আনন্দের রাগাত্মিকা ভক্তি।
পয়ার
আনন্দের পুত্র হ’ল আনন্দ অপার।
আনন্দ রাখিল তার নাম হরিবর।।
শ্রীহরির বরে জন্ম কি রাখিব নাম।
এ ছেলের রাখিলাম হরিবর নাম।।
তের মাস গর্ভবাস পড়ে হ’ল ছেলে।
ভাসিছে আনন্দ সুখ জলধির জলে।।
সবে বলে ধন্য ধন্য শ্রীহরি ঠাকুর।
অপুত্রক পুত্র লভে মহিমা প্রচুর।।
বারশত পচাত্তর সালের আষাঢ়।
তেরই তারিখ সিংহরাশি শুক্রবার।।
পুত্র লাভ করি হ’ল পরম আনন্দ।
ওঢ়াকাঁদি যাতায়াত করেন আনন্দ।।
পাশরিতে নারে গুণ দিবানিশি গায়।
নারী পুত্র সঙ্গ করি ওঢ়াকাঁদি যায়।।
পুত্রের বয়স হ’ল ছয় সাত মাস।
হরিবর নাম রাখি মনেতে উল্লাস।।
সাত মাসে ছেলের হইল ভাপিজ্বর।
তাহা দেখি আনন্দের চিন্তিত অন্তর।।
প্রাতঃকালে উঠিয়া গেল উড়িয়া নগর।
যখনেতে যাইয়া উঠিল বাড়ী পর।।
সবে বলে ঠাকুরের না পাইবে দেখা।
গৃহদ্বার রুদ্ধ করি রয়েছেন একা।।
ভয়েতে কেহ না যায় ঘরের দুয়ারে।
দ্বার খুলিবেন প্রভু সাত দিন পরে।।
আনন্দ বলিল আমি খুলিব এ দ্বার।
তাহা শুনি সবে মানা করে বার বার।।
যে ঘরেতে মহাপ্রভু দ্বার রুদ্ধ ক’রে।
হাঁটিয়া আনন্দ গেল সে ঘরের দ্বারে।।
দ্বার মুক্ত করিয়া যখন প্রণমিল।
ক্রোধে পরিপূর্ণ প্রভু কাঁপিতে লাগিল।।
ঘর দ্বার বাড়ী ঘর থর থর কাঁপে।
ভয়ে কেহ নাহি যায় প্রভুর সমীপে।।
প্রভু বলে তুই কেন দুয়ার খুলিলি।
যাহা আসে মুখে প্রভু করে গালাগালি।।
তাহা দেখি আনন্দ সে পড়িল ফাঁপরে।
বাক্য নাহি সরে গাত্র ভাসে নেত্রনীরে।।
ভাবে এই অপরাধে মোর নাহি মাপ।
ভয় করি ধরি করে গুরুমন্ত্র জপ।।
নয়ন মুদিয়া করে স্তব স্তুতি গান।
তাহাতে হইল তুষ্ট প্রভু ভগবান।।
বল কেন দরজা খুলিলি তাহা বল।
আমার দরজা খুলে কার এত বল।।
আনন্দ চরণপদ্মে পুনঃ প্রণমিল।
শ্রীপদের রজ নিতে হস্ত বাড়াইল।।
ধীরে ধীরে হাত বাড়াইল ভয় বাসী।
তাহা দেখি মহা প্রভু উঠিলেন হাসি।।
অন্তরে সন্তোষ বাহ্যে যেন কত রাগে।
বলে যে বলদা দ্বার রুদ্ধ কর আগে।।
আজ্ঞা লঙ্ঘনের ভয়ে দরজা ধরিল।
দরজাতে ঝাঁপখানা আড়ো ক’রে দিল।।
আনন্দ বসিল যে এমন জায়গায়।
ঝাঁপের উপর দিয়া মুখ দেখা যায়।।
আনন্দের চাতুর্য বুঝিল হরিচাঁদ।
বলে বেটা কেবল পাতিস যত ফাঁদ।।
আনন্দ কাঁদিয়া বলে দিয়া ছিলে ছেলে।
হইয়াছে ভাপিজ্বর এসেছি তা বলে।।
ভাপিজ্বরে যদি মরে তোমার অখ্যাতি।
সে সংবাদ জানাইতে এসেছি সম্প্রতি।।
কেমনে সারিব জ্বর বলে দেহ তাই।
দয়াময় হরি আমি দেশে চলে যাই।।
প্রভু বলে কিছু বলিবারে পারিব না।
পুনর্বার সে আনন্দ আরম্ভিল কান্না।।
প্রভু বলে বলিলাম কিছু বলিব না।
মোরে দিয়ে তুই আজ কিছু বলাস না।।
প্রভু বলে আনন্দেরে দেখ মনে ভেবে।
তোর কথা রবে না আমার কথা রবে।।
আনন্দ বলিল মোর বিচারেতে হয়।
ভক্ত বাক্য ছাড়া তব বাক্য কবে রয়।।
তাহা শুনি মহাপ্রভু হাসিয়া উঠিল।
বলে তুই যা করিবি তাহা হবে ভাল।।
যাহা তোর মনে আসে তাহা গিয়া কর।
করা মাত্র সেরে যাবে তার ভাপি জ্বর।।
এর পূর্বে আনন্দ অপরে বনমালী।
জ্বর হ’য়ে প্লীহা হ’ল হইল দুর্বলী।।
একত্র হইয়া যায় ওঢ়াকাঁদি গায়।
শ্রীধামেতে দুই ভাই হইল উদয়।।
প্রণমিয়া পদতলে করে নিবেদন।
বলে প্রভু প্লীহা জ্বর কর বিমোচন।।
প্রভু বলে যদি আলি প্লীহা জ্বর হেতু।
কলা তিলযোগে খাস চালভাজা ছাতু।।
বনমালী স্বীকার করিল খা’ব তাই।
আনন্দ বলিল ওস্নান্ত নাহি খাই।।
ভোররাতে ছাতু খেতে আমি পারিব না।
প্রভু বলে তবে তোর প্লীহা সারিবে না।।
কাঁদিয়া আনন্দ তবে ধরে প্রভু পায়।
বলিলে মুখের কথা ব্যাধি সেরে যায়।।
তথাপি করুণাময় কর প্রতারণা।
রোগ হেতু তিলছাতু খেতে পারিব না।।
প্রভু বলে তবে তোর প্লীহা সারিবে না।
অমনি দিলেন হস্ত বাম কুক্ষি স্থানে।
প্রভু কন কই তোর পেটে প্লীহা আছে।
বলা মাত্র অমনি সে প্লীহা গেল ঘুচে।।
আনন্দের মুখপরে দিল এক ঠোকনা।
সেরে গেল প্লীহাজ্বর পেটের বেদনা।।
বনমালীর প্লীহা সাড়ে খেয়ে তিল ছাতু।
আনন্দের প্লীহা সারে প্রভু দয়া হেতু।।
অপার মহিমা প্রভু দীন দয়াময়।
পতিত পাবন হেতু অবতীর্ণ হয়।।
হরি হরি হরি হরি নাম কর সার।
পয়ার প্রবন্ধে কহে কবি গুণাকর।।