বিধবা রমণীর ব্যাধিরূপ পৈশাচিক দৃষ্টিমোচন
পয়ার
একদা প্রভুকে দেখি যাইয়া শ্রীধাম।
অপরাহ্ণ সময়ে বিদায় হইলাম।।
আমি আর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দু’জন।
তিলছড়া গ্রামেতে করিনু আগমন।।
উতরিনু শ্রীনবীন বিশ্বাসের বাড়ী।
তিনি রাখিলেন বড় সমাদর করি।।
আমাদের সংবাদ পাইয়া এক নারী।
নবীনের বাটীতে আসিল ত্বরা করি।।
সমস্ত রজনী হরিনাম সংকীর্তন।
সেই নারী বিষাদিতা মলিন বদন।।
নাহি আর অন্য কথা করেছে রোদন।
গোস্বামীর পদে মাথা কুটিছে কখন।।
একবার দুই হাতে দু’টি পদ ধরে।
কতক্ষণ রাখিলেন বক্ষের উপরে।।
চারিদণ্ড রজনী আছয় হেনকালে।
হরিনাম সংকীর্তন সবে ক্ষান্ত দিলে।।
সকলকে শয্যা দিয়া শুইল গোঁসাই।
একা সেই দুঃখিনীর চক্ষে নিদ্রা নাই।।
হেন অবকাশে সেই নারী কাঁদে খেদে।
ধরিলেন মৃত্যুঞ্জয় গোস্বামীর পদে।।
অনাথা বিধবা আমি দুঃখিনী যুবতী।
ধরি পায় সদুপায় কর মহামতি।।
জলোদরী বেয়ারাম হ’য়েছে আমার।
দুঃখিনীরে কর এই রোগ প্রতিকার।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে আমি উপায় না দেখি।
কর্মফল ফলিয়াছে আমি করিব কি।।
প্রভাতে উঠিয়া মোরা যাই নিজালয়।
সে নারী কাঁদিয়া ধরে গোস্বামীর পায়।।
তারক কহিছে আর সহেনা পরাণে।
তুচ্ছ ব্যাধি জন্য এত নিষ্ঠুরতা কেনে।।
যাহা ইচ্ছা দয়া করে তাহা দেন বলে।
শেষকালে যা থাকে তা’ হবে ওর ভালে।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে ওঢ়াকাঁদি যাত্রা কর।
প্রণামী প্রণামী দিয়া পাদপদ্ম ধর।।
পাঁচসিকে লয়ে তুই যাস ওঢ়াকাঁদি।
মহাপ্রভু পদে পড়ে কর কাঁদাকাঁদি।।
সেই নারী তাহা শুনি গিয়া নিজধাম।
নিশি জাগরণে জপে হরিচাঁদ নাম।।
কেমনে পাইব আমি প্রভুর চরণ।
বিনা সাধনায় নাহি পা’ব দরশন।।
হরিচাঁদ উদ্দেশ্যে থাকিয়া করি আশা।
বহু নিশি জাগরণে করিল তপস্যা।।
প্রাতেঃ উঠি একদিন মনে কৈল যুক্তি।
এ বিপদে হরিপদ বিনে নাহি মুক্তি।।
আমা হ’তে নাহি হ’বে সাধন ভজন।
ভরসা প্রভুর নাম পতিত পাবন।।
ওঢ়াকাঁদি গেল নারী কাঁদিতে কাঁদিতে।
দেখে একা বসে প্রভু পুকুর পাড়িতে।।
পাঁচসিকা জরিমানা রেখে পদপরে।
প্রণাম করিয়া নারী হরিপদে পড়ে।।
প্রভু দেখে পেটে ব্যাধি নহে কদাচন।
পৈশাচিক দৃষ্টি যেন উদরী লক্ষণ।।
দণ্ডবৎ করি যবে শ্রীপদে পড়িল।
দয়া করি পাদপদ্ম মস্তকেতে দিল।।
গলে বস্ত্র করজোড়ে উঠিয়া দাঁড়াল।
হরি হরি ব’লে নারী কাঁদিতে লাগিল।।
বাহ্যেতে দেখায় পদ দিল মেয়েটিরে।
শ্রীপদ পরশ করে পিশাচের শিরে।।
পাদস্পর্শে সে পিশাচ মুক্তি হ’য়ে গেল।
ব্যাধিমুক্ত রমণী সে পূর্ববৎ হ’ল।।
প্রভু বলে কেন আ’লি আমার সাক্ষাতে।
মৃত্যুঞ্জয়ের কথামত আইলি মরিতে।।
আসিলি করিলি ভাল মম বাক্য ধর।
এ পাপে শ্রীক্ষেত্রধামে যাহ একবার।।
মুক্ত হ’লি কি না হ’লি বল শুনি বাছা।
মোরে এনে দেহ এক ময়ূরের বাচ্চা।।
পেটে হাত দিয়া তবে সেই নারী কয়।
ওহে প্রভু আমার ঘুচিয়ে গেছে দায়।।
ঠাকুর বলে মণি পাঁচসিকে দিয়ে।
এতবড় বিপদ কি যা’বি মুক্ত হ’য়ে।।
তোর পেটে ব্যাধি ছিল পাঁচমাস বটে।
তারে পাঠিয়েছি আমি ময়ূরের পেটে।।
পাণ্ডাদের সঙ্গে বাছা ক্ষেত্রে চলে যা।
মোরে এনে দিন এক ময়ূরের ছা।।
সে নারী শ্রীক্ষেত্রে গেল জগন্নাথে আর্তি।
রথের উপরে দেখে হরিচাঁদ মূর্তি।।
নারী বলে কেন আমি আসি এতদূর।
ওঢ়াকাঁদি আছ যদি দয়াল ঠাকুর।।
এই সেই সেই এই ভিন্নভেদ নাই।
এবে আমি ময়ূরের বাচ্চা কোথা পাই।।
রথে থেকে প্রভু বলে বাচ্চা পাইয়াছি।
দেশে যা দেশে যা আমি ওঢ়াকাঁদি আছি।।
এ বাণী শুনিল যেন দৈববাণী প্রায়।
দেশে এসে গেল শেষে ওঢ়াকাঁদি গায়।।
প্রভুর চরণে নারী নোয়াইল মাথা।
কেঁদে কেঁদে কহে সেই ক্ষেত্রের বারতা।।
প্রভু বলে ওঢ়াকাঁদি আমি হরিদাস।
জগবন্ধু বলে তোর হ’ত কি বিশ্বাস।।
তেঁই তোরে পাঠাইনু শ্রীক্ষেত্র উৎকলে।
বাড়ী যাগো মন যেন থাকে আমা বলে।।
ওঢ়াকাঁদি অবতীর্ণ কাঙ্গালের বন্ধু।
কবি কহে ভবসিন্ধু তার কৃপাসিন্ধু।।