শ্রীধামে মহালীলার গুপ্ত অভিসার।
পয়ার
একদা শ্রীহরিচাঁদ বসিয়া নির্জনে।
কি যেন কি ভাবিলেন আপনার মনে।।
আর কত কাল আমি থাকিব ধরায়।
হ’ল বুঝি মম লীলা সাঙ্গের সময়।।
অতএব এক কর্ম করিবারে হয়।
ভাবি কালে সেই মেলা দেখিবে সবায়।।
মধুকৃষ্ণাত্রয়োদশী শুভ বুধবার।
সেই বুধবারে হ’ল জনম আমার।।
অপ্রকাশ র’ল তাহা ধরণী মাঝারে।
না করিয়া সেই কর্ম যাই কী প্রকারে।।
গুপ্তভাবে করিব বারুণীর অভিসার।
গুরুচাঁদ হ’তে পরে হইবে প্রচার।।
এত ভাবি নিশিকালে একাকী চলিল।
চটকা গাছের তলে গিয়া বসি র’ল।।
হরিচাঁদ ভক্তা ভবানী আর শোভনা।
গোপনে দূর হতে এই ভাব দেখিলা।
অপরূপ কাণ্ড তারা দেখিতে পাইলা।।
চারিদিকে যেন মহা জ্যোতির্ময় হ’ল।
যেন কত অগণিত মতুয়ার দল।
দলে দলে আসিতেছে বলে হরি বল।।
জয়ডঙ্কা ঝাঁঝ কাঁসি খোল করতাল।
বাজাইয়া মতোগণে বলে হরি বল।।
বাদ্যোদ্দমে প্রকম্পিত যেন ভূমিতল।
মেঘের মণ্ডলে যেন দেবের বাদল।।
হরি বল রব বিনে অন্য বোল নাই।
কেহ কেহ দেয় হরিচাঁদের দোঁহাই।।
মিলেছে চাঁদের মেলা না হয় তুলনা।
হুলুধ্বনি যেন দেয় বহুত ললনা।।
সুসজ্জিত হ’য়ে কত যেন দেবগণ।
প্রভুর পার্শ্বেতে বসি করেছে স্তবন।।
হরিনাম ধ্বনি হেন উঠেছে গগনে।
দেব বালাগণ এল নরবালা সনে।।
বসিয়ে করেছে তারা কীর্তন শ্রবণ।
কাহারো বা বারিধারা হতেছে পতন।।
কেহ বা কীর্তন মাঝে দিতেছে হুঙ্কার।
প্রেমের পাথারে সবে দিতেছে সাঁতার।।
এসব দর্শন করি করেছে চিন্তন।
ঘুমিয়ে রয়েছে এবে দাদারা দুজন।।
এত ভাবি অন্তঃপুরে করিয়া গমন।
মাতৃ পাশে জানাইল সব বিবরণ।।
দুই ভাই এল পরে তাহাদের সঙ্গে।
এই মেলা দরশন করে মনরঙ্গে।।
গুরুচাঁদ স্থির চিত্তে করে দরশন।
অপরূপ মেলা হেরি সবিস্মিত মন।।
মেলা হেরি মনে মনে করেছে চিন্তন।
এ মেলা করে পিতা কি জানি কি কারণ।।
তার মাঝে হেরে যেন শ্রীহরি মন্দির।
নেহারিয়া সেই সব চিত্ত হয় স্থির।।
ক্ষীরোদশায়ীর মূর্তি শ্রীমন্দির মাঝে।
আরো কত মূর্তিশোভে অপরূপ সাঁজে।।
পার্শ্ব দেশে ঘোড়া দৌড় হইতেছে তথা।
তাই হেরে উমাকান্তের হয় অস্থিরতা।।
ধরিয়া ঘোটক এক আনে প্রভু ঠাই।
বলে বাবা এই ঘোড়া রাখিবার চাই।।
ঠাকুর বলেন ঘোড়া রাখা নাহি যায়।
দৈবে দেবতার ঘোড়া বাধ্য নাহি হয়।।
হরিচাঁদ বলে শুন শ্রীগুরু চরণ।
হেতা হতে চল, করি গৃহেতে গমন।।
এত বলি পিতা পুত্র তথা হতে এল।
মেলা অবসান তথা অন্ধকার হল।।
সেই হতে গুরুচাঁদ ভাবে মনে মনে।
এই মেলা সুপ্রকাশ হবে কত দিনে।।
দেব নরে একসঙ্গে করিবে কীর্তন।
প্রেমাবেশে মত্ত হবে যত ভক্তগণ।।
কবে বা উড়িবে হরি নামের নিশান।
নেহারিয়া সেই মেলা জুড়াইব প্রাণ।।
ঘাটে মাঠে কবে হবে নাম সংকীর্তন।
কবে আমি হেনভাব করিব দর্শন।।
প্রবাহিত হবে কবে প্রেমের পয়োধি।
প্রেম হিল্লোলে ধুয়ে যাবে যত বেদবিধি।।
দলে দলে মতুয়ারা করিবে কীর্তন।
প্রেমভরে উলু দেবে যত বামাগণ।।
বহিবে প্রেমের বন্যা সম্মুখে আমার।
ভক্তসঙ্গে মন রঙ্গে খেলিব সাঁতার।।
অন্তরে মাধুর্যভাব ক্রমেই বাড়িল।
হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।