ভবঘুরেকথা

-নূর মোহাম্মদ মিলু

হযরতে সায়্যিদুনা ঈশা রূহুল্লাহ (ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ) এর কাছে এক ব্যক্তি আরয করল, “ইয়া রূহুল্লাহ! আমি আপনার বরকতপূর্ণ সংস্পর্শে থেকে আপনার খিদমত করতে ও শরিয়তের জ্ঞান অর্জন করতে চাই।” তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। চলতে চলতে যখন উভয়ে একটি নহরের কিনারায় পৌঁছলেন তখন তিনি বললেন, “এসো খাবার খেয়ে নিই।”

তাঁর নিকট তিনটি রুটি ছিল। একটি করে রুটি উভয়ে খেয়ে নিলো, যখন ঈশা নহর থেকে পানি পান করছিলেন তখন ঐ ব্যক্তি তৃতীয় রুটিটি লুকিয়ে ফেলল। যখন তিনি পানি পান করে ফিরে আসলেন তখন রুটি না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?” সে মিথ্যা বলে বলল, “আমি জানি না।” তিনি নীরব রইলেন, একটু পরে বললেন, “এসো, আগে চলি।”

রাস্তায় একটি হরিণী দেখা গেল যেটার সাথে দুটো বাচ্চা ছিল। তিনি হরিণীর একটি বাচ্চাকে নিজের কাছে ডাকলে সেটা এসে গেল। তিনি সেটা জবাই করে রান্না করে উভয়ে খেলেন। গোস্ত খাওয়ার পর তিনি হাঁড়গুলো একত্রিত করে বললেন, “ ﻗﻢ ﺑﺎﺫﻥ ﺍﻟﻠﻪ ” (আল্লাহর (ﻋﺰﻭﺟﻞ) নির্দেশে জীবিত হয়ে ওঠে যাও)। হরিণীর বাচ্চা জীবিত হয়ে তার মায়ের সাথে চলে গেল।

তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, “তোমাকে ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি আমাকে এ মৌজেজা দেখানোর শক্তি দান করেছেন। সত্যি করে বল, তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?” সে বলল, “আমি জানি না।” ইশা বললেন, “এসো আগে চলি।” চলতে চলতে একটি সমুদ্রের নিকট পৌঁছালেন।

তিনি ঐ ব্যক্তির হাতে ধরে পানির উপর হেঁটে সমুদ্রের ওপারে পৌঁছে গেলেন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, “তোমাকে ঐ খোদা (ﻋﺰﻭﺟﻞ) এর শপথ! যিনি আমাকে এ মৌজেজা দেখানোর শক্তি দান করেছেন। সত্যি করে বল যে, ঐ তৃতীয় রুটিটি কোথায় গেল?” সে বলল, “আমি জানি না।” তিনি বললেন, “এসো আগে চলি।”

যেতে যেতে এক মরুভূমিতে পৌঁছলেন। তিনি বালুর একটি স্তূপ তৈরি করলেন আর বললেন, “হে বালুর স্তূপ! আল্লাহ্ ﻋﺰﻭﺟﻞ এর নির্দেশে স্বর্ণ হয়ে যাও।” তা সাথে সাথে স্বর্ণে পরিণত হল।

তিনি সেটাকে তিন ভাগ করার পর বললেন, “এ একভাগ আমার ও এক ভাগ তোমার এবং এক ভাগ তার যে ঐ তৃতীয় রুটিটি নিয়েছে।” একথা শুনতেই ঐ ব্যক্তি সহসা বলে উঠল, “ইয়া রূহুল্লাহ! ঐ তৃতীয় রুটিটি আমিই নিয়েছি।” তিনি বললেন, “এসব স্বর্ণ তুমিই নিয়ে নাও। অতঃপর তাকে ত্যাগ করে সম্মুখে অগ্রসর হলেন। ঐ ব্যক্তি স্বর্ণ চাদরে মুড়িয়ে একাকী রওয়ানা হয়ে গেল।

