ভবঘুরেকথা

এই আদি যুগক্ষণে জীব নাহি কোনখানে
জীবোদ্ধার ক্রিয়া তাই না হল প্রকাশ।
অসুর শক্তির চাপে ধরা থরহরি কাঁপে
জল তলে ডুবে ধরা হয়ে হতাশ্বাস।।
রাখিতে ধরার প্রাণ দুষ্টে দিতে দণ্ড দান
দন্ত অস্ত্রে রিপু নাশি ধরাকে তুলিল।
ধরা হল ভাসমান জীব হল অধিষ্ঠান
দেবাসুর দ্বন্দ্বে ধরা ত্রাসিত হইল।।
জিতেন্দ্রিয় দেবগণ সত্য নীতি আলম্বন
পরমাত্মা তত্ত্বে মত্ত আছিল সবাই।
অসাম্য আশ্রয় করি অসুর সাজিল অরি
দেবশক্তি নষ্ট করে করিয়া বড়াই।।
ধরাকে রাখিতে শান্ত অসাম্য করিতে অন্ত
অসুরে সংহার করে নৃসিংহ মূরতি।
দৈত্যপুত্র সে প্রহ্লাদ সাম্য তত্ত্বে পেল সাধ
সুরাসুর দ্বন্দ্ব নাশি পাইল পীরিতি।।
আদরিণী কন্যা ধরা তার ভার দূর করা
অসম আসুর শক্তি হয় বিনাশিতে।
ধরাভার হরা হয় রিপুকুল হয় ক্ষয়
সমেস্থিত সাধুজন শান্তি পায় চিতে।।
যত জীব বৃদ্ধি পায় তাঁর কাজ বাড়ে তায়
ভূভার হরণ পরে জীবের তারণ।
সমেস্থিত সাধুজন রক্ষাপায় সর্ব্বক্ষণ
অসম অসুর যত করে বিনাশন।।
মহাবলী দৈত্য বলি অসম সাধনে বলী
বলদর্পে ত্রাসে ধরা দেবতা লাঞ্ছিত।
দেবতা কাঁদিয়া কয় অসুরের যন্ত্রণায়
দেবশক্তি লুপ্তপ্রায় দৈত্য ভয়ে ভীত।।
বিপদ তারণ হরি মোরা সবে দুঃখে মরি
কি উপায় হবে প্রভু তব কৃপা বিনে।
আশুতুষে তুষি বলি সাজিয়াছে মহাবলী
ভয়াকুল দেবকুল জীবনে বাঁচিনে।।
দেব ডাকে ঊভরায় ধরা ভারাক্রান্ত হয়
তাই পুনঃ অবতারে হ’ল প্রয়োজন।
ভূভার হরিতে হয় সাধুজনে রক্ষা পায়
দুষ্টেরে নাশিতে তাই আসিল বামন।।
নরের আকার পায় তবু পূর্ণ নর নয়
অপূর্ণ আকার দেখি বিভূতি প্রকাশ।
আকারে সাজিল পূর্ণ ক্ষাত্র শক্তি করে চূর্ণ
ভৃগুরাম রূপে করে ক্ষত্রিয় বিনাশ।।
নর বসে ধরা পরে রাজ্যধন সৃষ্টি করে
ক্ষেত্র পতি সাজি রহে ক্ষত্রিয় আখ্যান।
ধনে আনে মদগর্ভ দ্বিতীয় অসুর পর্ব্ব
অহং চূর্ণ করে প্রভু বীরত্বে প্রধান।।
এই সব অবতারে ভূভার হরণ করে
আর করে সাধুজনে সতত রক্ষণ।
জীবে কিছু নাহি চাহে রক্ষ মাং রক্ষ মাং কহে
রসতত্ত্ব এতকাল না পেল শিক্ষণ।।
নাশে ত্রাস রিপু নাশ নাশে সে ধরায় ত্রাস
আশ্বাস সাধুতে পায় এই মাত্র নীতি।
জীবে কিছু নাহি দান নিজে সব ভগবান
জীবের কল্যাণ দিতে পরম পীরিতি।।
জীবে কিছু দিবে বলে জন্মিলেন রাজকুলে
মানব জীবন নীতি পালিল আপনে।
পিতৃসত্য রক্ষিবারে রাজ্য ধন ত্যজ্য করে
চতুর্দশ বর্ষ ধরি রহিলেন বনে।।
