশীরাম শ্রীরাম কিশোর।।
বালাদের বাড়ী দিন দুদিন থাকিল।
বালারা সগণসহ মাতিয়া উঠিল।। (স্বজনসহ)
ভক্তগণ সঙ্গে করি হরিপ্রেম রসে।
নাম গান ভাবে মত্ত মনের উল্লাসে।।
দেশ ভরি শব্দ হ’ল মধুর মধুর।
যশোমন্ত ছেলে হরি হ’য়েছে ঠাকুর।।
রোগযুক্ত লোক যত প্রভুর স্থানে যায়।
কীর্তনের ধুলা অঙ্গে মাখিবারে কয়।।
অমনি সারিয়া ব্যাধি করে সংকীর্তন।
কেহ বা লোটায়ে ধ’রে প্রভুর চরণ।।
কেহ কেহ মনে মনে করেন মানসা।
ব্যাধিমুক্ত হোক মোর পূর্ণ হোক আশা।।
হরিলুঠ দেব এনে শ্রীহরির স্থানে।
কেহ কেহ মুদ্রা দিব মনে মনে মানে।।
কীর্তনে আসিয়া কেহ গায়ে মাখে ধুলি।
রোগমুক্ত হ’য়ে নাচে দুই বাহু তুলি।।
কখন কখন প্রভু নিজ ভক্ত সঙ্গে।
হাসে কাঁদে নাচে গায় কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।
কখন কখন প্রভু নিশ্চিন্ত থাকয়।
কোন ব্যাধিযুক্ত লোক এমন সময়।।
রোগীরা মানসা সব করিত হরিষে।
আরোগ্য হইলে ব্যাধি দাস হ’ব এসে।।
কেহ বা কহিত দাস হইনু এখনে।
মনঃপ্রাণ দেহ সপিলাম শ্রীচরণে।।
দেহের এ রোগ মম হউক আরোগ্য।
অর্থ কিছু তাম্রমুদ্রা দিয়া যাব শীঘ্র।।
কেহ বা কহিত দিব সোয়া পাঁচ আনা।
কেহ বা কহিত আমি দিব সোয়া আনা।।
কেহ বা কহিত আমি দিব পাঁচসিকা।
কেহ বা কহিত দিব সোয়া পাঁচসিকা।।
কেহ বা যাইত মনে মানসা করিয়া।
আরোগ্য হইলে ব্যাধি দিতেন আনিয়া।।
প্রভুর মুখের বাক্যে রোগমুক্ত হয়।
এইমত রোগী কত আসে আর যায়।।
পাঁচ সাত গ্রামে ক্রমে শব্দ হ’ল ভারি।
কত লোক আসিত দেখিব বলে হরি।।
যেখানে থাকিত প্রভু ল’য়ে ভক্তগণ।
চাউল মজুদ হত দুই তিন মণ।। (হ’ল)
টাকাগুলি যত সব রোগীরা আনিত।
কতক হইত ব্যয় কতক থাকিত।।
প্রভুর সম্মুখে এনে হাজির করিত।
ঠাকুর তাহার কিছু হাতে না ধরিত।।
ভক্তগণ রাখিতেন আর আর স্থানে।
হরিলুঠ কতজনে দিত সংকীর্তনে।।
এইভাবে প্রভু রহিলেন তিনমাস।
একদিন ভক্তগণে বসি প্রভু পাশ।।
প্রভুর নিকটে কহে করজোড় করি।
যাইব আমরা সবে আপনার বাড়ী।।
প্রভু বলে কেবা আত্ম কেবা কার পর।
আমি কার কে আমার মায়া বাড়ী ঘর।।
ভক্তগণে বলে প্রভু! দয়া হয় যদি।
ল’য়ে চল সকলে শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি।।
শুনিয়া হাসিয়া কয় প্রভু ইচ্ছাময়।
কর ইচ্ছা যাহা তোমাদের ইচ্ছা হয়।।
হ’য়ে তুষ্ট মহাহৃষ্ট পরস্পর কয়।
শ্রীধামে কে যাবি তোরা আয় আয় আয়।।
এত বলি সবে মিলি সাজাল তরণী।
যার বাড়ী যাহা ছিল দ্রব্য দিল আনি।।
তাম্রমুদ্রা রৌপ্যমুদ্রা কেহ দিল ধান্য।
কেহ দধি কেহ ঘৃত পাত্র পরিপূর্ণ।।
কেহ দিল তরকারি কুষ্মাণ্ড কদলী।
পক্ক রম্ভা থোড় মোচা পদমূল কলি।।
ছোলা বুট মুগ মাস মটর ডাউল।
বস্তা দশ পরিপূর্ণ নূতন চাউল।।
ছানা দধি সন্দেশাদি গুড় দশখান।
আতপ তণ্ডুল দশমণ পরিমাণ।।
দুইশত নারিকেল হাজার সুপারী।
পাঁচ হাত মুখে এক সাজাইল তরী।।
তরী পরিপূর্ণ করি ঠাকুরে উঠায়।
হরি বলে তরী খুলে ওঢ়াকাঁদি যায়।।
ওঢ়াকাঁদি ঘাটে তরী লাগাইল এসে।
ভক্তগণে দ্রব্য আনে ঠাকুরের বাসে।।
প্রভু যায় আগু আগু পিছে ভক্তগণ।
যাইতে আসিতে পথে করে সংকীর্তন।।
ঠাকুর আসিয়া বসিলেন নিজ ঘরে।
ভক্তগণ দ্রব্য এনে রাখে ভারে ভারে।।
টাকা সিকি আধুলী তাম্রের মুদ্রা যত।
সব সুদ্ধ পরিমাণ টাকা একশত।।
প্রিয়ভক্ত রামচাঁদ সেই টাকা ল’য়ে।
লক্ষ্মীমার নিকটেতে দিলেন আনিয়ে।।
ঠাকুর বলেন তবে ইহা তুলে লও।
কি তব বাসনা মনে আর কিবা চাও।।
লক্ষ্মীমাতা বলে মম বাসনা কি আর।
চিরদাসী অভিলাষী শ্রীপদ তোমার।।
ঐশ্বর্য প্রকাশ হল ভকত সমাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!