রাস্তায় তার সাথে দুজন লোকের সাক্ষাৎ হল। তারা যখন তার কাছে স্বর্ণ দেখল, তখন তাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত হল যাতে স্বর্ণ নিয়ে নিতে পারে। ঐ ব্যক্তি প্রাণ রক্ষার জন্য বলল, “তোমরা আমাকে হত্যা কেন করবে! (চলো) আমরা এ স্বর্ণগুলো তিনভাগ করে নিই এবং এক ভাগ করে বণ্টন করে নিই। ঐ দুজন এ কথায় রাজি হয়ে গেল।

ঐ ব্যক্তি বলল, এটা ঠিক হবে যে, আমাদের একজন সামান্য স্বর্ণ নিয়ে নিকটস্থ শহরে গিয়ে খাবার কিনে আনবে। পানাহার করে স্বর্ণ বণ্টন করে নিব। কথামত তাদের একজন শহরে গেল। খাবার কিনে ফেরার সময় সে ভাবল, এটা ঠিক হবে যে, খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেব, যাতে তারা দু’জন খেয়ে মরে যায়। আর সম্পূর্ণ স্বর্ণ আমিই পেয়ে যাব। এটা ভেবে সে বিষ কিনে খাবারের সাথে মিশিয়ে দিল।

ওদিকে ঐ দুজন এ ষড়যন্ত্র করল যে মাত্র সে খাবার নিয়ে আসবে তারা উভয়ে মিলে তাকে মেরে ফেলবে। তারপর সম্পূর্ণ স্বর্ণ অর্ধেক করে ভাগ করে নেবে। যখন ঐ ব্যক্তি খাবার নিয়ে পৌঁছল। তখন তারা উভয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে মেরে ফেলল। এরপর আনন্দিত হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য বসলে বিষ নিজের কাজ সম্পাদন করল আর এরা দুজনও লম্ফঝম্প মারতে মারতে মরে গেল আর স্বর্ণ সেভাবেই পরে রইল।

এরপর ঈশা নবী ফিরে আসার সময় কিছু লোক তাঁর সাথে ছিল। তিনি স্বর্ণ ও লাশ তিনটির দিকে ইশারা করে সাথীদের বললেন, “দেখো দুনিয়ার এ অবস্থা! তোমাদের জন্য আবশ্যক এটা থেকে বেঁচে থাকা।” (সূত্র: ইত্তেহাফুস সাদাতুল মুত্তাকীন, খণ্ড-৯ম, পৃ-৮৩৫)

মানুষকে বুঝতে হবে, সম্পদের ভালবাসা কিভাবে ফাঁদ তৈরি করে। গুনাহের প্রতি উস্কানি দেয়। দ্বারে দ্বারে ঘুরায়, লুটতরাজ করায়, এমনকি লাশ বানিয়ে দেয়। কিন্তু এই সম্পদ কারো হাতে আসে না। আর এলেও ভীষণ কষ্ট দেয় এবং ভীষণভাবে কাঁদায়। সুতরাং আমাদের বুযুর্গানে দ্বীন ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ধন সম্পদের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতেন।

“দুনিয়া যদি স্বর্ণের হত কিন্তু ক্ষণস্থায়ী অপরদিকে জান্নাত যদি মাটির হত কিন্তু চিরস্থায়ী; তবুও জান্নাত দুনিয়া থেকে অনেক উত্তম হত, কিন্তু আসলে বিষয়টা কিন্তু বাস্তবে বিপরীত; অর্থাৎ দুনিয়ার মাটির এবং ক্ষণস্থায়ী কিন্তু জান্নাত স্বর্ণের এবং চিরস্থায়ী।” – হযরত মালেক বিন দিনার (رحمة الله علي)

“দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জন্য বিক্রি করলে আপনি দুই জীবনেই জয়ী হবেন। আখিরাতের জীবনকে দুনিয়ার জন্য বিক্রি করলে আপনি দুই জীবনেই পরাজিত হবেন।” -হযরত হাসান বসরি (رحمة الله علي)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!