জানকি জননী সতী পতি ধ্যান পতি গতি
নারীকুলে এই শিক্ষা দানিলা যতনে।
ভ্রাতৃভক্ত সুলক্ষণ মানিলেন শ্রী লক্ষণ
ব্রহ্মচারী ব্রতধারী অকপট মনে।।
জীব দান পেল এবে নাম করে উচ্চরবে
পরব্রহ্ম সনাতন রাম নাম সুধা।
নাম্মী গুণে নাম কয় নাম নিয়ে ফল পায়
মিটাইতে চাহে সবে জীবনের ক্ষুধা।।

রাম নামে পাপ হরে রাম নাম যেবা করে
মৃত্যু অন্ত্যে স্বর্গ প্রাপ্তি বৈকুন্ঠে গমন।
ফলাশয় করে নাম ফলদাতা রাম নাম
ফল দাতা নামে নাই প্রেমের লক্ষণ।।
রাজ ধর্ম্ম নর ধর্ম্ম সমাজ শাসন কর্ম্ম
নিজের জীবনে প্রভু দেখাল আদর্শ।
সত্য ধর্ম্ম পরচার নাহি হ ‘ল এই বার
অকলঙ্কা সীতা ছাড়ি প্রভু যে বিমর্ষ।।
সমাজ জীবন গড়ি জীবে করে আড়াআড়ি
হিংসা, দ্বেষ ক্ষুদ্রতায় হল প্রর্দুভাব।
জাতি হল জন্মগত মানুষের মান হ’ত
সাধু শূদ্রে মৃত্যু দণ্ড হলরে সম্ভব।।
দুঃখে বুক ফাটি যায় প্রভু রাম দয়াময়
মরমের ব্যথা নিয়ে লীলা সম্বরিল।
আপন জীবনে যাহা পালিলেন কেহ তাহা
পালিল না জীবগণে কেহ না মানিল।।
প্রভু চিন্তা করে মনে দেখাইব জীবগণে
আদর্শ “মানব “ জীব হতে পারে বটে।
দ্বাপরে মথুরা পুরী অবতীর্ণ কৃষ্ণ হরি
নাচিলেন বনমালী যমুনার তটে।।
পাণ্ডু রাজা পুণ্য বাণ নর রূপে অধিষ্ঠান
তাঁর ঘরে পঞ্চ ভ্রাতা “পাণ্ডব “ ব্যাখ্যান।
আদর্শ গৃহীর ধর্ম্ম দেখাইল সেই মর্ম্ম
মাতা,পিতা, ভ্রাতা পুত্র স্বামীর সন্ধান।।
ক্ষাত্রগর্ব্ব নষ্ট করি সমতা আনতে হরি
ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল সবে সমযোগ দেয়।
যেই দুষ্ট নাহি মানে কুরুক্ষেত্র মহারণে
দুষ্টেরে নাশিতে প্রভু সবে করে ক্ষয়।।
পাপী আধার মাত্র ভিন্ন পথে পাপ সুত্র
ভুল হ’ল পাপী ম’ল পাপ বেঁচে রয়।
কুরুবংশ ধ্বংস হয় পাপ হয়ে নিরাশ্রয়
যদু বংশে পূর্ণ রূপে হইল উদয়।।
কৃষ্ণ হয় অবতার কিছুদূর অগ্রসর
নাম ধর্ম্ম পরচার জগতে হইল।
সাধক সন্যাসী যারা কৃষ্ণে নাহি মানে তারা
গোপগোপী নীচ জনে সুধা রস পেল।।
সংসারে আবদ্ধ নর প্রেমে নহে তৎপর
মোহ নাশি প্রেম দিতে এল শ্রী গৌরাঙ্গ।
ঘর ছাড়ি কাঁদি কয় তোরা কে কে নিবি আয়
অফুরন্ত প্রেম ধরে নামের তরঙ্গ।।
আদর্শ গৃহস্থ ধর্ম্ম কৃষ্ণ হতে সে মর্ম্ম
প্রেম ধর্ম্ম সর্ব্ব জনে কভু না কহিল।
কেঁদে কয় গোরা রায় ঘরে কিছু নাহি হায়
নাম মধ্যে যেই প্রেম সেইত আসল।।
সত্যে করি দুই ভাগ কহে দুই মহাভাগ
দুই ভাগে হয়ে ভাগ জীবে দ্বন্দ্ব করে।
পূর্ণ সত্য এক সাথে জীবগণে দেখাইতে
