ভবঘুরেকথা

সাধু গুরু বৈষ্ণবের চরণ বন্দিয়া।
ভ্রমজ্ঞান কথা কিছু কহি বিবরিয়া।।
জ্ঞান লাভ তার যত আছে জ্ঞানচয়।।
আত্মজ্ঞান শ্রেষ্ঠ বলি মনিগণে কয়।।
ভ্রান্ত জীব কর্ম্মবশে সংসারে আসিয়া।
মরয়ে আপন দোষে তত্ত্ব না জানিয়া।।
সেই হেতু নানা শাস্ত্র করিয়া মন্থন।
ভ্রমজ্ঞান কথা কিছু করিব বর্ণন।।
ভোজবাজী মত মিছা হয় এ সংসার।
বৃথা কেঁদে বলে সবে আমার আমার।।
আমি কার কে আমার কভু না বিচারে।
মায়াচক্রে বন্ধ হয়ে ধুরয়ে আঁধারে।।
জীবের জীবন দেখ জলবিম্ব প্রায়।
এই আছে এই নাই কোথা চলি যায়।।
কত মত তৃণকাষ্ঠ আহরণ করি।
তাহা দিয়া অগ্নি জ্বালি লয় পাক করি।।
ঘর বলি নাম যাহা পৃথিবী ভিতরে।
সেই ঘর মিথ্যা দেখ বিশেষ বিচারে।।
যেই সব দ্রব্য দিয়া ঘর বান্ধা যায়।
সে দ্রব্যের নাম তথা কিছু নাহি হায়।।
হেন মিথ্যা কাণ্ড লিগ ঘর ঘর করি।
মত্ত হয় ভ্রান্ত জীবন আপনা পাসরি।।
ঘর রূপ দেহ এই করি নিরীক্ষণ।
নানবিধ দ্রব্যে ইহা হয়েছে গঠন।।
ভগবৎ কৃপা বলে দেহের ভিতরে।
নিশ্বাস প্রশ্বাস দেখ চলে বায়ু ভরে।।
একবার গেলে কভূ নাহি আসে বায়ু।
ব্রহ্মাদি দেবতা তারে নাহি দেয় আয়ু।।
নিত্য জীব মরিতেছে চোখে নাহি দেখ।
মায়ামগ্ন হয়ে বৃথা আচরণে থাক।।
চিরদিন চক্ষে রূপ না দেখ সমান।
তবু বৃথা আশা পথে থাক ভাসমান।।
যে আস্বাদ রসনাতে পেলে শিশুকালে।
সে আস্বাদ নাহি থাকে জেনো বৃদ্ধকালে।।
যুবাকালে যেই কেশে করিসে সুবেশ।
বৃদ্ধকালে হয়ে যাবে সেই পক্ক কেশ।।
যে দন্তে করেছ নানা সুস্বাদু চর্ব্বণ।
সে দন্ত বিহনে শেষে আসবে বেদন।।
শিশোর কালেতে সুখি ভার্ষ্যা সহবাসে।
বৃদ্ধকালে সে ভার্ষ্যায় কত ঘৃণা আসে।।
কিশোর বয়সে থাকে ইন্দিয় প্রবল।
ইন্দ্রিয় বিকল হলে মৃত্যু সে কেবল।।
এইরূপে দিনে দিনে হতেেছ মরণ।
শূন্যেতে থাকিয়া কাল করিছি লিখন।
জীবদেহে যত আছে সবছাড়ি যায়।
তথাপি মোহন্ধ জীব ফিরিয়া না চায়।।
সুখের কারণে করে ধন উপার্জন।
কবে সুখ হবে হৃদে না করে চিন্তন।।
লোভ-বশীভূত হয়ে অর্থ আহবয়।
না ভঅবে সে শেষকালে দেহ নষ্ট হয়।।
অতুল ঐশ্বর্য্য কেহ পার ভাগ্যগুণে।
ত্যাগ করি সে ঐশ্বর্য্য জপে নারায়ণে।।
আশঅর নিবৃত্তি কভু কারো নাহি হয়।
মরিলে আশার সাথে সব দূরে রয়।।
আশা ফলে দেখ এক দৃষ্টান্ত যে আছে।
বিজ্ঞজন শাস্ত্রে ইহা বর্ণিয়া গিয়াছে।।
মানবের আশা হয় যমপদ পাই।
যমরাজ আশা করে ইন্দ্রত্বটি চাই।
উন্দ্র দেবরাজ তুষ্টি ব্রহ্মপদ পেলে।
ব্রাহ্মচায় বিষ্ণুপদ বাঞ্ছি অবহেলে।
তবে দেখ আশার নিবৃত্তি কভু নাই।
আশাবৃক্ষ সেকারণে ছেদ করা চাই।।
আশা বৈতরণী নদী শাস্ত্রে হেন কয়।
বহু পুণ্য করি বৈতরণী পার হয়।।
আশা নদী নিরবধি কূল নাহি তার।
অল্প আয়ু জীবে তাহা চিন্তে আনিবার।।
তাই ভ্রান্ত জীবে এই ভ্রান্তি বুঝাইতে।
ভ্রমজ্ঞান বর্ণিলাম বুঝি বা যে ইথে।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য পাদপদ্ম করি আশ।
পয়ার রচিয়া কহে শ্রীচরণ দাস।।

……………………………………..
তত্ত্বরসামৃত জ্ঞানমঞ্জরী
-শ্রীশ্রী চরণ দাস

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!