হরিবরের কনিষ্ঠা কন্যার বিবাহ
আদি পত্নী সহচারী পুত্র সহ গেল মরি
বিলাপ করিয়া সাধু লিখিলেন গ্রন্থ।
কিছুকাল পরে তার বিভা করে পুনর্ব্বার
ক্রমে ক্রমে হরিবর হইলেন শান্ত।।
কামিনী নামিনী ধনি পত্নীরূপে এল যিনি
ভক্তিমতী সে রমণী পতি-প্রিয়া অতি।
পত্র পেতে করে সাধ জন্মিল কৃষ্ণপ্রসাদ
অক্ষয়ের বরে জন্মে শুনি এ ভারতী।।
পরে জন্মে তিনকন্যা কনিষ্ঠা অতীব ধন্যা
সাবিত্রী নামেতে কন্যা সাবিত্রী সমান।
বুদ্ধিমতী অতিশয় দেশবাসী সবে কয়
হেন কন্যা যেবা পায় সেই ভাগ্যবান।।
বয়সে বালিকা মাত্র তবু জানে কত তত্ত্ব
বলিতেছি সেই সুত্র সাধুজন ঠাঁই।
প্রতিভাশালিনী অতি বহুগুণে গুণবতী
পতিপদে নিষ্ঠা রতি রাখিত সদাই।।
একদা প্রভাতকালে কয়জনে একদলে
মতুয়ারা হরিবলে গেল দুর্গাপুরে।
হরিবর বাড়ী নাই সাবিত্রী দেবীর ঠাঁই।
তাহারা জিজ্ঞাসে তাই অতি মৃদু সুর।।
‘‘পিতা তব গেল কোথা বল দেখি ওগো মাতা
কেন নাহি বল কথা, কর নাকি ভয়?’’
নীরবে শুনিয়া যায় নাহি কোন কথা কয়
পাদ্য অর্ঘ্য আনি দেয় ব্যস্ত অতিশয়।।
অন্য কথা সনাতন করেছেন আলাপন
সব করে নিরীক্ষণ দেখিলেন চোখে।
কিবা জানি কোন ছলে উত্তরে পড়েছে হেলে
গৃহখানি কোলে কোলে, পড়িয়াছে বেঁকে।।
সাধুভক্ত সনাতন চিন্তা করে সর্ব্বক্ষণ
ওড়াকান্দী বলে মনে সদা রয় তার।
সে গৃহের দশা দেখে হেলা উত্তরের দিকে
যেন ওড়াকান্দী মুখে করে নমস্তার।।
সনাতন হাসি কয় ‘‘একি কান্ড মহাশয়
ঘর কেন হেলে রয়, উত্তরে দিকে?’’
এই বাণী শুনি কানে প্রবীণার মত জ্ঞানে
চাহি সনাতন পানে সাবিত্রী বালিকে।।
বলে ‘‘সাধু শোন কথা শুধু কি গৃহের মাথা
আমাদের সব মাথা উত্তরেতে হেলা।
যত সাধু আসে যায় তাঁহাদের করুনায়
পিতা মোর আর দেয় দক্ষিণেতে পেলা।।’’
বালিকার মুখে শুনি এহেন মধুর বাণী
সনাতন মহাগুণী কান্দিয়া আকুল।
বলে ‘‘করি আশীর্ব্বাদ দয়া করি দিবে পদ
দয়াময় গুরুচাঁদ, ধন্য হবে কুল।।’’
ওড়াকান্দী পরে যায় সনাতন মহাশয়
গুরুচাঁদে সব কয় এ সব কাহিনী।
গুরুচাঁদ শুনি কয় ‘‘তুষ্ট আমি অতিশয়
যাতে সুখী সুখে রয় করিব এখনি।।
মতুয়ার যাহা ভাব এ নারীর সে স্বভাব
ভাবে যাতে মিশে ভাব সেই ভাব করি।
গোপাল সাধুর ধরে যদি বিয়া দেই তারে
তাতে বটে হতে পারে সুখী এই নারী।।’’
ইচ্ছাময় ইচ্ছা করে কিসে বাধা হতে পারে
ডেকে কয় হরিবরে, শোন হরিবর।
সাবিত্রী তোমার কন্যা জানিলাম জ্ঞানে ধন্যা
স্বভাবেতে অতি পন্যা বুদ্ধিতে প্রখর।।
গোপালের পুত্র সাথে ইচ্ছা আছে মোর চিতে
এই কন্যা বিয়ে দিতে তুমি কিবা বল?’’