হরিচাঁদ অবতীর্ণ সফলানগরে।।
গৃহাশ্রম করি মূল ভাঙ্গিলেন সব ভুল
সর্ব্বনীতি গৃহস্থরে শিখাল যতনে।
তাঁর ভক্ত মধ্যে তাই সর্ব্বনীতি গড়ে ভাই
সর্ব্বনীতি রহে মিশি ভক্তের জীবনে।।
হাতে কাম মুখে নাম প্রাণা রাম হরি নাম
দণ্ডে দণ্ডে করে ভক্তে প্রেমের নেশায়।
কর্ম্ম করে বীর রাগে সর্ব্ব কর্ম্ম যোগে লাগে
বালকের মত পুনঃ হাসি কথা কয়।।
কিবা নামে কিবা প্রেমে কিবা কর্ম্মে কি বিশ্রামে
কোনগুণে হীন নহে মতুয়ার গণ।
রামকৃষ্ণ যাহা করে তাহা আজি ঘরে ঘরে
করিছে মতুয়া সবে পতিত তারণ।।
ধর্ম্ম কর্ম্ম সমন্বয় ইহ পূর্ব্বে নাহি হয়
ওড়াকান্দী হরিচাঁদ তাহা যে করিল।
পূর্ণ নীতি এই বার হইয়াছে পরচার
জগত – তারণ মন্ত্র জগতে আনিল।।
মানুষ সবার শ্রেষ্ঠ ভেদাভেদ ইষ্ঠানিষ্ট
কর্ম্মগুণে মান পায় জন্ম গুণে নয়।
যে জন মতুয়া হয় সেই এই কথা কয়
জন্মগত জাতি কথা তারা নাহি কয়।।
পবিত্র চরিত্র যেই তার কোন তুল্য নেই
হোক না সে জন্মগত ক্ষুদ্র বা মহান।
যেই হরি ভক্ত হয় ম ‘তো পড়ে তার পায়
তারে দেখি চোখে তার বহে প্রেমবান।।
অভক্ত আপন জন ম’তো দেয় বিসর্জ্জন
ভক্ত যারা তারা হয় পরম আত্মীয়।
মন মানুষের খেলা করে যেবা সারা বেলা
সেই সে পরম বন্ধু প্রিয় হতে প্রিয়।।
শয়নে ভোজনে কিবা কি রজনী কিবা দিবা
ভক্ত হয় মতুয়ার নয়নের মনি।
প্রেম প্রীতি পরাকাষ্ঠা এই মানুষেতে নিষ্ঠা
মতুয়া জীবনে এই মূল মন্ত্র জানি।।
এই নিষ্ঠা মতুয়াকে কি ভাবে কেমনে রাখে
কিছু মাত্র সেই কথা বলিবারে চাই।
এমন মধুর ভাব অপূর্ব্ব ভ্রাতৃ স্বভাব
এতকাল ধর পরে কেহ দেখে নাই।।
মতুয়া চলিতে পথে কেশদাম নাচে মাথে
মনে মনে করে গান হরিচাঁদ গীতি।
দ্বিতীয় মতুয়া যদি পথেতে মিলায় বিধি
উভে দরশনে উভে হর্ষান্বিত অতি।।
নাহি কোন পরিচয় তবু দাদা বলি কয়
ভূমি তলে গড়াগড়ি করে যে আনন্দে।
বয়ান ভাসিয়া যায় আলিঙ্গন করি রয়
প্রেমে জড়াজড়ি করি বুকে বুক বান্ধে।।
নাহি চেনে দেব দেবী ঘট, পট, কিংবা ছবি
জানে মানে মনে প্রাণে শুধু হরিচাঁন্দে।
সতী যথা পতি মানে নদী ধায় সিন্ধু পানে
শ্রী হরি বিরহে তারা মনে মনে কান্দে।।
যদি হরিচাঁন্দ কয় মরণের নাহি ভয়
অগ্নি মাঝে প্রবেশিতে পারে যে মতুয়া।
মরণ দলিয়া পায় নেচে নেচে ম’তো ধায়
যদি হরি আজ্ঞা দেয় ইঙ্গিত করিয়া।।
শঙ্কা শূন্য ভরা বুক শূর তেজে দীপ্ত মুখ
এক মহামন্ত্র কন্ঠে জয় হরিচাঁদ।
