শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি ঘাটলা বন্ধন
পয়ার
একদিন পৌষমাসে রজনী প্রভাতে।
মহাপ্রভু বসেছেন পুকুর পাড়েতে।।
উত্তর কূলেতে এক ঘাট বাঁধা আছে।
খাম্বা হেলি তক্তাগুলি খসিয়া পড়েছে।।
ঠাকুর ডাকেন ওরে গোলোক কোথায়।
ঘাট ভেঙ্গে গেছে বাছা বেঁধে দে ত্বরায়।।
আজ্ঞামাত্র গোলোক নামিল গিয়া জলে।
হেলেছিল খাম্বাগুলি উঠাইল ঠেলে।।
ভাল করি খাম্বা পুতি বাঁশ পাতি দিল।
দৃঢ় করি আরো দুটি খাম্বা লাগাইল।।
দুই ধারে দুই বাঁশ দিলেন আড়নী।
তাহার উপরে বাঁশ পাতি দিল আনি।।
দুই ধারে বাঁধে ঘাটে বিচিত্র বাখানী।
ঠিক যেন দুই থরে ইটের নিছনী।।
গোলোক নামিল যবে জলের ভিতরে।
মহাপ্রভু তখনে গেলেন অন্তঃপুরে।।
একেত দুরন্ত শীত সহন না যায়।
আরো উত্তরিয়া হাওয়া লাগিতেছে গায়।।
পাগলের অসহ্য সে শীতের যাতনা।
হেনকালে মনে মনে করছে ভাবনা।।
থর থর কম্প শীতে কাঁপে অধরোষ্ঠ।
গুরুকার্যে এত কষ্ট মম দূরাদৃষ্ট।।
বুড়া হাড়ে সহিতে না পারি এত কষ্ট।
ইহা হ’তে শতগুণে মৃত্যু মম শ্রেষ্ঠ।।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাঁধা হ’ল ঘাট।
হেনকালে গেল প্রভু পুকুরের তট।।
প্রভু বলে ঘাট বাঁধা হয়েছে সুন্দর।
শেলাগুলি তুলি ফেল কূলের উপর।।
অন্তঃপুরে থেকে ডেকে কন ঠাকুরানী।
পাকশালা হ’তে বলে জগৎ জননী।।
একেত গোলোক চাহিতেছে মরিবার।
গোলোকে কষ্টের কার্য নাহি দিও আর।।
ঠাকুর গোলোকে কহে শুনে মরি লাজে।
মরিতে চাহিস বেটা এইটুক কাজে।।
তুচ্ছ ঘাট বাঁধা তাতে মরিতে চাহিলি।
ত্রেতাযুগে সেতুবন্ধন কেমনে করিলি।।
হারিলি কামের ঠাই বলে ও হারিলি।
হারিলি শীতের ঠাই কুলে দিলি কালি।।
শ্রীমুখের এইবাক্য শুনিয়া গোলোক।
উত্তেজিত হয় যেন জলন্ত পাবক।।
নামিয়া পড়িল জলে হইয়া ক্রোধিত।
মহাবীর্যে রত কার্যে পালাইল শীত।।
জয় হরি বল রে গৌর হরি বল।
সিংহসম ধ্বনি করি উলটিছে জল।।
ঝাঁপ দিয়া পড়ে জলে করি হরিধ্বনি।
অর্ধ দণ্ডে ছাপ কৈল অর্ধ পুষ্করিণী।।
শৈবালাদি যত ছিল উত্তরের দিকে।
দুহাতে সাপুটে ধরি কূলে মারে ফিকে।।
শতজনে দিনভরি যাহা নাহি পারে।
অর্ধদণ্ডে একা তাহা করিল সত্বরে।।
অর্ধ পুষ্করিণী ছাপ যখন হইল।
উঠরে গোলোক বলি ঠাকুর ডাকিল।।
মহাপ্রভু বলে হ’ল পুকুর নির্মল।
গোলোকের গুণে জল যেন গঙ্গাজল।।
এইরূপে পুষ্করিণী পরিষ্কার করে।
গোলোক গোঁসাই গেল বাড়ীর ভিতরে।।
গোলোকে ডাকিয়া বলে দেবী শান্তিমাতা।
মরিতে চাহিলি এবে শীত গেল কোথা।।
গোলোক চরণে পড়ি বলেছে ভারতী।
জনমে জনমে যেন পদে থাকে মতি।।
হরিচাঁদ লীলাকথা সুধাধিক সুধা।
রচিল তারক পুষ্করিণী ঘাট বাঁধা।।