ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

প্রভুর নতুন বাটী বসতি।
পয়ার

একদা প্রভুর জ্যেষ্ঠ নামে কৃষ্ণদাস।
ঠাকুরকে কহে দেকে শুন হরিদাস।।
আমরা সকলে থাকিলাম এক বাড়ী।
তুমি বা একাকী কেন থাক সবে ছাড়ি।।
এস সবে একত্রেতে সুখে করি বাস।
তাহা শুনি মহাপ্রভু যেতে কৈল আশ।।
এ সময় জমিদার এসে ওঢ়াকাঁদি।
পূর্ববাড়ী যাইবারে করে কাঁদাকাঁদি।।
না হইল পঞ্চভাই তাহাতে স্বীকার।
কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরে গেল জমিদার।।
আমভিটা ত্যাজি প্রভু পোদ্দার বাটিতে।
পাঁচ ভাই বসতি করিল একসাথে।।
নড়াইলবাসী বাবু নাম রামরত্ন।
জমিদার বসাইল করি বহু যত্ন।।
রামরত্ন হরনাথ আর সীতানাথ।
এ তিনের নাম নিলে হয় সুপ্রভাত।।
তেলীহাটী পরগনে ইহারা মালেক।
আমিরাবাত ওঢ়াকাঁদি জমিদার এক।।
এই ওঢ়াকাঁদি প্রভু করেন বসতি।
সমাদরে জমিদার করিলেন স্থিতি।।
ভকত ভবনে প্রভু যাতায়াত করে।
ভক্ত সঙ্গে থাকে রঙ্গে আনন্দ অন্তরে।।
ওঢ়াকাঁদি আর ঘৃতকাঁদি মাচকাঁদি।
কুমারিয়া চন্দ্রদ্বীপ আর আড়োকাঁদি।।
ইত্যাদি অনেক গ্রাম চতুঃপার্শ্বে রয়।
ভক্তি করি যে ডাকে তাহার বাড়ী যায়।।
ভক্তবৃন্দ পান করে কৃষ্ণ প্রেমরস।
হাসে কাঁদে নাচে গায় অন্তরে উল্লাস।।
দুই পুত্র তিন কন্যা ল’য়ে ঠাকুরানী।
সুখের সাগরে ভাসে লোচন নন্দিনী।।
ভকত ভবনে ফিরে প্রভু হরিচাঁদ।
বাঞ্ছাপূর্ণ করে হরি যার যেই সাধ।।
যেখানে যেখানে আছে প্রভুর ভকত।
ক্রমে এসে এক ঠাই হয়েন একত্র।।
এইভাবে ওঢ়াকাঁদি কালাতিবাহিত।
ভক্তগণে আসে যায় হয়ে হরষিত।।
কোন কোন প্রভু ভক্তগণে লয়ে।
পুষ্করিণী তীরে গিয়ে থাকেন বসিয়ে।।
পরিধান একবস্ত্র অর্ধাংশ গলায়।
শীত গ্রীষ্মে সমভাব ছেড়া কন্থা গায়।।
শয্যাহীন দূর্বাসনে থাকিত বসিয়া।
একে একে ভক্ত সব মিলিত আসিয়া।।
কখন বসিত প্রভু তৃণাসন করি।
ভক্তগণ বসিয়া বলিত হরি হরি।।
ভাব যেন দীন হীন পথের কাঙ্গাল।
ডাকিতেন কোথা কৃষ্ণ যশোদা দুলাল।।
হা কৃষ্ণ গোকুলচন্দ্র করুণানিধান।
ভক্তভাব প্রকাশিত নিজে ভগবান।।
কভু হরি, বলি হরি হইত বিস্মৃতি।
কখনও বদনে হ’ত সূর্যসম জ্যোতি।।
এইভাবে ওঢ়াকাঁদি লীলা প্রকাশয়।
ঐশ্বর্য্যয়ের মধ্যে শুধু মাধুর্য লুকায়।।
গার্হস্থ্য প্রশস্ত ধর্ম জীবে শিক্ষা দিতে।
দীননাথ হরি অবতীর্ণ অবনীতে।।
ভক্তগণ অনুক্ষণ নাহি ছাড়ে সঙ্গ।
ক্রমে ক্রমে বাড়িতেছে লীলার প্রসঙ্গ।।
কিছুদিন একবাড়ী সুখে করি বাস।
শ্রীবৈষ্ণবদাস আর শ্রীস্বরূপদাস।।
দুই ভাই পদ্মবিলা করিল বসতি।
তিন ভাই থাকিলেন ওঢ়াকাঁদি স্থিতি।।
ওঢ়াকাঁদি বাস না করিত বহুদিন।
একমাস মধ্যে মাত্র দুই এক দিন।।
আর সদা থাকিতেন ভক্তের আলয়।
যেখানে সেখানে থাকি হরিগুণ গায়।।
মুহূর্তেক প্রভু যদি কোথা বসিতেন।
ব্যাধিযুক্ত রোগযুক্ত লোক আসিতেন।।
যারা হ’ত রোগমুক্ত মানসা করিয়া।
মানসিক মুদ্রা সব দিতেন আনিয়া।।
সেই মুদ্রা ভক্তগণ লইয়া সাদরে।
আনিয়া দিতেন লক্ষ্মীমাতার গোচরে।।
অল্পদিন রহে প্রভু নিজ ভদ্রাসনে।
অধিকাংশ রহে প্রভু ভক্তের ভবনে।।
অল্প সময় থাকে অন্য ভক্ত ঘরে।
সদা ব্যস্ত যাইতে সে রাউৎখামারে।।
হরিচাঁদ চরিত্র পবিত্র সুধাভাণ্ড।
কবি কহে শ্রবণেতে খণ্ডে যম দণ্ড।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!