গৃহে বনে কি শ্মশানে দিবা কিম্বা রাত্রি ক্ষণে
সমভাবে চলে ফিরে গণেনা প্রমাদ।।
নারী জাতি জানে মাতা সুদূরে নোয়ায়ে মাথা
মাতৃজ্ঞানে আলাপন করে মিষ্ট ভাষে।
মানামান সমজ্ঞান মতো শুধু দেখে প্রাণ
ডাকিলে সরল প্রাণে ম’তো সেথা বসে।।
পর দুঃখে দুঃখী যত শ্রী হরি চাঁন্দের ম’তো
নিঃস্বার্থ তাদের মত দেখা নাহি যায়।
বিপদে পড়িলে কেহ ডাকিয়া করিলে স্নেহ
দয়াল মতুয়া চলে ছুটিয়া তথায়।।
কিবা দিবা বিভাবরী শুধু বলে হরি হরি
অবিরত অশ্রুবারি ফেলে তার লাগি।
খেতে পেলে তবে খাই না দিলেও ক্ষতি নাই
শয্যা যদি নাহি মিলে তবে রাত্রি জাগি।।
না মাগে কোনই অর্থ নাহি চিনে কোন স্বার্থ
একমাত্র স্বার্থ শুধু পর উপকার।
ছাড়ি গৃহ ছাড়ি জায়া দিয়ে মন প্রাণ কায়া
বিপদ তারণ নাম করিছে প্রচার।।
শান্ত দান্ত কৃপাবন্ত মতুয়া পরম শান্ত
উলঙ্গ শিশুর মত উলঙ্গ পরাণ।
শান্ত সিন্ধু প্রায় স্থির ভাব কত সু গম্ভীর
ভিন্ন চিত্র দেখা যায় অতীব মহান।।
সিন্ধু যদি ক্ষুদ্ধ হয় শান্ত ভাব দূরে যায়
উত্তাল তরঙ্গ দল মত্ত হয়ে ছোটে।
ম’তো যবে ক্ষেপে যায় কেবা তারে মেপে লয়
মুহূর্তে প্রলয় কাণ্ড ধরা পরে ঘটে।।

দুই ক্ষণে এই ভাব দেখি মতুয়া স্বভাব
নাম সংকীর্ত্তনে অন্য গুরু নিন্দা শুনে।
বাড়বাগ্নি সম জলে মহাবেগে ছুটে চলে
টল টল নড়ে ধরা মতুয়া নাচনে।।
কর্ম্ম ব্যাস্ত ঝরে ঘাম তবু মুখে হরি নাম
দিব্যজ্যোতিঃ অনুপম মতুয়া বদনে।
ঝর ঝর বারি ঝরে যবে হরিচাঁদ স্মরে
বিরহি উথলি ওঠে মতুয়ার প্রাণে।।
যদি কোন অসজ্জন গুরুনিন্দা আলাপন
মতুয়া নিকটে করে অবহেলা ভরে।
পরাণ ফাটিয়া যায় কে রক্ষিবে বল তায়
বীর মূর্ত্তি ধরি ম’তো দণ্ড দান করে।।
জীবন মরণ বল মতুয়া জানে যে ভাল
মৃত্যু হাতে ধরি করে পুতুলের খেলা।
মন প্রাণ গুরু পদে মতুয়া রেখেছে বেঁধে
বাচন মরণ সব করে অবহেলা।।
এক মানুষেরে জানে সেই মানুষেরে মানে
মনের মানুষ করি তারে রাখে প্রাণে।
মন মানুষের ভাব তার কান্তি যে স্বভাব
যার মধ্যে দেখে ম’তো তারে তাই মানে।।
এই মানুষেতে নিষ্ঠা ম’তো ধর্ম্ম পরাকাষ্ঠা
মনে প্রাণে ম’তো সব এই নীতি মানে।
যত জীব হল সৃষ্ট নর তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ
সকল জীবের ইষ্ট করে নরগণে।।
মানুষে সাধনা করে চিৎ শক্তি রাখে ধরে
আব্রহ্ম জুড়িয়া তাহা করে নিত্য খেলা।
অন্যে জীবে নহে সাধ্য মানুষে করিল সাধ্য