কেন্দে কয় হরিবর ‘‘দয়াময় মহেশ্বর
আমি অতি দুরাচার মহাদুষ্ট খল।।
গোপালের সাথে মোরে মিশাবে কেমন করে
তিনি কভু দয়া করে নেবে কি এ কন্যা?’’
প্রভু কয় ‘‘চুপ থাক আমার বচন রাখ
যাহা বলি জেনে রাখ সাবিত্রী সুধন্যা।।’’
শুনিয়া প্রভুর বাণী প্রেমিকের শিরোমনী
করি জোড় করপাণি স্বীকার করিল।
কিছুদিন পরে তার মনে জানি সমাচার।
ওড়াকান্দী ধামোপর গোপাল আসিল।।
আসিল গোপাল সাধু চিত্তে ভরা প্রেম মধু
গুরুচাঁদ পূর্ণ বিধু বলিলেন তাঁরে।
‘‘তোমার পুত্রের তরে রেখেছি জোগাড় করে।
শ্রীহরিবরে ঘরে এক পুণ্যবতী।।
আমার বচন ধর তারে পুত্রবধু কর
বাধ্য তাতে হরিবর অতি হৃষ্টমতি।।’
প্রভু যদি বলে তাই গোপালের কথা নাই
হরিবরে বলে ভাই করি আলিঙ্গন।।
প্রভু দিন ঠিক করে সাধু আর হরিবরে
পরিণয় কার্য্য পরে করে সমাপন।।
কনিষ্ঠ পুত্রের নাম কাশীনাথ গুণধাম
করিতেন অবিরাম পিতার সেবন।
পিতা যাহা আজ্ঞা করে এস্ত্রে ব্যস্তে তাহা করে
কভু কোন দিন তরে করেনা লঙ্ঘন।।
বিবাহের এই সুত্রে কিছু কতা লিখি পত্রে
গোপালের জ্যেষ্ঠ পুত্রে সেই কন্যা দান।
পুণ্যবতী মহাসতী গুণবতী নিষ্ঠামতি
কেহ নহে ভাগ্যবতী তাহার সমান।।
নামেতে তপতী জানি ‘তোতা’ নামে আদরিণী
যেই ভাবে এল ধনি লহ্মীখালী বাড়ি।
পিতা তার ধনঞ্জয় মহাসাধু মহাশয়
গোপালের সঙ্গ পেয়ে সব দিল ছাড়ি।।
দুটি পুত্র আছে তাঁর চন্দ্রমণি জ্যেষ্ঠ তার
কনিষ্ঠ নবকুমার মহাগুণিশালী।
গোপালের করুনায় গুরুচাঁদ ধরা দেয়
তাই তাঁর সঙ্গে রয় সব কিছু ভুলি।।
চিরকুমারের বেশে এবে ভ্রমে দেশে দেশে
পবিত্র প্রেমের রসে দেহ মন ঘেরা।
গুরুচাঁদ অনুসঙ্গ সদা ছিল তাঁর সঙ্গ
প্রেমে তাঁর নাহি ভঙ্গ সকলের সেরা।।
কন্যাসাধ্য যে কনিষ্ঠা কনিষ্ঠা হইয়া শ্রেষ্ঠা
কতগুণ দিল স্রষ্টা তার মনে প্রাণে।
সরলা বালিকা প্রায় হাসি মুখে কথা কয়
সাধু মহাশান্তি পায় তারে গৃহে এনে।।
কাঞ্চন জননী দেবী নিস্কলঙ্কা পুন্যছবি
শ্রীগুরু গোপাল রবি দীপ্ত দিবাকর।
হরশীত কাশীনাথ তপতী সাবিত্রী সাথ
গৃহাশ্রম ধর্ম্মমত করিল প্রচার।।
জীবন সন্ধ্যার কালে এই কিরে ছিল ভালে
সতী তারা গেল চলে ফেলে গোপালেরে।
দীন মহানন্দ কয় গোপালের বেদনায়
পশুপাখী কান্দে হায় বৃক্ষপত্র ঝরে।।