চিৎ শক্তি তাই বাধ্য আপনি হইলা।।
মানুষের মধ্যে তাই তাঁর শ্রেষ্ঠ রূপ পাই
তার শক্তি নর মাঝে অধিক বিকাশ।
এই কৃপা নরে পেয়ে আছে জীব শ্রেষ্ঠ হয়ে
তাই দেখি নর মাঝে তাহারই প্রকাশ।।
ম’তো এই সত্য জানে তাই মানুষেরে মানে
যেই মানুষেতে দেখে মনের মানুষ।
সেই পদে সব দান ধন মান মন প্রাণ
ম’তো জানে সেই শ্রেষ্ঠ প্রধান পুরুষ।।
নর রূপে হরিচাঁদ করে পতিত আবাদ
দীন হীন উপেক্ষিত আছিল যাহারা।
পিয়ে সে চাঁদের সুধা মিটাইল সব ক্ষুধা
ঢেলে দিল জীবনের দুঃখের পসরা।।
সর্ব্বাশ্রম এক সাথে পবিত্র প্রেমের সুতে
গাঁথি দিল হরিচাঁদ পূর্ণ অবতার।
পূর্ব্বে যাহা ছিল ক্ষুণ্ণ এবারে করিল পূর্ণ
পূর্ণনন্দ পূর্ণ হরি শ্রী হরি আমার।।
নিষ্ঠা রাখি হরিচাঁদে সকল মতুয়া কাঁদে
“ওহে প্রভু তুমি বিনে কি হবে উপায়।
আমি নাহি যাব চলে বারে বারে হরি বলে
গুরুচাঁদ দেহে আমি রহিব নিশ্চয়।।
শ্রী হরির এই বাণী যতেক মতুয়া প্রাণী
নত শিরে সবে মানি লইল মাথায়।
শ্রী গুরু চরিত্র মাঝে সব দিনে সব কাজে
কিসে সত্য হল বাণী দিব পরিচয়।।
এবে শুন বলি কথা অপূর্ব্ব মধুর গাঁথা
শুনিলে সে সব কথা জীব ধন্য হয়।
হরিচাঁদ তিরোধানে তার কিছু পূর্ব্বক্ষণে
হরি অগ্রে গুরুচাঁদ হইল উদয়।।
কর জোরে করি রয় মুখে কথা না জুড়ায়
পিতৃ পদ দৃষ্টি রাখি বিনয় বচনে।
বলে তাতঃ নিবেদন চাই চরণে শরণ
পতিত তারণ তুমি এসেছ ভুবনে।।
অনাদির আদি তুমি ক্ষিরোদ বিহারী স্বামী
বড় কৃপা করি জীবে জগতে আসিলে।
জীবগণে এত দিনে পায় নাই যেই দিনে
তুমি এনে সযতনে জীবেরে তা’ দিলে।।

তব কথা কি বলিব কেমনে তোমা চিনিব
অজানা অচেনা ধন তুমি গুণাতীত।
তব কথা যাহা কই তাহা বলা হয় কই
অপূর্ণ সকলি কই বিরিঞ্চি বাঞ্ছিত।।
কত কৃপা মম পরে জন্ম দিলে তব ঘরে
আপনার করি মোরে দেখ চিরদিন।
ভীত মনে দূরে থাকি তব লীলা খেলা দেখি
জন্ম জন্ম তব পদে আছে মম ঋণ।।
মনে ভাবি এই কথা কোন কথা দিয়ে পিতা
তোমরে তুষিব হেথা আমি অভাজন।
এমন কি গুণ আছে যে গুণে আসিব কাছে
কোন কথা দিয়ে পাব তোমা হেন ধন।।
এমন কি কথা জানি পা ‘ব তোমা ‘ গুণমণি
বাণী যেথা হারা বাণী তাঁরে কিবা কব।
সকলি জানত তুমি অনাদি অনন্ত স্বামী
মূঢ় হতে মূঢ় আমি কিসে তোমা পাব।।
জীব লাগি নর ভাব ঘুচাতে সব অভাব
অপরূপ মহাভাব ব্রহ্মা অগোচর।
নর ভাবে কায়া ছাড়ি তুমিত ছাড়িবে হরি
বল পিতঃ কিবা করি আমি অতঃপর।।
কোন ভাবে কোন পথে চলিব জীবন পথে
ধর্ম্ম মানি কোন মতে পিতা তাই বল।
তোমার ভকত যারা নামে গানে মাতোয়ারা
কোন ভাবে এবে তারা চলিবে সকল।।
তব আশির্বাদ বিনে কিছু নাই এ জীবনে
নিদ্রা কিম্বা জাগরণে তাহাই সম্বল।
চাহি কোন আশীর্বাদ পূর্ণ ব্রহ্ম হরিচাঁদ
তব মনে যাহা সাধ হউক সফল।।
উন্নত পাদপ তলে জীবে রহে দলে দলে
ভয় অবহেলি চলে সহায়ের গুণে।
ঝঞ্ঝা বায়ু শীতাতপে আশ্রয় করি পাদপে
জীব কুল কাল যাপে’ নিঃসন্দেহ মনে।।
বৃক্ষ যদি পড়ি যায় আশ্রয়ের শেষ হয়
করে সবে হায় হায় হেরি অন্ধকার।
তব অদর্শনে পিতা প্রাণে বাজে বড় ব্যাথা
আমরা দাঁড়াব কোথা বল একবার।।
কাণ্ডারী বিহীন তরী অকূলে ডুবিয়া মরি
তুমি যে কাণ্ডারী হরি যদি নাহি রবে।
তোমা বিনে মরি প্রাণে স্থান নাহি কোন খানে
কৃষ্ণ হারা বৃন্দাবন – তুল্য দশা হবে।।
তুমি হরি ইচ্ছা ময় কে রোধে তব ইচ্ছায়
তবু প্রাণে ইচ্ছা হয় করি নিবেদন।
যেও না যেও না হরি প্রাণে মারি নর নারী
সকলে তোমার হরি যাচে শ্রী চরণ।।
একান্ত ছাড়িবে যদি বল ওহে গুণনিধি
চঞ্চল সংসার নদী লঙ্ঘিব কেমনে ?
মোর নাহি কোন শক্তি নাহি জ্ঞান নাহি ভক্তি
কাতরে সকল উক্তি করিহে চরণে।।
উক্তি শুনি পুত্র মুখে শ্রী হরি চাহিয়া দেখে
আপনি ডাকিয়া তারে কহিল বচন।
“মনে কিবা চিন্তা কর আমার বচন ধর
তুমি কিছু নহ পর শ্রী গুরুচরণ।।
যাহা কিছু প্রয়োজন সকলি হবে স্মরণ
যাহা কিছু কর মন সকলি মিলিবে।
মম পিতা যশোবন্ত কহে মোরে যে বৃত্তান্ত
কহি তাহা আদ্যপান্ত শুন ভক্তি ভাবে।।
দেহত্যাগ পূর্ব্ব ভাগে সবে ডাকি তাঁর আগে
মধুর বচনে বলে “শুন পুত্রগণ!
দেহধারী হলে পরে যেতে হয় পরপারে
অলঙ্ঘ্য নিয়ম এই নিয়তির লিখন।।
মন মধ্যে বুঝি তাই আর বেশি দেরী নাই
যাত্রা কালে বলি যাই পবিত্র কাহিনী।
পাপ থাকে কোনখানে পাপে ধরে কোন জনে
পাপে রক্ষা কোন গুণে বলিব এখনি।।।

আপন জীবন পথে এই নীতি রেখ ‘ সাথে
শুভ ফল পাবে তাতে নাহি হবে আন।
দুঃখ তাপ দূরে যাবে প্রেমানন্দে সুখে রবে
প্রাণ মধ্যে প্রাণারাম হবে অধিষ্ঠান।।
পাপ দূরে নাহি রয় পাপ জাগে নিজালয়
নিজ ঘরে জীবচয় পাপে ডুবে মরে।
নারী রূপে মায়াবিণী সাজিয়াছে আদরিণী
তার ছলে ভুলে প্রাণী নিত্য পাপ করে।।
সদাচার বলে কারে সৎ আছে যে আচারে
সৎ থাকে সদাচারে পবিত্র নিয়মে।
ঋতুকাল ভিন্ন কালে নারী সঙ্গ যদি মিলে
ব্যাভিচারী তারে বলে ধর্ম্মনীতি ক্রমে।।
মাতৃতুল্য পর নারী হৃদয়ে ধারনা করি
জগতের নর -নারী পূজিবে অন্তরে।
পর নারী সঙ্গ আশা করে যেই সর্বনাশা
ধন ধর্ম্ম আশা নির্ম্মুল সংসারে।।
দূরে থাক পর নারী নিজ নারী সঙ্গ করি
হতে পারে ব্যভিচারী মানব সকল।
ঋতুকালে নারী সঙ্গ মানিবে পবিত্র ধর্ম্ম
ইহা ভিন্ন সঙ্গ কর্ম্মে ফলে বিষফল।।
পবিত্র চরিত্র রাখি নর হয় মহাসুখি
সদা থাকে কমলাখি হৃদয়ে তাহার।
দিন মাত্র সঙ্গ করে সন্তান লভিতে পারে
সেই ধন্য এ সংসারে পালি সদাচার।।
কিন্তু দেখ মহাভুল নরে নাহি জানে স্থুল
নষ্ট করে আদি মূল মজে ব্যভিচারে।
ভাবিয়া আপন দারা নিত্য ব্যভিচারে সারা
নিজ নারী সঙ্গে যারা না মানে বিচারে।।
তা’তে বলি এই কথা পাপ নহে দূরে কোথা
পাপ বাস করে হেথা আপনার ঘরে।
আনায়াসে নারী মিলে আপনার গৃহ তলে
নর পশু কুতূহলে মজে ব্যভিচারে।।
পর নারী পেতে আশা সময়েতে সে দুরাশা
আপনার ঘরে বাসা পাপে ডাকি দেয়।
সহজ পাপের খেলা মিলায় পাপের মেলা
ঘরে পরে পাপ খেলা করিয়া বেড়ায়।।
পাপে নষ্ঠ গৃহ ধর্ম্ম নষ্ঠ জ্ঞান নষ্ঠ কর্ম্ম
নরে এই মূল মর্ম্ম জানে কদাচন।
ব্যভিচার মহাপাপ ইহ হতে মনস্তাপ
জীবনের অভিশাপ না মিলে এমন।।
দূর হতে দূরে রহ আপনারে সামলাহ
মনে রাখ অহরহ পবিত্র আচার।
কিবা ঘরে কিবা পরে ব্যভিচার হতে দূরে
থাক সদা সদাচারে মানিয়া বিচার।।
ব্যভিচার যেই নর কিছুতে নাহি উদ্ধার
পূর্ব্ব পূরুষেতে তাঁরে করে অভিশাপ।
সামাল সামাল তাই চরিত্র পবিত্র চাই
ইহা হতে ধর্ম্ম নাই প্রবল প্রতাপ।।
আর কিবা বলি তোমা বিদ্যাদান, দয়া ক্ষমা
হরি নাম ঘরে ঘরে করিবে প্রচার।
পুত্র কন্যা বিদ্যাদানে রূপে শীলে কিংবা গুণে
পালিবে সকল জনে না হয়ে কাতর।।
এত বলি হরিচাঁদ করিলেন দেহ ত্যাগ
ভাগ্যবান মহাভাগ দেখিল স্বচক্ষে।
নীলাভ উজ্জ্বল জ্যোতিঃ কোটি সূর্য সম ভাতি
ছুটি গুরুচাঁদ প্রতি লাগে তার বক্ষে।।
শক্তি পেয়ে গুরুচন্দ্র শোভে যেন পূর্ণ চন্দ্র
ধ্বনিল জীমূত মন্দ্র মহাকাশ কোলে।
বিশ্ব কাঁপে থর থর নাচে যেন বিশ্বম্ভর
নাচিল দিক অম্বর প্রেমানন্দ রোলে।।
হরি দেহ পরি রয় শক্তি নাহি হয় লয়
অপূর্ণ পূরিয়া যায় পূর্ণানন্দ স্রোতে।
নাহি দুঃখ নাহি শোক অন্তরে আসে পুলক
বিশ্ববাসী যত লোক লাগিল হাসিতে।।

হরি পুর্ণ গুরুচাঁদে ধরা নত শিরে বন্দে
ভাবে দীন মহানন্দে বসে কিবা করি।
শ্রী গুরু গোপাল চন্দ্র পেল সেই প্রেমানন্দ
সাধু পিয়ে মকরন্দ বলে হরি হরি।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!